প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (সমাবেশ) ঘিরে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি ওই সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে বলেও মনে করছে সংস্থাটি। আসক এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে পর্যবেক্ষণে।
আসক মনে করছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কারণেই সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। গুলিতে নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। কারফিউ ও ১৪৪ ধারা চলাকালে নির্বিচারে নাগরিকদের আটক ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ১৮টি শিশুও রয়েছে। এমনকি আটকের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মতো অভিযোগও উঠেছে।
আসক বলছে, ভয়ে মানুষ নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকছে। নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলার যে সব এলাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, সে সব এলাকাতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধর-পাকড়ের অভিযোগ রয়েছে।
গোপালগঞ্জের সহিংসতায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য ও বক্তব্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে এ পর্যবেক্ষণ গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে আসক।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলায় গত ১৬ জুলাই এনসিপির পূর্বনির্ধারিত রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু মানুষ।
এ ঘটনায় আসকের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২১ জুলাই ও ২২ জুলাই দুই দিনব্যাপী সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হতাহত ও আটক-গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় সাধারণ নাগরিক, পেশাজীবী এবং কারাগার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানানো হয়, সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী সমাবেশের দিনে আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সমাবেশস্থলে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ জন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সমাবেশের সামনে রাখা চেয়ার ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় সমাবেশে যোগ দেওয়া আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ জন এনসিপি সমর্থক সমাবেশস্থল ছেড়ে ডিসি অফিসের দিকে চলে যায়। এরপর সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে যায়। এ ঘটনার পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা বাড়ায়।
আসক বলছে, সমাবেশ সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশমুখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকেরা অবস্থান নেওয়ায় পুলিশ ও সেনা পাহারায় দুপুর ১টার কিছু পরে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে ওঠার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকরা শহরের বিভিন্ন স্পটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। গুলিতে আহতদের সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সমাবেশ শুরুর পূর্ববর্তী হামলা ও সমাবেশের পরবর্তী সময়ের সংঘর্ষের ঘটনায় হামলাকারীদের পক্ষ থেকে তীব্র ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কথা জানতে পেরেছে আসক। তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, কারও কারও হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। হামলার সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে— এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আসক বলছে, এনসিপির নেতারা স্বল্পসংখ্যক সমর্থকের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করে কিছু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হয়। এর পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন, বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘সাধারণ জনতা’ রাস্তায় নেমে আসে। তিন ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।
আসকের তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সমাবেশের আগের দিন স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলের সন্নিকটের দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশাসনের নির্দেশে দোকানপাট বন্ধ রাখেন দোকান মালিকরা।
সমাবেশ স্থলের কাছাকাছি এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে জানান, সমাবেশের দিন সকালে প্রশাসনের লোকজন জোর করে দোকান বন্ধ করে দেয় এবং কোথাও কোথাও দোকানের শাটার নামিয়ে দোকানের ভেতরে থাকা মানুষদের আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে। সমাবেশের দিনে সকাল থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকেরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র ছিল ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ সহিংসতায় গুলিতে নিহত হন দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), ইমন তালুকদার (১৭) ও সোহেল মোল্লা (৩২)। পরে ১৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী। আসকের অনুসন্ধান দল নিশ্চিত হয়েছে, এই পাঁচজনের মধ্যে শুধু ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রমজান মুন্সীর ময়নাতদন্ত হয়েছে। আসকের পক্ষ থেকে রমজান মুন্সীর সুরতহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রতিবেদনে শরীরে গুলির চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
