সীমান্তে ‘পুশ ইন’— সব আইন ভেঙেও নির্বিকার ভারত

বিবিসি বাংলা
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০০: ৫২
গত এপ্রিলে গুজরাটের আহমেদাবাদে ‘অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশি’দের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালায় স্থানীয় পুলিশ। ছবি: দ্য হিন্দু

এ বছরের প্রথমার্ধে ভারত বেশ কয়েক হাজার সন্দেহভাজন ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’কে গোপনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দুই দেশের নানা সূত্র থেকেই ‘পুশ ইনে’র এ তথ্যর স্বীকৃতি মিলেছে। পাশাপাশি বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলিমকে ভারতীয় নৌ বাহিনীর জাহাজ আন্দামান সাগরে নামিয়ে দিয়ে মিয়ানমারের দিকে সাঁতরে যেতে নির্দেশ দেওয়ার মতো ঘটনারও খবর মিলেছে।

ভারতের এ ধরনের সব পদক্ষেপই সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি ও সনদ লঙ্ঘন করে বলে বিশেষজ্ঞরা সবাই প্রায় একমত। এমনকি নিজেদের আইনকানুন বা সংবিধানও এ ক্ষেত্রে মানার কোনো অভিপ্রায় দেখা যাচ্ছে না ভারত সরকারের তরফে।

মানবাধিকার ও শরণার্থী অধিকার কর্মীরা বলছেন, ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোর করে অন্য দেশে ঠেলে দেওয়ার এ ধরনের ঘটনা বা ‘পুশ ইন’ এই প্রথম নয়। কিন্তু আগে বিচ্ছিন্নভাবে হলেও এবারই প্রথম একে ব্যাপক জাতীয় স্তরের ‘স্ট্র্যাটেজি’ বা কৌশল হিসেবে অনুসরণ করা হচ্ছে।

এ কৌশলের অংশ হিসেবেই দিল্লি, রাজস্থান, জম্মু, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা বা কর্নাটকের মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সন্দেহ হলেই ঢালাওভাবে আটক করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ বা আসামের মতো রাজ্যে।

এরপর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফের হাতে তাদের তুলে দেওয়া হলে তারাই রাতের অন্ধকারে বা বন্দুকের মুখে এদের ঠেলে দিচ্ছে সীমান্তের অন্য পারে— এমন অজস্র বিবরণ পাওয়া গেছে গত কয়েক মাসে।

গত ৩ জুলাইও (বৃহস্পতিবার) ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ এয়ারক্র্যাফট এ রকম ২৫০ জন নারী-পুরুষকে গুজরাটের ভাদোদরা থেকে এয়ারলিফট করে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়ে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে। খবরে বলা হয়েছে, তাদেরও ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে এরই মধ্যে, অথবা হবে যেকোনো দিন।

দিল্লিতে সাউথ এশিয়া হিউম্যান রাইটস ডক্যুমেন্টেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রবি নায়ার এ প্রসঙ্গে বলেন, অনেকটা যেন ভারত সরকার এ লোকগুলোকে সোজা ‘কিডন্যাপ’ করে বর্ডারে নিয়ে এসে নো ম্যানস ল্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে।

গত কিছুদিনের ঘটনাবলি থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে নিজস্ব রীতিনীতি বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ আছে, সেটি দিল্লি এখান আর মানার কোনো ধার ধারছে না। আর সেটি করাও হচ্ছে বেশ খোলাখুলি। গোটা অপারেশন তেমন কোনো লুকোছাপাও নেই।

প্রশ্ন হলো— আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ আইন ভেঙেও ভারত কেন আর কীভাবে এই বিতর্কিত ‘পুশ ইন স্ট্র্যাটেজি’ লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছে?

‘ভারত জানে পশ্চিমারা এ ইস্যুতে কিছু বলবে না’

ভারতের সুপরিচিত লেখক ও প্রথম সারির মানবাধিকার আইনজীবী নন্দিতা হাকসার। ভারতে আশ্রয় নেওয়া বিদেশি শরণার্থীদের অধিকার আন্দোলনে তিনি যুক্ত বহু বছর ধরে। একাত্তরের যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন তার বাবা পি এন হাকসার। মেয়ে নন্দিতা সে সময়ও বাংলাদেশ (তখন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে যাওয়া শরণার্থীদের জন্য দিল্লির রাজপথে নিজে টাকা তুলেছেন।

বাংলাদেশ নিয়ে আলাদাভাবে দুর্বলতা কাজ করে নন্দিতার। এই মুহূর্তে যেভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অসহায় নারী-পুরুষদের পুশ ইন করা হচ্ছে, সেটিও তিনি মেনে নিতে পারছেন না।

