হাত-পায়ের লোম বাড়ে না কেন?

হাত-পায়ের লোম বাড়ে না কেন?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৪৯

আমাদের মাথার চুল লম্বা হয়ে পিঠ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। কিন্তূ হাত কিংবা পায়ের লোম লোম এখটা সময় গিয়ে আর বাড়ে না। কেন? প্রশ্নটা যতটা সহজ, উত্তরটা কিন্তু ততটাই জটিল এবং আশ্চর্যজনকভাবে বিজ্ঞাননির্ভর। শরীরের কোথায়, কতটা, এবং কতদিন পর্যন্ত লোম বাড়বে—এই সবই নির্ধারিত হয় এক নিখুঁত জৈবিক ছকে, যা মানুষের বিবর্তন, হরমোন এবং কোষীয় গঠনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।

প্রথমেই জানা দরকার, শরীরের প্রতিটি লোম বা চুল একেকটি ছোট ফ্যাক্টরি। একে বলে হেয়ার ফলিকল। এই ফলিকলের কাজই হলো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লোম গজানো, তারপর তা বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু প্রত্যেক হেয়ার ফলিকলের রয়েছে নিজস্ব সময়চক্র বা হেয়ার গ্রোথ সাইকেল। এই সাইকেল তিনটি ধাপে বিভক্ত—অ্যাজেন (বৃদ্ধি), ক্যাটাজেন (অবসান), এবং টেলোজেন (বিশ্রাম)।

মাথার চুলের অ্যাজেন পর্যায় প্রায় ২ থেকে ৬ বছর দীর্ঘ, ফলে এরা লম্বা হতে পারে। কিন্তু হাত-পায়ের লোমের অ্যাজেন পর্যায় মাত্র কয়েক সপ্তাহ বা মাস, তাই তা লম্বা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইউটাহ-এর ডার্মাটোলজিস্ট ড. মাইকেল গিলবার্ট বলেন, “হাত-পায়ের লোমের গ্রোথ সাইকেল অনেক ছোট, আর সেটাই মূলত নির্ধারণ করে এদের দৈর্ঘ্য।”

শুধু সময়সীমাই নয়, প্রতিটি হেয়ার ফলিকলের কোষীয় গঠন ও জিনগত নির্দেশনাও এর দৈর্ঘ্য নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিটি ফলিকলের মধ্যে এক ধরনের 'বায়োলজিক্যাল টাইমার' কাজ করে, যা নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই ফলিকলকে 'বন্ধ' করে দেয়। ফলে লোম আর বাড়ে না।

আবার একে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের হরমোন। বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন নামের একটি হরমোন শরীরের বিভিন্ন অংশে লোমের বৃদ্ধি নির্ধারণ করে। এটি মাথার, মুখের বা বুকের লোমের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে, কিন্তু হাত-পায়ের লোমে কম প্রভাব ফেলে। এ কারণেই পুরুষদের মুখে দাড়ি হয়, কিন্তু হাতের লোম ততটা লম্বা হয় না।

ব্রিটিশ ডার্মাটোলজি একাডেমির গবেষক ড. এলেনা মারচেটি বলেন, “যে অংশে অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরের ঘনত্ব বেশি, সেখানেই চুল বেশি গজায় ও দীর্ঘ হয়। হাত-পায়ে এই রিসেপ্টর কম থাকে বলেই সেখানে লোম লম্বা হয় না।”

তবে এ সবই শুধু জৈবিক ব্যাখ্যা নয়। এখানে জড়িয়ে আছে বিবর্তন। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ যেসব পরিবেশে বসবাস করেছে, তার ওপর ভিত্তি করেই দেহে লোমের ধরন গড়ে উঠেছে। গরম অঞ্চলে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য বেশি ঘাম হওয়া দরকার, আর ঘাম যাতে সহজে বাষ্পীভূত হয়, সে কারণে শরীরের চামড়ার ওপর কম ও ছোট লোম দরকার ছিল। মাথায় বড় চুল দরকার ছিল সূর্যের উত্তাপ থেকে মস্তিষ্ক রক্ষা করতে। এই বিবর্তনই ধীরে ধীরে লোমের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেছে।

