বিজ্ঞান

বাষ্প হয়ে শূন্যে মিলিয়ে যায় ব্ল্যাকহোল?

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ০৭
এভাবে শক্তি বের হতে থাকলে, ব্ল্যাক হোলের ভরও ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

ব্ল্যাকহোল! মহাকাশের এক রহস্যময় বস্তু। এটি এতটাই ভারী এবং এর মহাকর্ষ বল এতটাই শক্তিশালী যে আলো পর্যন্ত এখান থেকে বের হতে পারে না। তাই একে বলা হয় “ব্ল্যাক” বা কৃষ্ণগহ্বর। যেকোনো কিছু একবার এর মধ্যে ঢুকে গেলে, আর ফিরিয়ে আনা যায় না।

ব্ল্যাক হোল নিয়ে মানুষ বহু বছর ধরে কল্পনা আর গবেষণা করে আসছে। তবে ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একটি এমন ধারণা দেন, যা সবাইকে চমকে দেয়। তিনি বলেন—ব্ল্যাক হোল ধীরে ধীরে শক্তি হারায়, এবং এক সময় সম্পূর্ণভাবে মিলিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে তিনি নাম দেন—হকিং বিকিরণ।

ব্ল্যাকহোল কি কণা ছাড়তে পারে?

আমরা সাধারণভাবে ভাবি, ব্ল্যাক হোল কিছুই বাইরে বের হতে দেয় না। কিন্তু হকিং বলেছিলেন, কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী, শূন্যস্থান আসলে একদম ফাঁকা নয়। সেখানে হঠাৎ করেই কণা ও অ্যান্টি-কণার জোড়া জন্ম নেয় এবং আবার মিলিয়ে যায়। যদি এই কণাদ্বয়ের একটি ব্ল্যাক হোলের ঠিক গা ঘেঁষে তৈরি হয়, তবে একটা কণা ব্ল্যাক হোলের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে আর অন্যটি বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। বাইরে বেরিয়ে যাওয়া কণাটি তখন বিকিরণ হিসেবে ধরা পড়ে।

এই বিকিরণই হল হকিং বিকিরণ। এর মানে হলো, ব্ল্যাক হোল থেকেও একধরনের আলো বা শক্তি বের হতে পারে। আর এভাবে শক্তি বের হতে থাকলে, ব্ল্যাক হোলের ভরও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অনেক অনেক সময় পরে, এক সময় ব্ল্যাক হোল একেবারে মিলিয়ে যায়—বা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়, বাষ্পীভূত হয়ে যায়।

বিষয়টা কিন্তু খুব ধীরে ঘটে। যেমন, যদি একটা ব্ল্যাক হোলের ভর আমাদের সূর্যের মতো হয়, তবে সেটি পুরোপুরি বাষ্পীভূত হতে সময় লাগবে ১০৬৭ বছর। এই সংখ্যাটা এত বড় যে লিখলে একের পেছনে ৬৭টি শূন্য বসাতে হয়! মহাবিশ্বের বর্তমান বয়সও তার ধারে কাছে নেই।

এই বাষ্পীভবনের তত্ত্ব নতুন এক রহস্য তৈরি করল। বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুললেন—ব্ল্যাক হোল যখন একেবারে মিলিয়ে যাবে, তখন এর ভেতরে থাকা সব তথ্য কোথায় যাবে? অর্থাৎ ব্ল্যাক হোল তার জীবনকালে যেসব বস্তু, আলো বা শক্তিকে গিলে খেয়েছে—সেগুলোর তথ্য কি একেবারে হারিয়ে যাবে?