নিহত ইমন তালুকদারের পরিবার জানিয়েছে, ঘটনার দিনে আনুমানিক দেড়টার দিকে ইমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিকেল ৫টার দিকে মরদেহ দ্রুত নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিলে তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন।
তারা আরও বলেন, ইমনের শরীরে গুলির চিহ্ন ও মুখমণ্ডলসহ নানা স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছেলেকে রাস্তায় ফেলে মুখমণ্ডলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পা (বুট) দিয়ে আঘাতের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ভিডিওর ছেলেটিই ইমন। সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না, স্থানীয় ভেড়াবাজার এলাকার একটি ক্রোকারিজের দোকানে কাজ করত।
একই অভিযোগ করেছেন নিহত রমজান কাজী, দীপ্ত সাহা ও সোহেল মোল্লার পরিবারও। তারা বলছেন, হাসপাতাল থেকে দ্রুত মরদেহ নিয়ে দাফন বা সৎকারের তাগিদ দেওয়া হয়। এ কারণে তারা মরদেহ নিয়ে এলাকায় চলে যান।
গণমাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন ও সৎকারের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে গত ২০ জুলাই পুলিশের পক্ষ থেকে দীপ্ত সাহার পরিবার ছাড়া অন্য তিনটি পরিবারকে জানানো হয়, ২১ জুলাই কবরস্থান থেকে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্ত করা হবে। পরে ২১ জুলাই কবর থেকে মরদেহ তুলে সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। রমজান কাজী ও ইমনের মরদেহ উত্তোলন ও সুরতহাল প্রক্রিয়ায় সরেজমিনে উপস্থিত ছিল আসকের প্রতিনিধি দল।
আসকের প্রতিনিধি দল গুলিতে আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেছেন। চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ একজন জানান, তার পেটে ও হাতে গুলি লেগেছে, হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি ইঞ্জিনচালিত রিকশায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিনি আহত হন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।
২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ১৮টি শিশুকে পুলিশ গেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে আসক। তাদের অনেককে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর অধীনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে আসকের তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়। সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।
সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় ২১ জুলাই পর্যন্ত মোট আটি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি মামলার কপি আসকের তথ্য অনুসন্ধান দলের হাতে এসেছে। মামলাগুলোর এজাহার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ জনকে। এর মধ্যে ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আসামিদের মধ্যে তিনজন নারী ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩২ জন রয়েছেন। আসকের প্রতিনিধি দলের কাছে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ কখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
তথ্য অনুসন্ধানকালে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৪ জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২১ জন সাধারণ নাগরিক, দুজন পুলিশ সদস্য। আরেকজন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক হামীম। গুরুতর আহত ছিলেন তিনজন— রমজান মুন্সী, আব্বাস আলী ও সুমন বিশ্বাস। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে রেফার করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আসকের প্রতিনিধিদের জানান, ১৬ জুলাই দুপুর থেকে মোট চারজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাদের ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তবে দীপ্ত সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত দুজন আসকের কাছে দাবি করেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় দীপ্ত সাহা বেঁচে ছিলেন। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ফলে দীপ্ত সাহাকে ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা সঠিক নয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে আসক প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছিলেন, আহতদের মধ্যে কতজন গুলিবিদ্ধ ছিলেন। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঠিক এভাবে বলা যাবে না, গুলির বিষয়টি বলতে হলে আরও এক্সামিনের ব্যাপার রয়েছে।’ তবে তিনি আসকের প্রতিধিদের নিশ্চিত করেছেন, আহত পুলিশ সদস্য মিনহাজ সরদার ও মো. কাওছার হোসাইন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক হামীমের মধ্যে কেউ গুলিবিদ্ধ ছিলেন না।
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে দায়িত্বরত জেল সুপার তানিয়া জামান ও কারাগারে উপস্থিত এআইজি (প্রিজন) দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম ২১ জুলাই আসক প্রতিনিধিদের জানান, এ পর্যন্ত ১৮ শিশুকে আদালতের আদেশে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ কারাগার থেকে ১০০ বন্দিকে পিরোজপুর ও ৫০ বন্দিকে বাগেরহাট কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ১৫০ বন্দির সবাই হাজতি। এই কারাগারে বন্দির মোট ধারণ ক্ষমতা ৩৪৮ জন, এর মধ্যে পুরুষ ৩২১ ও নারী ২৭ জন। ২১ জুলাই মোট বন্দি ছিলেন ৭৫১ জন।
