ড. মিহির কুমার রায়
বর্তমানে প্রতি মাসে বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের উপরে। একই সময়ে প্রতি মাসে গড়ে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। পণ্যভেদে দাম আরও বেশি বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির সূচকে ৫ শতাংশের নিচে নামলেই লাল তালিকা থেকে বের হতে পারবে বাংলাদেশ। তবে প্রশ্নটা কবে ? ২০২১ সালের জুন থেকে গত জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ সোয়া ৪ বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অবস্থান করছে। বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য চাল, সবজি, ডিম, মুরগিরর দাম বাড়ছে। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে লাল তালিকা থেকে সহসা বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেসব দেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে লাল ও পিঙ্গেল বর্ণের (কালচে লাল বা তামাটে রং) তালিকায় থাকবে ওইসব দেশের মুদ্রার মান স্থিতিশীল নয় বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে ওইসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ক্ষেত্রে ডলারের প্রবাহ, দাম ও মূল্যস্ফীতির হার সবার আগে পর্যালোচনা করে।
বিশ্বব্যাংক খাদ্য মূল্যস্ফীতির সূচক তৈরির ক্ষেত্রে কিছু ধাপ অনুসরণ করে। এর মধ্যে যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে গড়ে ২ শতাংশের কম বাড়ে ওইসব দেশকে সবুজ তালিকায় রাখে। অর্থাৎ কোনো ঝুঁকি নেই। যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে বাড়ে ওইসব দেশকে হলুদ তালিকায় রাখে। অর্থাৎ দেশটি ঝুঁকির দিকে চলে যাচ্ছে। এখনই খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি পায় তাদের রাখে লাল তালিকায়। ওইসব দেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন সবুজ তালিকায় ছিল, তেমনি হলুদ তালিকায়ও ছিল। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে সবুজ তালিকায় স্থান পেয়েছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে হলুদ তালিকায় ছিল। অন্য সময়গুলোতে ৫ শতাংশের বেশি বেড়ে লাল তালিকায় ওঠেছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, অনেক দেশ বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে লাল তালিকা থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারেনি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ২০২২ সালে শুরু বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি খুবই ধীর। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার যেমন খুবই ধীর গতিতে কমছে, একই গতিতে কমছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে। এদিকে এখনো দেশে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। সর্বশেষ যেসব দেশে খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে গড়ে ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ওইসব দেশকে পিঙ্গল বর্ণের তালিকায় ফেলা হয়েছে। ওই তালিকাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি নিরূপণের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশকে পিঙ্গল বর্ণ দিয়ে শনাক্ত করা হয়। এক সময় বাংলাদেশও মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে পিঙ্গল বর্ণ অর্থাৎ অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ছিল। পরে ওই তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ এখন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ঝুঁকিমুক্ত দেশের তালিকায় আছে। যে দেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকবে ওই দেশকে বৈদেশিক বাণিজ্য করতে গেলে বাড়তি কমিশন দিতে হয়, বৈদেশিক ঋণ নিতে গেলেও বাড়তি গ্যারান্টি ফি দিতে হয়। এতে ব্যবসা খরচ বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমকি ১০ শতাংশে উঠেছিল। পরের ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ হার কমে সর্বনিম্ন দশমিক ২৫ শতাংশে নামে। এরপরের দুই ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ডাবল ডিজিট অতিক্রম করে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫৭ শতাংশে। এরপরের তিন অর্থবছরে এ হার ৫ শতাংশের উপরে ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আবার ৫ শতাংশের নিচে অর্থাৎ ৪ দশমিক ২৩ শতাংশে নেমেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এরপর ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ শতাংশের ঘরেই ছিল খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার আবার বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশে ওঠে। ওই সময়ে করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকা ব্যাপক হারে বাজারে ছাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে আবার তা কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশে। ওই অর্থবছরের মে মাসে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির হার কমে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়ায়। যদিও বছরের হিসাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের উপরে ছিল। এরপর থেকে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়। করোনার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকলে তখন মূল্যস্ফীতির হারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ হার বেড়ে ৬ দশমিক ২২ শতাংশে ওঠে। এর আগে এ হার গড়ে ৫ শতাংশের ঘরেই ছিল। ওই মাসের শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। দেখা দেয় বৈশ্বিক মন্দা। এর নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়ে। ফলে বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতির হার। মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে এ হার বাড়তেই থাকে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এ হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে। যা ছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির সমান। এরপর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার টাকা ছাপানো বন্ধ করে। ডলারের দাম স্থিতিশীল করে। পণ্যমূল্য কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও কমতে থাকে।
সম্প্রতি এক মাঠ পর্বেক্ষণে দেখা যায় যে শ্রাবন মাসে উত্তপ্ত সবজির বাজার অস্বস্তিতে ক্রেতারা । হঠাৎ করে সবজির বাজারে এ ধরনের বড় পরিবর্তনের ফলে জনজীবনে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর নিত্যপণ্যের বাজার ক্রেতাদের নাগালে আসা শুরু করে। গত শীত মৌসুমে সবজির বাজারে ছিল স্বস্তি। এমনকি রমজানেও নিত্যপণ্যের বাজার ছিল জনতুষ্টিমূলক। সব ধরনের শাক-সবজি, ডিম, মাছ-মাংসের দাম ছিল সহনীয় পর্যায়ে। তবে রমজানের পর কয়েক দফায় সবজির বাজারে দাম ওঠানামা করে। চলতি সপ্তাহে আবারও হঠাৎ করে বেড়েছে সবজির দাম। রাজধানীর কাঁচামালের বড় আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কাঁচাবাজারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সর্বস্তরের ক্রেতা, বিশেষ করে নিম্নও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে নেই স্বস্তি। আলু, পেঁপেসহ গুটিকয়েক সবজি বাদে প্রায় সব সবজির দাম তুঙ্গে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বারবার চেষ্টা চালানোর পরও চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনতে ব্যর্থ। সরকারি এবং ব্যক্তিগত গোডাউনগুলোতে পর্যাপ্ত ধান মজুত থাকার পরও কমছে না চালের দাম। রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সরকারের দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে আবারও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে রাজধানীর সব বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শাকসবজিসহ নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যপণ্য। আঁটিতেও। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো, গাজর, শসা, ধনেপাতা। এছাড়া দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলার বাজারেও। কেবল আলু এবং পেঁপে ব্যতীত সব ধরনের সবজি এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। একরকম অসহায় হয়ে ক্রেতারা এসব বাজার থেকে চড়া দামে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এসব বাজারের বেশির ভাগ দোকানে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যতালিকা নেই। কোনো কোনো দোকানে থাকলেও তাতে উল্লেখ নেই প্রতিদিনের বাজারমূল্য। কেবলই নিয়ম রক্ষার্থে সাদা মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাজার তদারকিতেও দেখা মেলে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক মাস আগে ন্যায্যমূল্যে সবজি পণ্য সরবরাহের জন্য ‘কৃষকের বাজার’নামে একটি প্রকল্প চালু করলেও তার কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হলেও অধিকাংশ দিনমজুর মানুষ পাচ্ছে না তার সুফল। বিক্রেতাদের দাবি বৃষ্টির কারণে বেড়েছে শাকসবজির দাম। এদিকে দেশে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যা না হওয়ার পরও বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়াকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন ক্রেতারা। বছরের অন্যান্য সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বন্যার অজুহাত কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার তদারকিতে সরকারের দুর্বলতার কারণে আবারও সিন্ডিকেট মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে ইঙ্গিত ক্রেতাদের। অনেকে অভিযোগ করছেন উৎপাদক এবং সরবরাহকারীর বাইরে মধ্যস্বত্বভোগীরা এসব বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলছে। ফলে কোনো কারণ ছাড়াই এক লাফে এসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সম্প্রতি দেশে চাঁদাবাজির ঘটনাও বেড়ে চলেছে। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির কারণে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। মাঠ পর্যায়ে বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিও কাঙ্খিত পর্যায়ে চোখে পড়ছে না। ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ যারা বাজার তদারকিতে দায়িত্বে আছেন ,তারা ঠিকমতো কাজ না করলে এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত দেশের খেটে-খাওয়া শ্রমিকসহ নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনা করে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং যৌথবাহিনীর অভিযান । সাথে সাথে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং দেশের কৃষিখাতকে টিকিয়ে রাখতে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও কার্যকর কৃষি মূল্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক- খানি বাংলাদেশ। কৃষি দেশের সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান খাত হলেও এখানকার উৎপাদকদের জন্য কোনো নির্ধারিত মূল্য নীতি নেই, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পণ্যের অস্থির বাজারমূল্য, উৎপাদন ব্যয় না ওঠা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাকে এই সংকটের চরম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কৃষক যদি তার ফসলটা সংরক্ষণ করতে পারেন তাহলে তারা পরবর্তী সময়ে ন্যায্য দাম পাবেন। এর ফলে পরবর্তী সময়ে কৃষককে অন্যের হাতে চলে যেতে হবে না। এ জায়গাটায় আমার মনে হয় সরকারের একটা বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যাপার থাকবে। এ জায়গায় আরেকটু নজর দিতে হবে, যাতে প্রান্তিক চাষীরা পণ্যগুলো স্টোর করতে পারেন এবং পণ্যের ন্যায্য দামটা ঠিকমতো রাখতে পারেন।
বাংলাদেশের ফলের যে সম্ভাবনা সেটা আসলে আমরা কিছুই কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা ঠিকমতো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাত করে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এখন অনেক উদ্যোগ চালু হয়েছে। হিমাগার থেকে শুরু করে পরিবহন সব জায়গাতেই হাত দেয়া হচ্ছে—এটাকে সাধুবাদ জানাই। সবশেষে, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহ চেইনে যদি কৃষকের নিয়ন্ত্রণ আরেকটু বাড়ানো যায় তাহলে তারা ন্যায্য দাম পেতে পারেন। এজন্য সংরক্ষণ, বিপণনে তাদের সামনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে। আমরা চাই, আমদের কৃষকরা যেন ন্যায্য দাম পান। একই সঙ্গে এটাও চাই, আমাদের ভোক্তারা ভালো পণ্য পাক। চাই।বাংলাদেশের ফলের যে সম্ভাবনা সেটা আসলে আমরা কিছুই কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা ঠিকমতো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাত করে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এখন অনেক উদ্যোগ চালু হয়েছে। হিমাগার থেকে শুরু করে পরিবহন সব জায়গাতেই হাত দেয়া হচ্ছে—এটাকে সাধুবাদ জানাই। সবশেষে, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহ চেইনে যদি কৃষকের নিয়ন্ত্রণ আরেকটু বাড়ানো যায় তাহলে তারা ন্যায্য দাম পেতে পারেন। এজন্য সংরক্ষণ, বিপণনে তাদের সামনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে। আমরা চাই, আমদের কৃষকরা যেন ন্যায্য দাম পান। একই সঙ্গে এটাও চাই, আমাদের ভোক্তারা ভালো পণ্য পাক।
লেখক : অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
বর্তমানে প্রতি মাসে বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের উপরে। একই সময়ে প্রতি মাসে গড়ে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশের বেশি বেড়েছে। পণ্যভেদে দাম আরও বেশি বেড়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির সূচকে ৫ শতাংশের নিচে নামলেই লাল তালিকা থেকে বের হতে পারবে বাংলাদেশ। তবে প্রশ্নটা কবে ? ২০২১ সালের জুন থেকে গত জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ সোয়া ৪ বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায় অবস্থান করছে। বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য চাল, সবজি, ডিম, মুরগিরর দাম বাড়ছে। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে লাল তালিকা থেকে সহসা বের হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেসব দেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে লাল ও পিঙ্গেল বর্ণের (কালচে লাল বা তামাটে রং) তালিকায় থাকবে ওইসব দেশের মুদ্রার মান স্থিতিশীল নয় বলে ধরে নেওয়া হয়। ফলে ওইসব দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ক্ষেত্রে ডলারের প্রবাহ, দাম ও মূল্যস্ফীতির হার সবার আগে পর্যালোচনা করে।
