ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ম্যাট্রিক বা বর্তমানে যেটিকে এসএসসি (সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা বলা হয়, সেটি শুধু একটি পরীক্ষা নয়—এটি একজন শিক্ষার্থীর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একদিকে যেমন শিক্ষাজীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হয়, তেমনি অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার দিকেও দরজা খুলে যায়। কিন্তু এই এসএসসি বা ম্যাট্রিক পরীক্ষার রীতি আজ যেমন প্রচলিত, সেটা তো এমনিই আসেনি। এর রয়েছে একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।
বাংলাদেশ যখন ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল, সেই সময় থেকেই এই ম্যাট্রিক পরীক্ষা চালু হয়েছিল। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এই অঞ্চলে প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার প্রবর্তন হয় ১৮৫৭ সালে, যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় সেই সময় পুরো বঙ্গপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, অসম, এমনকি বার্মা পর্যন্ত শিক্ষাগত নিয়ন্ত্রণ করত। শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে তাদের একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হতো, আর সেই মানদণ্ড নির্ধারণ করতেই চালু হয় ‘ম্যাট্রিকুলেশন’ নামের এই পরীক্ষা।
‘ম্যাট্রিক’ শব্দটি এসেছে ইংরেজি “Matriculation” শব্দ থেকে, যার অর্থ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই পরীক্ষা প্রথম নেওয়া শুরু হলে শিক্ষার্থীরা তখন নওগাঁ, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশ নিত। সেই সময় পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল খুবই সীমিত এবং শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেই মূলত এই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল।
এই অঞ্চলে শিক্ষার বিস্তার এবং জাতিগত-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তনের দরকার দেখা দেয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ভেঙে ১৯০৪ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, যারা শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতা আনে।
একটি ভালো ও কার্যকর শিক্ষানীতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে ১৯১৭ সালে সরকার একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে। এই কমিশন 'কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' নামে পরিচিত হলেও, ‘স্যাডলার কমিশন’ নামেই বেশি পরিচিত। ১৯১৯ সালে তারা তাদের সুপারিশমালা প্রকাশ করে। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ম্যাট্রিক এবং ইন্টারমিডিয়েট স্তরের পরীক্ষা পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব।
স্যাডলার কমিশনের সেই সুপারিশ অনুসারেই ১৯২১ সালে একই সময়ে গঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা। তখন ঢাকা শহরের সব কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে রূপান্তর করা হয়। এসব কলেজসহ শহরের মাধ্যমিক ইংরেজি বিদ্যালয়গুলোকে ঢাকা বোর্ডের অধীনে আনা হয়।
তখনকার বাংলা ও আসাম প্রদেশে ইসলামি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরের সব পরীক্ষা পরিচালিত হতো একটি অ্যাডভাইজারি বোর্ডের মাধ্যমে। এই পরীক্ষাগুলো পরিচালনা করতেন জনশিক্ষা পরিচালক বা ডিপিআই।
ব্রিটিশ আমলে এই ম্যাট্রিক পরীক্ষা ছিল অত্যন্ত কঠিন। প্রশ্নপত্রে ইংরেজি ভাষার আধিক্য, কঠিন গণিত ও সাহিত্য বিষয়ক প্রশ্ন থাকত। পরীক্ষার সময়কাল ছিল প্রায় দুই সপ্তাহ। পরীক্ষার্থীদের খাতা ব্রিটিশ অধ্যাপকদের কাছে পাঠানো হতো, যারা নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খাতা মূল্যায়ন করতেন। অনেক সময় তারা ভারতীয় ছাত্রদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করত বলেও অভিযোগ রয়েছে ইতিহাসবিদদের লেখায়।
ভারত ভাগ ও পাকিস্তান গঠনের পর ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে একটি অধ্যাদেশ জারি করে পূর্ববঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়। এর ফলে পূর্ববঙ্গের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা এই বোর্ডের অধীনে আসে। আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ও পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। পরে ১৯৫৫ সালে পূর্ববঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড’।
এরপর ১৯৬১ সালে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার দায়িত্ব আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের পুরো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পড়ে ঢাকা বোর্ডের ওপর। পরে এই বোর্ডের নাম হয় ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড’।
কিছুদিন পর স্কুল ও কলেজের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডের ওপর চাপ বাড়ে। তাই ১৯৬২ সালে ঢাকার বাইরের তিনটি বিভাগ—রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় নতুন তিনটি শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডগুলো এখন রাজশাহী, কুমিল্লা ও যশোরে অবস্থিত। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামে আরও একটি বোর্ড চালু হয়। এরপর নবগঠিত সিলেট ও বরিশাল বিভাগেও শিক্ষা বোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকে।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা নামে একটি ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। এই ধারায় এসএসসি’র সমমানের পরীক্ষা ‘দাখিল’ এবং এইচএসসি’র সমমানের পরীক্ষা ‘আলিম’ নামে পরিচিত। তেমনি স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষা হয় ‘ফাজিল’ নামে এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ‘কামিল’ পরীক্ষা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষার সব পরীক্ষা পরিচালনা করে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান—বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে।
টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষায় বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। স্নাতক পর্যায়ে টেক্সটাইল টেকনোলজি, লেদার টেকনোলজি ও টেকনিক্যাল বিষয়ে যে বি.এসসি ডিগ্রিগুলো দেওয়া হয়, সেগুলোর পরীক্ষা নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আর ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সগুলোর পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ড ১৯৬৭ সালে গঠিত হলেও ১৯৬৯ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বোর্ডটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ১৯৯১ সালের আগে দেশের সব স্নাতক কলেজ ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, সনদ ও পাঠক্রমের দায়িত্বও ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর।
পরে ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর দেশের সব স্নাতক কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ বাদে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়। এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে আরও গুরুত্ব দিতে পারে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ দেওয়া হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের সব স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলেজের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই স্বায়ত্তশাসিত।
২০০১ সালের আগে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হতো নম্বরের ভিত্তিতে। গড়ে ৩৬ শতাংশ নম্বর পেলেই একজন পরীক্ষার্থী পাশ করতেন। ৩৬ থেকে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেলে তৃতীয় বিভাগ, ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে পেলে দ্বিতীয় বিভাগ এবং ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতেন। যাঁরা ৭৫ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেতেন, তাঁদের দেওয়া হতো ‘স্টার মার্কস’। তখন নম্বরের ভিত্তিতে মেধা তালিকা তৈরি হতো।
২০০১ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০০৩ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। এখন ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে পাওয়া যায় জিপিএ-৫, ৭০–৭৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-৪, ৬০–৬৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-৩.৫, ৫০–৫৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-৩, ৪০–৪৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-২ এবং ৩৩–৩৯ শতাংশ নম্বর পেলে জিপিএ-১ পাওয়া যায়।
আগের শিক্ষানীতি নিয়ে অনেক সমালোচনাও ছিল। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করতেন, শুধু নম্বরের পেছনে ছুটতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা হারাচ্ছে। ফলে ২০১০ সালের পর থেকে ‘সৃজনশীল প্রশ্নপত্র’ চালু হয়, যেখানে মুখস্থ বিদ্যার চেয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা যাচাইয়ের চেষ্টা করা হয়।
করোনা মহামারির সময় এসএসসি পরীক্ষার ধরনে বড় পরিবর্তন আসে। সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়। পরীক্ষার গুরুত্ব নিয়েও সমাজে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, এত কম বয়সে এত বড় পরীক্ষার চাপ কতটা যুক্তিসংগত। আবার কেউ কেউ বলেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী শেখে—জীবনে সফল হতে হলে কষ্ট করতে হয়, শৃঙ্খলা মানতে হয়।
আজকের দিনে এসএসসি শুধু একাডেমিক মূল্যায়নের মাপকাঠি নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এই পরীক্ষার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, সময়ের প্রয়োজনে কিভাবে এটি রূপ বদলেছে, নিজের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছে এবং একসময়কার ব্রিটিশ কলোনির 'ম্যাট্রিকুলেশন' কিভাবে হয়ে উঠেছে স্বাধীন বাংলাদেশের 'এসএসসি'।
শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান একবার বলেছিলেন, “এসএসসি পরীক্ষা আমাদের সমাজে শুধু একজন ছাত্রের নয়, বরং একটি পরিবারের, একটি গ্রামের সম্মান ও স্বপ্ন বহন করে।” এই কথাটিই প্রমাণ করে, কেন এই পরীক্ষাটি আমাদের দেশে এত গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে বলা যায়, সময় বদলেছে, পরীক্ষার কাঠামো বদলেছে, কিন্তু ম্যাট্রিক বা এসএসসি পরীক্ষার গুরুত্ব এখনও একই রকম রয়ে গেছে। এটি একদিকে যেমন শিক্ষার এক ধাপ অতিক্রম করার বিষয়, তেমনি জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। আগামী দিনে এই পরীক্ষার কাঠামো ও মূল্যায়ন আরও আধুনিক ও শিক্ষাবান্ধব হবে— এটাই প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ম্যাট্রিক বা বর্তমানে যেটিকে এসএসসি (সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষা বলা হয়, সেটি শুধু একটি পরীক্ষা নয়—এটি একজন শিক্ষার্থীর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একদিকে যেমন শিক্ষাজীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হয়, তেমনি অন্যদিকে উচ্চশিক্ষার দিকেও দরজা খুলে যায়। কিন্তু এই এসএসসি বা ম্যাট্রিক পরীক্ষার রীতি আজ যেমন প্রচলিত, সেটা তো এমনিই আসেনি। এর রয়েছে একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।
বাংলাদেশ যখন ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল, সেই সময় থেকেই এই ম্যাট্রিক পরীক্ষা চালু হয়েছিল। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এই অঞ্চলে প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার প্রবর্তন হয় ১৮৫৭ সালে, যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় সেই সময় পুরো বঙ্গপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, অসম, এমনকি বার্মা পর্যন্ত শিক্ষাগত নিয়ন্ত্রণ করত। শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে তাদের একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হতো, আর সেই মানদণ্ড নির্ধারণ করতেই চালু হয় ‘ম্যাট্রিকুলেশন’ নামের এই পরীক্ষা।
‘ম্যাট্রিক’ শব্দটি এসেছে ইংরেজি “Matriculation” শব্দ থেকে, যার অর্থ কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই পরীক্ষা প্রথম নেওয়া শুরু হলে শিক্ষার্থীরা তখন নওগাঁ, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশ নিত। সেই সময় পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল খুবই সীমিত এবং শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেই মূলত এই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল।
এই অঞ্চলে শিক্ষার বিস্তার এবং জাতিগত-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তনের দরকার দেখা দেয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ভেঙে ১৯০৪ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, যারা শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থার ভিন্নতা আনে।
একটি ভালো ও কার্যকর শিক্ষানীতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে ১৯১৭ সালে সরকার একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে। এই কমিশন 'কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' নামে পরিচিত হলেও, ‘স্যাডলার কমিশন’ নামেই বেশি পরিচিত। ১৯১৯ সালে তারা তাদের সুপারিশমালা প্রকাশ করে। এই সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ম্যাট্রিক এবং ইন্টারমিডিয়েট স্তরের পরীক্ষা পরিচালনার জন্য একটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব।
স্যাডলার কমিশনের সেই সুপারিশ অনুসারেই ১৯২১ সালে একই সময়ে গঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা। তখন ঢাকা শহরের সব কলেজকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে রূপান্তর করা হয়। এসব কলেজসহ শহরের মাধ্যমিক ইংরেজি বিদ্যালয়গুলোকে ঢাকা বোর্ডের অধীনে আনা হয়।
