ডার্ক ম্যাটারের আবির্ভাব

ডার্ক ম্যাটারের আবির্ভাব

অরুণ কুমার
মহাবিশ্বের বেশিরভাগটাই ডার্ক ম্যাটার

মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ, মহবিশ্বের সবটুকু এখনো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।

এলোমহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ, মহবিশ্বের সবটুকু এখনো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।বিশ্বে এখন পর্যন্ত দুই ট্রিলিয়ন গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ, মহবিশ্বের সবটুকু এখনো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।

অথচ এক সময় বিজ্ঞানীরা মনে করতেন গোটা মহাবিশ্বজুড়ে রয়েছে একটাই গ্যালাক্সি। সেটা হলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সী৷ শত বছর আগে, অর্থাৎ ১৯২০ এর দশকের আগে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল। এরপর এক দশকে অনেক অনেক গ্যালাক্সির সন্ধান পাওয়া গেল। আবিষ্কার হলো গ্যালাক্সিরা আবার আলাদা আলাদাভাবে থাকে থাকে না। অনেকগুলো গ্যালাক্সি মিলে একটা গ্যালাক্সির দল তৈরি করে। এই গ্যালাক্সির দলকে বলে গ্যালাক্সি ক্ল্যাস্টার। আমরা যে ক্ল্যাস্টার বাস করি সেই ভারগো ক্ল্যাস্টারে গ্যালাক্সির সংখ্যা ৪০টি।

১৯৩৩ সাল। সুইস জ্যোতির্বিদ ফ্রিৎস জুইকি আর ডাচ বিজ্ঞানী ইয়ান ওর্ট গবেষণা করছিলেন কমা ক্ল্যাস্টার নিয়ে। ক্ল্যাস্টারটি আমাদের থেকে ৩২ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। এই গ্যালাক্সি ক্ল্যাস্টারে প্রায় এক হাজার গ্যালাক্সি আছে। জুইকি ওই ক্ল্যাস্টারের গ্যালাক্সিদের গতিবেগ মাপার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেটা করতে গিয়েই অস্বাভাবিক ফল পেলেন তিনি। গ্যালাক্সিদের প্রবল মহাকর্ষীয় টান গ্যালাক্সিদের একত্রে আটকে রাখে। আমাদের পৃথিবীর একটা মুক্তিবেগ আছে। এই বেগের চেয়ে বেশি বেগে কোনো কিছু ওপর দিকে নিক্ষেপ করলে সেটা আর পৃথিবীতে ফিরে আসে না। তেমনি সূর্যেরও একটা মুক্তিবেগ আছে। পৃথিবীর রৈখিক বেগ সেই মুক্তিবেগের চেয়ে কম বলে পৃথিবী কক্ষপথ থেকে ছিটকে সূর্য থেকে অনেক দূরে সরে যায় না। তেমনি আমাদের সূর্যও মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে অবিরাম। কোনো কারণে যদি সূর্যের এই ঘোরার বেগটা মিল্কিওয়ের মুক্তিবেগের চেয়ে বেশি হয় তাহলে সূর্যকে আর ধরে রাখতে পারবে না মিল্কিওয়ায়ে। ছুটে বেরিয়ে যাবে অসীম মহাবিশ্বে। তেমনি ক্ল্যাস্টারেও গ্যালাক্সিদের একটা বেগ আছে। ফ্রিৎস জুইকি মাপতে চেয়েছিলেন কমা ক্ল্যাস্টারের গ্যালাক্সিদের সেই বেগই। সেটা করতে গিয়েই বিরাট এক অসংঙ্গতি ধরা পড়ে। যে বেগে ঘুরলে গ্যালাক্সিগুলো ক্ল্যাস্টারের মধ্যেই আটকে থাকবে, তারচেয়েও বেশি বেগে ঘুরছে গ্যালাক্সিগুলো।

জুইকি হিসাব করে দেখেলেন এই বেগে ছুটলে গ্যালাক্সিগুলো ক্ল্যাস্টার থেকে ছিটকে মহাকাশে ছিটকে পড়ার কথা, কিন্তু সেগুলো ঠিকই ক্ল্যাস্টারের ভেতরে সুন্দরভাবে আবদ্ধ রয়েছে। তাহলে ব্যাপারখানা কী?

