বিবিসি বাংলা
চেষ্টা করেও ব্রিটিশ সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ না পাওয়া এবং বাংলাদেশেরই একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠক’ ও ‘যৌথ বিবৃতি’র নজিরবিহীন ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সফরে অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের সবাইকে লন্ডনের বিলাসবহুল একটি হোটেলে রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ের প্রসঙ্গটি নিয়েও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠছে— যুক্তরাজ্যে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি এই সফর থেকে বাংলাদেশের অর্জনটা ঠিক কী?
চার দিনের ‘সরকারি সফরে’ গত ১০ জুন লন্ডনে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। সফরসঙ্গীদের নিয়ে শনিবার (১৪ জুন) ঢাকায় অবতরণ করেন তিনি।
কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনীতির ক্ষেত্রে একজন সরকারপ্রধানের সরকারি ও দ্বিপাক্ষিক সফরে অন্য দেশে যাওয়ার সফর ঠিক হয় সাধারণত সে দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনার বিষয়বস্তু কর্মকর্তা পর্যায়ে চূড়ান্ত হওয়ার পর। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের সাক্ষাৎ পাননি।
শুধু তাই নয়, তিনি যুক্তরাজ্যে সদলবলে পৌঁছানোর পর তার প্রেস উইং থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা হচ্ছে বলার পর এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থল নিয়ে প্রেস উইংয়ের বক্তব্য নিয়েও প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।
সরকারপ্রধানের দ্বিপাক্ষিক সফর হলেও এতে সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, সচিবসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা দেখা না যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। আবার অধ্যাপক ইউনূসকে লন্ডন বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার, সেখানে ব্রিটিশ সরকারের কেউ ছিলেন না।
লন্ডন সফরে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, কিংস হারমনি অ্যাওয়ার্ড সফরের ইতিবাচক দিক। আর সরকারি সফরে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক আলোচনাটি নতুন ও আকর্ষণীয় পর্যায়ে যাওয়া আরেকটি দিক। তবে সফরটি কূটনৈতিক। সে জায়গা থেকে কী অর্জন করল বাংলাদেশ, সেই প্রশ্ন থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার একটি দেশে সরকারি সফরে গিয়ে সেখানকার সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ না পাওয়া এই সফরের নেতিবাচক একটি উপাদানও।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ পুরো সফরটিকেই নানা ব্যর্থতায় প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, শুধু এটি নয়, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তিনি এ পর্যন্ত যে কয়টি সফরে গেছেন, সত্যিকার অর্থে এগুলো কতটা দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
চার দিনের এই সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, হাউজ অব কমন্সের স্পিকার, যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী, অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ও কমনওয়েলথ মহাসচিব ছাড়াও যুক্তরাজ্য সরকার ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সাক্ষাৎ করেন।
সরকারি সফর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা থাকলেও এ সফরে সেটি হয়নি। তবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা জানিয়েছিল, যদিও সেটি যে তখনো চূড়ান্ত হয়নি, তাও বলা হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত কানাডায়। তার এমন মন্তব্য আলোচনা তৈরি করে। পরে আবার তিনি জানিয়েছিলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক আয়োজনের জন্য কাজ হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিবিসির ‘দ্য ওয়ার্ল্ড টুনাইট’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা উনার (কিয়ার স্টারমারের) সঙ্গে দেখা করতে খুবই আগ্রহী ছিলাম। হয়তো তিনি ব্যস্ত ছিলেন বা অন্য কোনো কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে এতে করে আমার জন্য একটা বড় সুযোগও তৈরি হয়েছে। এখন যেহেতু তিনি ব্যস্ত, আমি তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
বৈঠকের ব্যবস্থা না করার পেছনে কী কারণ দেখিয়েছে ডাউনিং স্ট্রিট— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার জানামতে তারা তেমন কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। হয়তো তিনি অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, সরকারপ্রধান বিদেশে দ্বিপাক্ষিক সফরে যাওয়ার আগেই তার সব কর্মসূচি ও বৈঠকগুলো চূড়ান্ত হয়ে থাকে। সব বিষয়ে দুপক্ষের সমঝোতার পরই এ ধরনের সফর হয়ে থাকে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সফরে সেটি দেখা যায়নি।
