বিচার-সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইল এনসিপিও

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১৬: ৩৯
শনিবার দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: ফোকাস বাংলা

এতদিন জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের বিচার ও সংস্কারের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের বিপক্ষে অনড় অবস্থান থাকলেও এবার নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। তবে কেবল নির্বাচনি রোডম্যাপ নয়, একসঙ্গেই জুলাই ঘোষণাপত্র ও বিচার-সংস্কারের দাবিও জানিয়েছে দলটি।

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এসব দাবির কথা বলেন। এ সময় দলের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটুকুই পালন করে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি, এই অন্তর্বর্তী সরকার একটি গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে। ফলে সেই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দায়বদ্ধতা রয়েছে। শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং জুলাই গণহত্যাসহ বিগত সময়ের অপরাধসমূহের বিচার, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার মধ্য দিয়েই সরকারকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমাদের আহ্বান থাকবে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানের দিকে যাবেন। আমরা মনে করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র, বিচার-সংস্কার ও নির্বাচন— এই তিনটির রোডম্যাপ একত্রে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে জনমনে ও সব রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ও আস্থার জায়গা তৈরি হবে।

সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, জুলাই সনদ, বিচার-সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ একত্রে ঘোষণা করা। সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু সমাধানের দিকে যাওয়া। পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক দলের সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর ৬২৬ জনকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে সম্প্রতি ব্যাখ্যা দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৬২৬ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছিলাম। এই তালিকা যদি আরও আগে প্রকাশ করা হতো, যেহেতু এটা অগাস্ট মাসের ঘটনা, তাহলে জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের সন্দেহ আর শঙ্কা তৈরি হতো না। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সুযোগ পেত না।

নাহিদ আরও বলেন, আমরা চাই, সেনাবাহিনী সার্বভৌমত্বের প্রতি, গণঅভ্যুত্থানের প্রতি যে ভূমিকা পালন করছে, সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখেছি, সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক কখনো কখনো তৈরি হয়, আমরা ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা জানি। এসব ঘটনা কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, আমাদের রাষ্ট্রের জন্য, সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কারও জন্যই ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। সেই বিষয়টা যেন আমরা সবাই বিবেচনা করি। যার যেটা কাজ, যেটা দায়িত্ব, সেটাই যেন সে পালন করে।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বিগত আমলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে। আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনী— তাদের দিয়ে নানা ধরনের মানবতাবিরোধী কাজের অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই সময়ে এসে একটা বিচারের মধ্য দিয়ে যারা অভিযুক্ত তাদের শায়েস্তা করবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে— এটা আমাদের প্রত্যাশা।

‘গুমের অভিযোগ যেসব সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের অবস্থান কী, সেটা আমরা এখনো জানি না। সুতরাং এ বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করলে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও বেশি জনগণের আস্থার জায়গা পাবে। আমরা সেই আস্থার জায়গা সেনাবাহিনীকে দিতে চাই,’— বলেন নাহিদ ইসলাম।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যুতে বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী আমলের যে নির্বাচনগুলোকে আদালতে গিয়ে এক ধরনের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। সেটা নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে এনসিপির কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের যে নিরপেক্ষতা-আস্থা, সেটা তারা হারিয়েছে বলে আমরা মনে করি। নির্বাচন কমিশন আস্থার জায়গা ধরে রাখতে না পারলে তাদের পক্ষে একটা সুস্থ নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে নির্বাচন কমিশনকে সেই আস্থার জায়গায় আসার চেষ্টা করতে হবে, অথবা তাদের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।

ad
ad

ঘরের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

খন্দকার মোশাররফের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধি দল যমুনায়

সরেজমিন দেখা যায়, বিএনপির প্রতিনিধি দলের মধ্যে প্রথমে যমুনায় প্রবেশ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর বাকি ৩ সদস্য প্রবেশ করেন।

৪ ঘণ্টা আগে

রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির বৈঠক

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আজ রাত ৮:৩০ টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বতী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।

৪ ঘণ্টা আগে

স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য চায় উপদেষ্টা পরিষদ

উপদেষ্টা পরিষদ বিবৃতিতে বলছে, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন-বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এ দেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন বলে মনে করে উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনবে এবং সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবে।

৬ ঘণ্টা আগে

কোথায় সংকট, কোনো সংকট দেখছি না: আমীর খসরু

দেশে চলমান সংকটে বিএনপি সরকারকে কী ধরনের পরামর্শ দেবে?— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোথায় সংকট? আমরা তো কোনো সংকট দেখছি না।’

৭ ঘণ্টা আগে