top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

স্বাস্থ্য

গরমে চোখের সমস্যা, কী করবেন?

গরমে চোখের সমস্যা, কী করবেন?

প্রচণ্ড গরম আর কাঠফাটা রোদের মধ্যে শরীর যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তেমনি চোখের ওপরও এর প্রভাব পড়ে ব্যাপকভাবে। গ্রীষ্মকালে অনেকেই চোখে চুলকানি, জ্বালা, পানি পড়া, লালচে ভাব কিংবা কখনো চোখের পাতা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যায় ভোগেন। এসব উপসর্গ যতটা বিরক্তিকর, ঠিক ততটাই অস্বস্তিকর ও চোখের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। গরমে চোখে সমস্যা হওয়া এখন আর শুধু শহরের বায়ুদূষণের জন্য নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য-চ্যালেঞ্জ।

চোখের ওপর এই মৌসুমি তাপের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. এমিলি পিটারসন বলেন, অর্থাৎ অতিরিক্ত গরম ও শুষ্ক পরিবেশ চোখকে পানিশূন্য করে তোলে, যার ফলে চোখে চুলকানি ও ঝাপসা দেখার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ‘ড্রাই আই সিনড্রোম’ নামে পরিচিত এই সমস্যা গ্রীষ্মে অনেক বেড়ে গেছে।

এই সময়টায় বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে যায়, যা চোখে অ্যালার্জির অন্যতম কারণ। শহরের রাস্তায় বেরোলে রোদের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে দূষিত কণা, গাড়ির ধোঁয়া ও বিভিন্ন রাসায়নিক। এগুলো চোখে সরাসরি প্রবেশ করলে সংবেদনশীল চোখে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস দেখা দিতে পারে। এ রোগের ফলে চোখ লাল হয়ে যায়, প্রচণ্ড চুলকায়, কখনো কখনো পুঁজও জমে। লন্ডনের মরফিল্ডস আই হসপিটালের কনসালটেন্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ড. রিচার্ড বোডেন জানান, “শুধু অ্যালার্জিই নয়, গরমকালে চোখে স্টাই (Stye) বা চোখের পাতায় ফোড়া হওয়াও একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘাম ও ধুলাবালির কারণে চোখের পাতার গ্রন্থিতে জীবাণু সংক্রমণ হয় এবং তা ফুলে ওঠে। এতে চোখ ব্যথা করে এবং পলক ফেলতেও কষ্ট হয়।’ আবার এ সময়ে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিও চোখের কর্নিয়ায় ক্ষতি করতে পারে। যারা বাইরে কাজ করেন, যেমন নির্মাণশ্রমিক, ডেলিভারি কর্মী বা রিকশাচালক, তাঁদের চোখে এই ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকে।

অনেকেই গরমে চোখের পানিপড়া বা জ্বালা অনুভব করলেও বিষয়টিকে হালকাভাবে নেন। কিন্তু এই সামান্য অসুবিধাগুলোই যদি সময়মতো প্রতিরোধ না করা হয়, তা বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে যারা কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাঁদের জন্য এই সময় সতর্ক থাকা জরুরি। লেন্স ব্যবহারকারীদের চোখে ইনফেকশনের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি, কারণ ঘাম ও ধুলাবালির মাধ্যমে চোখে সহজেই ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।

তবে এই সমস্যাগুলোর প্রতিকার রয়েছে। প্রথমত, ঘন ঘন চোখে পানি দেওয়া বা পরিষ্কার ঠান্ডা পানির ঝাপটা খুবই উপকারী। এতে চোখ আরাম পায় এবং জীবাণু দূর হয়। বাইরে গেলে সানগ্লাস ব্যবহার করা একান্ত প্রয়োজন। তবে সাধারণ ফ্যাশন সানগ্লাস নয়, এমন সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে যেগুলো ইউভি প্রোটেকশনযুক্ত। এটি চোখকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। চোখের সংবেদনশীলতা বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আর্টিফিশিয়াল টিয়ারস বা আইড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরও জরুরি বিষয় হলো—চোখে হাত না দেওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। অনেকেই চোখে চুলকানি হলে হাত দিয়ে ঘষে ফেলেন, যা জীবাণুর প্রবেশে সহায়তা করে।

শিশুদের ক্ষেত্রেও অভিভাবকদের বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। কারণ, তারা খেলার মাঠে ঘাম, ধুলাবালির সংস্পর্শে আসে এবং প্রায়ই চোখে হাত দেয়। শিশুদের নিয়মিত চোখ ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

চোখের এসব সমস্যার প্রভাব শুধু অস্বস্তিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার মতো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিও করতে পারে। তাই দীর্ঘসময় ধরে চোখ লাল থাকা, বারবার পুঁজ জমা হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা বা ব্যথা হলে দেরি না করে চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গ্রীষ্মের উত্তাপে চোখের যত্নের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে চোখের ওপর চাপ যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রকৃতির তাপদাহেও চোখ আজ ঝুঁকিতে। এই সংকটের সময় প্রয়োজন শুধু সামান্য সচেতনতা ও সঠিক যত্ন। কারণ, চোখ ভালো থাকলে তবেই তো আমরা পৃথিবীকে দেখতে পারি স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।

সূত্র: ল্যানসেট

r1 ad
top ad image