বিজ্ঞান

চাঁদে পারমাণবিক চুল্লি বসাবে নাসা

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ০৩

মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে নাসা। ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে একটি ১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক রিয়্যাক্টর স্থাপন করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এই রিয়্যাক্টর চাঁদে যেমন আধুনিক শক্তির চাহিদা পূরণ করবে, তেমনি পৃথিবীর বাইরে স্থায়ী মানব উপস্থিতি গড়ার দিকেও বড় পদক্ষেপ হবে এটি।

চাঁদের এক পূর্ণচক্র ২৮ দিন। একটি দিন ও রাত প্রায় দুই সপ্তাহ দীর্ঘ—মাঝে অন্তত ১৪ দিনের অন্ধকার থাকে। সূর্যালোকের ওপর নির্ভরযোগ্য শক্তি উৎস হিসেবে সৌর প্যানেল কার্যকর থাকে। তাই দীর্ঘ সময় আলো না থাকলে তা অকার্যকর হয়ে যায়। এ অবস্থায় পারমাণবিক শক্তি নিরবচ্ছিন্ন এবং স্থিতিশীলভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। ফলে চাঁদে যেসব এলাকায় আলো প্রাপ্যতা কম, যেমন দক্ষিণ মেরু, সেখানে নিউক্লিয়ার চাঁদে নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর কাজে দেবে।

নাসা অনেক আগেই “ফিশন সারফেস পাওয়ার সিস্টেম” নামে ৪০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি রিয়্যাক্টর-ডিজাইন নিয়ে কাজ করছিল। সেটা ২০৩০-এর প্রথমার্ধে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় নাসার অন্তর্বর্তী প্রশাসক শন ডাফি নির্দেশ দিয়েছেন, ১০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি পূর্ণাঙ্গ রিয়্যাক্টর ডিজাইন, নির্মাণ করেত। এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে স্থাপন করা সম্ভব হয়।

নিশ্চিত করা হয়েছে, নাসা ৬০ দিনের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে রিয়্যাক্টর নির্মাণ-সম্পর্কিত প্রস্তাব আহ্বান করবে এবং ৩০ দিনের মধ্যে এই প্রকল্পের দায়িত্বে একজন প্রধান নিয়োগ করা হবে ।

এই গতিপথ শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক বা প্রযুক্তিগত চাহিদা নয়, কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটেও বিবেচিত হচ্ছে। চীন ও রাশিয়া যৌথভাবে চাঁদে একটি পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছে। সেটা হতে পারে এমন একটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখার হাতিয়ার—যেটিকে নাসা “কিপ-আউট জোন” বলতে পারে। ফলে এটি এক ধরনের আধিপত্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদে ১০০ কিলোওয়াট পারমাণবিক রিয়্যাক্টর স্থাপন করা কঠিন। তবে প্রযুক্তিগতভাবে এটি সম্ভব হতে পারে যদি যথাযথ সংস্থান এবং সমন্বয় থাকে।

বিজ্ঞানী জোসেফ সিরিনসিওনে মনে করেন—“প্রস্তাবিত সময়সীমা অনিশ্চিত এবং সম্ভব নয়, কারণ মহাকাশ প্রকল্পগুলো সাধারণত অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল ।”

অন্যদিকে নাসার প্রযুক্তি ও নীতি বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ভাবা লাল স্বীকার করেন—“সাধ্য আছে, তবে এটি সহজ হবে না। খরচ হতে পারে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।”

