ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
বয়স যত বাড়ে, শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন নিজের মতো করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এই প্রতিবাদের সবচেয়ে পরিচিত রূপ হলো হাত-পায়ের ব্যথা। অনেকেই বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত সোজা করতে কষ্ট হয়, আবার কেউ বলেন, সন্ধ্যার দিকে পায়ের পাতা যেন আগুন হয়ে যায়। এই সমস্যা শুধু বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তরুণরাও আজকাল এই যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন। কারণ হিসেবে কেউ বলেন রক্তসঞ্চালনের গোলমাল, কেউ বলেন বাতজ্বর বা আর্থ্রাইটিস, কেউবা অতিরিক্ত মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারের কথা বলেন। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—ব্যথার কারণ যেমন অনেক, তেমনি প্রতিকারও একাধিক। চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই দরকার, তবে অনেক সময় ঘরোয়া কিছু উপায়ও আরাম এনে দেয়।
গ্রামের মানুষদের আমরা অনেক সময় দেখেছি গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখতে। এ একেবারেই হালকা কিন্তু কার্যকর একটি পদ্ধতি। গরম পানির তাপে রক্ত চলাচল বাড়ে, আর লবণের ম্যাজ্নেশিয়াম সালফেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মার্কিন গবেষক ড. লরেন স্ট্রাইকার, যিনি Northwestern University-এর Feinberg School of Medicine-এর অধ্যাপক এবং ‘A Woman’s Guide to Sexual Health’ বইটির সহলেখক, তিনি বলেন, “গরম পানিতে ইপসম লবণ মিশিয়ে পা ভেজালে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। কারণ এতে পেশির টান কমে এবং মানসিকভাবে এক ধরনের প্রশান্তি আসে।” যদিও তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য মূল কারণ নির্ণয় করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি ঘরোয়া উপায় হলো আদা। রান্নাঘরের এই সাধারণ উপাদানটির রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহনাশক (anti-inflammatory) গুণ। কেউ কেউ আদা কুচি করে গরম পানিতে ফুটিয়ে পান করেন, আবার কেউবা আদার তেল গরম করে ব্যথার জায়গায় মালিশ করেন। University of Miami-এর গবেষক ড. রেবেকা সল্টজম্যান এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, দিনে দুইবার আদা নির্যাস সেবনের ফলে হাঁটুর ব্যথা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক উপায়ে প্রদাহ কমাতে আদার জুড়ি নেই। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত সেবন ঠিক নয়।”
অনেক সময় হাত-পায়ের ব্যথা কোনো পেশির টান বা স্নায়ুর সমস্যার কারণে হয়। এর জন্য ঘরোয়া ব্যায়াম হতে পারে ভালো উপায়। যেমন প্রতিদিন সকালে ৫-১০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং করলে পেশির নমনীয়তা বাড়ে এবং ব্যথা কিছুটা কমে। বিখ্যাত স্পোর্টস থেরাপিস্ট ড. এমা বেকার, যিনি ব্রিটেনের National Centre for Sports Rehabilitation-এর সহপরিচালক, তিনি বলেন, “যেসব লোক দীর্ঘসময় ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাঁদের জন্য সকালে ও রাতে স্ট্রেচিং খুবই জরুরি। এটা শুধু হাত-পায়ের ব্যথা নয়, পুরো শরীরের জন্য উপকারী।”
এছাড়া নারকেল তেলও আমাদের দেশে বহুদিন ধরেই ব্যথার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেকে গরম করে এই তেল দিয়ে মালিশ করেন। এতে এক ধরনের আরাম আসে। যদিও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা এ নিয়ে তুলনামূলকভাবে কম, তবু লোকজ জ্ঞান থেকে জানা যায় নারকেল তেলের উষ্ণতা রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে ব্যথা কমে যায়।
মধুও একটি বিস্ময়কর উপাদান। অনেকেই জানেন না, মধুর মধ্যেও রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান। রোজ সকালে এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ আপেল সিরকা মিশিয়ে খেলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা কমে। এই তথ্যটির পেছনে যুক্তি দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র গবেষক ড. সারা গার্নার। তিনি বলেন, “যদিও প্রমাণ সীমিত, কিন্তু অনেকে দীর্ঘদিন মধু-সিরকার মিশ্রণ সেবন করে উপকার পেয়েছেন। এটা বিপাকক্রিয়া (metabolism) বাড়ায় এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে।”
