দীপক দেব
নিয়োগ ও অপসারণ বিষয়ে দলীয় গঠনতন্ত্রে থাকা চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা বাতিল প্রশ্নে বিভক্তির পথে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এই বিদ্রোহে এবার দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সামনে এসেছেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। জি এম কাদেরকে সরিয়ে গঠনতন্ত্রে থাকা চেয়ারম্যানের একক কর্তৃত্ব খর্ব করাই তাদের লক্ষ্য।
এই বিদ্রোহে যুক্ত হয়েছেন দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আবদুস সাত্তার ও কাজী মামুনুর রশীদসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই। এদের কেউ কেউ দলে ‘রওশনপন্থি’ তথা রওশন এরশাদের অনুসারী বলে পরিচিত। বিভিন্ন সময় জি এম কাদের তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেন বা অব্যাহতি দেন।
এরই মধ্যে আগামী ২৮ জুন অনুষ্ঠেয় জাতীয় পার্টির দশম কেন্দ্রীয় সম্মেলন স্থগিত করেছেন জি এম কাদের। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভেতর থেকে গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার সংশোধনী আনার তৎপরতা টের পেয়ে জি এম কাদের ১৬ জুন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সম্মেলন স্থগিত করেন বলে বিদ্রোহী নেতাদের অভিযোগ।
প্রেস সচিবের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সম্মেলন স্থগিত প্রসঙ্গে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ সম্মেলন কেন্দ্রের হল বরাদ্দ বাতিল করায় ২৮ জুনের সম্মেলন হচ্ছে না। হল বরাদ্দ পাওয়াসাপেক্ষে সম্মেলনের তারিখ ও সময় জানানো হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সম্মেলন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ২০ মে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ২৮ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়।
জাতীয় পার্টির ‘বিদ্রোহী’ নেতারা বলছেন, ওই সভায় এমনও সিদ্ধান্ত হয় যে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বরাদ্দ না পেলে কাকরাইলে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সম্মেলন করা হবে। কিন্তু জি এম কাদের কারও সঙ্গে আলোচনা না করে সম্মেলন স্থগিত করেন।
এ প্রেক্ষাপটে ‘বিদ্রোহী’ নেতারা একই দিন কাকরাইলে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার রয়েছেন এর নেতৃত্বে, যারা যথাক্রমে চেয়ারমান ও মহাসচিব প্রার্থী বলে জানা গেছে।
তাদের এই সমন্বিত উদ্যোগ জি এম কাদেরের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে বলে ধারণা করছেন দলের কেউ কেউ। তবে তারা এ-ও বলেছেন, জাতীয় পার্টির সাধারণ নেতাকর্মীরা মূল স্রোতের বাইরে যাবেন না।
এসব বিষয়ে জানতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই জি এম কাদের গণমাধ্যমের সামনে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এসব বিষয় নিয়েও দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা চেয়ারম্যানের ওপর নাখোশ।’
জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে চুন্নু বলেন, ‘দলীয় ফান্ডে কত টাকা আছে এবং কত টাকা খরচ করা হয়েছে, তার একটি হিসাব চেয়ারম্যানের কাছে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো জবাব দেননি। এ বিষয়টি নিয়েও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে।’
দলে বিদ্রোহী কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে বিতর্কিত ধারা-২০-এর (ক) উপধারা সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিনের। কারণ এই ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির চেয়ারম্যান যেকোনো পদে যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, অপসারণ ও তার স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন। ধারাটি অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী বলা হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই।
মুজিবুল হক চুন্নু রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারা নিয়ে আমিসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আপত্তি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। বারবার বললেও তিনি এখনো কিছু জানাননি এ বিষয়ে। আমি জানিয়েছি, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে উনার সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না।’
জি এম কাদের স্থগিত করলেও ২৮ জুন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা কাউন্সিল করার উদ্যোগ নিলে মহাসচিব হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকবেন কি না— এ প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের অবস্থান জানার জন্য আরও দুই-তিন দিন অপেক্ষা করব। এরপর আমার রাজনৈতিক সতীর্থ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
