জুলাই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও জরুরি সংস্কার চায় বিএনপি : ফখরুল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ২১: ৪৯

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার এবং দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন চায় তাদের দল।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকার ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সুপারিশ বাস্তবায়নে জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ কথা অনুষ্ঠান আয়োজন করে ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা চাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর দ্রুত বিচার হোক। একইসঙ্গে আমরা চাই, দেশের যে জরুরি সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো বিলম্ব না করে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।

তবে ফখরুল বলেন, এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, দেশের এখন এমন একটি সরকার প্রয়োজন যেটি সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। কারণ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করার মধ্যে এবং ম্যান্ডেট ছাড়া কাজ করার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।'

তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অর্থাৎ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা তিনি বাস্তবায়ন করবেন।

এই নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ও সংসদ গঠিত হবে, বলেন ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে যে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় ধ্বংস বা ভেঙে ফেলা হয়েছে, সেগুলোর পুনর্গঠন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘আমাদের অনেক সমস্যার মূলেই রয়েছে এই বাস্তবতা যে, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে ফেলেছিল কিংবা ধ্বংস করেছিল। এসব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করতে হবে। এটি সহজ কাজ নয়। সময় লাগবে, কষ্টসাধ্য হবে। আমাদের ধৈর্য ধরতেই হবে,’ বলেন তিনি।

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে, তাকে স্বাগত জানান।

ফখরুল বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো সহনশীলতার অভাব। আমাদের এই সংকট অতিক্রম করতে হবে। আরও ধৈর্য ধরতে হবে। অতীতে আমরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি, এটিও পারব।

জাতিসংঘ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও অনুসন্ধান প্রতিবেদন’ নিয়ে আলোচনা হয়। জুলাই–আগস্ট ২০২৪ সালের ঘটনাবলীর ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশন (ওএইচসিএইচআর) একটি স্বাধীন তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান মিশন পরিচালনা করে।

সেই মিশনের প্রতিবেদন ২০২৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়, যেখানে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়।

ফখরুল বলেন, ‘এত রক্ত ও আত্মত্যাগের পর এখন বাংলাদেশের জনগণকে এক হয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি ‘গণতান্ত্রিক’ শব্দটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা, যা ধীরে ধীরে আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে সক্ষম। হ্যাঁ, তা রাতারাতি হবে না, কোনো অলৌকিক পরিবর্তনও আসবে না। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রকৃত পরিবর্তন আসবে কেবল গণতান্ত্রিক পথেই।

ফখরুল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গণমাধ্যম অনেক সময় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ ও বিতর্ককে অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরে। কিন্তু আমি বলতে চাই, গণতন্ত্রে মতপার্থক্য স্বাভাবিক। রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় একসুরে কথা বলবে—তা আশা করা যায় না। কিন্তু যখন এই মতবিরোধকে বড় করে দেখানো হয়, তখন তা অপ্রয়োজনীয় বিভক্তি তৈরি করতে পারে।

তিনি জানান, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজকের সংবাদপত্রে দেখে আমি খুশি হয়েছি যে, আমরা ১২টি মূল বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।

তিনি আরও বলেন, বাকি বিষয়গুলো পরবর্তী নির্বাচিত সরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অঙ্গীকার নিয়ে সমাধান করতে পারবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হবে, কিংবা যারা পরবর্তী সরকার গঠন করবে, তাদের দায়িত্ব হবে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করা। তারা যেন এ কাজে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে।

ফখরুল আশা প্রকাশ করেন, তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসবে এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে, যেখানে মানুষের অধিকার রক্ষিত থাকবে, যেখানে আর কোনো শিশুকে জীবন দিতে হবে না।

গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের ‘নৃশংসতা’ নিয়ে যে প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করেছে, তার জন্য তিনি জাতিসংঘ ও তাদের মানবাধিকার কমিশনকে ধন্যবাদ জানান।

‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল… কিন্তু যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে জনগণ যে মাত্রার নির্যাতন, নিপীড়ন ও দমন সহ্য করেছে, তা আরও অনেক গভীর ও বিস্তৃত। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে সত্য ইতিহাস লিখি, সঠিক পথ খুঁজে নিই এবং আমাদের সন্তানদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে এই দেশকে তার প্রাপ্য জায়গায় পৌঁছে দিই,’ বলেন মির্জা ফখরুল।

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ভাসানী না থাকলে শেখ মুজিব তৈরি হত না: নাহিদ

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘মওলানা ভাসানী শুধু বাংলাদেশের নন, উপমহাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল আসামে। সেখানে তিনি বাঙালি মুসলিম কৃষকদের ভূমি ও নাগরিক অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন, যে লড়াই আজও আসামের বাঙালি মুসলমান ও হিন্দুদের করতে হচ্ছে।’

১৭ ঘণ্টা আগে

জুলাই সনদের খসড়া অসম্পূর্ণ ও বিপজ্জনক: জামায়াত

জুলাই সনদের খসড়াকে অসম্পূর্ণ এবং এর কিছু অংশ বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ত‌বে ক‌মিশন বলছে, খসড়া একটি নমুনা মাত্র। তবে যদি সেটাই গ্রহণ করা হয়, তাহলে প্রস্তা‌বিত সনদ গ্রহণ করা যাবে না।

১৮ ঘণ্টা আগে

জুলাই সনদের খসড়া গ্রহণ করতে পারি না: এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেছেন, কমিশন সভায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হচ্ছে, নির্বাচনের আগে একটি আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সেগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

১৮ ঘণ্টা আগে

বাংলা ও দিল্লি সালতানাতের যুদ্ধ: ইতিহাসের এক অস্থির অধ্যায়

দিল্লি সালতানাতের শাসকরা—বিশেষত গিয়াসউদ্দিন বলবন, জালালউদ্দিন খিলজি, এবং পরবর্তী কালে ফিরোজ শাহ তুঘলক—বাংলার উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছেন। বাংলা থেকে বিদ্রোহ ও স্বাধিকার দাবি দিল্লির কর্তৃত্বকে একাধিকবার চ্যালেঞ্জ করেছে। এই সমস্ত রাজনৈতিক ঘটনার পেছনে শুধু ক্ষমতার প্রশ্ন ছিল না, বরং বাংলা

২০ ঘণ্টা আগে