ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
যতদূর চোখ যায়, গ্রামের পুকুরপাড়, রাস্তার ধারে বা মাটির উঠানে ছায়া বিস্তার করে দাঁড়িয়ে থাকে এক একটি নিমগাছ। তার পাতার তীব্র গন্ধ আর রঙিন সবুজে ঢাকা ডালপালা যেন আমাদের শৈশবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ছোটবেলায় মা কিংবা দাদি যখন শরীরে গরমে চুলকানি উঠত, নিমপাতা বেটে দিতেন। কারো মুখে ব্রণ উঠলে দাদু বলতেন—“নিমপাতা খা, ঠিক হয়ে যাবে।” সেই শিশুমনে তখন বুঝতাম না, এই পাতার মধ্যে কী এমন আছে, যা এত রোগ ভালো করে! কিন্তু আজ বিজ্ঞান সেই রহস্যভেদ করেছে—নিম পাতার মধ্যে রয়েছে এমনসব প্রাকৃতিক উপাদান, যা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নানা রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিম, যার বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শুধু একটি গাছ নয়—একটি প্রাকৃতিক ফার্মেসি। নিম পাতায় রয়েছে নিমবিন, নিমোলিন, গেডুনিন, সালানিন, কোয়ারসেটিন প্রভৃতি সক্রিয় যৌগ, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও ইমিউন-বুস্টিং বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এ কারণে নিম পাতাকে বলা হয়—“প্রাকৃতিক প্রতিষেধক।”
বর্তমানে আধুনিক গবেষণাও এই গুণাবলির স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্বাল মেডিসিন গবেষক ড. সুজান ব্রাউন, যিনি নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট ফর বোটানিকাল স্টাডিজ-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বলেন—“নিম গুটিকয়েক উদ্ভিদের একটি, যা প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক সুরক্ষা দেয় এবং মানুষের কোষের কোনো ক্ষতি করে না।”
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে নিম পাতাকে ব্যবহার করে আসছে ত্বকের চুলকানি, একজিমা, রিঙ ওয়ার্ম বা খোসপাঁচড়া, ব্রণ, চুলের খুশকি, দাঁতের রোগ, এমনকি রক্ত পরিষ্কারের জন্যও। ব্রণের সমস্যা হলে কিশোরীরা নিমপাতা বেটে মুখে লাগায়। একজিমা হলে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করে। যারা চুলে খুশকির যন্ত্রণায় বিরক্ত, তারা নিমপাতা সিদ্ধ করে ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধোয়। এমনকি অনেক পরিবারে প্রতিদিন সকালে ৪-৫টি নিমপাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাসও আছে—বিশ্বাস, এতে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখা গেছে, নিম পাতার অন্যতম শক্তিশালী গুণ হলো এর অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্ষমতা। ২০১৮ সালে ভারতের ইন্সটিটিউট অব আয়ুর্বেদিক সায়েন্সেস–এর এক গবেষণায় দেখা যায়, নিমপাতা থেকে প্রস্তুত নির্যাস Candida albicans নামক এক সাধারণ ছত্রাক প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। এই ছত্রাক অনেক সময় মানুষের ত্বকে, মুখে কিংবা অন্ত্রেও সংক্রমণ ঘটায়। নিমপাতা সে সংক্রমণ ঠেকাতে পারে প্রাকৃতিকভাবেই।
নিমপাতা শুধু ত্বকের যত্নেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি দাঁতের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজা একসময় ছিল একটি পরিচিত দৃশ্য। কারণ নিম ডালে থাকা রাসায়নিক উপাদান দাঁতের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, মাড়িকে শক্ত করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। আজও অনেক হারবাল টুথপেস্টে নিমের নির্যাস থাকে। ড. পিটার লোইড, যিনি ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে কাজ করেন, তিনি বলেন—“তাঁর বক্তব্যের বাংলা মানে—“মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিম ডাল অনেক সময় বাজারে পাওয়া কেমিকেলযুক্ত মাউথওয়াশের চেয়েও বেশি কার্যকর।”
