অরুণাভ বিশ্বাস
বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র—দুটি ভিন্ন শিল্পমাধ্যম, কিন্তু এই দুইয়ের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে গড়ে উঠেছে এক অনন্য শিল্পজগত। বাংলা সাহিত্যের শক্তিশালী বুনন, চরিত্রের গভীরতা, এবং সামাজিক বাস্তবতার প্রাঞ্জল প্রকাশ বহু পরিচালকের চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সাহিত্যের পাতা থেকে উঠে আসা গল্পেরা যখন সিনেমার পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠে, তখন কেবল বিনোদন নয়, গড়ে ওঠে সময়, সংস্কৃতি আর মানুষের মনোজগতের প্রতিচ্ছবি। বাংলা চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই সাহিত্যিক রচনার প্রতি নির্মাতাদের আকর্ষণ ছিল স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী প্রমুখ লেখকের লেখা বহুবার রূপ পেয়েছে চলচ্চিত্রে।
বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিতে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম হল সত্যজিৎ রায়। তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ অবলম্বনে ১৯৫৫ সালে যে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন, তা কেবল বাংলা বা ভারতীয় চলচ্চিত্রের নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। ছোট্ট অপু, তার দিদি দুর্গা, আর এক নিঃস্ব পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই চলচ্চিত্রে একদিকে যেমন সাহিত্যের গভীরতা রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে নিখুঁত বাস্তবতার চিত্রায়ণ। ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক আন্দ্রে বাজাঁ এই ছবিকে “একটি নিস্পৃহ সৌন্দর্যের প্রতিফলন” বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন—“সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ প্রমাণ করে সিনেমায় বাস্তবতাও কাব্যিক হতে পারে।” এই উক্তি শুধুমাত্র ‘পথের পাঁচালী’র নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়নের সারবত্তাও তুলে ধরে।
শুধু বিভূতিভূষণ নন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসও বহুবার চলচ্চিত্রে রূপ পেয়েছে। ‘দেবদাস’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে একাধিক ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, কিন্তু প্রমথেশ বড়ুয়া ও পরে দিলীপ কুমার অভিনীত ‘দেবদাস’ (১৯৩৫ ও ১৯৫৫) সিনেমাগুলি হয়ে উঠেছে কিংবদন্তি। শরৎচন্দ্রের গল্পে থাকে প্রেম, সামাজিক বাধা, নারীর অবস্থান—এই বিষয়গুলি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে চিরকাল আকর্ষণীয় হয়ে থেকেছে। সাহিত্যিক ভাষার মধ্যে যে আবেগ, তা পর্দায় দর্শকদের হৃদয়ে গভীরভাবে নাড়া দিতে পারে—এটি প্রমাণিত হয়েছে এইসব চিরন্তন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাগুলিও বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য অধ্যায়। ‘চোখের বালি’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘স্ট্রির পত্র’, ‘শেষের কবিতা’—এইসব সাহিত্যিক রচনায় রবীন্দ্রনাথ যেভাবে নারীচরিত্রকে তুলে ধরেছেন, তা বারবার সিনেমার পর্দায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রিতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘চোখের বালি’ ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের অনবদ্য অভিনয় সেই চিরকালীন চরিত্র “বিনোদিনী”-কে এক নতুন মাত্রা দেয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ ক্লেয়ার হ্যান্ডসমিথ রবীন্দ্রসাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র নিয়ে বলেন—“রবীন্দ্রনাথের নারীচরিত্ররা তাঁদের আবেগের জটিলতায় আধুনিক। বাংলা সিনেমা এই সূক্ষ্মতাকে অসাধারণ সংবেদনশীলতায় উপস্থাপন করে।”
বাংলা সাহিত্যের আরেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র রূপ হলো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। গৌতম ঘোষ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে শুধু একটি প্রেমগাথা নয়, বরং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, নদীজীবনের সংগ্রাম এবং ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা উঠে এসেছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবি দুই বাংলার সংস্কৃতিকে এক সুতোয় গেঁথে দেয়। ইউরোপীয় চলচ্চিত্র সমালোচক মার্টিন স্কলেস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’কে “একটি ভাসমান কাব্য” বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, “এটি কেবল একটি সিনেমা নয়; এটি এমন একটি নদী, যার স্রোতে বয়ে চলে লড়াই, দারিদ্র্য ও নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প।”
মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যে বারবার উঠে এসেছে সমাজের প্রান্তিক মানুষের কথা। তার লেখা ‘হাজার চুরাশির মা’ অবলম্বনে গৌতম ঘোষ যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তা একদিকে যেমন রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে, অন্যদিকে একজন মায়ের সন্তানের জন্য গভীর বেদনা প্রকাশ করে। তপন সিংহ পরিচালিত ‘রাশি’ বা ‘আত্মারাম’-এর মতো সিনেমাগুলোতেও সমাজ, শ্রেণী, নিপীড়ন, ও ন্যায়ের প্রশ্নগুলি সাহিত্যের ছাঁচেই উঠে আসে। এগুলি নিছক বিনোদনের জন্য নয়, বরং দর্শকের চিন্তা-চেতনাকে আলোড়িত করে এমন শক্তিশালী মাধ্যম।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক লেখকরাও চলচ্চিত্রে প্রভাব ফেলেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’ ও ‘প্রথম আলো’ উপন্যাস যেমন ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত, তেমনি ‘কাকাবাবু’ চরিত্রও চলচ্চিত্রে বেশ জনপ্রিয়। সন্দীপ রায় পরিচালিত ‘মিশর রহস্য’ বা ‘কাকাবাবু সমগ্র’ ছবিগুলি সাহিত্যের রোমাঞ্চ ও কৌতূহলের স্বাদকে সিনেমার মাধ্যমে আরও বিস্তৃত করেছে। একইভাবে, ‘ফেলুদা’ ও ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ চরিত্রদ্বয় সাহিত্যের রহস্যভিত্তিক শাখা থেকে উঠে এসে বাংলা চলচ্চিত্রের একটি শক্তিশালী ধারায় পরিণত হয়েছে।
বিদেশি গবেষকেরা বাংলা সাহিত্যনির্ভর সিনেমার এমন প্রভাব দেখে বিস্মিত হয়েছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র গবেষক ডঃ রিচার্ড ম্যাকেঞ্জি বলেন, “পশ্চিমা সিনেমা যেখানে অনেক সময় চাক্ষুষ চমকের ওপর নির্ভর করে, সেখানে সাহিত্যনির্ভর বাংলা সিনেমা আবেগের সত্যতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দেয়।” তাঁর মতে, এটি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
বাংলা সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়ন শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতেও সাহিত্যচর্চা সমান গুরুত্বপূর্ণ। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘আমার আছে জল’ প্রভৃতি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ কিংবা হাসান আজিজুল হকের লেখা গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রবণতা দেখা গেছে, যা সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রকে দুই বাংলার মধ্যে এক শক্তিশালী সেতুতে পরিণত করে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলা সাহিত্য শুধু পাঠকের মনে দোলা দিয়ে থেমে থাকেনি, বরং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কল্পনাকে উজ্জীবিত করে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। সাহিত্য যেমন ভাষায় চিত্র আঁকে, চলচ্চিত্র তেমনি সেই চিত্রকে প্রাণ দেয় দৃশ্য ও শব্দের সমন্বয়ে। সাহিত্যনির্ভর সিনেমাগুলি তাই কেবল বিনোদন নয়, বরং একটি কালজয়ী সাহিত্যিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা ও বিবর্তনও বটে।
বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের এই মিলনস্থল ভবিষ্যতেও শিল্পচর্চার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, যেখানে ভাষা, দৃশ্য, আবেগ, ও মানবিকতা একসাথে পথ চলবে সময়ের বহতা নদীতে।
বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র—দুটি ভিন্ন শিল্পমাধ্যম, কিন্তু এই দুইয়ের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে গড়ে উঠেছে এক অনন্য শিল্পজগত। বাংলা সাহিত্যের শক্তিশালী বুনন, চরিত্রের গভীরতা, এবং সামাজিক বাস্তবতার প্রাঞ্জল প্রকাশ বহু পরিচালকের চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সাহিত্যের পাতা থেকে উঠে আসা গল্পেরা যখন সিনেমার পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠে, তখন কেবল বিনোদন নয়, গড়ে ওঠে সময়, সংস্কৃতি আর মানুষের মনোজগতের প্রতিচ্ছবি। বাংলা চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই সাহিত্যিক রচনার প্রতি নির্মাতাদের আকর্ষণ ছিল স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী প্রমুখ লেখকের লেখা বহুবার রূপ পেয়েছে চলচ্চিত্রে।
বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিতে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্মরণীয় নাম হল সত্যজিৎ রায়। তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ অবলম্বনে ১৯৫৫ সালে যে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন, তা কেবল বাংলা বা ভারতীয় চলচ্চিত্রের নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। ছোট্ট অপু, তার দিদি দুর্গা, আর এক নিঃস্ব পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এই চলচ্চিত্রে একদিকে যেমন সাহিত্যের গভীরতা রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে নিখুঁত বাস্তবতার চিত্রায়ণ। ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক আন্দ্রে বাজাঁ এই ছবিকে “একটি নিস্পৃহ সৌন্দর্যের প্রতিফলন” বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন—“সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ প্রমাণ করে সিনেমায় বাস্তবতাও কাব্যিক হতে পারে।” এই উক্তি শুধুমাত্র ‘পথের পাঁচালী’র নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়নের সারবত্তাও তুলে ধরে।
শুধু বিভূতিভূষণ নন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসও বহুবার চলচ্চিত্রে রূপ পেয়েছে। ‘দেবদাস’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে একাধিক ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, কিন্তু প্রমথেশ বড়ুয়া ও পরে দিলীপ কুমার অভিনীত ‘দেবদাস’ (১৯৩৫ ও ১৯৫৫) সিনেমাগুলি হয়ে উঠেছে কিংবদন্তি। শরৎচন্দ্রের গল্পে থাকে প্রেম, সামাজিক বাধা, নারীর অবস্থান—এই বিষয়গুলি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছে চিরকাল আকর্ষণীয় হয়ে থেকেছে। সাহিত্যিক ভাষার মধ্যে যে আবেগ, তা পর্দায় দর্শকদের হৃদয়ে গভীরভাবে নাড়া দিতে পারে—এটি প্রমাণিত হয়েছে এইসব চিরন্তন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাগুলিও বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য অধ্যায়। ‘চোখের বালি’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘স্ট্রির পত্র’, ‘শেষের কবিতা’—এইসব সাহিত্যিক রচনায় রবীন্দ্রনাথ যেভাবে নারীচরিত্রকে তুলে ধরেছেন, তা বারবার সিনেমার পর্দায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রিতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘চোখের বালি’ ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের অনবদ্য অভিনয় সেই চিরকালীন চরিত্র “বিনোদিনী”-কে এক নতুন মাত্রা দেয়। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ ক্লেয়ার হ্যান্ডসমিথ রবীন্দ্রসাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র নিয়ে বলেন—“রবীন্দ্রনাথের নারীচরিত্ররা তাঁদের আবেগের জটিলতায় আধুনিক। বাংলা সিনেমা এই সূক্ষ্মতাকে অসাধারণ সংবেদনশীলতায় উপস্থাপন করে।”
বাংলা সাহিত্যের আরেক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র রূপ হলো মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। গৌতম ঘোষ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে শুধু একটি প্রেমগাথা নয়, বরং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, নদীজীবনের সংগ্রাম এবং ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তা উঠে এসেছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবি দুই বাংলার সংস্কৃতিকে এক সুতোয় গেঁথে দেয়। ইউরোপীয় চলচ্চিত্র সমালোচক মার্টিন স্কলেস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’কে “একটি ভাসমান কাব্য” বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, “এটি কেবল একটি সিনেমা নয়; এটি এমন একটি নদী, যার স্রোতে বয়ে চলে লড়াই, দারিদ্র্য ও নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প।”
