বিবিসি বাংলা
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ভলোদিমিরি জেলেনস্কি ও ইউরোপের নেতাদের সাথে দিনভর কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন তিনি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন। জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রায় ৪০ মিনিট ফোনে কথা বলেন দুই দেশের নেতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্পও লিখেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি টেলিফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন।
গত শুক্রবার আলাস্কায় পুতিনের সাথে বৈঠকের পর সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের জেলেনস্কির বৈঠকে সাথে এসেছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ , ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব ও নেটোর মহাসচিব মার্ক রুট।
পুতিন–জেলেনস্কি বৈঠক হতে যাচ্ছে?
জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল- এ লিখেছেন, তিনি পুতিনকে ফোন করে রুশ নেতা আর জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, এমন একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর তিনি এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে আয়োজন করবেন। পুতিন-জেলেনস্কির সাথে এই বৈঠকে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও।
তবে, কোথায় বা কবে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে সেটি নিয়ে নিশ্চিত করে বলেন নি তিনি।
ইউরোপীয় নেতারা হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বসার আগে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ট্রাম্পের কিছু কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছিল।
তাতে শোনা যায়, ট্রাম্প ম্যাক্রোঁকে বলেন, 'আমার মনে হয় সে (পুতিন) একটা চুক্তি করতে চায়। বিষয়টি যতই অদ্ভুত শোনায় না কেন সে আমার জন্য হলেও একটা চুক্তি করতে চায়। বুঝতে পারছেন?"
তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর চরম দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে এক টেবিলে আলোচনায় বসানো কতটা সহজ হবে সেটি এখনো অনিশ্চিত।
মাসের পর মাস ধরে জেলেনস্কি পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। যদিও অনেকের মতে- জেলেনস্কি আসলে প্রমাণ করতে চাচ্ছিলেন যে রাশিয়া আসলে শান্তি চায় না।
কেননা জেলেনস্কির বিশ্বাস, ক্রেমলিন এমন কোনো বৈঠকে আগ্রহী নয়। অন্যদিকে, মস্কো বারবারই পুতিন–জেলেনস্কি বৈঠকের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র অস্পষ্টভাবে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, "পুতিন জেলেনস্কি বৈঠকে উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না তা বিবেচনা করা যেতে পারে।"
'যুদ্ধবিরতি' নিয়ে কী বলছেন ইউরোপীয় নেতারা
হোয়াইট হাউজে আলোচিত এই বৈঠকে একটি টেবিলের চারপাশজুড়ে বসেছিলেন ইউরোপীয় নেতারা। সাথে ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ঠিক মধ্যখানে বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে এদিন বৈঠক করেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসেন। এ সময় ইউরোপীয় নেতারা যুদ্ধ বন্ধ ও ইউক্রেন তথা ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন।
এই বৈঠকেই গুরুত্ব পায় যুদ্ধবিরতি বা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি। ট্রাম্প সেখানে বলেন- যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার আগে যুদ্ধবিরতি জরুরি নয়।
যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেন বারবার শান্তি আলোচনার শর্ত হিসেবে যুদ্ধবিরতি জরুরি বলে জানিয়েছিল।
একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির চেয়ে যুদ্ধবিরতিকে প্রাথমিকভাবে কিছুটা সহজ মনে করা হয়। কেননা, শান্তিচুক্তি করতে মাসের পর মাস লাগবে, এর মধ্যে রাশিয়ার হামলা চালানোরও আশঙ্কা রয়েছে।
বৈঠকে ইউরোপীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, "আমি জানি না এটা (যুদ্ধবিরতি) কতটা জরুরি।"
তবে ইউরোপীয় নেতারা এর বিরোধিতা করেন। সবচেয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ।
তিনি বলেছেন, "আমি কল্পনাও করতে পারি না যে পরবর্তী বৈঠক যুদ্ধবিরতি ছাড়া হবে। তাই চলুন, এ নিয়েই কাজ করি এবং রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করি।"
পরে জেলেনস্কিকে যখন বক্তব্য রাখতে বলা হয়, তখন তিনি তার আগের মতো যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিয়ে পুনরাবৃত্তি করেননি।
নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ইঙ্গিত ট্রাম্পের
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, যুদ্ধ অবসানের যেকোনো চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো সহযোগিতা করবে। তবে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
ট্রাম্প সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেননি, তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই সম্ভাবনাকে উড়িয়েও দেননি।
ট্রাম্প বলেছেন, "ইউরোপের প্রতিরক্ষার বিষয়টিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রও এতে যুক্ত থাকবে। আমরা তাদের ভালো সুরক্ষা দিবো"।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে এটি এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য। যা রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, গত সপ্তাহে আলাস্কা বৈঠকে পুতিন মেনে নিয়েছেন যে শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকবে।
সোমবারের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রচুক্তি হবে। এতে এমন মার্কিন অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা এখন ইউক্রেনের কাছে নেই— যেমন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী ব্যবস্থা ইত্যাদি।
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ড্রোন কিনবে, যা দেশীয় ড্রোন উৎপাদনের অর্থায়নে সহায়তা করবে।
জেলেনস্কি জানান, কিয়েভের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিস্তারিত চুক্তি ১০ দিনের মধ্যেই তৈরি হতে পারে।
জেলেনস্কির 'সৌজন্য' অভিযান
গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে বেশ তিক্ততা নিয়ে ফিরেছিলেন জেলেনস্কি। এবার মার্কিন নেতাদের মন জয় করতে জেলেনস্কি শুরু থেকেই ভিন্ন কৌশল নেন।
ট্রাম্পের সাথে বৈঠকটি যখন শুরু হয় তখন মাত্র প্রথম কয়েক মিনিটে অন্তত ছয়বার ট্রাম্পকে 'ধন্যবাদ' বলেছিলেন।
গত বৈঠকে হোয়াইট হাউজে গিয়ে মার্কিন সহায়তার জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করায় ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের তিরস্কারের শিকার হয়েছিলেন।
এবার তিনি সামরিক পোশাকের বদলে গাঢ় রঙের স্যুট পরেছিলেন। যা দেখে ট্রাম্প হালকা ঠাট্টা করে বলেন, "আজকে বেশ সাজগোজ করে এসেছেন"।
ট্রাম্পকে আকৃষ্ট করতে জেলেনস্কি তার নিজের স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কার লেখা একটি চিঠি ট্রাম্পকে দেন। যা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের হাতে পৌঁছে দিতে বলেন।
ওই চিঠি ট্রাম্পের কাছে দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, "এটা আপনার জন্য নয়, আপনার স্ত্রীর জন্য"।
ইউরোপীয় নেতারাও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় দফায় দফায় বৈঠকের জন্য ট্রাম্পকে প্রশংসায় ভাসান। নেটো প্রধান মার্ক রুট বলেন, "আমি সত্যিই আপনার নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।"
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, "রাশিয়া আগে শান্তির পথে এগোতে আগ্রহ দেখায়নি, কিন্তু ট্রাম্পের কারণে পরিস্থিতি বদলেছে"।
এই ইতিবাচক পরিবেশের মাঝেই ইউরোপীয় নেতারা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তারাও রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসনের হুমকির মুখে আছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, "যখন আমরা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা বলি, তখন তাতে পুরো ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়টিও থাকে"।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ভলোদিমিরি জেলেনস্কি ও ইউরোপের নেতাদের সাথে দিনভর কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন তিনি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন। জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রায় ৪০ মিনিট ফোনে কথা বলেন দুই দেশের নেতা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্পও লিখেছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি টেলিফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন।
গত শুক্রবার আলাস্কায় পুতিনের সাথে বৈঠকের পর সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের জেলেনস্কির বৈঠকে সাথে এসেছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ , ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব ও নেটোর মহাসচিব মার্ক রুট।
পুতিন–জেলেনস্কি বৈঠক হতে যাচ্ছে?
জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল- এ লিখেছেন, তিনি পুতিনকে ফোন করে রুশ নেতা আর জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, এমন একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর তিনি এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে আয়োজন করবেন। পুতিন-জেলেনস্কির সাথে এই বৈঠকে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও।
তবে, কোথায় বা কবে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে সেটি নিয়ে নিশ্চিত করে বলেন নি তিনি।
ইউরোপীয় নেতারা হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে বসার আগে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও ট্রাম্পের কিছু কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছিল।
তাতে শোনা যায়, ট্রাম্প ম্যাক্রোঁকে বলেন, 'আমার মনে হয় সে (পুতিন) একটা চুক্তি করতে চায়। বিষয়টি যতই অদ্ভুত শোনায় না কেন সে আমার জন্য হলেও একটা চুক্তি করতে চায়। বুঝতে পারছেন?"
তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর চরম দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে এক টেবিলে আলোচনায় বসানো কতটা সহজ হবে সেটি এখনো অনিশ্চিত।
মাসের পর মাস ধরে জেলেনস্কি পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। যদিও অনেকের মতে- জেলেনস্কি আসলে প্রমাণ করতে চাচ্ছিলেন যে রাশিয়া আসলে শান্তি চায় না।
কেননা জেলেনস্কির বিশ্বাস, ক্রেমলিন এমন কোনো বৈঠকে আগ্রহী নয়। অন্যদিকে, মস্কো বারবারই পুতিন–জেলেনস্কি বৈঠকের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র অস্পষ্টভাবে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, "পুতিন জেলেনস্কি বৈঠকে উচ্চ পদস্থ প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না তা বিবেচনা করা যেতে পারে।"
'যুদ্ধবিরতি' নিয়ে কী বলছেন ইউরোপীয় নেতারা
হোয়াইট হাউজে আলোচিত এই বৈঠকে একটি টেবিলের চারপাশজুড়ে বসেছিলেন ইউরোপীয় নেতারা। সাথে ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ঠিক মধ্যখানে বসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে জেলেনস্কির সঙ্গে এদিন বৈঠক করেন ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসেন। এ সময় ইউরোপীয় নেতারা যুদ্ধ বন্ধ ও ইউক্রেন তথা ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন।
এই বৈঠকেই গুরুত্ব পায় যুদ্ধবিরতি বা স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি। ট্রাম্প সেখানে বলেন- যুদ্ধ বন্ধের আলোচনার আগে যুদ্ধবিরতি জরুরি নয়।
যুদ্ধ চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে ইউক্রেন বারবার শান্তি আলোচনার শর্ত হিসেবে যুদ্ধবিরতি জরুরি বলে জানিয়েছিল।
একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তিচুক্তির চেয়ে যুদ্ধবিরতিকে প্রাথমিকভাবে কিছুটা সহজ মনে করা হয়। কেননা, শান্তিচুক্তি করতে মাসের পর মাস লাগবে, এর মধ্যে রাশিয়ার হামলা চালানোরও আশঙ্কা রয়েছে।
বৈঠকে ইউরোপীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, "আমি জানি না এটা (যুদ্ধবিরতি) কতটা জরুরি।"
তবে ইউরোপীয় নেতারা এর বিরোধিতা করেন। সবচেয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ।
তিনি বলেছেন, "আমি কল্পনাও করতে পারি না যে পরবর্তী বৈঠক যুদ্ধবিরতি ছাড়া হবে। তাই চলুন, এ নিয়েই কাজ করি এবং রাশিয়ার ওপর চাপ তৈরি করার চেষ্টা করি।"
পরে জেলেনস্কিকে যখন বক্তব্য রাখতে বলা হয়, তখন তিনি তার আগের মতো যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিয়ে পুনরাবৃত্তি করেননি।
নিরাপত্তার নিশ্চয়তার ইঙ্গিত ট্রাম্পের
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, যুদ্ধ অবসানের যেকোনো চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে কোনো সহযোগিতা করবে। তবে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
ট্রাম্প সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেননি, তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই সম্ভাবনাকে উড়িয়েও দেননি।