এই ঘোষণার পরপরই কিছু পারমাণবিক শক্তি-নির্ভর কোম্পানির শেয়ার দ্রুত বেড়ে যায়। বিশেষ করে বিডাব্লিউএক্স টেকনোলজিস ইনকর্পোরেটেডের। এরা নাসা ও ডারপা’র সঙ্গে পারমাণবিক রিয়্যাক্টর নির্মাণে যুক্ত। তাদের শেয়ারের মূল্য একদিনে ১৮.৪ শতাংশ বেড়ে যায়। এটা ২০১০ সালের আইপিও’র পর সর্বোচ্চ একদিনের বৃদ্ধি। এছাড়া ওকলো ইনকর্পোরেটেড, নানো নিউক্লিয়ার এনার্জি ইনকর্পোরেটেড, নুস্কেল পাওয়ার কর্পোরেশন এবং ভ্যানইক ইউরেনিয়াম অ্যান্ড নিউক্লিয়ার ইটিএফ-এর শেয়ারও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই রিয়্যাক্টরের মাধ্যমে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি মানুষের বসবাস সম্ভব হবে, বাসস্থানগুলো বিদ্যুতায়িত থাকবে, যন্ত্রপাতি ও গবেষণার সরঞ্জাম সচল থাকবে এবং রোবটিক্স গবেষণাও চলবে। ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহ বা অন্য কোনো গ্রহে মহাকাশ স্টেশন বা কলোনি গড়ার জন্য এটি একটি উদাহরণ হবে।

নাসা মনে করে, এই প্রযুক্তি শুধু বিজ্ঞান নয়—মহাকাশে প্রভাব ও আধিপত্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হবে। তবে আন্তর্জাতিক আইন, বিশেষ করে “আউটার স্পেস ট্রিটি” অনুযায়ী, কোনো দেশ কি চাঁদের কোনো অংশ বা এলাকা নিজেদের জন্য সংরক্ষণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

নাসা আগে ছোট ক্ষমতার (৪০ কিলোওয়াট) ফিশন প্যানেল ভিত্তিক রিয়্যাক্টর নিয়ে কাজ করছিল, কিন্তু শন ডাফির অধীনে এখন এটি বড় ক্ষমতার (১০০ কিলোওয়াট) শিল্প-নির্ভর পরিকল্পনায় রূপ নিচ্ছে। এ পরিকল্পনা বিজ্ঞান, কূটনীতি ও শিল্প—সব ক্ষেত্রেই নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে, তবে এটি মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা ঘটাবে।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, পলিটিকো, স্পেস ডট কম, ওয়্যারড ও দি আটলান্টিক

ad
ad

রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ফ্লাইটরাডার২৪ অ্যাপ : আকাশের ডিজিটাল জানালা

এই অ্যাপ মূলত একটি ‘লাইভ ফ্লাইট ট্র্যাকিং’ প্ল্যাটফর্ম। পৃথিবীর হাজার হাজার বিমান যখন আকাশে উড়ছে, তখন এই অ্যাপ সেই সব বিমানের রিয়েল-টাইম অবস্থান, গন্তব্য, উচ্চতা, গতি এবং এমনকি কোন ধরনের বিমান সেটি—সব তথ্য সরাসরি দেখায়।

৯ ঘণ্টা আগে

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর প্রায় ৫০ শতাংশ প্রজননক্ষম নারী কোনো না কোনো মাত্রায় পিরিয়ডের ব্যথায় ভোগেন। তবে এই ব্যথা কমানোর কিছু উপায় রয়েছে, যা চিকিৎসা, জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব।

১ দিন আগে

গোপাল ভাঁড়কে কেন ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা

১ দিন আগে

কলিঙ্গের যুদ্ধ: কারণ, ভয়াবহতা ও পরিমাণ

কলিঙ্গ ছিল প্রাচীন ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী একটি সমৃদ্ধ, স্বাধীন রাজ্য—বর্তমান ওড়িশা ও দক্ষিণ-পূর্ব আন্দ্রপ্রদেশে। এর মানুষের সাংস্কৃতিক রুচি, সামুদ্রিক বাণিজ্য, শক্তিশালী নৌদল—সকল কিছুই ছিল আত্মনির্ভর, যা মুর্য সিংহাসনে নতুন দ্বারপ্রান্তে বসা অশোককে উদ্বিগ্ন করেছিল।

১ দিন আগে