নন্দিতা বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি মানছি ভারত ১৯৫১-এর রিফিউজি কনভেনশন (শরণার্থী সনদ) বা ১৯৬৭ প্রোটোকলে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। কিন্তু তারপরও মানবাধিকার নিয়ে যত আন্তর্জাতিক আইন আছে, ভারত তা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে। এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নির্বাহী কমিটিতেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব আছে। এরপরও যেভাবে বাংলাদেশ বা মিয়ানমার থেকে আসা লোকজনদের সীমান্ত দিয়ে জোর করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সেটা স্পষ্টতই সেই আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার লঙ্ঘন।’

পুশ ইনের মাধ্যমে ভারতের সংবিধানের আর্টিকল ২১ (রাইট টু লাইফ বা জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার) ও আর্টিকল ১৪ (ইক্যুয়ালিটি বিফোর ল বা আইনের চোখে সবাই সমান)-এ দেওয়া দুটি মৌলিক অধিকারও এখানে লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে নন্দিতা হাকসার মনে করেন।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে— শুধু নাগরিকদের নয়, ভারতের সংবিধান কিন্তু এ অধিকার ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষকে দিয়েছে— তিনি বিদেশি হতে পারেন বা শরণার্থী হতে পারেন, তাতে কিছু আসে যায় না।

Deportation nFromm India To Bangladesh 08-07-2025 (3)

আহমেদাবাদে এক রাতের অভিযানে সহস্রাধিক বাংলাদেশিকে আটকের তথ্য জানিয়েছিল পুলিশ। ছবি: দ্য হিন্দু

তবে এত আইনি সুরক্ষার পরও ভারত যে সেগুলো সচেতনভাবেই অগ্রাহ্য করার নীতি নিয়েছে, তার পেছনে আসল কারণ সম্পূর্ণ অন্য বলেই নন্দিতা হাকসারের অভিমত। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমেরিকা বা ইউরোপ যেভাবে তাদের দেশে আসা অভিবাসীদের তাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে এবং সেখানে কোনো আইনকানুনের ধার ধারছে না, তাতে তো ভারতকে তো তাদের কিছু বলার মুখই নেই!

‘ডোনাল্ড ট্রাম্প প্লেনবোঝাই করে অভিবাসীদের ভারত, মেক্সিকো বা লাতিন আমেরিকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ব্রিটেন ঘোষণা করেছে, ব্যর্থ অ্যাসাইলাম সিকারদের রুয়ান্ডায় পাঠাবে। ডেনমার্কও একই জিনিস উগান্ডাতে করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে,’— বলেন নন্দিতা হাকসার।

তার যুক্তি, পশ্চিমা বিশ্ব নিজেরাই যখন মানবাধিকার সনদের পরোয়া না করে ঢালাওভাবে অভিবাসীদের ডিপোর্ট করছে, তখন নরেন্দ্র মোদি সরকারও সে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একই জিনিস বাংলাদেশ বা মিয়ানমারে করছে। কারণ তারা জানে, এ ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে দিল্লিকে কোনো চাপের মুখে পড়তেই হবে না।

‘আটকদের ন্যূনতম যাচাই-বাছাইটাই তো হচ্ছে না’

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি ভারত ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন বহু বছর ধরে। কোনো দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের বের করে দেওয়ার অধিকার সেই দেশের রয়েছে— এ কথা মানলেও তা কার্যকর করতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রীতিনীতি, নিয়মকানুন বা প্রোটোকল আছে বলেও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

মীনাক্ষী বলেন, ‘যেমন ধরুন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠাচ্ছেন। আমরা সেটা সমর্থন করি বা না করি, এটি তো দেখা যাচ্ছে যে ভারতের কাছে তথ্য পাঠিয়ে এই অভিবাসীদের পরিচয় আগে যাচাই করা হচ্ছে এবং ভারত রাজি হওয়ার পরই কেবল তাদের নিয়ে প্লেন দিল্লি বা অমৃতসরে এসে নামছে।’

‘এটি যতই অমানবিক হোক, একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে ভারতও প্রকাশ্যে অন্তত এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি এবং এই ডিপোর্টিদের ভারতীয় নাগরিক বলে মেনেও নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারত কিন্তু সেই পদ্ধতিটা নিজেরা মানার কোনো প্রয়োজন বোধ করছে না,’— বলেন মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

বস্তুত গত কয়েক মাসে ভারত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে যতজনকে আটক করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে, সেগুলোর কোনোটির ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কাছে তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করতে পাঠানো হয়নি। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, তাদের নাম-পরিচয় এবং বাংলাদেশে কথিত ঠিকানা যাচাই করার জন্য আগে নিকটতম দূতাবাসে পাঠানোর কথা।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘এই ভেরিফিকেশনের কোনো পার্ট নেই বলেই আমরা দেখেছি, অনেক ভারতীয় নাগরিককেও ভুল করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। পরে ভুল বুঝে তাদের ফেরতও আনতে হয়েছে।’