মূলত এ কারণেই অনেকে মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূসের এ সফরটিকে সরকারি বলা হলেও প্রকৃত অর্থে এই সফরের মূল কর্মসূচি ছিল ব্রিটেনের রাজার কাছ থেকে তার কিংস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করা এবং লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করা।
ওই সফরে শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার হোটেলে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, আগামী সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে পারে বলে তারা একমত হয়েছেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে বলে জানিয়েছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, সরকারপ্রধানের সরকারি সফরে ব্রিটেনে গিয়ে সে দেশের সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ না পাওয়া এই সফরের একটি নেতিবাচক উপাদান। আর এ ধরনের সফরে গিয়ে দেশের রাজনীতি নিয়ে বৈঠক করা একটি নতুন ও আকর্ষণীয় উপাদান। সফরটি একটি অস্বস্তি তৈরি করেছে। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এর একটি প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে বলে আমি আন্দাজ করি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে যুক্তরাজ্য সফরের পাঁচটি অর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো—
যদিও ব্রিটিশ রাজার প্রাসাদে অধ্যাপক ইউনূসকে অভ্যর্থনার ছবি প্রকাশ করলেও তাদের মধ্যকার আলাদা একান্ত বৈঠকের কোনো ছবি বা প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। সাধারণত এ ধরনের বৈঠকের পর উভয় পক্ষ থেকেই বৈঠকের ছবি প্রকাশ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে এ সফরে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের বা দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, টাকা উদ্ধারের আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার অংশ নেওয়ার কথা নয় এবং সেটি হয়ওনি। এটি কর্মকর্তাদের কাজ। গভর্নর ও এসিসি চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা হয়তো সেটি করতে পারেন। এখানে প্রধান উপদেষ্টার কোনো কাজ ছিল না।
লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজেই বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সে অর্থ পাচার হয়ে এসেছে, সেটিকে কিভাবে ফেরত আনা যায়— সেটি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা কাজ করবেন।
লন্ডন সফরে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, সফরটিতে পেশাদারিত্বের ঘাটতি প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে রাজনৈতিক বৈঠকটি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সফরটি হলো কূটনৈতিক কাজ। সেই জায়গায় বাংলাদেশের অর্জন কতটা হলো কূটনৈতিক দিক থেকে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, এ সফরে সরকারের অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ ঘটেছে, যা পুরো সফরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকারের দিক থেকে যা যা বলা হয়েছে এ সফর নিয়ে, তাতে স্বচ্ছতার প্রচণ্ড অভাব আছে। একটি দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়তো রাজনীতিতে স্বস্তি এনেছে, কিন্তু সেজন্য প্রধান উপদেষ্টাকে এত বড় দল নিয়ে সেখানে যেতে হবে, এটা কেমন কথা? আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু সেটি অন্যভাবেও করা যেত।
মুন্সী ফয়েজ আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও যেসব বিদেশ সফরে গেছেন তার মধ্যে কতগুলো সত্যিকার অর্থে দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এগুলো তার এতদিনের ভাবমূর্তির সঙ্গে মানানসই হয়নি। তিনি বা সরকার অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
এদিকে অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে আসার পরপরই তিনি লন্ডনের যে বিলাসবহুল হোটেলে প্রায় ৪০ জনসহ অবস্থান করেছেন, তার জন্য সরকারকে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা এখনো আসেনি।
চেষ্টা করেও ব্রিটিশ সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ না পাওয়া এবং বাংলাদেশেরই একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে ‘দ্বিপাক্ষিক বৈঠক’ ও ‘যৌথ বিবৃতি’র নজিরবিহীন ঘটনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সফরে অধ্যাপক ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের সবাইকে লন্ডনের বিলাসবহুল একটি হোটেলে রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ের প্রসঙ্গটি নিয়েও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠছে— যুক্তরাজ্যে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি এই সফর থেকে বাংলাদেশের অর্জনটা ঠিক কী?