আরও একটি ঘরোয়া উপাদান হলো হলুদ। বিশেষত কাঁচা হলুদ, যা আদার মতোই শক্তিশালী প্রদাহনাশক। অনেকে দুধে হলুদ মিশিয়ে খান, কেউবা ব্যথার জায়গায় হলুদ বেটে লাগান। ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন-এর গবেষক ড. আনন্দ ধ্রুব বলেন, “হলুদের মধ্যে কুরকুমিন নামক উপাদান রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে শুধু হলুদেই নির্ভর না করে সার্বিক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করাটাও জরুরি।”
তবে এসব ঘরোয়া উপায় যতই ভালো হোক না কেন, সবসময় একটি বিষয় মনে রাখা দরকার—ব্যথা যদি নিয়মিত হয়, তীব্র হয় বা পা-হাত ফুলে ওঠে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ অনেক সময় এই ব্যথা কিডনি, লিভার বা হার্টের সমস্যার অঙ্গসংকেত হতে পারে।
শেষে বলা যায়, হাত-পায়ের ব্যথা খুব সাধারণ মনে হলেও অনেক সময় তা জীবনের আনন্দ কেড়ে নিতে পারে। ব্যথা থাকলে ঘুম হয় না, কাজে মন বসে না, এমনকি হাঁটাচলাতেও কষ্ট হয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার গোড়ায় পৌঁছানো জরুরি। তবে পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়, মনও কিছুটা হালকা হয়। আর শরীর ও মনের এই সম্মিলিত আরামই হয়তো আমাদের ব্যথামুক্ত জীবনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সূত্র: ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন
বয়স যত বাড়ে, শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন নিজের মতো করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। এই প্রতিবাদের সবচেয়ে পরিচিত রূপ হলো হাত-পায়ের ব্যথা। অনেকেই বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত সোজা করতে কষ্ট হয়, আবার কেউ বলেন, সন্ধ্যার দিকে পায়ের পাতা যেন আগুন হয়ে যায়। এই সমস্যা শুধু বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তরুণরাও আজকাল এই যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন। কারণ হিসেবে কেউ বলেন রক্তসঞ্চালনের গোলমাল, কেউ বলেন বাতজ্বর বা আর্থ্রাইটিস, কেউবা অতিরিক্ত মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহারের কথা বলেন। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—ব্যথার কারণ যেমন অনেক, তেমনি প্রতিকারও একাধিক। চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই দরকার, তবে অনেক সময় ঘরোয়া কিছু উপায়ও আরাম এনে দেয়।
গ্রামের মানুষদের আমরা অনেক সময় দেখেছি গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে পা ডুবিয়ে রাখতে। এ একেবারেই হালকা কিন্তু কার্যকর একটি পদ্ধতি। গরম পানির তাপে রক্ত চলাচল বাড়ে, আর লবণের ম্যাজ্নেশিয়াম সালফেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মার্কিন গবেষক ড. লরেন স্ট্রাইকার, যিনি Northwestern University-এর Feinberg School of Medicine-এর অধ্যাপক এবং ‘A Woman’s Guide to Sexual Health’ বইটির সহলেখক, তিনি বলেন, “গরম পানিতে ইপসম লবণ মিশিয়ে পা ভেজালে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। কারণ এতে পেশির টান কমে এবং মানসিকভাবে এক ধরনের প্রশান্তি আসে।” যদিও তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য মূল কারণ নির্ণয় করাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি ঘরোয়া উপায় হলো আদা। রান্নাঘরের এই সাধারণ উপাদানটির রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহনাশক (anti-inflammatory) গুণ। কেউ কেউ আদা কুচি করে গরম পানিতে ফুটিয়ে পান করেন, আবার কেউবা আদার তেল গরম করে ব্যথার জায়গায় মালিশ করেন। University of Miami-এর গবেষক ড. রেবেকা সল্টজম্যান এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, দিনে দুইবার আদা নির্যাস সেবনের ফলে হাঁটুর ব্যথা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক উপায়ে প্রদাহ কমাতে আদার জুড়ি নেই। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত সেবন ঠিক নয়।”