ট্রাম্প বলেছেন, "ইউরোপের প্রতিরক্ষার বিষয়টিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রও এতে যুক্ত থাকবে। আমরা তাদের ভালো সুরক্ষা দিবো"।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে এটি এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের সবচেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য। যা রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, গত সপ্তাহে আলাস্কা বৈঠকে পুতিন মেনে নিয়েছেন যে শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকবে।
সোমবারের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রচুক্তি হবে। এতে এমন মার্কিন অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা এখন ইউক্রেনের কাছে নেই— যেমন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী ব্যবস্থা ইত্যাদি।
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ড্রোন কিনবে, যা দেশীয় ড্রোন উৎপাদনের অর্থায়নে সহায়তা করবে।
জেলেনস্কি জানান, কিয়েভের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিস্তারিত চুক্তি ১০ দিনের মধ্যেই তৈরি হতে পারে।
জেলেনস্কির 'সৌজন্য' অভিযান
গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে বেশ তিক্ততা নিয়ে ফিরেছিলেন জেলেনস্কি। এবার মার্কিন নেতাদের মন জয় করতে জেলেনস্কি শুরু থেকেই ভিন্ন কৌশল নেন।
ট্রাম্পের সাথে বৈঠকটি যখন শুরু হয় তখন মাত্র প্রথম কয়েক মিনিটে অন্তত ছয়বার ট্রাম্পকে 'ধন্যবাদ' বলেছিলেন।
গত বৈঠকে হোয়াইট হাউজে গিয়ে মার্কিন সহায়তার জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করায় ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের তিরস্কারের শিকার হয়েছিলেন।
এবার তিনি সামরিক পোশাকের বদলে গাঢ় রঙের স্যুট পরেছিলেন। যা দেখে ট্রাম্প হালকা ঠাট্টা করে বলেন, "আজকে বেশ সাজগোজ করে এসেছেন"।
ট্রাম্পকে আকৃষ্ট করতে জেলেনস্কি তার নিজের স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কার লেখা একটি চিঠি ট্রাম্পকে দেন। যা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের হাতে পৌঁছে দিতে বলেন।
ওই চিঠি ট্রাম্পের কাছে দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, "এটা আপনার জন্য নয়, আপনার স্ত্রীর জন্য"।
ইউরোপীয় নেতারাও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় দফায় দফায় বৈঠকের জন্য ট্রাম্পকে প্রশংসায় ভাসান। নেটো প্রধান মার্ক রুট বলেন, "আমি সত্যিই আপনার নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।"
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, "রাশিয়া আগে শান্তির পথে এগোতে আগ্রহ দেখায়নি, কিন্তু ট্রাম্পের কারণে পরিস্থিতি বদলেছে"।
এই ইতিবাচক পরিবেশের মাঝেই ইউরোপীয় নেতারা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তারাও রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসনের হুমকির মুখে আছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, "যখন আমরা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা বলি, তখন তাতে পুরো ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়টিও থাকে"।
এ বৈঠকের দিন-তারিখ নিয়ে অবশ্য কোনো তরহ্য মেলেনি। নির্ধারণ হয়নি বৈঠকের স্থানও। তবে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস আভাস দিয়েছেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকটি হতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগেবৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। এ সময় জেলেনস্কি বলেন, কূটনৈতিকভাবে যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সমর্থন আছে।
১৪ ঘণ্টা আগেইংল্যান্ডের সিংহাসন তখন ছিল এক জটিল রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্র। ইংরেজ রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল—কে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হবেন? রাজ্যের প্রধান অভিজাতেরা হ্যারল্ড গডউইনসনকে রাজা ঘোষণা করলেন।
২০ ঘণ্টা আগেযুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।তবে সমালোচকরা ইতোমধ্যেই এই নির্বাচনকে ধোঁকাবাজি বলে উল্লেখ করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগে