বেনাপোল স্থলবন্দর

বৃষ্টি হলেই শেডে জমে পানি, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার মালামাল

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮: ১১
বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দরে মালামাল রাখার শেডে পানি জমে গিয়ে মালামাল নষ্ট হচ্ছে। ছবি: রাজনীতি ডটকম

বন্দর কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এত দিনেও বেনাপোল বন্দরে পানি নিষ্কাশনের কোনো সুব্যবস্থা তৈরি হয়নি। এ অবস্থায় গত টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দরে কোটি কোটি টাকার পণ্য পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

বন্দর সূত্র বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত মালামালের মধ্যে রয়েছে আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের কাগজ, টেক্সটাইল ডাইস, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, বন্ডের আওতায় গার্মেন্টসের আমদানি করা কাপড় ও সুতাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কাঁচামাল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পানি নিষ্কাশনের পথে কালভার্টগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাচ্ছে বন্দরে। পাশে ছোট আঁচড়ার পানি নিস্কাশনের কালভার্টগুলোর নিচে বেনাপোল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মাটি রেখে বন্ধ করে দেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বুধবার সকালে কালভার্টের নিচে রাখা মাটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে সরিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ করে দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল। বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া।

ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই বন্দরে হাঁটু পানি জমে এমন দুর্ভোগ হলেও সেদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই। অন্যদিকে বন্দরে পড়ে থাকা রাসায়নিক পানিতে মিশে দিন দিন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে শ্রমিকদের।

বেনাপোল বন্দরে বছরে ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। এসব পণ্য রক্ষণাবেক্ষণে বন্দরে ৩৩টি শেড ও তিনটি ওপেন ইয়ার্ড ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড আছে। আকারে ছোট পণ্যগুলো রাখা হয় শেডে, বড় আকারের পণ্য রাখা হয় ওপেন ইয়ার্ডে।

Benapole Port WaterLog News Photo 10-07-2025 (2)

জলাবদ্ধতা থেকে মালামাল রক্ষা করতে শ্রমিকরা জমে থাকা পানি সেচে ফেলার চেষ্টা করেন। ছবি: রাজনীতি ডটকম

তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যাগারগুলো নিচু। এতে বেশি বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পণ্যাগার ও ইয়ার্ডে জলবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

বিভিন্ন সময় এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ব্যবসায়ীরা বন্দর কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হলেও তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এদিকে বন্দরে অগ্নিকাণ্ডে কেমিকেল বজ্র বন্দর অভ্যন্তরে বছরের পর বছর ফেলে রেখায় বৃষ্টির পানিতে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীরা।

বুধবার বেনাপোল বন্দরের ৯, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ও ১৮ নম্বর শেড ঘুরে দেখা গেছে, টানা বর্ষণের কারণে প্রতিটি শেডে বৃষ্টির পানি থই থই করছে। শেডের এনজিও ও শ্রমিকরা জগ, মগ, বালতি দিয়ে পানি বের করে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। এসব শেডে রক্ষিত পণ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এসব শেডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ নম্বর শেডে রাখা মালামাল। এই শেডের ভেতরে প্রায় এক ফুট পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এতে শেডে রাখা মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে, যার অধিকাংশই বন্ডের মাধ্যমে আমদানি করা।

বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সহিদ আলী বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে বন্দরে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় আমাদের শ্রমিকরা কাজ করতে পারে না। প্রতিদিন পানির মধ্য দিয়ে কাজ করতে গিয়ে চুলকানি ও নানা অসুস্থতায় পড়তে হচ্ছে। বন্দরের সড়কের উচ্চতার চেয়ে গুদামগুলো নিচু হওয়ায় পানির স্বাভাবিক নিষ্কাশন সম্ভব হয় না। পানিতে ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য।

বন্দরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক এখনো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সহিদ বলেন, এসব রাসায়নিক বৃষ্টির পানিতে মিশে যাওয়ায় শ্রমিকরা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

Benapole Port WaterLog News Photo 10-07-2025 (3)

পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার এক্সক্যাভেটর দিয়ে কালভার্টের নিচে জমে থাকা মাটি সরিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করা হয়। ছবি: রাজনীতি ডটকম

বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী বকুল মাহবুব বলেন, বন্দরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। কয়েকটি পণ্যাগারে পানি ঢুকে অনেক আমদানিকারকের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বন্দরের ভাড়া প্রতিবছর বাড়লেও বন্দরের উন্নয়নে কোনো কাজ হচ্ছে না। অধিকাংশ অবকাঠামো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হওয়ায় বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই অবস্থা। সরকার এ বন্দর থেকে বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বারবার অভিযোগ করলেও এ পরিস্থিতির উন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এত বড় বাণিজ্যিক স্থাপনায় বছরের পর বছর দুর্দশা চললেও সরকারের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে বেনাপোল স্থলবন্দরের ভেতরে পানি জমে যায়। পানি সরাতে ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলে শার্শার ইউএনওকে নিয়ে বন্দরের পাশে ছোট আঁচড়ার কালভার্টের নিচে রেলওয়ের বন্ধ করে রাখা মাটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

বন্দরের এই উপপরিচালক বলেন, বন্দরের পাশে রেলওয়ের লাইন সংলগ্ন দুটি কালভার্টের নিচের মাটি খননের মাধ্যমে ড্রেন করে বন্দরে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি শেডের মধ্যে ঢুকে পড়া পানি শ্রমিকদের সহায়তায় বের করা হয়। বন্দরে শেডের ভেতরের পানিতে কোনো কোনো শেডের মালামাল ভিজে গেছে।

মামুন কবীর তরফদার আরও বলেন, স্থায়ী কালভার্ট নির্মাণ হলে বন্দরে আর পানি জমে থাকবে না। সেই সঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্যও আর নষ্ট হবে না।

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

মুখ দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেল লিতুন জিরা

হাত-পা ছাড়াই জন্ম হয়েছিল লিতুন জিরার। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার অদম্য মেধা ও ইচ্ছাশক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। মুখ দিয়ে লিখে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এই সাহসী কিশোরী।

১১ ঘণ্টা আগে

মাদরাসা বোর্ডে দেশসেরা ঝালকাঠি এনএস কামিল মাদরাসা

এদিকে ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় ২২২ জন অংশ নিয়ে ২১২ জন কৃতকার্য হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৪ জন জিপিএ-৫ এবং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২১৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২১২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৮ জন।

১১ ঘণ্টা আগে

রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয়ই কমেছে। চলতি বছর বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। এছাড়া, গত বছরের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ কমেছে ৫ হাজার ৭৪৭টি।

১৪ ঘণ্টা আগে

কাদেরের ‘লাগাম টানতে’ আদালতে যাবেন আনিসুল-হাওলাদাররা!

কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই গঠনতন্ত্রে দেওয়া ক্ষমতাবলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হব চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়েছেন জি এম কাদের। সব মিলিয়ে ১১ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় জাপার ভেতর-বাইরে চলছে তোলপাড়।

১৯ ঘণ্টা আগে