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও নিমপাতা একটি আলোচিত নাম। ভারতের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ড. অনিরুদ্ধ মালভিয়া বলেন—“নিমপাতা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।” তবে এ বিষয়ে সতর্কতা হলো, যারা নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিমপাতা গ্রহণ ঠিক নয়। কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে ফেলতে পারে।
ভাইরাস প্রতিরোধে নিম পাতার ভূমিকা নিয়ে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মেলানি কেলার। তিনি বলেন—“নিম নির্যাস পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা দেখিয়েছে, যদিও মানুষের ওপর চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনো চলছে।”
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাসজনিত জ্বর হলে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করা, অথবা স্নান করা হলে উপকার মেলে—এমন বিশ্বাস গ্রামীণ সমাজে বহু বছর ধরে প্রচলিত। এমনকি গরমকালে শরীরে তাপ বা ঘামাচি উঠলে নিমপাতা দিয়ে গোসল করার অভ্যাস এখনো অনেক বাড়িতে টিকে আছে।
নিম পাতার ব্যবহার শুধু রোগ প্রতিরোধে নয়, শরীর পরিষ্কারে অর্থাৎ ডিটক্সিফিকেশনেও কাজ করে। নিয়মিত নিমপাতা খেলে লিভার পরিষ্কার হয়, শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর হয় এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কোষের বয়সজনিত ক্ষতি রোধ করে। ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন–এর এক গবেষণায় বলা হয়, “নিমপাতার ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান কোষের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যজনিত রোগ দূরে রাখে।”
তবে এর পাশাপাশি কিছু সতর্কতাও রয়েছে। যেমন—গর্ভবতী নারীদের জন্য নিমপাতা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে লিভার বা কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতেও পারে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ওষুধ খান, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্টেরয়েড গ্রহণ করেন, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিমপাতা ব্যবহার করা উচিত।
সবশেষে বলা যায়, নিমপাতা শুধু একটি গাছের পাতা নয়, এটি একটি জীবনঘনিষ্ঠ প্রতিষেধক। প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে ত্বকের সমস্যা, দাঁতের রোগ, রক্ত পরিষ্কার, এমনকি ভাইরাস প্রতিরোধে এটি এক অনন্য উদ্ভিদ। যেসব দেশে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য নয়, সেসব অঞ্চলে নিমপাতার মতো ভেষজ সম্পদ সাশ্রয়ী ও কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
নিমপাতার গুরুত্ব সম্পর্কে ব্রিটিশ চিকিৎসাবিদ ও হার্বাল বিশেষজ্ঞ ড. হেনরি গুডউইন বলেন—“নিম আমাদের শেখায়, প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে এমন শক্তি, যা মানবদেহের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে কথা বলে আসছে। আমরা শুধু তা বুঝতে শিখছি।”—এই কথাটিই সবচেয়ে বড় সত্য।
নিমপাতা তাই শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, আজকের পৃথিবীতেও এটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে হাতে রেখে হাঁটছে। এই পাতাটি আমাদের ঘরের পাশে, উঠানে, মাটিতে পড়ে থাকা একপ্রকার সবুজ সোনা—যা আমাদের সুস্থ জীবনের পথে একটি নির্ভরযোগ্য সহচর হয়ে উঠতে পারে।
যতদূর চোখ যায়, গ্রামের পুকুরপাড়, রাস্তার ধারে বা মাটির উঠানে ছায়া বিস্তার করে দাঁড়িয়ে থাকে এক একটি নিমগাছ। তার পাতার তীব্র গন্ধ আর রঙিন সবুজে ঢাকা ডালপালা যেন আমাদের শৈশবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ছোটবেলায় মা কিংবা দাদি যখন শরীরে গরমে চুলকানি উঠত, নিমপাতা বেটে দিতেন। কারো মুখে ব্রণ উঠলে দাদু বলতেন—“নিমপাতা খা, ঠিক হয়ে যাবে।” সেই শিশুমনে তখন বুঝতাম না, এই পাতার মধ্যে কী এমন আছে, যা এত রোগ ভালো করে! কিন্তু আজ বিজ্ঞান সেই রহস্যভেদ করেছে—নিম পাতার মধ্যে রয়েছে এমনসব প্রাকৃতিক উপাদান, যা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নানা রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নিম, যার বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে ভেষজ ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি শুধু একটি গাছ নয়—একটি প্রাকৃতিক ফার্মেসি। নিম পাতায় রয়েছে নিমবিন, নিমোলিন, গেডুনিন, সালানিন, কোয়ারসেটিন প্রভৃতি সক্রিয় যৌগ, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও ইমিউন-বুস্টিং বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এ কারণে নিম পাতাকে বলা হয়—“প্রাকৃতিক প্রতিষেধক।”
