ভারত-বিরোধী নই, সমতা নিয়ে সুসম্পর্ক চাই : জামায়াত আমির

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ১৪

ভারত বিরোধিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জামায়াতে ইসলামির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তার অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জামায়াতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষে তিনি।

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এ কথা ‘সর্বজনবিদিত’, ‘জামায়াত বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী রাজনীতি করে।’ তবে এই বিষয়টি অস্বীকার করলেন জামায়াত আমির। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায়।

প্রশ্ন: জামায়াতে ইসলামীর ভারত-বিরোধিতা সর্বজনপরিচিত। কী বলবেন?

উত্তর: সম্পূর্ণ অস্বীকার করছি। এই ধারণা ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের নিশানা করে এই মতবাদ ছড়ানো হয়েছে যাতে জামায়াতের রাজনীতির মিথ্যা ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সমান মর্যাদা এবং সম্মানের ভিত্তিতে আমরা ভারত-সহ সমস্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমাদের আন্তর্জাতিক নীতি, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। চাই ভারতও একইরকম স়াড়া দিক, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহাবস্থানের ভিত্তিতে।

প্রশ্ন: কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে দেখা হয় কট্টর ইসলামি সংস্থা হিসাবে, অন্যান্য ইসলামি রাষ্ট্রে যে ‘ইসলামিক ব্রাদারহুড’ রয়েছে তার অংশ হিসাবে। নিজেদের সংগঠনকে কী ভাবে দেখেন?

উত্তর: আবারও আপনি ধরেই নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন। এটা একেবারেই অসত্য। জামায়াত একটি আধুনিক, উদার এবং গণতান্ত্রিক দল, যার ভিত্তি ইসলামিক আদর্শ। আরও একটি কথা মনে করিয়ে দিই, আমরা একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দল। বিশ্বের অন্য কোনও রাজনৈতিক সংস্থায় আমাদের প্রতিনিধিত্ব নেই।

প্রশ্ন: কিন্তু বিএনপির একটি অংশ আপনাদের কট্টরপন্থী মনোভাব নিয়ে অস্বস্তিতে। কী বলবেন?

উত্তর: কট্টরপন্থী মনোভাব বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তা অস্পষ্ট। আপনাদের কাগজের মাধ্যমে জোরালো ভাবে আবারও বলতে চাই, জামায়াত একটি আধুনিক, উদারপন্থী, গণতান্ত্রিক দল, যার আদর্শ ইসলামের। আমরা সর্বদাই যুক্তিগ্রাহ্য, বাস্তবসম্মত এবং মধ্যপন্থা নিয়ে রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণ করি। বিএনপি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী, তারা আমাদের আধুনিক মনোভঙ্গি সম্পর্কে সচেতন।

প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর থেকেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে হিংসার প্রতিবাদে সরব। কী ভরসা দেবেন?

উত্তর: জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের অসামান্য সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া রয়েছে। প্রতিটি নাগরিককে সমদৃষ্টিতে দেখা হয় এবং রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিককে সমান অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্মান করা হয়। জামায়াত সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরুর তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। আমরা মনে করি ধর্মের ভিত্তিতে দেশবাসীর বিভাজন অপরাধ। হিন্দু বা অন্য কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসার ইতিহাস জামায়াতের নেই। বরং বিভিন্ন সময়ে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আপনারা সরকারে এলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোন দিকে যাবে?

উত্তর: আমার মনে হয় না পুরনো আওয়ামী লীগ জমানার সঙ্গে ভারতের নিছকই ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছিল। আমরা সবাই জানি, ওই সম্পর্কে কার কী স্বার্থ ছিল। তবে নিজেদের কথা বলতে পারি, আমরা চাই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান এবং সমতার মাধ্যমে। পড়শিদের সঙ্গে কার্যকরী এবং বাস্তবোচিত সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের পক্ষেই সুবিধাজনক। সরকারে এলে সেটাই করতে চাইব।

প্রশ্ন: একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং জামায়াত মিলিমিশে আওয়ামী লীগের পর এ বার বিএনপি-কেও সরিয়ে দিতে চাইছে। দুই বড় রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নতুন শক্তির উত্থান হবে। কতটা ঠিক?

উত্তর: সবিনয়ে বলতে চাই এই তত্ত্বের কোনও ভিত্তি নেই। আওয়ামী লীগের প্রতি জনতার সম্মিলিত ঘৃণা তৈরি হয়েছিল দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদী নীতির কারণে। তারা নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। কোনও সংগঠন বা দলকে সরানোর জন্য আমাদের কোনও ভূমিকা পালনের প্রয়োজন নেই। মানুষ সব জানেন। তাঁদের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে আমরা সম্মান করি। এইটুকু বলতে পারি, কোনও রাজনৈতিক দলকে খারিজ করা বা সরিয়ে দেওয়ার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন

গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় সংঘটিত ভাঙারি মালামালের ব্যবসায়ী সোহাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ড সারা দেশের মানুষের মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের পর মানুষের মধ্যে সঙ্গত কারণেই অনেক প্রশ্নও তৈরি হয়েছে।

৪ দিন আগে

মার্কিন উচ্চ শুল্কহার: উত্তরণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

বাংলাদেশও বাদ পড়েনি ট্রাম্পের এই ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’র তালিকা থেকে। সর্বশেষ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর দেশটি ৩৫ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করেছে, যা আমাদের দেশের জন্য একটি কঠিন অর্থনৈতিক আঘাত। বিশেষ করে এই শুল্কে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প।

৪ দিন আগে

নির্বাচনি ভারসাম্যে হাঁটছেন অধ্যাপক ইউনূস

এ নির্দেশের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমালোচকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই একে রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দেওয়া, প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলোর দাবির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যেও ইউনূসের সংস্কার এজেন্ডা সচল রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন।

৫ দিন আগে

মুদ্রিত সংবাদপত্র কি অপসৃত হয়ে যাবে

অনেক দিন ধরেই মুদ্রিত সংবাদপত্র পাঠক হারানো শঙ্কার মধ্যে আছে। অনলাইন নিউজ পোর্টালের দ্রুত বিকাশ এই শঙ্কা তৈরি করেছে। দেশব্যাপী পরিচালিত জরিপটি যেন এই শঙ্কাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, বেশির ভাগ পাঠকই এখন খবরের কাগজের অনলাইন সংস্করণ পড়েন এবং তা পড়েন মোবাইল ফোনে, যার পরিমাণ প্রায় ৬

৬ দিন আগে