ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
‘আমেরিকা কখনও হার মানে না’—এই কথাটা যেন কোনো হলিউড ছবির সংলাপ। বাস্তবেও অনেক আমেরিকান মনে করেন তাঁদের দেশ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, এবং তাই তারা যুদ্ধে জেতে। তবে ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্র যতটা যুদ্ধে জিতেছে, ততটাই আবার কিছু যুদ্ধে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কখনও সরাসরি পরাজয়, কখনও কৌশলগত ব্যর্থতা, কখনও বা রাজনৈতিক ও মানবিক পরিণতির ভারে নুয়ে পড়েছে বিশ্বমঞ্চের এ সুপারপাওয়ার। আজকের এই ফিচারে আমরা জানব, যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত কতগুলো যুদ্ধে হেরেছে, কেন হেরেছে, এবং বিদেশি গবেষকরা এসব পরাজয়কে কী চোখে দেখেন।
যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে অসংখ্য যুদ্ধে জড়িয়েছে। কখনও তারা সরাসরি অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, আবার কখনও তৃতীয় কোন দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়েছে, কিংবা বিশ্বযুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে লড়েছে। তবে যুদ্ধ জেতা যেমন গৌরবের, তেমনি হার মানা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকে।
প্রথম বড় ধাক্কা আসে ১৮১২ সালের “ওয়ার অব ১৮১২”-এ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। এই যুদ্ধে তারা মূলত চেয়েছিল কানাডা দখল করতে। কিন্তু ব্রিটিশ ও তাদের কানাডিয়ান মিত্রদের সামনে শেষ পর্যন্ত আমেরিকান সেনারা ব্যর্থ হয়। যুদ্ধে সরাসরি পরাজয় না হলেও উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ায় ইতিহাসবিদরা একে "একটি অমীমাংসিত কিন্তু কৌশলগতভাবে হার" হিসেবে চিহ্নিত করেন। ব্রিটিশ সামরিক ইতিহাসবিদ জন পিকারিং বলেছিলেন, “যুদ্ধ হয়তো ড্র হয়েছিল কাগজে-কলমে, কিন্তু আমেরিকার রাজনৈতিক লক্ষ্য ব্যর্থ হওয়ায় এটি একটি পরোক্ষ পরাজয়।”
এরপর সবচেয়ে আলোচিত পরাজয় আসে ১৯৫০-এর দশকে কোরিয়ান যুদ্ধের (Korean War) সময়। উত্তর কোরিয়া ও চীন মিলে যখন দক্ষিণ কোরিয়াকে দখল করতে চায়, তখন আমেরিকা জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৫৩ সালে একটি অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে। উত্তর কোরিয়াকে পরাজিত করতে না পারায় এবং পুরো কোরিয়া উপদ্বীপকে একত্র করতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধকেও একটি “অসমাপ্ত মিশন” হিসেবে ধরা হয়।
তবে সবচেয়ে বড় ও সরাসরি সামরিক ও রাজনৈতিক পরাজয় আসে ভিয়েতনাম যুদ্ধে। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় দুই দশক ধরে চলা এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র লাখ লাখ সৈন্য পাঠিয়েছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে বাঁচাতে। কিন্তু উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী, বিশেষ করে ভিয়েতকং-এর গেরিলা যুদ্ধ কৌশলের সামনে মার্কিন সামরিক বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যুদ্ধের শেষ দিকে আমেরিকান জনমতও যুদ্ধবিরোধী হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম থেকে সেনা সরিয়ে নেয় এবং সাইগন পতনের মাধ্যমে উত্তর ভিয়েতনাম বিজয়ী হয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইতিহাসবিদ ড. স্টিফেন মার্সার বলেন, “ভিয়েতনাম শুধু একটি সামরিক নয়, আমেরিকার রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়ের নাম। এটি প্রমাণ করেছিল, আধুনিক প্রযুক্তি আর অর্থই সবসময় যুদ্ধ জেতার নিশ্চয়তা দেয় না।”
ভিয়েতনাম যুদ্ধের রক্তাক্ত ছায়া এখনও আমেরিকার জাতীয় মননে জ্বলজ্বল করে। সেটি এতটাই গভীর যে, পরে যখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে নামে তালেবানের বিরুদ্ধে, তখন বহু গবেষক সেটিকে “আরেকটি ভিয়েতনাম” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
আফগানিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে, ৯/১১ হামলার পর। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তালেবান সরকারকে সরিয়ে আল-কায়েদাকে ধ্বংস করা হবে। শুরুতে তারা কাবুল দখল করলেও, পরে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে থাকে। ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চলার পর ২০২১ সালে আমেরিকান সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। তার কিছুদিন পরেই তালেবান আবারও ক্ষমতা দখল করে।