বর্তমানে আধুনিক গবেষণাও এই গুণাবলির স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্বাল মেডিসিন গবেষক ড. সুজান ব্রাউন, যিনি নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট ফর বোটানিকাল স্টাডিজ-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বলেন—“নিম গুটিকয়েক উদ্ভিদের একটি, যা প্রাকৃতিকভাবেই ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যাপক সুরক্ষা দেয় এবং মানুষের কোষের কোনো ক্ষতি করে না।”
বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে নিম পাতাকে ব্যবহার করে আসছে ত্বকের চুলকানি, একজিমা, রিঙ ওয়ার্ম বা খোসপাঁচড়া, ব্রণ, চুলের খুশকি, দাঁতের রোগ, এমনকি রক্ত পরিষ্কারের জন্যও। ব্রণের সমস্যা হলে কিশোরীরা নিমপাতা বেটে মুখে লাগায়। একজিমা হলে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করে। যারা চুলে খুশকির যন্ত্রণায় বিরক্ত, তারা নিমপাতা সিদ্ধ করে ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধোয়। এমনকি অনেক পরিবারে প্রতিদিন সকালে ৪-৫টি নিমপাতা চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাসও আছে—বিশ্বাস, এতে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখা গেছে, নিম পাতার অন্যতম শক্তিশালী গুণ হলো এর অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্ষমতা। ২০১৮ সালে ভারতের ইন্সটিটিউট অব আয়ুর্বেদিক সায়েন্সেস–এর এক গবেষণায় দেখা যায়, নিমপাতা থেকে প্রস্তুত নির্যাস Candida albicans নামক এক সাধারণ ছত্রাক প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। এই ছত্রাক অনেক সময় মানুষের ত্বকে, মুখে কিংবা অন্ত্রেও সংক্রমণ ঘটায়। নিমপাতা সে সংক্রমণ ঠেকাতে পারে প্রাকৃতিকভাবেই।
নিমপাতা শুধু ত্বকের যত্নেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি দাঁতের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজা একসময় ছিল একটি পরিচিত দৃশ্য। কারণ নিম ডালে থাকা রাসায়নিক উপাদান দাঁতের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, মাড়িকে শক্ত করে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। আজও অনেক হারবাল টুথপেস্টে নিমের নির্যাস থাকে। ড. পিটার লোইড, যিনি ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে কাজ করেন, তিনি বলেন—“তাঁর বক্তব্যের বাংলা মানে—“মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিম ডাল অনেক সময় বাজারে পাওয়া কেমিকেলযুক্ত মাউথওয়াশের চেয়েও বেশি কার্যকর।”
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও নিমপাতা একটি আলোচিত নাম। ভারতের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ড. অনিরুদ্ধ মালভিয়া বলেন—“নিমপাতা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।” তবে এ বিষয়ে সতর্কতা হলো, যারা নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ খান, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিমপাতা গ্রহণ ঠিক নয়। কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত কমিয়ে ফেলতে পারে।
ভাইরাস প্রতিরোধে নিম পাতার ভূমিকা নিয়ে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিনির্ভর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মেলানি কেলার। তিনি বলেন—“নিম নির্যাস পরীক্ষাগারে ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য কার্যকারিতা দেখিয়েছে, যদিও মানুষের ওপর চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনো চলছে।”