আরও একটি বিষয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মীনাক্ষী— এ পর্যন্ত যতজনকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হয়েছে তাদের সবাই বাংলাভাষী মুসলিম। তিনি বলেন, ‘এখন এই যে বেছে বেছে বাঙালি মুসলিমদের পাকড়াও করে তাদের সীমান্তের ওপারে চালান করা হচ্ছে, এটা ভারতের ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ বলে কিন্তু সন্দেহ করা যেতেই পারে। আর সেটা সত্যি হলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতেই পারে না।’

সুতরাং গোটা অপারেশন নিয়ে ভারত এই যে একটা বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছে এবং কোনো রীতিনীতি মানার তোয়াক্কা করছে না, তার একটা বড় কারণ হতে পারে যে খুব সচেতনভাবে একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই স্ট্র্যাটেজি নেওয়া হয়েছে এবং আপাতত অক্ষরে অক্ষরে সেটা পালন করে যাওয়া হচ্ছে।

Deportation nFromm India To Bangladesh 08-07-2025 (4)

সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করার পর কয়েকজন নারী-পুরুষ নো ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়েন। ছবি: বিবিসি

‘ঢাকাকে বার্তা দিতেই এটা করা হচ্ছে’

ভারতের সাবেক শীর্ষ কূটনীতিবিদ তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তীর বিশ্বাস, পুশ ইনের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশকে এক ধরনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের এই সাবেক হাইকমিশনার বলেন, ‘এটি নতুন কিছু নয়! আগেও যখনই দেখা গেছে ঢাকাতে আমাদের প্রতি তত বন্ধুত্বপূর্ণ নয় এমন সরকার (আনফ্রেন্ডলি রেজিম) ক্ষমতায় এসেছে, তখনই আমরা এ জিনিস করেছি।’

সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার— বাংলাদেশকে একটা বার্তা দেওয়া যে তোমরা যদি বেশি ঝামেলা করো, তাহলে ভারতে তোমাদের যত ইলিগ্যাল লোকজন আছে, তাদের এক-ধারসে ফেরত পাঠানো হবে। আবার খেয়াল করে দেখবেন, যখনই ঢাকার সঙ্গে দিল্লির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, তখনই এগুলোতে ভাটা পড়েছে। কিংবা বলা যায়, ভারত এই অনুপ্রবেশের বিষয়টা ইচ্ছা করেই তখন ওভারলুক করেছে।’

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কে ইদানীং যে ধরনের শীতলতার আভাস দেখা যাচ্ছে এবং দুই দেশ পরস্পরের নানা ধরনের বাণিজ্যিক সুবিধা বাতিল করে দিচ্ছে, এই ‘পুশ ইন’ও তারই ধারাবাহিকতা বলেই মনে করেন পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী।

ভারতের বিজেপি সরকার একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে এ অভিযান শুরু করেছে— এ অভিযোগ অবশ্য মানছেন না পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী। বলছেন, তেমন এজেন্ডা থাকলে কর্নাটকের মতো কংগ্রেসশাসিত রাজ্য থেকেও লোকজনকে বর্ডারে ফেরত পাঠানো হতো না! এই অভিযানে বেশ কয়েকজন ভারতীয় নাগরিককেও যে ভুল করে সীমান্তের অন্য পারে পাঠানো হয়েছিল, সেটাকেও তত গুরুত্ব দিতে নারাজ তিনি।

পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘শত শত লোকের মধ্যে এমন দুচারটে ভুল হতেই পারে। কিন্তু আপনি দেখুন, বেশির ভাগ লোক বাংলাদেশে গিয়ে কী বলছেন। তারা তো গিয়ে বলছেন, আমরা অমুক জেলার অমুক গ্রামের লোক। ইন্ডিয়া আমাদের জোর করে ফেরত পাঠিয়েছে। তো তারা নিজেরাই যখন মেনে নিচ্ছেন তারা বাংলাদেশি, সেক্ষেত্রে ভারতের এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো মানেই হয় না!’

সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মন্তব্য করেছেন, ভারতের এই ‘পুশ ইন’ ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশের আসলে তেমন কিছু করার নেই। এ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে পিনাকরঞ্জন বলেন, ‘উনি বাস্তববাদী লোক, বাস্তবতাটা বোঝেন। ভারতের এই পদক্ষেপ যে অন্যায় বা বেআইনি কিছু নয়, আমি তো বলব সেটাই প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন তিনি। এ কারণেই ভারতের এটা নিয়ে অপরাধবোধে ভোগারও কোনো কারণ নেই।’

Deportation nFromm India To Bangladesh 08-07-2025 (1)

গত সপ্তাহে প্রায় আড়াই শজনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারত থেকে। ছবি: ইন্ডিয়া টিভি

‘এন্ট্রি যখন অবৈধ, এক্সিট কীভাবে বৈধ হবে?’