গঠনতন্ত্রের ওই ধারা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে জাপার একটি অংশকে নির্বাচনে নেওয়ার টোপ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রলুব্ধ হয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ জাতীয় পার্টির সম্মেলন ও দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০-ধারার (ক) উপধারাকে নতুন করে সামনে আনছেন। অথচ এই নেতারা গঠনতন্ত্র মেনেই এত দিন দলের রাজনীতি করেছেন, অনেকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের মতো কয়েকটি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চান দলের কয়েকজন নেতা, যাদের লক্ষ্য মন্ত্রী-এমপি হওয়া। এই ছয়-সাতজনের জন্যই আজ পার্টির এই অবস্থা। তবে জি এম কাদের ন্যায়পরায়ণ। আমার বিশ্বাস, তিনি কোনোভাবেই জাতীয় পার্টি ধ্বংস হতে দেবেন না।’
দলীয় গঠনতন্ত্রে ২০ ধারার (ক) উপধারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলমগীর সিকদার বলেন, ‘এত বছর যারা মহাসচিব ছিলেন তারা এ ইস্যু নিয়ে কেন কথা বলেননি? এখন সম্মেলনের আগে ও দেশের রাজনীতির এই ক্রান্তিকালে প্রসঙ্গটি তোলা উদ্দেশ্যমূলক। সম্মেলন শেষে প্রেসিডিয়ামের সভায় এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা হতে পারে। এখন এই আলোচনার সঠিক সময় নয়।’
জাপার কয়েকজনের নেতা সরকারের একাংশের সমর্থন পাচ্ছে বলে গুঞ্জনের কথা জানিয়ে দলটির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও বলেন, ‘কয়েকজন নেতা সরকারের একটি অংশের সমর্থন পাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারাই ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের সুবিধাভোগী। কিন্তু এবারের নির্বাচন আর আগের এসব নির্বাচন যে এক নয়, এটা হয়তো তারা বুঝতে পারছেন না। তারপরও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য কেউ কেউ যা করছেন, তাকে দুষ্টুমি বলা চলে।’
এদিকে গঠনতন্ত্র ও কাউন্সিল ঘিরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাট্টা হওয়ার খবর চাউর হওয়ার পর জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাতে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, জাতীয় পার্টি ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে শিগগিরিই সংবাদ সম্মেলন করবেন জি এম কাদের। তাই আপাতত তাকে ফোন না করতে অনুরোধ করা হয়েছে গণমাধ্যমের প্রতি।
জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদায় জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেই এসব বিষয়ে কথা বলবেন। দিন-তারিখ চূড়ান্ত হলেই গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাননি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলীয় গঠনতন্ত্র ও সম্মেলনের বিষয়টি সামনে থাকলেও জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় চেয়ারম্যানকে বাদ দেওয়ার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দলের একটি অংশ। তাতে অনেকটাই একত্রিত হয়েছেন রওশনপন্থি নেতারা।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও জাতীয় পার্টিতে এমন ঘটনাই ঘটেছিল। ওই সময়কার জাপা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ও জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এবারও সে অংশটিকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে জাপায় ভাঙন ধরানোর চেষ্টা চলছে বলে আলোচনা রয়েছে পার্টির ভেতরেই।
জাপার এই রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, জাতীয় পার্টি বরাবরই ‘ওয়ান ম্যান’-নির্ভর একটি পার্টি। এরশাদের নেতৃত্বে দলটি গঠনের সময় সেভাবেই দলীয় গঠনতন্ত্র হয়েছে। সেটাকে মেনে নিয়েই দলের নেতাকর্মীরা এতদিন রাজনীতি করেছেন। এটা কেউ মানতে না চাইলে তাতে দলের কিছু যাবে-আসবে না।’
দলটিতে ভাঙন ধরলেও তাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন মহিউদ্দিন আহমদ। বলেন, ‘জাপা নতুন করে ভাঙানোর মুখে পড়লেও কিছু যাবে-আসবে না। কারণ বর্তমান জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা একেবারেই কম। তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বাফার হিসেবে কাজ করত। সেটার উপযোগিতা এখন একদমই নেই।’
আওয়ামী লীগ না থাকায় জাপা শেকড়বিহীন হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘জাপার গুরুত্ব বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এটি একেবারেই পারিবারিক পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর পর সব সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া হতো। দলের নেতৃত্বও ঠিক করে দিত আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে আঁকড়ে ধরে দলটি এতদিন দাঁড়িয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ না থাকায় তারা এখন শেকড়বিহীন হয়ে গেছে।’
‘আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টির আলাদা কোনো নীতি না থাকায় জাতীয় রাজনীতিতে এই পার্টির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে,’— এমন মন্তব্যই করলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
নিয়োগ ও অপসারণ বিষয়ে দলীয় গঠনতন্ত্রে থাকা চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা বাতিল প্রশ্নে বিভক্তির পথে জাতীয় পার্টি (জাপা)। এই বিদ্রোহে এবার দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সামনে এসেছেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। জি এম কাদেরকে সরিয়ে গঠনতন্ত্রে থাকা চেয়ারম্যানের একক কর্তৃত্ব খর্ব করাই তাদের লক্ষ্য।