অনেক সময় হাত-পায়ের ব্যথা কোনো পেশির টান বা স্নায়ুর সমস্যার কারণে হয়। এর জন্য ঘরোয়া ব্যায়াম হতে পারে ভালো উপায়। যেমন প্রতিদিন সকালে ৫-১০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং করলে পেশির নমনীয়তা বাড়ে এবং ব্যথা কিছুটা কমে। বিখ্যাত স্পোর্টস থেরাপিস্ট ড. এমা বেকার, যিনি ব্রিটেনের National Centre for Sports Rehabilitation-এর সহপরিচালক, তিনি বলেন, “যেসব লোক দীর্ঘসময় ডেস্কে বসে কাজ করেন, তাঁদের জন্য সকালে ও রাতে স্ট্রেচিং খুবই জরুরি। এটা শুধু হাত-পায়ের ব্যথা নয়, পুরো শরীরের জন্য উপকারী।”
এছাড়া নারকেল তেলও আমাদের দেশে বহুদিন ধরেই ব্যথার জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। অনেকে গরম করে এই তেল দিয়ে মালিশ করেন। এতে এক ধরনের আরাম আসে। যদিও বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা এ নিয়ে তুলনামূলকভাবে কম, তবু লোকজ জ্ঞান থেকে জানা যায় নারকেল তেলের উষ্ণতা রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে, যার ফলে ব্যথা কমে যায়।
মধুও একটি বিস্ময়কর উপাদান। অনেকেই জানেন না, মধুর মধ্যেও রয়েছে প্রদাহনাশক উপাদান। রোজ সকালে এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ আপেল সিরকা মিশিয়ে খেলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায় এবং কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা কমে। এই তথ্যটির পেছনে যুক্তি দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র গবেষক ড. সারা গার্নার। তিনি বলেন, “যদিও প্রমাণ সীমিত, কিন্তু অনেকে দীর্ঘদিন মধু-সিরকার মিশ্রণ সেবন করে উপকার পেয়েছেন। এটা বিপাকক্রিয়া (metabolism) বাড়ায় এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে।”
আরও একটি ঘরোয়া উপাদান হলো হলুদ। বিশেষত কাঁচা হলুদ, যা আদার মতোই শক্তিশালী প্রদাহনাশক। অনেকে দুধে হলুদ মিশিয়ে খান, কেউবা ব্যথার জায়গায় হলুদ বেটে লাগান। ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন-এর গবেষক ড. আনন্দ ধ্রুব বলেন, “হলুদের মধ্যে কুরকুমিন নামক উপাদান রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে শুধু হলুদেই নির্ভর না করে সার্বিক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করাটাও জরুরি।”
তবে এসব ঘরোয়া উপায় যতই ভালো হোক না কেন, সবসময় একটি বিষয় মনে রাখা দরকার—ব্যথা যদি নিয়মিত হয়, তীব্র হয় বা পা-হাত ফুলে ওঠে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ অনেক সময় এই ব্যথা কিডনি, লিভার বা হার্টের সমস্যার অঙ্গসংকেত হতে পারে।
শেষে বলা যায়, হাত-পায়ের ব্যথা খুব সাধারণ মনে হলেও অনেক সময় তা জীবনের আনন্দ কেড়ে নিতে পারে। ব্যথা থাকলে ঘুম হয় না, কাজে মন বসে না, এমনকি হাঁটাচলাতেও কষ্ট হয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার গোড়ায় পৌঁছানো জরুরি। তবে পাশাপাশি ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়, মনও কিছুটা হালকা হয়। আর শরীর ও মনের এই সম্মিলিত আরামই হয়তো আমাদের ব্যথামুক্ত জীবনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
সূত্র: ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় বর্ষা এক বিশেষ আবেগ নিয়ে আসে। তাঁর "আষাঢ়" কবিতায় বর্ষা এসেছে প্রকৃতির উদ্দাম রূপ নিয়ে, যা একদিকে যেমন সুন্দর, অন্যদিকে তেমনই ভয়াল।
১ দিন আগেবাংলাদেশে স্টারলিংক বর্তমানে তিনটি মূল প্যাকেজ চালু করেছে। প্রথমটি ‘রেসিডেনশিয়াল’, যার মাসিক খরচ ছয় হাজার টাকা। এটি মূলত বাসাবাড়ির জন্য উপযুক্ত। দ্বিতীয়টি ‘রেসিডেনশিয়াল লাইট’, যার জন্য মাসে খরচ হবে চার হাজার দুই শত টাকা।
১ দিন আগেদিন যায়, রাত যায়, টাকার শোকে তারা বিমর্ষ হয়ে ওঠে। কিন্তু টাকার হাঁড়ার সন্ধান আর মেলে না। প্রতিদিন ঝগড়া হয়—তুই থুলি না মুই থুলি, টাকার হাড়া কনে থুলি।
২ দিন আগেসবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-কাশির সংক্রমণ থেকে কানের ভেতরে চাপ তৈরি হওয়া। নাক ও গলা দিয়ে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া কানের মধ্যকর্ণে পৌঁছায়, যেখানে তরল জমা হতে পারে এবং সেই চাপ থেকে ব্যথা শুরু হয়।
২ দিন আগে