তখন আরেকটা গবেষণা করলেন বিজ্ঞানীরা। গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং ব্যবহার করে ইয়ান ওর্ট ভর মাপার চেষ্টা করেন মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলোর। মহাবিশ্বের ভর মাপা যায় দুভাবে। এক- মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুর পরিমাণ মেপে আর মহাকর্ষ বলের সাহায্যে। মহাকর্ষীয় লেন্সিং ব্যবহার করে।

এটা করতে গিয়েই আবারও গোল বাঁধে। মহাবিশ্বের মোটা বস্তুকণার হিসাব বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল। সেটা থেকেই বের করা যায় মহাবিশ্বের মোট ভর। সেই ভর আর ওর্ট-জুইকির মাপা ভর এক হওয়ার কথা। কিন্তু হিসাব থেকে মহাবিশ্বের মোট ভর অনেক অনেক গুণ বেশি পাওয়া গেল।

এই বাড়তি ভরের জোগান কোত্থেকে এল?

অনেক বিজ্ঞানীই এটা নিয়ে গবেষণা করলেন। কিন্তু হিসাব মিলল না। বেশিরভাগই জুইকির গবেষণাকে নাকচ করতে চেয়েছিলেন।

১৯৭০-এর দশক। মার্কিন জ্যোতির্বিদ ভেরা রুবিন বললেন, দুভাবে বের করা মহাবিশ্বের ভর সমান হবে, যদি মহাবিশ্বে বিপুল ভর ও শক্তি লুকিয়ে থাকে। রুবিন আরও বলেন, এসব গুপ্ত ভির তৈরি এমন কণা দিয়ে, যেগুলো আমাদের অজানা। আলোও এর ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। তাই খুব সহজেই আমাদের চোখ ফাঁকি দিতে পারে। ফাঁকি দিতে পারে শক্তিশালী ডিটেক্টরকেও।

এখন আমরা জানি, মহাবিশ্বের মাত্র ৪ শতাংশ দৃশ্যমান বস্তু দিয়ে গড়ে উঠেছে। ৯৬ শতাংশই রয়ে গেছে অদৃশ্য। অদৃশ্য ভরের ২১ শতাংশ গুপ্ত পদার্থ বাকি ৭৫ শতাংশ গুপ্ত শক্তি। এ বিশাল ডার্ক ম্যাটার আর ডার্ক এনার্জিকে আমলে নিয়েই বিগ ব্যাং, মহাবিশ্বের প্রসারণ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করা যায়। ব্যাখ্যা করা যায় আইনস্টাইনের মহাকর্ষও। অর্থাৎ এর অসিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

চুলের যত্নে কোন তেল উপকারী?

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে চুলের গঠন, তার প্রাকৃতিক বৃদ্ধি এবং ক্ষতির কারণ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। চুল মূলত প্রোটিন দ্বারা গঠিত, বিশেষ করে কেরাটিন নামের একটি প্রোটিন চুলের মূল উপাদান। যখন চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না কিংবা বাইরে থেকে সঠিক যত্ন পায় না, তখন তা রুক্ষ হয়ে যায়, ভেঙে যায় এবং ঝরে পড়ে। তেল মূলত চ

১ দিন আগে

দৈইখাওয়া গ্রামের হট্টিটি

লাল লতিকা হট্টিটি মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এই পাখিটি খুবেই চটপটে ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়ে থাকে। তার সতর্ক ভঙ্গি ও জলশয়ের পাতার ওপর দ্রুত দৌড়ানোর ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত। লাল লতিকা হট্টিটি লম্বায় ৩৪-৩৭ সেন্টিমিটার। এদের চোখের সামনে টকটকে লাল চামড়া। সেটিই লতিকা।

২ দিন আগে

মারা গেছেন ‘থ্রি ইডিয়েটস’ সিনেমার অধ্যাপক

অচ্যুত পোতদারের অভিনয়জীবন ছিল চার দশকেরও বেশি। তিনি ১২৫টির বেশি হিন্দি ও মারাঠি ছবিতে কাজ করেছেন। হিন্দি ও মারাঠি চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মী, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। বাস্তব জীবনেও তিনি ছিলেন নম্র, অমায়িক এবং বহুমুখী প্রতিভ

২ দিন আগে

থাইরয়েড সমস্যায় কোন কোন ফল খাওয়া উচিত

থাইরয়েড সমস্যায় ওষুধের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেরও বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে কিছু ফল আছে যেগুলো থাইরয়েড রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এসব ফলে থাকে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ফল খেয়েই থাইরয়েড সারানো

২ দিন আগে