মহাশ্বেতা দেবীর সাহিত্যে বারবার উঠে এসেছে সমাজের প্রান্তিক মানুষের কথা। তার লেখা ‘হাজার চুরাশির মা’ অবলম্বনে গৌতম ঘোষ যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তা একদিকে যেমন রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরে, অন্যদিকে একজন মায়ের সন্তানের জন্য গভীর বেদনা প্রকাশ করে। তপন সিংহ পরিচালিত ‘রাশি’ বা ‘আত্মারাম’-এর মতো সিনেমাগুলোতেও সমাজ, শ্রেণী, নিপীড়ন, ও ন্যায়ের প্রশ্নগুলি সাহিত্যের ছাঁচেই উঠে আসে। এগুলি নিছক বিনোদনের জন্য নয়, বরং দর্শকের চিন্তা-চেতনাকে আলোড়িত করে এমন শক্তিশালী মাধ্যম।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক লেখকরাও চলচ্চিত্রে প্রভাব ফেলেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সেই সময়’ ও ‘প্রথম আলো’ উপন্যাস যেমন ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত, তেমনি ‘কাকাবাবু’ চরিত্রও চলচ্চিত্রে বেশ জনপ্রিয়। সন্দীপ রায় পরিচালিত ‘মিশর রহস্য’ বা ‘কাকাবাবু সমগ্র’ ছবিগুলি সাহিত্যের রোমাঞ্চ ও কৌতূহলের স্বাদকে সিনেমার মাধ্যমে আরও বিস্তৃত করেছে। একইভাবে, ‘ফেলুদা’ ও ‘ব্যোমকেশ বক্সী’ চরিত্রদ্বয় সাহিত্যের রহস্যভিত্তিক শাখা থেকে উঠে এসে বাংলা চলচ্চিত্রের একটি শক্তিশালী ধারায় পরিণত হয়েছে।
বিদেশি গবেষকেরা বাংলা সাহিত্যনির্ভর সিনেমার এমন প্রভাব দেখে বিস্মিত হয়েছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র গবেষক ডঃ রিচার্ড ম্যাকেঞ্জি বলেন, “পশ্চিমা সিনেমা যেখানে অনেক সময় চাক্ষুষ চমকের ওপর নির্ভর করে, সেখানে সাহিত্যনির্ভর বাংলা সিনেমা আবেগের সত্যতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দেয়।” তাঁর মতে, এটি বাংলা চলচ্চিত্রের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
বাংলা সাহিত্যের চলচ্চিত্রায়ন শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গেই সীমাবদ্ধ নয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতেও সাহিত্যচর্চা সমান গুরুত্বপূর্ণ। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘আমার আছে জল’ প্রভৃতি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। সেলিনা হোসেনের ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ কিংবা হাসান আজিজুল হকের লেখা গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রবণতা দেখা গেছে, যা সাহিত্যভিত্তিক চলচ্চিত্রকে দুই বাংলার মধ্যে এক শক্তিশালী সেতুতে পরিণত করে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলা সাহিত্য শুধু পাঠকের মনে দোলা দিয়ে থেমে থাকেনি, বরং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কল্পনাকে উজ্জীবিত করে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। সাহিত্য যেমন ভাষায় চিত্র আঁকে, চলচ্চিত্র তেমনি সেই চিত্রকে প্রাণ দেয় দৃশ্য ও শব্দের সমন্বয়ে। সাহিত্যনির্ভর সিনেমাগুলি তাই কেবল বিনোদন নয়, বরং একটি কালজয়ী সাহিত্যিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা ও বিবর্তনও বটে।
বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের এই মিলনস্থল ভবিষ্যতেও শিল্পচর্চার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, যেখানে ভাষা, দৃশ্য, আবেগ, ও মানবিকতা একসাথে পথ চলবে সময়ের বহতা নদীতে।
নারীদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার এখনও পুরুষদের তুলনায় অনেক কম, এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে তাঁদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে।
২ দিন আগেপ্রচলিত কফ সিরাপের তুলনায় মধু অনেক বেশি কার্যকর। বিশেষ করে শিশুদের সর্দি-কাশিতে মধু একটি প্রাকৃতিক এবং নিরাপদ বিকল্প।
২ দিন আগেপ্রলাপস লাম্বার ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক (PLID)— সংক্ষেপে পি এল আইডি—একটি পরিচিত মেরুদণ্ডজনিত সমস্যা। এটি তখন ঘটে, যখন কোমরের হাড়ের (কশেরুকা) মাঝখানের নরম ডিস্ক স্বাভাবিক স্থানচ্যুতি হয়ে পাশের স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে দেখা দেয় কোমর ব্যথা, সায়াটিকা এবং পেশীর দুর্বলতাসহ একাধিক সমস্যা।
২ দিন আগেবঙ্গোপসাগরের উত্তরপশ্চিম ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ার শঙ্কা থেকে দেশের চার সমুদ্রবন্দরেই তিন নম্বর সতর্কসংকেত বহাল রাখা হয়েছে। বুধবার (২৮ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ লঘুচাপের জন্য সামুদ
২ দিন আগে