বিশ্বব্যাংক খাদ্য মূল্যস্ফীতির সূচক তৈরির ক্ষেত্রে কিছু ধাপ অনুসরণ করে। এর মধ্যে যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে গড়ে ২ শতাংশের কম বাড়ে ওইসব দেশকে সবুজ তালিকায় রাখে। অর্থাৎ কোনো ঝুঁকি নেই। যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে বাড়ে ওইসব দেশকে হলুদ তালিকায় রাখে। অর্থাৎ দেশটি ঝুঁকির দিকে চলে যাচ্ছে। এখনই খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেসব দেশের খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে বৃদ্ধি পায় তাদের রাখে লাল তালিকায়। ওইসব দেশ খাদ্য মূল্যস্ফীতির দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেমন সবুজ তালিকায় ছিল, তেমনি হলুদ তালিকায়ও ছিল। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের দাম সর্বনিম্ন দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে সবুজ তালিকায় স্থান পেয়েছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ বেড়ে হলুদ তালিকায় ছিল। অন্য সময়গুলোতে ৫ শতাংশের বেশি বেড়ে লাল তালিকায় ওঠেছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, অনেক দেশ বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে লাল তালিকা থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও বাংলাদেশ এখনো পারেনি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও ২০২২ সালে শুরু বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি খুবই ধীর। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার যেমন খুবই ধীর গতিতে কমছে, একই গতিতে কমছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও। জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে। এদিকে এখনো দেশে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে ৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। সর্বশেষ যেসব দেশে খাদ্যপণ্যের দাম প্রতি মাসে গড়ে ৩০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ওইসব দেশকে পিঙ্গল বর্ণের তালিকায় ফেলা হয়েছে। ওই তালিকাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি নিরূপণের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ দেশকে পিঙ্গল বর্ণ দিয়ে শনাক্ত করা হয়। এক সময় বাংলাদেশও মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে পিঙ্গল বর্ণ অর্থাৎ অতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ছিল। পরে ওই তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ এখন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ঝুঁকিমুক্ত দেশের তালিকায় আছে। যে দেশ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় থাকবে ওই দেশকে বৈদেশিক বাণিজ্য করতে গেলে বাড়তি কমিশন দিতে হয়, বৈদেশিক ঋণ নিতে গেলেও বাড়তি গ্যারান্টি ফি দিতে হয়। এতে ব্যবসা খরচ বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমকি ১০ শতাংশে উঠেছিল। পরের ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ হার কমে সর্বনিম্ন দশমিক ২৫ শতাংশে নামে। এরপরের দুই ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ অর্থবছরে খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ডাবল ডিজিট অতিক্রম করে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫৭ শতাংশে। এরপরের তিন অর্থবছরে এ হার ৫ শতাংশের উপরে ছিল। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আবার ৫ শতাংশের নিচে অর্থাৎ ৪ দশমিক ২৩ শতাংশে নেমেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এরপর ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ শতাংশের ঘরেই ছিল খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ হার আবার বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশে ওঠে। ওই সময়ে করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকা ব্যাপক হারে বাজারে ছাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছিল। পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে আবার তা কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশে। ওই অর্থবছরের মে মাসে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির হার কমে ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশে দাঁড়ায়। যদিও বছরের হিসাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের উপরে ছিল। এরপর থেকে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়। করোনার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকলে তখন মূল্যস্ফীতির হারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ হার বেড়ে ৬ দশমিক ২২ শতাংশে ওঠে। এর আগে এ হার গড়ে ৫ শতাংশের ঘরেই ছিল। ওই মাসের শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বৈশ্বিকভাবে পণ্যের দাম বাড়তে থাকে। দেখা দেয় বৈশ্বিক মন্দা। এর নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়ে। ফলে বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতির হার। মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে এ হার বাড়তেই থাকে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে এ হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে। যা ছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির সমান। এরপর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার টাকা ছাপানো বন্ধ করে। ডলারের দাম স্থিতিশীল করে। পণ্যমূল্য কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। ফলে সার্বিক মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি খাদ্য মূল্যস্ফীতির হারও কমতে থাকে।
সম্প্রতি এক মাঠ পর্বেক্ষণে দেখা যায় যে শ্রাবন মাসে উত্তপ্ত সবজির বাজার অস্বস্তিতে ক্রেতারা । হঠাৎ করে সবজির বাজারে এ ধরনের বড় পরিবর্তনের ফলে জনজীবনে তৈরি হয়েছে অস্বস্তি। গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর নিত্যপণ্যের বাজার ক্রেতাদের নাগালে আসা শুরু করে। গত শীত মৌসুমে সবজির বাজারে ছিল স্বস্তি। এমনকি রমজানেও নিত্যপণ্যের বাজার ছিল জনতুষ্টিমূলক। সব ধরনের শাক-সবজি, ডিম, মাছ-মাংসের দাম ছিল সহনীয় পর্যায়ে। তবে রমজানের পর কয়েক দফায় সবজির বাজারে দাম ওঠানামা করে। চলতি সপ্তাহে আবারও হঠাৎ করে বেড়েছে সবজির দাম। রাজধানীর কাঁচামালের বড় আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও কাঁচাবাজারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সর্বস্তরের ক্রেতা, বিশেষ করে নিম্নও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে নেই স্বস্তি। আলু, পেঁপেসহ গুটিকয়েক সবজি বাদে প্রায় সব সবজির দাম তুঙ্গে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বারবার চেষ্টা চালানোর পরও চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনতে ব্যর্থ। সরকারি এবং ব্যক্তিগত গোডাউনগুলোতে পর্যাপ্ত ধান মজুত থাকার পরও কমছে না চালের দাম। রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সরকারের দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে আবারও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে রাজধানীর সব বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শাকসবজিসহ নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যপণ্য। আঁটিতেও। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে টমেটো, গাজর, শসা, ধনেপাতা। এছাড়া দাম বেড়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ মসলার বাজারেও। কেবল আলু এবং পেঁপে ব্যতীত সব ধরনের সবজি এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। একরকম অসহায় হয়ে ক্রেতারা এসব বাজার থেকে চড়া দামে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। এসব বাজারের বেশির ভাগ দোকানে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যতালিকা নেই। কোনো কোনো দোকানে থাকলেও তাতে উল্লেখ নেই প্রতিদিনের বাজারমূল্য। কেবলই নিয়ম রক্ষার্থে সাদা মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাজার তদারকিতেও দেখা মেলে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক মাস আগে ন্যায্যমূল্যে সবজি পণ্য সরবরাহের জন্য ‘কৃষকের বাজার’নামে একটি প্রকল্প চালু করলেও তার কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হলেও অধিকাংশ দিনমজুর মানুষ পাচ্ছে না তার সুফল। বিক্রেতাদের দাবি বৃষ্টির কারণে বেড়েছে শাকসবজির দাম। এদিকে দেশে কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যা না হওয়ার পরও বাজারে সবজির দাম বেড়ে যাওয়াকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছেন ক্রেতারা। বছরের অন্যান্য সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বন্যার অজুহাত কাজে লাগিয়ে পণ্যের দাম বাড়ায় ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার তদারকিতে সরকারের দুর্বলতার কারণে আবারও সিন্ডিকেট মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে বলে ইঙ্গিত ক্রেতাদের। অনেকে অভিযোগ করছেন উৎপাদক এবং সরবরাহকারীর বাইরে মধ্যস্বত্বভোগীরা এসব বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলছে। ফলে কোনো কারণ ছাড়াই এক লাফে এসব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। সম্প্রতি দেশে চাঁদাবাজির ঘটনাও বেড়ে চলেছে। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির কারণে দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। মাঠ পর্যায়ে বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিও কাঙ্খিত পর্যায়ে চোখে পড়ছে না। ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ যারা বাজার তদারকিতে দায়িত্বে আছেন ,তারা ঠিকমতো কাজ না করলে এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত দেশের খেটে-খাওয়া শ্রমিকসহ নিম্ন, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কথা বিবেচনা করে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং যৌথবাহিনীর অভিযান । সাথে সাথে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবং দেশের কৃষিখাতকে টিকিয়ে রাখতে অবিলম্বে একটি স্বাধীন ও কার্যকর কৃষি মূল্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক- খানি বাংলাদেশ। কৃষি দেশের সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান খাত হলেও এখানকার উৎপাদকদের জন্য কোনো নির্ধারিত মূল্য নীতি নেই, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। পণ্যের অস্থির বাজারমূল্য, উৎপাদন ব্যয় না ওঠা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে কৃষকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনাকে এই সংকটের চরম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কৃষক যদি তার ফসলটা সংরক্ষণ করতে পারেন তাহলে তারা পরবর্তী সময়ে ন্যায্য দাম পাবেন। এর ফলে পরবর্তী সময়ে কৃষককে অন্যের হাতে চলে যেতে হবে না। এ জায়গাটায় আমার মনে হয় সরকারের একটা বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যাপার থাকবে। এ জায়গায় আরেকটু নজর দিতে হবে, যাতে প্রান্তিক চাষীরা পণ্যগুলো স্টোর করতে পারেন এবং পণ্যের ন্যায্য দামটা ঠিকমতো রাখতে পারেন।
বাংলাদেশের ফলের যে সম্ভাবনা সেটা আসলে আমরা কিছুই কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা ঠিকমতো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাত করে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এখন অনেক উদ্যোগ চালু হয়েছে। হিমাগার থেকে শুরু করে পরিবহন সব জায়গাতেই হাত দেয়া হচ্ছে—এটাকে সাধুবাদ জানাই। সবশেষে, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহ চেইনে যদি কৃষকের নিয়ন্ত্রণ আরেকটু বাড়ানো যায় তাহলে তারা ন্যায্য দাম পেতে পারেন। এজন্য সংরক্ষণ, বিপণনে তাদের সামনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে। আমরা চাই, আমদের কৃষকরা যেন ন্যায্য দাম পান। একই সঙ্গে এটাও চাই, আমাদের ভোক্তারা ভালো পণ্য পাক। চাই।বাংলাদেশের ফলের যে সম্ভাবনা সেটা আসলে আমরা কিছুই কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা ঠিকমতো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৌসুমি ফল প্রক্রিয়াজাত করে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারি। এখন অনেক উদ্যোগ চালু হয়েছে। হিমাগার থেকে শুরু করে পরিবহন সব জায়গাতেই হাত দেয়া হচ্ছে—এটাকে সাধুবাদ জানাই। সবশেষে, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে সরবরাহ চেইনে যদি কৃষকের নিয়ন্ত্রণ আরেকটু বাড়ানো যায় তাহলে তারা ন্যায্য দাম পেতে পারেন। এজন্য সংরক্ষণ, বিপণনে তাদের সামনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রাখতে হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে। আমরা চাই, আমদের কৃষকরা যেন ন্যায্য দাম পান। একই সঙ্গে এটাও চাই, আমাদের ভোক্তারা ভালো পণ্য পাক।
লেখক : অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
২২ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে । তাতে প্রধান শিক্ষকরা আগে কত টাকা বেতন ও ভাতা পেতেন, আর দশম গ্রেড বাস্তবায়ন হলে কত পাবেন—তা নিয়ে পরিপূর্ণ হিসাব রয়েছে ।
৪ দিন আগেভিওজিএসএস হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ, স্বার্থ ও অগ্রাধিকারসমূহের বিষয়ে আলোচনা করা, ধারণা ও সমাধান বিনিময় করা, এবং উন্নয়ন সমাধান বিনির্মাণে কণ্ঠ ও উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য একটি অভিন্ন মঞ্চ প্রদানের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টা।
৫ দিন আগেবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই খাজা সলিমুল্লাহ, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আল্লামা ইকবাল, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অনুধাবন করেন যে, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকবে। রা
৯ দিন আগেশেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানী নেতাদের প্রতি খারাপ ভাষার ব্যবহার করতে শুনিনি। স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে এনে রাজনীতি করার সুযোগস
৯ দিন আগে