লন্ডনের কিংস কলেজের যুদ্ধবিশ্লেষক ড. অ্যান্থনি হুইটম্যান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশটি তালেবানের হাতেই ফিরেছে। এটা একটা পরিপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক পরাজয়।”
আফগানিস্তান যুদ্ধের আর্থিক খরচ হয়েছিল প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং তাতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২৪০০ আমেরিকান সৈন্য। এই পরাজয় এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই বলেন, “আমরা যদি আরও বিশ বছর থাকতাম, ফলাফল একই থাকত।”
ইরাক যুদ্ধও অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ জয় বা পরাজয়ের মাঝামাঝি পড়ে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে, দাবি করে যে সাদ্দাম হোসেনের হাতে রয়েছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র (WMD)। কিন্তু পরে প্রমাণ মেলে, এমন কোনো অস্ত্র ছিল না। যুদ্ধ চলাকালীন সাদ্দাম সরকার উৎখাত হলেও দেশটিতে বিদ্রোহ, গৃহযুদ্ধ, এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থান ঘটে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতির বিশ্লেষক ড. রিচার্ড হোয়াইট বলেন, “যদি একটি যুদ্ধের ফলাফল হয় আরও বিশৃঙ্খলা, আরও সন্ত্রাস, তাহলে আপনি বলতে পারবেন না যে তা একটি সফল সামরিক অভিযান।” তিনি আরও বলেন, “ইরাক যুদ্ধ মূলত এক প্রচণ্ড ব্যয়বহুল ভুল সিদ্ধান্ত, যার মূল্য এখনো দিচ্ছে আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য।”
এর বাইরেও আমেরিকা সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে অনেক দেশে—লিবিয়া, সোমালিয়া, হাইতি, সিরিয়া, ইয়েমেন ইত্যাদি। কিন্তু এসব জায়গায় তারা খুব একটা সাফল্য পায়নি। বরং কোথাও অস্থিরতা বেড়েছে, কোথাও বিদ্রোহ বেড়েছে।
একটি যুদ্ধ সরাসরি হারলেই কেবল সেটিকে পরাজয় বলা যায় না। আজকের দিনে ‘পরাজয়’ শব্দটি বিশ্লেষণ করতে হয় রাজনৈতিক ও কৌশলগত ফলাফলের আলোকে। যুদ্ধ শেষে যদি দেশটি তার মূল লক্ষ্য অর্জন করতে না পারে, যদি সেখানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা না আসে, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে ব্যর্থতা।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক “সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ”-এর গবেষক জেমস লিন্ডসে বলেন, “আমেরিকার একমাত্র সমস্যা তার সামরিক শক্তি নয়, বরং কীভাবে সেই শক্তিকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—এটাই মূল প্রশ্ন। ভুল সময়ে ভুল জায়গায় যাওয়া, এবং বাস্তবতা বিবেচনা না করে রাজনৈতিক হঠকারিতা—এগুলোই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ডেকে এনেছে।”
আজকে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় এক ডজন বড় বা মাঝারি যুদ্ধ বা সামরিক অভিযানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরাজয় স্বীকার করেছে। ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক—এই তিনটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার প্রতীক। এসব যুদ্ধ শুধু প্রাণহানি নয়, কোটি কোটি ডলার ক্ষতি করেছে, বিশ্বজুড়ে আমেরিকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধনীতি নির্ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে অনেক বিশ্লেষকই এখন বলছেন—শুধু শক্তি নয়, যুদ্ধের আগে প্রয়োজন দূরদৃষ্টি, নীতিগত সততা ও জনগণের সমর্থন। কারণ, যুদ্ধ জিততে হলে প্রথমে জিততে হয় বিবেক ও বুদ্ধির লড়াই। আর তা না হলে, শত সেনা, শত প্রযুক্তি দিয়েও শেষ রক্ষা হয় না।
‘আমেরিকা কখনও হার মানে না’—এই কথাটা যেন কোনো হলিউড ছবির সংলাপ। বাস্তবেও অনেক আমেরিকান মনে করেন তাঁদের দেশ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, এবং তাই তারা যুদ্ধে জেতে। তবে ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্র যতটা যুদ্ধে জিতেছে, ততটাই আবার কিছু যুদ্ধে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কখনও সরাসরি পরাজয়, কখনও কৌশলগত ব্যর্থতা, কখনও বা রাজনৈতিক ও মানবিক পরিণতির ভারে নুয়ে পড়েছে বিশ্বমঞ্চের এ সুপারপাওয়ার। আজকের এই ফিচারে আমরা জানব, যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত কতগুলো যুদ্ধে হেরেছে, কেন হেরেছে, এবং বিদেশি গবেষকরা এসব পরাজয়কে কী চোখে দেখেন।
যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে অসংখ্য যুদ্ধে জড়িয়েছে। কখনও তারা সরাসরি অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, আবার কখনও তৃতীয় কোন দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়েছে, কিংবা বিশ্বযুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে লড়েছে। তবে যুদ্ধ জেতা যেমন গৌরবের, তেমনি হার মানা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকে।
প্রথম বড় ধাক্কা আসে ১৮১২ সালের “ওয়ার অব ১৮১২”-এ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। এই যুদ্ধে তারা মূলত চেয়েছিল কানাডা দখল করতে। কিন্তু ব্রিটিশ ও তাদের কানাডিয়ান মিত্রদের সামনে শেষ পর্যন্ত আমেরিকান সেনারা ব্যর্থ হয়। যুদ্ধে সরাসরি পরাজয় না হলেও উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ায় ইতিহাসবিদরা একে "একটি অমীমাংসিত কিন্তু কৌশলগতভাবে হার" হিসেবে চিহ্নিত করেন। ব্রিটিশ সামরিক ইতিহাসবিদ জন পিকারিং বলেছিলেন, “যুদ্ধ হয়তো ড্র হয়েছিল কাগজে-কলমে, কিন্তু আমেরিকার রাজনৈতিক লক্ষ্য ব্যর্থ হওয়ায় এটি একটি পরোক্ষ পরাজয়।”
এরপর সবচেয়ে আলোচিত পরাজয় আসে ১৯৫০-এর দশকে কোরিয়ান যুদ্ধের (Korean War) সময়। উত্তর কোরিয়া ও চীন মিলে যখন দক্ষিণ কোরিয়াকে দখল করতে চায়, তখন আমেরিকা জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৫৩ সালে একটি অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে। উত্তর কোরিয়াকে পরাজিত করতে না পারায় এবং পুরো কোরিয়া উপদ্বীপকে একত্র করতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রের এই যুদ্ধকেও একটি “অসমাপ্ত মিশন” হিসেবে ধরা হয়।
তবে সবচেয়ে বড় ও সরাসরি সামরিক ও রাজনৈতিক পরাজয় আসে ভিয়েতনাম যুদ্ধে। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় দুই দশক ধরে চলা এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র লাখ লাখ সৈন্য পাঠিয়েছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে বাঁচাতে। কিন্তু উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট বাহিনী, বিশেষ করে ভিয়েতকং-এর গেরিলা যুদ্ধ কৌশলের সামনে মার্কিন সামরিক বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। যুদ্ধের শেষ দিকে আমেরিকান জনমতও যুদ্ধবিরোধী হয়ে ওঠে। অবশেষে ১৯৭৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম থেকে সেনা সরিয়ে নেয় এবং সাইগন পতনের মাধ্যমে উত্তর ভিয়েতনাম বিজয়ী হয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামরিক ইতিহাসবিদ ড. স্টিফেন মার্সার বলেন, “ভিয়েতনাম শুধু একটি সামরিক নয়, আমেরিকার রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়ের নাম। এটি প্রমাণ করেছিল, আধুনিক প্রযুক্তি আর অর্থই সবসময় যুদ্ধ জেতার নিশ্চয়তা দেয় না।”
ভিয়েতনাম যুদ্ধের রক্তাক্ত ছায়া এখনও আমেরিকার জাতীয় মননে জ্বলজ্বল করে। সেটি এতটাই গভীর যে, পরে যখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে নামে তালেবানের বিরুদ্ধে, তখন বহু গবেষক সেটিকে “আরেকটি ভিয়েতনাম” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
আফগানিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে, ৯/১১ হামলার পর। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তালেবান সরকারকে সরিয়ে আল-কায়েদাকে ধ্বংস করা হবে। শুরুতে তারা কাবুল দখল করলেও, পরে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে থাকে। ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চলার পর ২০২১ সালে আমেরিকান সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়। তার কিছুদিন পরেই তালেবান আবারও ক্ষমতা দখল করে।
লন্ডনের কিংস কলেজের যুদ্ধবিশ্লেষক ড. অ্যান্থনি হুইটম্যান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধ করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশটি তালেবানের হাতেই ফিরেছে। এটা একটা পরিপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক পরাজয়।”
আফগানিস্তান যুদ্ধের আর্থিক খরচ হয়েছিল প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং তাতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২৪০০ আমেরিকান সৈন্য। এই পরাজয় এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই বলেন, “আমরা যদি আরও বিশ বছর থাকতাম, ফলাফল একই থাকত।”
