top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

স্বাস্থ্য

ই-সিগারেট কি নিরাপদ?

ই-সিগারেট কি নিরাপদ?
ই-সিগারেটও নিরাপদ নয়। ছবি: চ্যাটজিপিটি

সিগারেটের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। ধূমপানজনিত ক্যানসার, ফুসফুসের অসুখ, হৃদরোগের মতো মারাত্মক বিপদের কথা জেনে অনেকে সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করেন। আর এই চেষ্টাকে সহজ করার জন্যই এক সময় বাজারে আসে নতুন এক পণ্য—ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি সত্যিই নিরাপদ? নাকি ধোঁয়ার বদলে ভ্যাপারের ছলে আমরা আরেক বিপদের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি?

ই-সিগারেট মূলত একটি ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক ডিভাইস। এতে একটি হিটিং এলিমেন্ট এবং তরল নিকোটিনসহ নানা রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা গরম হয়ে বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প গ্রহণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় “ভ্যাপিং”। এটি তামাক পোড়ায় না, ফলে প্রচলিত সিগারেটের মতো ধোঁয়া উৎপন্ন করে না। এখানেই অনেকে ভুল করে বসেন—ধোঁয়া নেই মানেই হয়তো ক্ষতি নেই!

প্রথমদিকে ই-সিগারেটকে ধূমপান ছাড়ার সহায়ক হিসেবে প্রমোট করা হয়। বলা হয়, এতে তামাক নেই, তাই ক্ষতিও কম। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এতে নিকোটিন ঠিকই থাকে, আর নিকোটিনই হলো সিগারেটের সবচেয়ে আসক্তিকর এবং ক্ষতিকর উপাদান। এই রাসায়নিকটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে, মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ ঘটিয়ে সাময়িক সুখানুভূতির সৃষ্টি করে, যা আসক্তি তৈরি করে। ফলে, ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ার পথ না হয়ে বরং আসক্তি টিকিয়ে রাখার বা নতুন করে তৈরি করার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।

ই-সিগারেটের তরলে এবং বাষ্পে নিকোটিন ছাড়াও থাকে আরও নানা ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক—যেমন ফর্মালডিহাইড, এসিটালডিহাইড এবং সিসা (lead)-এর মতো ভারী ধাতু। এই উপাদানগুলো মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ক্যানসার, হৃদরোগ ও শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেট থেকে উৎপন্ন বাষ্প ফুসফুসে জমে গিয়ে “পপকর্ন লাং” নামক এক বিশেষ রোগের কারণ হতে পারে, যা ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি করে।

বিশেষ করে তরুণদের জন্য ই-সিগারেট সবচেয়ে বিপজ্জনক। বয়স কম থাকায় তখন মস্তিষ্কের বিকাশ চলমান থাকে। এই সময়ে নিকোটিন গ্রহণ করলে তা স্মৃতি, শেখার ক্ষমতা, মনোযোগসহ নানা মানসিক দক্ষতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, অনেকেই মজা কিংবা ফ্যাশনের অংশ হিসেবে এটি ব্যবহার শুরু করে এবং অল্প সময়েই আসক্ত হয়ে পড়ে।

আরও বিপদের কথা হলো, ই-সিগারেট শুধু ব্যবহারকারীর জন্যই নয়, আশপাশের লোকজনের জন্যও ক্ষতিকর। এর বাষ্পে থাকা রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, যা প্যাসিভ স্মোকারদের (অর্থাৎ আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের) স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-সহ বহু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ই-সিগারেটকে ‘নিরাপদ বিকল্প’ বলে ধরে নেওয়া একেবারেই ভুল। এখনো এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হয়নি, তবে প্রাথমিক গবেষণাগুলোর ফল যথেষ্ট উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ই-সিগারেটের তরলে এমন কিছু উপাদান পাওয়া গেছে, যা প্রচলিত সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর। ফলে, এটিকে সিগারেটের বিকল্প ভাবার কোনো সুযোগ নেই।

সবচেয়ে বড় কথা, ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ানোর জন্য কার্যকর কোনো উপায় নয়। বরং অনেক সময় এটি ধূমপান শুরু করার ‘গেটওয়ে’ হিসেবেও কাজ করে—বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। শুরুতে ‘নিরাপদ বিকল্প’ ভেবে যে কেউ এটি ব্যবহার শুরু করলেও ধীরে ধীরে সে নিকোটিনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে হয়তো সিগারেট বা আরও ক্ষতিকর নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

তাই সচেতন হওয়ার সময় এখনই। শুধু সিগারেট নয়, ই-সিগারেটও স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ধূমপান ছাড়তে চাইলে পেশাদার চিকিৎসা সহায়তা নেওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়। নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে, সব ধরনের নিকোটিনজাত পণ্য থেকে দূরে থাকা জরুরি। মনে রাখা দরকার, ধোঁয়া হোক বা বাষ্প—নিকোটিন যেখানে আছে, সেখানেই আছে বিপদের ছায়া।

সূত্র: ল্যানসেট

r1 ad
top ad image