এমনকি হাত-পায়ের লোমকে ছোট রাখা একটি সুরক্ষা ব্যবস্থাও বটে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (NHGRI) বিশেষজ্ঞ ড. সানজানা রাও বলেন, “হাত-পায়ের লম্বা লোম পরিবেশগত জটিলতা তৈরি করতে পারত। যেমন ঘষা লাগা, চামড়া ক্ষত হওয়া বা অতিরিক্ত ঘাম জমে যাওয়া। তাই শরীর এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে যেন এ অংশে লোম ছোট থাকে।”

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মাথার চুল আমরা সচরাচর কাটিনি, বরং বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশে নিয়মিত শেভ করা বা কাটা হয়। অনেকে ধারণা করেন, বারবার কাটা বা শেভ করার কারণে লোম বাড়ে না। এটি একেবারেই ভুল। বিজ্ঞান বলছে, চুল বা লোমের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে ভেতরের ফলিকলের গঠনের ওপর, বাইরের কাটাছেঁড়া বা শেভ করার ওপর নয়।

শরীর এমনভাবেই তৈরি যে, যা যেখানে প্রয়োজন, ঠিক সেখানেই ঠিক পরিমাণে লোম হয় এবং নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে এসে থেমে যায়। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতি যেন আমাদের বলছে—প্রতিটি কোষ, প্রতিটি ক্রিয়া এক জটিল গাণিতিক নিখুঁততায় চলে।

তবে মাঝে মাঝে কিছু হরমোনজনিত সমস্যা বা ওষুধের কারণে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বদলে যেতে পারে। যেমন, কারও হাত-পায়ের লোম অস্বাভাবিকভাবে লম্বা বা ঘন হয়ে গেলে, সেটি হতে পারে হরমোন ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ। এরকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সবমিলিয়ে বলা যায়, হাত-পায়ের লোম বাড়ে না কারণ এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়, এবং এর গঠন জৈবিকভাবে এমনভাবে তৈরি হয়েছে যাতে তা সীমিত দৈর্ঘ্যে বেড়ে থেমে যায়। এটি মানুষের শারীরিক বিবর্তনের এক অসাধারণ নিদর্শন, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী শরীর নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে তার বাহ্যিক রূপ।

জীবনের এই জটিল অথচ অসাধারণ সরল দিকগুলো জানার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি—মানবদেহ শুধু হাড়-মাংসের কাঠামো নয়, এটি প্রকৃতির নিখুঁত হিসাবের এক মোহময় সংগীত। যে সংগীতে হাত-পায়ের ছোট লোমও এক মহার্ঘ্য ছন্দ।প্রতিটি ফলিকলের মধ্যে এক ধরনের 'বায়োলজিক্যাল টাইমার' কাজ করে, যা নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই ফলিকলকে 'বন্ধ' করে দেয়। ফলে লোম আর বাড়ে না।

আবার একে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের হরমোন। বিশেষ করে অ্যান্ড্রোজেন নামের একটি হরমোন শরীরের বিভিন্ন অংশে লোমের বৃদ্ধি নির্ধারণ করে। এটি মাথার, মুখের বা বুকের লোমের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে, কিন্তু হাত-পায়ের লোমে কম প্রভাব ফেলে। এ কারণেই পুরুষদের মুখে দাড়ি হয়, কিন্তু হাতের লোম ততটা লম্বা হয় না।

ব্রিটিশ ডার্মাটোলজি একাডেমির গবেষক ড. এলেনা মারচেটি বলেন, “যে অংশে অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরের ঘনত্ব বেশি, সেখানেই চুল বেশি গজায় ও দীর্ঘ হয়। হাত-পায়ে এই রিসেপ্টর কম থাকে বলেই সেখানে লোম লম্বা হয় না।”

তবে এ সবই শুধু জৈবিক ব্যাখ্যা নয়। এখানে জড়িয়ে আছে বিবর্তন। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ যেসব পরিবেশে বসবাস করেছে, তার ওপর ভিত্তি করেই দেহে লোমের ধরন গড়ে উঠেছে। গরম অঞ্চলে শরীর ঠান্ডা রাখার জন্য বেশি ঘাম হওয়া দরকার, আর ঘাম যাতে সহজে বাষ্পীভূত হয়, সে কারণে শরীরের চামড়ার ওপর কম ও ছোট লোম দরকার ছিল। মাথায় বড় চুল দরকার ছিল সূর্যের উত্তাপ থেকে মস্তিষ্ক রক্ষা করতে। এই বিবর্তনই ধীরে ধীরে লোমের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করেছে।

এমনকি হাত-পায়ের লোমকে ছোট রাখা একটি সুরক্ষা ব্যবস্থাও বটে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হিউম্যান জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (NHGRI) বিশেষজ্ঞ ড. সানজানা রাও বলেন, “হাত-পায়ের লম্বা লোম পরিবেশগত জটিলতা তৈরি করতে পারত। যেমন ঘষা লাগা, চামড়া ক্ষত হওয়া বা অতিরিক্ত ঘাম জমে যাওয়া। তাই শরীর এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে যেন এ অংশে লোম ছোট থাকে।”

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মাথার চুল আমরা সচরাচর কাটিনি, বরং বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি। কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশে নিয়মিত শেভ করা বা কাটা হয়। অনেকে ধারণা করেন, বারবার কাটা বা শেভ করার কারণে লোম বাড়ে না। এটি একেবারেই ভুল। বিজ্ঞান বলছে, চুল বা লোমের দৈর্ঘ্য নির্ভর করে ভেতরের ফলিকলের গঠনের ওপর, বাইরের কাটাছেঁড়া বা শেভ করার ওপর নয়।

শরীর এমনভাবেই তৈরি যে, যা যেখানে প্রয়োজন, ঠিক সেখানেই ঠিক পরিমাণে লোম হয় এবং নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে এসে থেমে যায়। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতি যেন আমাদের বলছে—প্রতিটি কোষ, প্রতিটি ক্রিয়া এক জটিল গাণিতিক নিখুঁততায় চলে।

তবে মাঝে মাঝে কিছু হরমোনজনিত সমস্যা বা ওষুধের কারণে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বদলে যেতে পারে। যেমন, কারও হাত-পায়ের লোম অস্বাভাবিকভাবে লম্বা বা ঘন হয়ে গেলে, সেটি হতে পারে হরমোন ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ। এরকম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সবমিলিয়ে বলা যায়, হাত-পায়ের লোম বাড়ে না কারণ এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়, এবং এর গঠন জৈবিকভাবে এমনভাবে তৈরি হয়েছে যাতে একটা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যৈর পর এর বৃদ্ধি থেমে যায়। এটি মানুষের শারীরিক বিবর্তনের এক অসাধারণ নিদর্শন, যেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী শরীর নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে তার বাহ্যিক রূপ।

সূত্র: ব্রিটিশ ডার্মাটোলজি একাডেমির

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

ঋতুপর্ণা চাকমা: পাহাড়ের মেয়ে, দেশের গর্ব

শুরুতে মাঠে নামা ছিল শুধু খেলার আনন্দ থেকে। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন স্থানীয় টুর্নামেন্টে ভালো খেলা শুরু করেন, তখন কোচদের নজরে আসেন।

১২ ঘণ্টা আগে

শনিবার থেকে টানা ৪ দিন বৃষ্টির আভাস

দেশের অধিকাংশ এলাকায় আগামী শনিবার (৫ জুলাই) থেকে বৃষ্টি হতে পারে। যা টানা চারদিন মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) আবহাওয়া অফিসের নিয়মিত পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

১৩ ঘণ্টা আগে

যে ভিটামিনের অভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারে মানুষ

এই সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যৌথভাবে অনেক দেশে ভিটামিন

১৩ ঘণ্টা আগে

দেশের ৮ জেলায় তীব্র ঝড়ের শঙ্কা

দেশের আটটি অঞ্চলের উপর দিয়ে আজ দুপুরের মধ্যে তীব্র ঝড়বৃষ্টি বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।

৩ দিন আগে