ইরাক যুদ্ধও অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ জয় বা পরাজয়ের মাঝামাঝি পড়ে। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে, দাবি করে যে সাদ্দাম হোসেনের হাতে রয়েছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র (WMD)। কিন্তু পরে প্রমাণ মেলে, এমন কোনো অস্ত্র ছিল না। যুদ্ধ চলাকালীন সাদ্দাম সরকার উৎখাত হলেও দেশটিতে বিদ্রোহ, গৃহযুদ্ধ, এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থান ঘটে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা নীতির বিশ্লেষক ড. রিচার্ড হোয়াইট বলেন, “যদি একটি যুদ্ধের ফলাফল হয় আরও বিশৃঙ্খলা, আরও সন্ত্রাস, তাহলে আপনি বলতে পারবেন না যে তা একটি সফল সামরিক অভিযান।” তিনি আরও বলেন, “ইরাক যুদ্ধ মূলত এক প্রচণ্ড ব্যয়বহুল ভুল সিদ্ধান্ত, যার মূল্য এখনো দিচ্ছে আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য।”
এর বাইরেও আমেরিকা সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে অনেক দেশে—লিবিয়া, সোমালিয়া, হাইতি, সিরিয়া, ইয়েমেন ইত্যাদি। কিন্তু এসব জায়গায় তারা খুব একটা সাফল্য পায়নি। বরং কোথাও অস্থিরতা বেড়েছে, কোথাও বিদ্রোহ বেড়েছে।
একটি যুদ্ধ সরাসরি হারলেই কেবল সেটিকে পরাজয় বলা যায় না। আজকের দিনে ‘পরাজয়’ শব্দটি বিশ্লেষণ করতে হয় রাজনৈতিক ও কৌশলগত ফলাফলের আলোকে। যুদ্ধ শেষে যদি দেশটি তার মূল লক্ষ্য অর্জন করতে না পারে, যদি সেখানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা না আসে, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে ব্যর্থতা।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক “সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ”-এর গবেষক জেমস লিন্ডসে বলেন, “আমেরিকার একমাত্র সমস্যা তার সামরিক শক্তি নয়, বরং কীভাবে সেই শক্তিকে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—এটাই মূল প্রশ্ন। ভুল সময়ে ভুল জায়গায় যাওয়া, এবং বাস্তবতা বিবেচনা না করে রাজনৈতিক হঠকারিতা—এগুলোই সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ডেকে এনেছে।”
আজকে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় এক ডজন বড় বা মাঝারি যুদ্ধ বা সামরিক অভিযানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরাজয় স্বীকার করেছে। ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, ইরাক—এই তিনটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার প্রতীক। এসব যুদ্ধ শুধু প্রাণহানি নয়, কোটি কোটি ডলার ক্ষতি করেছে, বিশ্বজুড়ে আমেরিকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধনীতি নির্ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে অনেক বিশ্লেষকই এখন বলছেন—শুধু শক্তি নয়, যুদ্ধের আগে প্রয়োজন দূরদৃষ্টি, নীতিগত সততা ও জনগণের সমর্থন। কারণ, যুদ্ধ জিততে হলে প্রথমে জিততে হয় বিবেক ও বুদ্ধির লড়াই। আর তা না হলে, শত সেনা, শত প্রযুক্তি দিয়েও শেষ রক্ষা হয় না।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন ইরানি পার্লামেন্ট সদস্যরা। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো প্রতিনিধি ভোট দেননি।
১০ ঘণ্টা আগেইরান থেকে দেশে ফেরার জন্য এরই মধ্যেই ২৫০ জন বাংলাদেশি তেহরান দূতাবাসে নিবন্ধন করেছেন। এসব বাংলাদেশিকে ধাপে ধাপে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
১১ ঘণ্টা আগেইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কি ধ্বংস করতে পেরেছে ইসরায়েল? উত্তরটি সম্ভবত “না”। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ইরান সম্ভবত অত্যন্ত সুরক্ষিত ও ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দোতে থাকা গোপন ফিসনযোগ্য পদার্থ সরিয়ে নেয়, যা ছিল দেশটির পুরো পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান বা মূল বিষয়। ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির
১১ ঘণ্টা আগেইরান জানিয়েছে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধকালীন সম্পর্ক থাকার অভিযোগে ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও ৩ জনকে মোসাদ এজেন্ট হিসেবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগে