বিজ্ঞান

হ্যালোউইন ঝড়!

অরুণ কুমার
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ২০: ২১
সূর্যের বুকে হ্যালোউইন ঝড়

সূর্যের ভেতর ক্রমাগত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে। সূর্যের ভেতরকার হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস। হিলিয়ামগুলো আবার যুক্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে আরও ভারী পরমাণু। আর এসব নিউক্লিয়ার প্রক্রিয়া থেকে তৈরি হচ্ছে প্রচণ্ড মাত্রার শক্তি। তাপের আকারে। সেই তাপ আবার নতুন করে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার জন্য শক্তি জোগাচ্ছে। অর্থাৎ সূর্যের ভেতরে আসলে অনবরত চলছে পরমাণু কণিকাদের ভাঙাগড়ার খেলা। পৃথিবী থেকে সবসময় এসব ঘটনা মোটাদাগে দেখার উপায় থাকে না। কিন্তু মাঝে মাঝে এত বড় বড় ঘটনা ঘটে, নাড়িয়ে দেয় গোটা সৌরজগতকেও। এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর।

সেদিন সূর্যের পৃষ্ঠের দিকে একটা বড়সড় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। সেখান থেকে উদগীরণ ঘটেছিলে অসংখ্য আয়নিত কণাদের। (আয়নিত কণা কী জানতে পড়ুন ব্ল্যাকহোলের এই লেখাটি) অর্থাৎ সূর্যের বুক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল চার্জি কণা, তারপর পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিল।
এরকম ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে। সূর্যের বিস্ফোরণ থেকে ছিটক বেরুনো কণা পৃথিবীতে আসে। তৈরি করে সৌর ঝড়। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে যে অরোরা হয়, তারও কারণ এই ঝড়। কিন্তু ২০০৩ সালে সূর্যপৃষ্ঠে বিস্ফোরণটা ঘটেছিল, তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। আর এই বিস্ফোরণের ফলে পৃথিবীতে তৈরি হয়েছিল উপর্যপুরি সৌর ঝড়।

সেই বিস্ফোরণের ছবিকে রীতিমতো ঐতিহাসিক হিসেবে রায় দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কারণ ছবিতে সূর্যকে সবুজ ও ভূতুড়ে দেখাচ্ছিল। আর সেদিন যে সৌর ঝড় উঠেছিল পৃথিবীতে, তার নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছিলেন হ্যালোউইন ঝড়। হ্যালোইনের ঠিক ৩ দিন আগে ২৮ অক্টোবর সৌর ঝড়টি দেখা দিয়েছিল বলেও একে হ্যালোইন ঝড় বলা হয়।

সেদিনের সেই ভূতুড়ে বিস্ফোরণটি ছিল বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ করা সবেচেয়ে তীব্র সৌর বিস্ফোরণ, যাকে বিজ্ঞানীরা ফেলেছিলেন এক্স-ক্লাস ফ্লেয়ারের কাতারে। সেই বিস্ফোরণ আর তার ফলে তৈরি ঝড়ের মাত্রা বোঝা যায় এর বিশালত্ব দেখে। সেদিন সৌর পৃষ্ঠের যে জায়গাটা বিস্ফোরিত হয়েছিল, সেটার আকার ১৩টা পৃথিবীর সমান। সেই বিস্ফোরণের মাত্রা ৪৫। সেটা এতটাই ব্যাপক ছিল, পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করা অর্ধেক স্যাটেলাইট তাদের অবস্থান থেকে বিচ্যূত হয়েছিল এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বিজ্ঞানীরাও তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচতে বাড়তি সুরক্ষা নিয়েছিলেন।

আগেই বলেছি, এই বিস্ফোরণের ফলে উদগীরিত আয়ন কণা প্রবল গতিতে আছড়ে পড়েছিল। এর প্রভাব পড়ে পৃথিবীর ভূ-চুম্ককের ওপর। তারই ফলে তিনদিন ধরে পৃথিবীতে চলে সৌর ঝড়। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে বেতার যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। এমনকী বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও নষ্ট হয়।

যদি এখন এ ধরনের ঘটনা ঘটত,তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এখন মহাকাশে স্যাটেলাইটের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সারা বিশ্বের যোগাযোগব্যবস্থা এসব স্যাটেলাইটের ওপরে অনেকটাই নির্ভরশীল।

তবে এখন যদি নাও ঘটে, ২০০৩ সালের ওই ‘হ্যালোইন’ ঝড় একটা পরিস্কার বার্তা দিয়ে রেখেছে—আগামী কয়েক দশকে সূর্যে এরকম বড় বড় ঘটনা ঘটার পরিমাণ আরও বাড়বে।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

বাংলায় মারাঠা আক্রমণ : একটি সুপরিকল্পিত লুটতরাজ

মারাঠা আক্রমণের পেছনে দুটি মূল কারণ ছিল—প্রথমত, অর্থনৈতিক লোভ এবং দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের ইচ্ছা। মারাঠা বাহিনী চেয়েছিল বাংলার ধন-সম্পদ দখল করতে এবং মুঘলদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে পূর্বভারতে নিজেদের শক্তি বাড়াতে।

১৭ ঘণ্টা আগে

কিডনিতে পাথর হলে কী কী লক্ষণ দেখা যায়?

এই পাথর ছোট হলে হয়তো আপনি টেরও পাবেন না। কিন্তু যখন পাথরটা বড় হতে থাকে কিংবা কিডনির ভেতর থেকে ইউরেটারে (প্রস্রাবের পথ) নেমে যায়, তখন অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। অনেক সময় এই যন্ত্রণা এতটাই তীব্র হয় যে রোগী ব্যথায় ছটফট করতে থাকে, মেঝেতে গড়াগড়ি দেয়, ঠিক মতো দাঁড়াতে বা বসতে পারে না।

১৮ ঘণ্টা আগে

নতুন লড়াইয়ে জুলাই নারী যোদ্ধারা

গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশের নারীরা গৌরবময় ভূমিকা রেখেছেন৷ তারা রাজপথে লড়াই করেছেন৷ মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জীবন দিয়েছেনও অনেকে৷ কিন্তু সেই নারীরা যে বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে৷

২০ ঘণ্টা আগে

দক্ষিণ এশিয়ায় ‘আম কূটনীতি’— রেষারেষির সঙ্গে রয়েছে রহস্যও

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানে আমকে কেন্দ্র করে কূটনীতি ও পরস্পরের মধ্যে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা অবশ্য নতুন কিছু নয়। দিল্লি ও ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের সেরা জাতের আম বিশ্বনেতাদের উপহার দিয়ে আসছে।

২ দিন আগে