কারা কর্তৃপক্ষ আসক প্রতিনিধিদের আরও জানান, ১৬ জুলাই আনুমানিক দুপুর ৩টার দিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কারাগারে হামলা করে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং গার্ডরুম ও গেস্ট ওয়েটিং রুমের ক্ষতি করে। কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। এ ছাড়া কারাগারের অস্ত্রভাণ্ডার ভাঙার চেষ্টা করা হয়।
এ ঘটনায় কারা পুলিশ ৮০ রাউন্ড ‘মিসফায়ার’ করে। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কারা কর্তৃপক্ষ সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা অনুধাবন করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সব বন্দিকে লকআপে নিয়ে নেয়। এ ধরনের সতর্কতার জন্য কারাগারে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
আসকের প্রতিনিধিরা গোপালগঞ্জ সদর থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পুলিশ সুপার গোপালগঞ্জ আসকের প্রতিনিধিদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানান, ১৬ জুলাই সমাবেশ ঘিরে তীব্র সহিংসতা হয়েছে। পুলিশ কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করেনি, বরং সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করেছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেছে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে এনসিপি নেতাদের নিরাপত্তার জন্য তার কার্যালয়ে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর দুটি এপিসি মোতায়েন করতে হয়েছিল।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা গোপালগঞ্জে দায়িত্বরত সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাক্ষাৎ করতে পারেননি।
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (সমাবেশ) ঘিরে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি ওই সমাবেশে হামলার ঘটনা নাগরিকের সভা সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে বলেও মনে করছে সংস্থাটি। আসক এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে পর্যবেক্ষণে।
আসক মনে করছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্যের কারণেই সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। গুলিতে নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। কারফিউ ও ১৪৪ ধারা চলাকালে নির্বিচারে নাগরিকদের আটক ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ১৮টি শিশুও রয়েছে। এমনকি আটকের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের মতো অভিযোগও উঠেছে।
আসক বলছে, ভয়ে মানুষ নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকছে। নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলার যে সব এলাকায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, সে সব এলাকাতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধর-পাকড়ের অভিযোগ রয়েছে।
গোপালগঞ্জের সহিংসতায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পর্যবেক্ষণে এসব তথ্য ও বক্তব্য উঠে এসেছে। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে এ পর্যবেক্ষণ গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে আসক।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গোপালগঞ্জ জেলায় গত ১৬ জুলাই এনসিপির পূর্বনির্ধারিত রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন বহু মানুষ।
এ ঘটনায় আসকের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২১ জুলাই ও ২২ জুলাই দুই দিনব্যাপী সরেজমিন তথ্য সংগ্রহ করে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হতাহত ও আটক-গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় সাধারণ নাগরিক, পেশাজীবী এবং কারাগার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে।
পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানানো হয়, সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের ভাষ্য অনুযায়ী সমাবেশের দিনে আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সমাবেশস্থলে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ জন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সমাবেশের সামনে রাখা চেয়ার ভাঙচুর করতে থাকে। এ সময় সমাবেশে যোগ দেওয়া আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ জন এনসিপি সমর্থক সমাবেশস্থল ছেড়ে ডিসি অফিসের দিকে চলে যায়। এরপর সমাবেশে যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা সংগঠিত হয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত সরে যায়। এ ঘটনার পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা বাড়ায়।