চার দিনের ‘সরকারি সফরে’ গত ১০ জুন লন্ডনে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। সফরসঙ্গীদের নিয়ে শনিবার (১৪ জুন) ঢাকায় অবতরণ করেন তিনি।
কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কূটনীতির ক্ষেত্রে একজন সরকারপ্রধানের সরকারি ও দ্বিপাক্ষিক সফরে অন্য দেশে যাওয়ার সফর ঠিক হয় সাধারণত সে দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনার বিষয়বস্তু কর্মকর্তা পর্যায়ে চূড়ান্ত হওয়ার পর। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাজ্য সফরে গিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের সাক্ষাৎ পাননি।
শুধু তাই নয়, তিনি যুক্তরাজ্যে সদলবলে পৌঁছানোর পর তার প্রেস উইং থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা হচ্ছে বলার পর এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানস্থল নিয়ে প্রেস উইংয়ের বক্তব্য নিয়েও প্রচুর সমালোচনা হয়েছে।
সরকারপ্রধানের দ্বিপাক্ষিক সফর হলেও এতে সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, সচিবসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎপরতা দেখা না যাওয়া নিয়েও নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। আবার অধ্যাপক ইউনূসকে লন্ডন বিমানবন্দরে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার, সেখানে ব্রিটিশ সরকারের কেউ ছিলেন না।
লন্ডন সফরে গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, কিংস হারমনি অ্যাওয়ার্ড সফরের ইতিবাচক দিক। আর সরকারি সফরে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক আলোচনাটি নতুন ও আকর্ষণীয় পর্যায়ে যাওয়া আরেকটি দিক। তবে সফরটি কূটনৈতিক। সে জায়গা থেকে কী অর্জন করল বাংলাদেশ, সেই প্রশ্ন থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার একটি দেশে সরকারি সফরে গিয়ে সেখানকার সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ না পাওয়া এই সফরের নেতিবাচক একটি উপাদানও।
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ পুরো সফরটিকেই নানা ব্যর্থতায় প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, শুধু এটি নয়, গত বছরের আগস্টে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তিনি এ পর্যন্ত যে কয়টি সফরে গেছেন, সত্যিকার অর্থে এগুলো কতটা দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
চার দিনের এই সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, হাউজ অব কমন্সের স্পিকার, যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী, অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ও কমনওয়েলথ মহাসচিব ছাড়াও যুক্তরাজ্য সরকার ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সাক্ষাৎ করেন।
সরকারি সফর হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা থাকলেও এ সফরে সেটি হয়নি। তবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা জানিয়েছিল, যদিও সেটি যে তখনো চূড়ান্ত হয়নি, তাও বলা হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত কানাডায়। তার এমন মন্তব্য আলোচনা তৈরি করে। পরে আবার তিনি জানিয়েছিলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক আয়োজনের জন্য কাজ হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিবিসির ‘দ্য ওয়ার্ল্ড টুনাইট’ অনুষ্ঠানে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা উনার (কিয়ার স্টারমারের) সঙ্গে দেখা করতে খুবই আগ্রহী ছিলাম। হয়তো তিনি ব্যস্ত ছিলেন বা অন্য কোনো কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে এতে করে আমার জন্য একটা বড় সুযোগও তৈরি হয়েছে। এখন যেহেতু তিনি ব্যস্ত, আমি তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
বৈঠকের ব্যবস্থা না করার পেছনে কী কারণ দেখিয়েছে ডাউনিং স্ট্রিট— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমার জানামতে তারা তেমন কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। হয়তো তিনি অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, সরকারপ্রধান বিদেশে দ্বিপাক্ষিক সফরে যাওয়ার আগেই তার সব কর্মসূচি ও বৈঠকগুলো চূড়ান্ত হয়ে থাকে। সব বিষয়ে দুপক্ষের সমঝোতার পরই এ ধরনের সফর হয়ে থাকে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সফরে সেটি দেখা যায়নি।
মূলত এ কারণেই অনেকে মনে করেন, অধ্যাপক ইউনূসের এ সফরটিকে সরকারি বলা হলেও প্রকৃত অর্থে এই সফরের মূল কর্মসূচি ছিল ব্রিটেনের রাজার কাছ থেকে তার কিংস হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করা এবং লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করা।
