ডিজিটাল সেবা

মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার দাবি করার উপায়

শানজীদা শারমিন
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ০০: ২৩

আসগর আলী, ৭৩ বছর বয়সে হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোক করে মারা যান গ্রামের বাড়িতে। তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পেনশনের ১০ লাখ টাকা রাখা ছিল, যা পরিবারের সদস্যরা জানতেন। আসগরের বড় ছেলে হাসান ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারলেন—অ্যাকাউন্টটি ১৯৭৮ সালের। সেখানে নমিনির বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। ওই সময়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে নমিনির তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল না বলে জানালেন ব্যাংক কর্মকর্তা। ব্যাংক কর্মকর্তা জানালেন, এমন পরিস্থিতিতে টাকা তুলতে হলে আদালত থেকে ওয়ারিশ সনদ লাগবে।

‘আদালত থেকে ওয়ারিশ সনদ পাওয়ার উপায়’ লিখে গুগলে সার্চ দিলেন হাসান। পাশাপাশি পরিচিত এক আইনজীবীকে ফোন দিয়ে জানতে পারলেন তার এই কাগজপত্র লাগবে:

  • মৃত ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র
  • সব ওয়ারিশদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • মৃত ব্যক্তির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • অন্যান্য ওয়ারিশদের লিখিত সম্মতি/অনাপত্তিপত্র (No Objection)
  • একটি নথিভুক্ত হলফনামা (Affidavit)

ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে হাসান শুনলেন, মৃত্যুর সনদের জন্য আগে তাঁর বাবার জন্মনিবন্ধন নম্বর লাগবে। অথচ তাঁর বাবার কখনোই জন্মসনদ করা হয়নি।

“সমস্যা নেই, ব্যাকডেটেড জন্মসনদ করা যায়,”—বললেন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কর্মী।

হাসান তার বাবার ও নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গেলে সেখানকার অপারেটর জন্ম সনদের জন্য আবেদন করলেন। তিন দিনের মধ্যে জন্ম সনদ হয়ে যাওয়ার পর এবার মৃত্যুর সনদের জন্য আবেদন করলেন। বাবার নাম, মৃত্যুর তারিখ, কারণ, ঠিকানা এসব তথ্যের পাশাপাশি হাসানের নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের অপারেটর অনলাইনে মৃত্যু সনদের জন্য আবেদন করলেন। তিনদিন পর মৃত্যু সনদের নথি তৈরি হয়ে গেল। তা প্রিন্ট করে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর হয়ে গেলে মৃত্যু সনদ হাতে পান হাসান। এরপর হাসান তাঁর বাবার মৃত্যু সনদ, বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (NID), হাসানের নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, এবং পরিবারের সব সদস্যের নাম, বয়স, পিতার নাম সম্পর্ক উল্লেখ করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে ওয়ারিশান সনদ নিয়ে নিলেন।

সব কাগজ হাতে পাওয়ার পর হাসান ছোট ভাই রায়হান আর মা মাজেদাকে নিয়ে গেলেন কোর্টে। সিদ্ধান্ত হলো—তারা দুই ভাই মিলে তাঁদের মাকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে দেবেন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য।

আইনজীবী প্রয়োজনীয় কাগজ তৈরিতে সাহায্য করলেন। এর জন্য প্রয়োজন হলো আসগর আলীর মৃত্যু সনদ, জন্মসনদ, সব ওয়ারিশদের (স্ত্রী, সন্তান) জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, হাসানের পাসপোর্ট সাইজ ছবি, অন্য ওয়ারিশদের লিখিত অনাপত্তিপত্র (NOC) ও হলফনামা (affidavit)।

আইনজীবী জানালেন, সাকসেশন সনদ আসলে আদালতের জারি করা একটি অফিসিয়াল অনুমতি, যার মাধ্যমে ওয়ারিশরা মৃত ব্যক্তির অস্থাবর সম্পত্তির (যেমন ব্যাংক জমা, সঞ্চয়পত্র, গাড়ি, কোম্পানির শেয়ার ইত্যাদি) ওপর আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

আইনজীবী বললেন, “আপনাকে কোর্টে আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু সময় লাগবে, কোর্ট ফি আছে, কিছু শুনানিও হবে।” আইনজীবী ব্যাখ্যা করলেন, “এটা করার কারণ হলো, কেউ যেন অন্য কারও অধিকার কেড়ে না নেয়। বেশ কিছু মানুষ নিজেদের সুবিধার জন্য ইচ্ছা করে অন্য ওয়ারিশদের বাদ দিয়ে সাকসেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত ওয়ারিশরা আদালতে সনদ বাতিলের জন্য আবেদন করেন।’’