আসক বলছে, সমাবেশ সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশমুখে আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকেরা অবস্থান নেওয়ায় পুলিশ ও সেনা পাহারায় দুপুর ১টার কিছু পরে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। বক্তব্য শেষ করে মঞ্চ থেকে নেমে গাড়িতে ওঠার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকরা শহরের বিভিন্ন স্পটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে পুরো শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। গুলিতে আহতদের সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সমাবেশ শুরুর পূর্ববর্তী হামলা ও সমাবেশের পরবর্তী সময়ের সংঘর্ষের ঘটনায় হামলাকারীদের পক্ষ থেকে তীব্র ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কথা জানতে পেরেছে আসক। তাদের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, কারও কারও হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। হামলার সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে— এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আসক বলছে, এনসিপির নেতারা স্বল্পসংখ্যক সমর্থকের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করে কিছু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা হয়। এর পরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যা পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন, বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ‘সাধারণ জনতা’ রাস্তায় নেমে আসে। তিন ঘণ্টাব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়।
আসকের তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সমাবেশের আগের দিন স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাবেশস্থলের সন্নিকটের দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশাসনের নির্দেশে দোকানপাট বন্ধ রাখেন দোকান মালিকরা।
সমাবেশ স্থলের কাছাকাছি এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে জানান, সমাবেশের দিন সকালে প্রশাসনের লোকজন জোর করে দোকান বন্ধ করে দেয় এবং কোথাও কোথাও দোকানের শাটার নামিয়ে দোকানের ভেতরে থাকা মানুষদের আটকে রাখার ঘটনাও ঘটে। সমাবেশের দিনে সকাল থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থকেরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। তাদের হাতে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র ছিল ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ সহিংসতায় গুলিতে নিহত হন দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), ইমন তালুকদার (১৭) ও সোহেল মোল্লা (৩২)। পরে ১৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গুলিবিদ্ধ রমজান মুন্সী। আসকের অনুসন্ধান দল নিশ্চিত হয়েছে, এই পাঁচজনের মধ্যে শুধু ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া রমজান মুন্সীর ময়নাতদন্ত হয়েছে। আসকের পক্ষ থেকে রমজান মুন্সীর সুরতহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে এবং প্রতিবেদনে শরীরে গুলির চিহ্ন থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
নিহত ইমন তালুকদারের পরিবার জানিয়েছে, ঘটনার দিনে আনুমানিক দেড়টার দিকে ইমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তারা হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিকেল ৫টার দিকে মরদেহ দ্রুত নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিলে তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন।
তারা আরও বলেন, ইমনের শরীরে গুলির চিহ্ন ও মুখমণ্ডলসহ নানা স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছেলেকে রাস্তায় ফেলে মুখমণ্ডলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের পা (বুট) দিয়ে আঘাতের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ভিডিওর ছেলেটিই ইমন। সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না, স্থানীয় ভেড়াবাজার এলাকার একটি ক্রোকারিজের দোকানে কাজ করত।
একই অভিযোগ করেছেন নিহত রমজান কাজী, দীপ্ত সাহা ও সোহেল মোল্লার পরিবারও। তারা বলছেন, হাসপাতাল থেকে দ্রুত মরদেহ নিয়ে দাফন বা সৎকারের তাগিদ দেওয়া হয়। এ কারণে তারা মরদেহ নিয়ে এলাকায় চলে যান।
গণমাধ্যমে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন ও সৎকারের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে গত ২০ জুলাই পুলিশের পক্ষ থেকে দীপ্ত সাহার পরিবার ছাড়া অন্য তিনটি পরিবারকে জানানো হয়, ২১ জুলাই কবরস্থান থেকে মরদেহ তুলে ময়নাতদন্ত করা হবে। পরে ২১ জুলাই কবর থেকে মরদেহ তুলে সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। রমজান কাজী ও ইমনের মরদেহ উত্তোলন ও সুরতহাল প্রক্রিয়ায় সরেজমিনে উপস্থিত ছিল আসকের প্রতিনিধি দল।
আসকের প্রতিনিধি দল গুলিতে আহত চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেছেন। চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ একজন জানান, তার পেটে ও হাতে গুলি লেগেছে, হাতের একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি ইঞ্জিনচালিত রিকশায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিনি আহত হন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।
২১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ১৮টি শিশুকে পুলিশ গেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে আসক। তাদের অনেককে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর অধীনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে আসকের তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়। সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।
সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় ২১ জুলাই পর্যন্ত মোট আটি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি মামলার কপি আসকের তথ্য অনুসন্ধান দলের হাতে এসেছে। মামলাগুলোর এজাহার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০০ জনকে। এর মধ্যে ৩৫৮ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। আসামিদের মধ্যে তিনজন নারী ও সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩২ জন রয়েছেন। আসকের প্রতিনিধি দলের কাছে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ কখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