বিজ্ঞান বলছে, তথ্য কখনও পুরোপুরি হারায় না, শুধু এক রূপ থেকে অন্য রূপে বদলে যায়। একে বলে তাপগতিবিদ্যার তথ্য সংরক্ষণের নীতি। হকিংয়ের তত্ত্ব বলছে, তথ্য একেবারে মুছে যেতে পারে, যা এই নীতির বিরোধী। এই সমস্যাটিকে বলা হয়—ব্ল্যাক হোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স।

এখনো এই রহস্যের সঠিক উত্তর কেউ জানে না। কেউ বলছেন, কোয়ান্টাম তথ্য আসলে ব্ল্যাক হোলের বাইরেই থেকে যায়। আবার কেউ বলছেন, ব্ল্যাক হোলের ভেতরের কণাগুলো বাইরের কণার সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে থাকে যে তথ্য একেবারে হারায় না। একে বলা হয়—কোয়ান্টাম নন-লোকালিটি।

কেউ কেউ আবার বলছেন, হয়তো আমাদের এখনকার তত্ত্বগুলোই ভুল বা অসম্পূর্ণ। হয়তো একদিন আমরা এমন এক তত্ত্ব আবিষ্কার করব, যেটা আপেক্ষিকতা আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স—দুই ক্ষেত্রকেই একসাথে ব্যাখ্যা করতে পারবে।

২০২৩ সালে নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, হয়তো শুধু ব্ল্যাক হোলই নয়, সব কিছুরই এক সময় বাষ্পীভবন ঘটতে পারে। অর্থাৎ এই তথ্য হারানোর রহস্য শুধু ব্ল্যাক হোলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের পরিচিত জগতে আরও বিস্তৃত। এর মানে আমাদের মহাবিশ্ব নিয়ে এখনো অনেক কিছু অজানা, অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।

স্টিফেন হকিংয়ের হকিং বিকিরণ তত্ত্ব ব্ল্যাক হোল নিয়ে আমাদের ধারণা একদম বদলে দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন প্রশ্ন—তথ্য কি হারিয়ে যায়? ব্ল্যাক হোল কিভাবে মরে? একদিন কি আমরাও এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে যাব?

যদিও উত্তর এখনো পুরোপুরি মেলেনি, কিন্তু এই প্রশ্নগুলোই বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কারের পথ দেখাচ্ছে। ব্ল্যাক হোলের গভীরে লুকিয়ে থাকা এই রহস্য একদিন হয়তো আমাদের পুরো মহাবিশ্বকে নতুন চোখে দেখতে শেখাবে।

সূত্র: লাইভ সায়েন্স

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

ব্যাটল অব থার্মোপিলাই: সাহস ও আত্মত্যাগের অমর ইতিহাস

এই যুদ্ধের পটভূমি বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে তার আগের দশকগুলোতে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালের আশপাশে পারস্য সাম্রাজ্য তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। বর্তমান ইরান, ইরাক, তুরস্ক, আফগানিস্তান, মিশরসহ এক বিশাল এলাকা জুড়ে পারস্যের শাসন বিস্তৃত ছিল।

২১ ঘণ্টা আগে

পিরিয়ডের সময় নারীদের কি দুধ খাওয়া উচিত

পিরিয়ড মানেই নারীর শরীরে নানা ধরনের হরমোনের ওঠানামা। ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে। পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, হজমের সমস্যা—এই সবই পিরিয়ডের সময় অনেক নারীর নিত্যসঙ্গী।

২১ ঘণ্টা আগে

লাভজনক কমিউটার ট্রেন বেসরকারি খাতে হস্তান্তরে তোড়জোড়

লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও বেনাপোল-খুলনা-মোংলা (যশোর হয়ে) রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বেতনা কমিউটার ট্রেন বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, বর্তমান আয়ের তুলনায় বেশি অর্থ পেলে নীতিমালা অনুযায়ী লিজ দেওয়া যেতে পারে। যদিও এই উদ্যোগ ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

১ দিন আগে

ইউটিউবের নতুন মনিটাইজেশন নীতি : কী থাকছে কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য

আগে অনেকেই এমন করতেন—ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া কোনো ভিডিও বা ক্লিপ নিয়ে সেটি নিজের চ্যানেলে দিয়ে দিতেন, যাতে প্রচুর ভিউ হয় এবং সহজেই অর্থ আয় করা যায়। ইউটিউব এবার এটিকে বলছে ‘ইনঅথেন্টিকেটেড কন্টেন্ট’ বা ‘অসত্য কনটেন্ট’। এর মানে, যা নিজের নয় এবং তাতে নতুন কিছু যোগ করা হয়নি—সেই কনটেন্ট আর মানিটাইজ হবে না

২ দিন আগে