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাসজনিত জ্বর হলে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করা, অথবা স্নান করা হলে উপকার মেলে—এমন বিশ্বাস গ্রামীণ সমাজে বহু বছর ধরে প্রচলিত। এমনকি গরমকালে শরীরে তাপ বা ঘামাচি উঠলে নিমপাতা দিয়ে গোসল করার অভ্যাস এখনো অনেক বাড়িতে টিকে আছে।
নিম পাতার ব্যবহার শুধু রোগ প্রতিরোধে নয়, শরীর পরিষ্কারে অর্থাৎ ডিটক্সিফিকেশনেও কাজ করে। নিয়মিত নিমপাতা খেলে লিভার পরিষ্কার হয়, শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন দূর হয় এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কোষের বয়সজনিত ক্ষতি রোধ করে। ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন–এর এক গবেষণায় বলা হয়, “নিমপাতার ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান কোষের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং বার্ধক্যজনিত রোগ দূরে রাখে।”
তবে এর পাশাপাশি কিছু সতর্কতাও রয়েছে। যেমন—গর্ভবতী নারীদের জন্য নিমপাতা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে লিভার বা কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতেও পারে। বিশেষ করে যারা নিয়মিত ওষুধ খান, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা স্টেরয়েড গ্রহণ করেন, তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিমপাতা ব্যবহার করা উচিত।
সবশেষে বলা যায়, নিমপাতা শুধু একটি গাছের পাতা নয়, এটি একটি জীবনঘনিষ্ঠ প্রতিষেধক। প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে ত্বকের সমস্যা, দাঁতের রোগ, রক্ত পরিষ্কার, এমনকি ভাইরাস প্রতিরোধে এটি এক অনন্য উদ্ভিদ। যেসব দেশে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য নয়, সেসব অঞ্চলে নিমপাতার মতো ভেষজ সম্পদ সাশ্রয়ী ও কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
নিমপাতার গুরুত্ব সম্পর্কে ব্রিটিশ চিকিৎসাবিদ ও হার্বাল বিশেষজ্ঞ ড. হেনরি গুডউইন বলেন—“নিম আমাদের শেখায়, প্রকৃতির মধ্যে রয়েছে এমন শক্তি, যা মানবদেহের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে কথা বলে আসছে। আমরা শুধু তা বুঝতে শিখছি।”—এই কথাটিই সবচেয়ে বড় সত্য।
নিমপাতা তাই শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, আজকের পৃথিবীতেও এটি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে হাতে রেখে হাঁটছে। এই পাতাটি আমাদের ঘরের পাশে, উঠানে, মাটিতে পড়ে থাকা একপ্রকার সবুজ সোনা—যা আমাদের সুস্থ জীবনের পথে একটি নির্ভরযোগ্য সহচর হয়ে উঠতে পারে।
কক্সবাজার সফরে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পরে রাতে তাকে একটি হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। গতকাল রোববার (১৭ আগস্ট) এই উপদেষ্টার অ্যাপেনডিক্সের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।
১৯ ঘণ্টা আগেএক গ্লাস হালকা গরম পানি খেলে বদহজমের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। পানি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং পেটের ভেতরে জমে থাকা অতিরিক্ত এসিডকে পাতলা করে দেয়।
২০ ঘণ্টা আগেসাপের মেরুদণ্ডে অসংখ্য হাড় আর পেশী আছে। এই হাড় ও পেশীর সাহায্যে তারা শরীর বাঁকায়, সঙ্কুচিত করে আবার প্রসারিত করে। একেকটা অংশ মাটিতে ধাক্কা দেয়, আর নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী মাটিও পাল্টা চাপ দিয়ে সাপকে সামনে এগিয়ে দেয়।
২ দিন আগেগণতন্ত্রের মূলমন্ত্র জনগণই ক্ষমতার উৎস। সেটা আজকাল কেউ মানে বলে মনে হয় না। সে বাংলাদেশেই হোক বা যুক্তরাষ্ট্র—ক্ষমতাসীন নেতাদের সবাই নিজেদের সর্বেসর্বা মনে করে। গণতন্ত্রের অন্যতম পুরোধা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গণতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেছিলেন, ‘গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য
২ দিন আগে