তখনকার বাংলা ও আসাম প্রদেশে ইসলামি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরের সব পরীক্ষা পরিচালিত হতো একটি অ্যাডভাইজারি বোর্ডের মাধ্যমে। এই পরীক্ষাগুলো পরিচালনা করতেন জনশিক্ষা পরিচালক বা ডিপিআই।
ব্রিটিশ আমলে এই ম্যাট্রিক পরীক্ষা ছিল অত্যন্ত কঠিন। প্রশ্নপত্রে ইংরেজি ভাষার আধিক্য, কঠিন গণিত ও সাহিত্য বিষয়ক প্রশ্ন থাকত। পরীক্ষার সময়কাল ছিল প্রায় দুই সপ্তাহ। পরীক্ষার্থীদের খাতা ব্রিটিশ অধ্যাপকদের কাছে পাঠানো হতো, যারা নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে খাতা মূল্যায়ন করতেন। অনেক সময় তারা ভারতীয় ছাত্রদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করত বলেও অভিযোগ রয়েছে ইতিহাসবিদদের লেখায়।
ভারত ভাগ ও পাকিস্তান গঠনের পর ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে একটি অধ্যাদেশ জারি করে পূর্ববঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়। এর ফলে পূর্ববঙ্গের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা এই বোর্ডের অধীনে আসে। আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ও পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। পরে ১৯৫৫ সালে পূর্ববঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড’।
এরপর ১৯৬১ সালে গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার দায়িত্ব আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে বোর্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের পুরো উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার দেখভাল ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পড়ে ঢাকা বোর্ডের ওপর। পরে এই বোর্ডের নাম হয় ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড’।
কিছুদিন পর স্কুল ও কলেজের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডের ওপর চাপ বাড়ে। তাই ১৯৬২ সালে ঢাকার বাইরের তিনটি বিভাগ—রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনায় নতুন তিনটি শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়। এই বোর্ডগুলো এখন রাজশাহী, কুমিল্লা ও যশোরে অবস্থিত। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামে আরও একটি বোর্ড চালু হয়। এরপর নবগঠিত সিলেট ও বরিশাল বিভাগেও শিক্ষা বোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আয়োজন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকে।
সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা নামে একটি ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। এই ধারায় এসএসসি’র সমমানের পরীক্ষা ‘দাখিল’ এবং এইচএসসি’র সমমানের পরীক্ষা ‘আলিম’ নামে পরিচিত। তেমনি স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষা হয় ‘ফাজিল’ নামে এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ‘কামিল’ পরীক্ষা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষার সব পরীক্ষা পরিচালনা করে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান—বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালে।
টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষায় বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স রয়েছে। স্নাতক পর্যায়ে টেক্সটাইল টেকনোলজি, লেদার টেকনোলজি ও টেকনিক্যাল বিষয়ে যে বি.এসসি ডিগ্রিগুলো দেওয়া হয়, সেগুলোর পরীক্ষা নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আর ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সগুলোর পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ড ১৯৬৭ সালে গঠিত হলেও ১৯৬৯ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। বোর্ডটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ১৯৯১ সালের আগে দেশের সব স্নাতক কলেজ ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। কলেজের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, সনদ ও পাঠক্রমের দায়িত্বও ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর।
পরে ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর দেশের সব স্নাতক কলেজ, টেকনিক্যাল কলেজ বাদে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়। এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের নিজ নিজ শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে আরও গুরুত্ব দিতে পারে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ দেওয়া হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের সব স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলেজের পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই স্বায়ত্তশাসিত।
২০০১ সালের আগে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হতো নম্বরের ভিত্তিতে। গড়ে ৩৬ শতাংশ নম্বর পেলেই একজন পরীক্ষার্থী পাশ করতেন। ৩৬ থেকে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেলে তৃতীয় বিভাগ, ৪৫ থেকে ৬০ শতাংশের মধ্যে পেলে দ্বিতীয় বিভাগ এবং ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হতেন। যাঁরা ৭৫ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেতেন, তাঁদের দেওয়া হতো ‘স্টার মার্কস’। তখন নম্বরের ভিত্তিতে মেধা তালিকা তৈরি হতো।
২০০১ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০০৩ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। এখন ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেলে পাওয়া যায় জিপিএ-৫, ৭০–৭৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-৪, ৬০–৬৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-৩.৫, ৫০–৫৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-৩, ৪০–৪৯ শতাংশ পেলে জিপিএ-২ এবং ৩৩–৩৯ শতাংশ নম্বর পেলে জিপিএ-১ পাওয়া যায়।
আগের শিক্ষানীতি নিয়ে অনেক সমালোচনাও ছিল। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করতেন, শুধু নম্বরের পেছনে ছুটতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা হারাচ্ছে। ফলে ২০১০ সালের পর থেকে ‘সৃজনশীল প্রশ্নপত্র’ চালু হয়, যেখানে মুখস্থ বিদ্যার চেয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা যাচাইয়ের চেষ্টা করা হয়।
করোনা মহামারির সময় এসএসসি পরীক্ষার ধরনে বড় পরিবর্তন আসে। সময়সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়। পরীক্ষার গুরুত্ব নিয়েও সমাজে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, এত কম বয়সে এত বড় পরীক্ষার চাপ কতটা যুক্তিসংগত। আবার কেউ কেউ বলেন, এই পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী শেখে—জীবনে সফল হতে হলে কষ্ট করতে হয়, শৃঙ্খলা মানতে হয়।
আজকের দিনে এসএসসি শুধু একাডেমিক মূল্যায়নের মাপকাঠি নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এই পরীক্ষার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, সময়ের প্রয়োজনে কিভাবে এটি রূপ বদলেছে, নিজের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছে এবং একসময়কার ব্রিটিশ কলোনির 'ম্যাট্রিকুলেশন' কিভাবে হয়ে উঠেছে স্বাধীন বাংলাদেশের 'এসএসসি'।
শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান একবার বলেছিলেন, “এসএসসি পরীক্ষা আমাদের সমাজে শুধু একজন ছাত্রের নয়, বরং একটি পরিবারের, একটি গ্রামের সম্মান ও স্বপ্ন বহন করে।” এই কথাটিই প্রমাণ করে, কেন এই পরীক্ষাটি আমাদের দেশে এত গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে বলা যায়, সময় বদলেছে, পরীক্ষার কাঠামো বদলেছে, কিন্তু ম্যাট্রিক বা এসএসসি পরীক্ষার গুরুত্ব এখনও একই রকম রয়ে গেছে। এটি একদিকে যেমন শিক্ষার এক ধাপ অতিক্রম করার বিষয়, তেমনি জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। আগামী দিনে এই পরীক্ষার কাঠামো ও মূল্যায়ন আরও আধুনিক ও শিক্ষাবান্ধব হবে— এটাই প্রত্যাশা।
বেরিবেরি রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়— ‘ওয়েট বেরিবেরি’ ও ‘ড্রাই বেরিবেরি’। ওয়েট বেরিবেরিতে মূলত হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। আর ড্রাই বেরিবেরিতে প্রভাব পড়ে স্নায়ুতন্ত্রে। ড্রাই বেরিবেরিতে আক্রান্ত ব্যক্তির -পায়ে ঝিনঝিন অনুভব হয়, হাঁটতে কষ্ট হয়, পায়ের পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে।
১০ ঘণ্টা আগেঅতি ভারী বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ভারী বৃষ্টির ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরের কিছু এলাকায় অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।
১ দিন আগেডেউয়া দেখতে অনেকটা ছোট কাঁঠালের মতো হলেও এর গঠন অনেকটা ভিন্ন। বাইরের অংশে হালকা কাঁটার মতো টান টান অংশ থাকে, কিন্তু ভেতরের অংশ অনেকটাই কোমল, খাওয়ার সময় জিভে এক ধরণের টক-মিষ্টি অনুভূতি দেয়।
১ দিন আগেইরাণের পারমাণবিক কর্মসূচির গোড়া পত্তন হয় ১৯৫০-এর দশকে। তখন দেশটির শাসন ক্ষমতায় ছিলেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি, ইরাণের শাহ। সে সময় ইরাণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র।
১ দিন আগে