ওই সফরে শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার হোটেলে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, আগামী সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে পারে বলে তারা একমত হয়েছেন। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে হবে বলে জানিয়েছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, সরকারপ্রধানের সরকারি সফরে ব্রিটেনে গিয়ে সে দেশের সরকারপ্রধানের সাক্ষাৎ না পাওয়া এই সফরের একটি নেতিবাচক উপাদান। আর এ ধরনের সফরে গিয়ে দেশের রাজনীতি নিয়ে বৈঠক করা একটি নতুন ও আকর্ষণীয় উপাদান। সফরটি একটি অস্বস্তি তৈরি করেছে। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় এর একটি প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে বলে আমি আন্দাজ করি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে যুক্তরাজ্য সফরের পাঁচটি অর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো—
যদিও ব্রিটিশ রাজার প্রাসাদে অধ্যাপক ইউনূসকে অভ্যর্থনার ছবি প্রকাশ করলেও তাদের মধ্যকার আলাদা একান্ত বৈঠকের কোনো ছবি বা প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। সাধারণত এ ধরনের বৈঠকের পর উভয় পক্ষ থেকেই বৈঠকের ছবি প্রকাশ করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে এ সফরে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের বা দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।
মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, টাকা উদ্ধারের আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার অংশ নেওয়ার কথা নয় এবং সেটি হয়ওনি। এটি কর্মকর্তাদের কাজ। গভর্নর ও এসিসি চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা হয়তো সেটি করতে পারেন। এখানে প্রধান উপদেষ্টার কোনো কাজ ছিল না।
লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজেই বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সে অর্থ পাচার হয়ে এসেছে, সেটিকে কিভাবে ফেরত আনা যায়— সেটি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা কাজ করবেন।
লন্ডন সফরে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে হারমনি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, সফরটিতে পেশাদারিত্বের ঘাটতি প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে রাজনৈতিক বৈঠকটি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সফরটি হলো কূটনৈতিক কাজ। সেই জায়গায় বাংলাদেশের অর্জন কতটা হলো কূটনৈতিক দিক থেকে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, এ সফরে সরকারের অব্যবস্থাপনার চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ ঘটেছে, যা পুরো সফরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকারের দিক থেকে যা যা বলা হয়েছে এ সফর নিয়ে, তাতে স্বচ্ছতার প্রচণ্ড অভাব আছে। একটি দলের নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়তো রাজনীতিতে স্বস্তি এনেছে, কিন্তু সেজন্য প্রধান উপদেষ্টাকে এত বড় দল নিয়ে সেখানে যেতে হবে, এটা কেমন কথা? আলোচনাটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু সেটি অন্যভাবেও করা যেত।
মুন্সী ফয়েজ আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও যেসব বিদেশ সফরে গেছেন তার মধ্যে কতগুলো সত্যিকার অর্থে দ্বিপাক্ষিক সফর ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। এগুলো তার এতদিনের ভাবমূর্তির সঙ্গে মানানসই হয়নি। তিনি বা সরকার অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
এদিকে অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে আসার পরপরই তিনি লন্ডনের যে বিলাসবহুল হোটেলে প্রায় ৪০ জনসহ অবস্থান করেছেন, তার জন্য সরকারকে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা এখনো আসেনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই বৈঠক নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তাতেই বলা আছে যে জামায়াতের আমির গত ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ২০২৬ সালের রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন। ফলে লন্ডন বৈঠকের পর নির্
২ দিন আগেলন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। প্রধান উপদেষ্টা এই বৈঠক অংশ নিয়ে একটি দলের প্রতি ‘বিশেষ অনুরাগ’ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ করেছে বলে মনে করছে দলটি।
২ দিন আগেচারদিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে পৌঁছান তিনি।
২ দিন আগেচার দিনের সরকারি সফর শেষে দেশের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদা
২ দিন আগে