তথ্য অনুসন্ধানকালে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ২৪ জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২১ জন সাধারণ নাগরিক, দুজন পুলিশ সদস্য। আরেকজন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক হামীম। গুরুতর আহত ছিলেন তিনজন— রমজান মুন্সী, আব্বাস আলী ও সুমন বিশ্বাস। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে রেফার করা হয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আসকের প্রতিনিধিদের জানান, ১৬ জুলাই দুপুর থেকে মোট চারজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাদের ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তবে দীপ্ত সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত দুজন আসকের কাছে দাবি করেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় দীপ্ত সাহা বেঁচে ছিলেন। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ফলে দীপ্ত সাহাকে ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা সঠিক নয়।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে আসক প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছিলেন, আহতদের মধ্যে কতজন গুলিবিদ্ধ ছিলেন। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ঠিক এভাবে বলা যাবে না, গুলির বিষয়টি বলতে হলে আরও এক্সামিনের ব্যাপার রয়েছে।’ তবে তিনি আসকের প্রতিধিদের নিশ্চিত করেছেন, আহত পুলিশ সদস্য মিনহাজ সরদার ও মো. কাওছার হোসাইন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক হামীমের মধ্যে কেউ গুলিবিদ্ধ ছিলেন না।
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে দায়িত্বরত জেল সুপার তানিয়া জামান ও কারাগারে উপস্থিত এআইজি (প্রিজন) দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম ২১ জুলাই আসক প্রতিনিধিদের জানান, এ পর্যন্ত ১৮ শিশুকে আদালতের আদেশে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ কারাগার থেকে ১০০ বন্দিকে পিরোজপুর ও ৫০ বন্দিকে বাগেরহাট কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই ১৫০ বন্দির সবাই হাজতি। এই কারাগারে বন্দির মোট ধারণ ক্ষমতা ৩৪৮ জন, এর মধ্যে পুরুষ ৩২১ ও নারী ২৭ জন। ২১ জুলাই মোট বন্দি ছিলেন ৭৫১ জন।
কারা কর্তৃপক্ষ আসক প্রতিনিধিদের আরও জানান, ১৬ জুলাই আনুমানিক দুপুর ৩টার দিকে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কারাগারে হামলা করে সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলে এবং গার্ডরুম ও গেস্ট ওয়েটিং রুমের ক্ষতি করে। কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। এ ছাড়া কারাগারের অস্ত্রভাণ্ডার ভাঙার চেষ্টা করা হয়।
এ ঘটনায় কারা পুলিশ ৮০ রাউন্ড ‘মিসফায়ার’ করে। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কারা কর্তৃপক্ষ সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা অনুধাবন করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সব বন্দিকে লকআপে নিয়ে নেয়। এ ধরনের সতর্কতার জন্য কারাগারে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
আসকের প্রতিনিধিরা গোপালগঞ্জ সদর থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পুলিশ সুপার গোপালগঞ্জ আসকের প্রতিনিধিদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানান, ১৬ জুলাই সমাবেশ ঘিরে তীব্র সহিংসতা হয়েছে। পুলিশ কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করেনি, বরং সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করেছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেছে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে এনসিপি নেতাদের নিরাপত্তার জন্য তার কার্যালয়ে নিয়ে যেতে হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর দুটি এপিসি মোতায়েন করতে হয়েছিল।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা গোপালগঞ্জে দায়িত্বরত সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাক্ষাৎ করতে পারেননি।
নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। এমন অবস্থায় দেশের ১৫ জেলা ও দ্বীপ এলাকায় ১-৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
৩ ঘণ্টা আগেসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) আ. ছালাম খান, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক, মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ড. শহিদুল ইসলাম,
১৫ ঘণ্টা আগেপুলিশ সদর দপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) গত ২৪ ঘণ্টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান বিশেষ অভিযানে মামলার ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসেবে ১ হাজার ৪৯ জন এবং অন্যান্য কারণে ৫৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেভবনের সামনের ব্যানারে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নাম দেখা গেলেও, এই প্রতিষ্ঠান কারা তৈরি করেছে, তাদের পরিচয় কিংবা উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানাননি সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা জানান, ভবনটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন হওয়ার পর এখানে গত বছরের আন্দোলনে আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য অফিস খো
১৭ ঘণ্টা আগে