এই বিদ্রোহে যুক্ত হয়েছেন দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আবদুস সাত্তার ও কাজী মামুনুর রশীদসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই। এদের কেউ কেউ দলে ‘রওশনপন্থি’ তথা রওশন এরশাদের অনুসারী বলে পরিচিত। বিভিন্ন সময় জি এম কাদের তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেন বা অব্যাহতি দেন।
এরই মধ্যে আগামী ২৮ জুন অনুষ্ঠেয় জাতীয় পার্টির দশম কেন্দ্রীয় সম্মেলন স্থগিত করেছেন জি এম কাদের। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভেতর থেকে গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার সংশোধনী আনার তৎপরতা টের পেয়ে জি এম কাদের ১৬ জুন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে সম্মেলন স্থগিত করেন বলে বিদ্রোহী নেতাদের অভিযোগ।
প্রেস সচিবের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সম্মেলন স্থগিত প্রসঙ্গে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ সম্মেলন কেন্দ্রের হল বরাদ্দ বাতিল করায় ২৮ জুনের সম্মেলন হচ্ছে না। হল বরাদ্দ পাওয়াসাপেক্ষে সম্মেলনের তারিখ ও সময় জানানো হবে।
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সম্মেলন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ২০ মে দলের প্রেসিডিয়াম সভায় ২৮ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়।
জাতীয় পার্টির ‘বিদ্রোহী’ নেতারা বলছেন, ওই সভায় এমনও সিদ্ধান্ত হয় যে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বরাদ্দ না পেলে কাকরাইলে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সম্মেলন করা হবে। কিন্তু জি এম কাদের কারও সঙ্গে আলোচনা না করে সম্মেলন স্থগিত করেন।
এ প্রেক্ষাপটে ‘বিদ্রোহী’ নেতারা একই দিন কাকরাইলে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার রয়েছেন এর নেতৃত্বে, যারা যথাক্রমে চেয়ারমান ও মহাসচিব প্রার্থী বলে জানা গেছে।
তাদের এই সমন্বিত উদ্যোগ জি এম কাদেরের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে বলে ধারণা করছেন দলের কেউ কেউ। তবে তারা এ-ও বলেছেন, জাতীয় পার্টির সাধারণ নেতাকর্মীরা মূল স্রোতের বাইরে যাবেন না।
এসব বিষয়ে জানতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদারের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আগস্টের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই জি এম কাদের গণমাধ্যমের সামনে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এসব বিষয় নিয়েও দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা চেয়ারম্যানের ওপর নাখোশ।’
জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে চুন্নু বলেন, ‘দলীয় ফান্ডে কত টাকা আছে এবং কত টাকা খরচ করা হয়েছে, তার একটি হিসাব চেয়ারম্যানের কাছে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো জবাব দেননি। এ বিষয়টি নিয়েও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি রয়েছে।’
দলে বিদ্রোহী কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে বিতর্কিত ধারা-২০-এর (ক) উপধারা সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিনের। কারণ এই ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির চেয়ারম্যান যেকোনো পদে যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, অপসারণ ও তার স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন। ধারাটি অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী বলা হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই।
মুজিবুল হক চুন্নু রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার (ক) উপধারা নিয়ে আমিসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা আপত্তি জানিয়ে আসছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। বারবার বললেও তিনি এখনো কিছু জানাননি এ বিষয়ে। আমি জানিয়েছি, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে উনার সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না।’
জি এম কাদের স্থগিত করলেও ২৮ জুন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা কাউন্সিল করার উদ্যোগ নিলে মহাসচিব হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকবেন কি না— এ প্রশ্নের জবাবে চুন্নু বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের অবস্থান জানার জন্য আরও দুই-তিন দিন অপেক্ষা করব। এরপর আমার রাজনৈতিক সতীর্থ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
গঠনতন্ত্রের ওই ধারা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে জাপার একটি অংশকে নির্বাচনে নেওয়ার টোপ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রলুব্ধ হয়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ জাতীয় পার্টির সম্মেলন ও দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০-ধারার (ক) উপধারাকে নতুন করে সামনে আনছেন। অথচ এই নেতারা গঠনতন্ত্র মেনেই এত দিন দলের রাজনীতি করেছেন, অনেকে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের মতো কয়েকটি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চান দলের কয়েকজন নেতা, যাদের লক্ষ্য মন্ত্রী-এমপি হওয়া। এই ছয়-সাতজনের জন্যই আজ পার্টির এই অবস্থা। তবে জি এম কাদের ন্যায়পরায়ণ। আমার বিশ্বাস, তিনি কোনোভাবেই জাতীয় পার্টি ধ্বংস হতে দেবেন না।’