ভারতের নানা প্রান্তে কথিত বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের বিজেপি নেতারা যুক্তি দিচ্ছেন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ক্র্যাকডাউন অপরিহার্য ছিল। পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র বন্দুকধারীদের হামলা এবং তারপর ভারতের অপারেশন সিঁদুরের সময় থেকেই এসব ধরপাকড় ও পুশ ইনের তীব্রতা অনেক বেড়েছে।

ভারতে বিজেপির ঘনিষ্ঠ তাত্ত্বিক ও দক্ষিণপন্থি চিন্তাবিদ শুভ্রকমল দত্তর মতে, নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর স্বার্থে ভারত যদি এই লোকজনকে জোর করেও নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠায়, তাহলেও দিল্লিকে দোষ দেওয়া যায় না।

শুভ্রকমল দত্ত বলেন, ‘ডিপোর্টেশন সব নিয়ম মেনে করা গেলে আরও ভালো হতো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্নটা যেখানে জাতীয় নিরাপত্তার, তখন সেই দাবিটাই সবার আগে। তা ছাড়া যে মানুষগুলো বেআইনি পথে ভারতে ঢুকেছেন, কিংবা ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও থেকে গেছেন, অথবা ভারতে এসে অবৈধ রাস্তায় এ দেশের পরিচয়পত্র-আধার কার্ড ইত্যাদি জোগার করেছেন, তাদের সঙ্গে পালটা নিয়ম মানার কি দায় ভারত সরকারের আছে?’

‘সোজা কথায়, এ দেশে যাদের এন্ট্রিটাই অবৈধ, তাদের এক্সিটটা শতকরা এক শ ভাগ বৈধ না হলেও মহাভারত কিছু অশুদ্ধ হয়ে যাবে না,’— বলেন ড. দত্ত।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশে ডিপোর্টেশন হচ্ছে— এ কথা একরকম মেনে নিলেও সীমান্ত দিয়ে জোর করে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা বা ‘পুশ ইন’ যে ঘটছে, সেটা কিন্তু ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই স্বীকার করেনি। শুধু আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা গত ১০ মে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, তার রাজ্য থেকে সম্প্রতি মোট ৩০৩ জন অবৈধ বিদেশিকে ‘ইমিগ্রান্টস (এক্সপালশন ফ্রম আসাম) অ্যাক্ট ১৯৫০’-এর আওতায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে সেটি বাংলাদেশ সরকারের সম্মতিক্রমে, না কি জোর করে গোপনে বা রাতের অন্ধকারে বর্ডার পার করে দিয়ে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

গত কয়েক মাসের ভেতর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকেও একাধিকবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

নিয়মিত ব্রিফিংগুলোতে তিনি সেই প্রশ্নের জবাবে বারবার একই গঁৎবাঁধা উত্তর দিয়ে গেছেন, ‘আমাদের দেশে নিয়ম ও আইন মোতাবেক বহু বিদেশি আসা-যাওয়া করেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু নিয়ম আর আইন ভেঙে কেউ যদি ভারতে আসেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা তো নিতেই হবে। ফলে এই প্রশ্নের জবাব খুব সহজ— আমাদের সেনা বা সীমান্তরক্ষীরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং তারা নিজেদের কর্তব্য করে যাবেন!’

কিন্তু সীমান্তে ‘ফোর্সড ডিপোর্টেশনে’র ঘটনা ঘটছে কি না বা ভারত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে বিদেশিদের জোর করে ফেরত পাঠাচ্ছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাব তিনি সবসময়ই এড়িয়ে গিয়েছেন। মানে কোন পন্থা বা পদ্ধতিতে ভারতের সেনা ও সীমান্তরক্ষীরা এখানে তাদের ‘কর্তব্য’ পালন করে যাচ্ছেন— সরকার তা নিয়ে নীরব থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

যে পদ্ধতিতে জানা যাবে এসএসসি পরীক্ষার ফল

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল দেখার পদ্ধতি জানিয়েছেন।

১৩ ঘণ্টা আগে

করোনায় একজনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৮

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। চলতি বছর মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৭৪৯ জনের। এতে করোনা শনাক্ত হন ৬৫১ জন। এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭০ জনের।

১৪ ঘণ্টা আগে

সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

১৫ ঘণ্টা আগে

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আর কতবার বলব: সিইসি

সাংবাদিকদের দায়িত্বের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, 'আমরা ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। এখন দায়িত্ব পালনের সময়। ভোট দিন, আপনার নাগরিক দায়িত্ব পালন করুন—এই বার্তাই আমরা দিচ্ছি। এর প্রচারে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

১৫ ঘণ্টা আগে