হাসান আরও জানলেন, মৃত ব্যক্তি যদি মুসলিম হন, তাহলে ইসলামি আইন অনুযায়ী যাঁরা উত্তরাধিকারী, তাঁরাই কেবল আবেদন করতে পারবেন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও তাঁদের ধর্মীয় পারিবারিক আইন প্রযোজ্য।

আইনজীবীর মাধ্যমে হাসান কোর্টে আবেদন জমা দিলেন। প্রথম ধাপ হলো ফাইলিং, এরপর কোর্ট ডেট পেলেন। এই প্রক্রিয়ায় তিনটি ধাপ পেরোতে হয় সাধারণত—

১. ফাইলিং

২. সমন ফেরত

৩. জবানবন্দি

এই তিনটা ডেট শেষে যদি কোর্ট সন্তুষ্ট হয়, তাহলে আবেদন মঞ্জুর হয় এবং কোর্ট ফি জমা দিতে হয়। তখন হাসান জানতে পারলেন, কোর্ট ফি নির্ভর করে সম্পদের পরিমাণের ওপর—

যেমন ২০,০০০ টাকার নিচে কোনো কোর্ট ফি নেই। ২০,০০১ থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১% কোর্ট ফি, ১,০০,০০১ টাকা থেকে ঊর্ধ্বে: ২% কোর্ট ফি। কোর্ট ফি জমা দিয়ে হাসান অপেক্ষা করতে লাগলেন সনদের জন্য। জজ ওয়ারিশ সনদ ইস্যুর নির্দেশ দিলেন।

Picture1

হাসান আর রায়হান আদালতের এক নোটারির মাধ্যমে তাদের মা মাজেদাকে টাকা তোলার জন্য পূর্ণ অনুমতি দিলেন। হাসানের মা এই ক্ষমতা-হস্তান্তরপত্রসহ ওয়ারিশ সনদ, পরিচয়পত্রের কপি ব্যাংকে জমা দিলেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে জানাল, ‘এক সপ্তাহ পর টাকা দেওয়া হবে।’ এক সপ্তাহ পর ১০ লাখ টাকা দেওয়া হলো হাসানের মায়ের অ্যাকাউন্টে।

Picture2

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

ব্যাটল অব থার্মোপিলাই: সাহস ও আত্মত্যাগের অমর ইতিহাস

এই যুদ্ধের পটভূমি বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে তার আগের দশকগুলোতে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালের আশপাশে পারস্য সাম্রাজ্য তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। বর্তমান ইরান, ইরাক, তুরস্ক, আফগানিস্তান, মিশরসহ এক বিশাল এলাকা জুড়ে পারস্যের শাসন বিস্তৃত ছিল।

১৭ ঘণ্টা আগে

পিরিয়ডের সময় নারীদের কি দুধ খাওয়া উচিত

পিরিয়ড মানেই নারীর শরীরে নানা ধরনের হরমোনের ওঠানামা। ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে। পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, হজমের সমস্যা—এই সবই পিরিয়ডের সময় অনেক নারীর নিত্যসঙ্গী।

১৭ ঘণ্টা আগে

লাভজনক কমিউটার ট্রেন বেসরকারি খাতে হস্তান্তরে তোড়জোড়

লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও বেনাপোল-খুলনা-মোংলা (যশোর হয়ে) রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বেতনা কমিউটার ট্রেন বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, বর্তমান আয়ের তুলনায় বেশি অর্থ পেলে নীতিমালা অনুযায়ী লিজ দেওয়া যেতে পারে। যদিও এই উদ্যোগ ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

১ দিন আগে

ইউটিউবের নতুন মনিটাইজেশন নীতি : কী থাকছে কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য

আগে অনেকেই এমন করতেন—ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া কোনো ভিডিও বা ক্লিপ নিয়ে সেটি নিজের চ্যানেলে দিয়ে দিতেন, যাতে প্রচুর ভিউ হয় এবং সহজেই অর্থ আয় করা যায়। ইউটিউব এবার এটিকে বলছে ‘ইনঅথেন্টিকেটেড কন্টেন্ট’ বা ‘অসত্য কনটেন্ট’। এর মানে, যা নিজের নয় এবং তাতে নতুন কিছু যোগ করা হয়নি—সেই কনটেন্ট আর মানিটাইজ হবে না

২ দিন আগে