দলীয় গঠনতন্ত্রে ২০ ধারার (ক) উপধারা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলমগীর সিকদার বলেন, ‘এত বছর যারা মহাসচিব ছিলেন তারা এ ইস্যু নিয়ে কেন কথা বলেননি? এখন সম্মেলনের আগে ও দেশের রাজনীতির এই ক্রান্তিকালে প্রসঙ্গটি তোলা উদ্দেশ্যমূলক। সম্মেলন শেষে প্রেসিডিয়ামের সভায় এ নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা হতে পারে। এখন এই আলোচনার সঠিক সময় নয়।’
জাপার কয়েকজনের নেতা সরকারের একাংশের সমর্থন পাচ্ছে বলে গুঞ্জনের কথা জানিয়ে দলটির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও বলেন, ‘কয়েকজন নেতা সরকারের একটি অংশের সমর্থন পাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারাই ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের সুবিধাভোগী। কিন্তু এবারের নির্বাচন আর আগের এসব নির্বাচন যে এক নয়, এটা হয়তো তারা বুঝতে পারছেন না। তারপরও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য কেউ কেউ যা করছেন, তাকে দুষ্টুমি বলা চলে।’
এদিকে গঠনতন্ত্র ও কাউন্সিল ঘিরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাট্টা হওয়ার খবর চাউর হওয়ার পর জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। মঙ্গলবার (১৭ জুন) রাতে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, জাতীয় পার্টি ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে শিগগিরিই সংবাদ সম্মেলন করবেন জি এম কাদের। তাই আপাতত তাকে ফোন না করতে অনুরোধ করা হয়েছে গণমাধ্যমের প্রতি।
জানতে চাইলে যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদায় জাপা চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেই এসব বিষয়ে কথা বলবেন। দিন-তারিখ চূড়ান্ত হলেই গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাননি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলীয় গঠনতন্ত্র ও সম্মেলনের বিষয়টি সামনে থাকলেও জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় চেয়ারম্যানকে বাদ দেওয়ার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দলের একটি অংশ। তাতে অনেকটাই একত্রিত হয়েছেন রওশনপন্থি নেতারা।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও জাতীয় পার্টিতে এমন ঘটনাই ঘটেছিল। ওই সময়কার জাপা চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ এম এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ ও জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এবারও সে অংশটিকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে জাপায় ভাঙন ধরানোর চেষ্টা চলছে বলে আলোচনা রয়েছে পার্টির ভেতরেই।
জাপার এই রাজনৈতিক সংকট নিয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, জাতীয় পার্টি বরাবরই ‘ওয়ান ম্যান’-নির্ভর একটি পার্টি। এরশাদের নেতৃত্বে দলটি গঠনের সময় সেভাবেই দলীয় গঠনতন্ত্র হয়েছে। সেটাকে মেনে নিয়েই দলের নেতাকর্মীরা এতদিন রাজনীতি করেছেন। এটা কেউ মানতে না চাইলে তাতে দলের কিছু যাবে-আসবে না।’
দলটিতে ভাঙন ধরলেও তাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন মহিউদ্দিন আহমদ। বলেন, ‘জাপা নতুন করে ভাঙানোর মুখে পড়লেও কিছু যাবে-আসবে না। কারণ বর্তমান জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা একেবারেই কম। তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বাফার হিসেবে কাজ করত। সেটার উপযোগিতা এখন একদমই নেই।’
আওয়ামী লীগ না থাকায় জাপা শেকড়বিহীন হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘জাপার গুরুত্ব বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এটি একেবারেই পারিবারিক পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর পর সব সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া হতো। দলের নেতৃত্বও ঠিক করে দিত আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে আঁকড়ে ধরে দলটি এতদিন দাঁড়িয়ে ছিল। আওয়ামী লীগ না থাকায় তারা এখন শেকড়বিহীন হয়ে গেছে।’
‘আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে জাতীয় পার্টির আলাদা কোনো নীতি না থাকায় জাতীয় রাজনীতিতে এই পার্টির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে,’— এমন মন্তব্যই করলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। আজ বুধবার দুপুরে নগর ভবনে চলমান টানা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন।
১২ ঘণ্টা আগেপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে সাক্ষাৎ এবং চুরি যাওয়া সম্পদ উদ্ধারে বাস্তব অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেআইন অনুযায়ী শপথ না নিয়ে এই বিএনপি নেতা মেয়রের হিসেবে এমন দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন যেভাবে শপথ ছাড়াই নগর ভবনে মেয়রের ভূমিকায় বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন, আইনিভাবে তা তিনি পারেন না।
১ দিন আগে