শানজীদা শারমিন
টিয়া উপজেলার রহিমা বেগম নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন কৃষিকাজ আর সংসার সামলিয়ে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে একটি মামলা চলছে। প্রতিবার শুনানির তারিখ জানার জন্য শহরে যেতে হয়। আদালতের বারান্দায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। কখনো শুনানি হতো, কখনো হতো না। কখনো তারিখ পিছিয়ে যেত।
একদিন স্থানীয় তথ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে সেখানে থাকা তরুণ তাকে বলল, এখন মোবাইল বা কম্পিউটারে মামলা সংক্রান্ত তথ্য দেখা যায়। তিনি রহিমাকে ‘আমার আদালত’ অ্যাপের কথা জানালেন।
ওই তরুণ বলল, ‘সমস্যা নেই। এখানে কম্পিউটারে দেখাতে পারবো। মামলার নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর থাকলেই হবে।’
কয়েক মিনিটের মধ্যেই রহিমা তার মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ, বিচারকের নাম, মামলার অবস্থা জানতে পারলেন ওই তরুণের মাধ্যমে।
খুলনার আইনজীবী সোহেল রানাকে আগে একেকটা মামলার আপডেট জানতে আলাদা করে খোঁজ নিতে হতো। এখন ‘আমার আদালত’ অ্যাপে লগইন করলেই সব মামলার তালিকা, শুনানির তারিখ, আদালতের নাম, বিচারকের পরিচয় সব একসাথে দেখতে পান। সময় এবং কাগজের ঝামেলা দুটোই কমেছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসাব নিয়ে সমস্যায় পড়েন কুড়িগ্রামের গৃহবধূ হাফিজা বেগম। ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রের অপারেটরের কাছ থেকে শুনে ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ ব্যবহার করলেন। পরিবারের সদস্যদের কার ভাগে কত জমি আসবে—এই হিসাব মোবাইলে দেখে ফেললেন। আদালতে না গিয়ে নিজেই পরিস্থিতি সামাল দিলেন।
আগে বিচারব্যবস্থা মানেই ছিল—দালালদের দৌরাত্ম, দিনভর অপেক্ষা। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ বা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আদালতে বারবার হাজিরা দেওয়া ছিল কষ্টকর। এখন এসব সমস্যা দূর করতে চালু হয়েছে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ প্রকল্প।
এর আওতায় চলছে:
মামলার নথি ডিজিটালি সংরক্ষণ,
ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে শুনানি গ্রহণ
কাগজবিহীন বিচারিক কার্যক্রম।
২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সব জেলা আদালতেও এই কার্যক্রম বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ ইতিমধ্যেই পুরোপুরি কাগজবিহীন কার্যক্রম শুরু করেছে।
‘আমার আদালত’ অ্যাপের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীরা এখন সে সেবা পান:
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে নিজের মামলার তথ্য দেখতে পারেন,
শুনানির তারিখ জানতে পারেন
বিচারকের নাম ও কোর্টের ঠিকানা পেতে পারেন
পুরনো আদেশের সারাংশ পড়তে পারেন
নোটিফিকেশন পাওয়ার মাধ্যমে শুনানি মিস করার আশঙ্কা কমাতে পারেন।
এর ফলে দালাল নির্ভরতা কমেছে এবং মামলার অগ্রগতির খবর নিজেরাই জেনে নিতে পারছেন। তবে সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি। গ্রামে বয়স্ক ব্যাক্তিদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার কম। তা ছাড়া ইন্টারনেট এখনো গ্রামাঞ্চালে সহজলভ্য নয়।
‘ই-কজলিস্ট’ (causelist.judiciary.org.bd) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রতিদিনের কোর্টের কার্যতালিকা অনলাইনে প্রকাশিত হয়। আগে মামলা কোন তারিখে শুনানি হবে-তা জানার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোর্টে বসে থাকতে হতো। এখন অনলাইনে কোর্টের নাম, বিচারকের নাম, শুনানির সময় জান যায়। আইনজীবীরাও তাদের মক্কেলদের নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারছেন, আদালতে ভিড়ও কমছে। তবে তথ্যের সঠিকতা ও দ্রুত আপডেট করা এখনো আদালতগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ ব্যবহারে এখন সহজেই জানা যায়, কার কতটুকু সম্পত্তি প্রাপ্য। এতে ভাই-বোন, সন্তান-স্বামীর মধ্যে বিভ্রান্তি কমেছে। কোর্টে মামলা করার আগে সঠিক হিসাব করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়াও বিচারব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে:
ই-ফাইলিং (অনলাইনে মামলা নথিভুক্তকরণ),
ই-সার্টিফায়েড কপি (অনলাইনে রায়ের কপি সংগ্রহ),
বেইল কনফার্মেশন সফটওয়্যার,
জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড।
এসব সেবার ফলে বিচারব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও নাগরিকবান্ধব হচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যে দেশের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে। বিচারক, আইনজীবী, আদালতকর্মীদের জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য শক্ত নীতিমালাও তৈরি হয়েছে।
‘আমার আদালত’, ‘ই-কজলিস্ট’, ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’—এগুলো কেবল টেকনিক্যাল সেবা নয়। এসব উদ্যোগ নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সহজ করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এটি বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনছে।
প্রযুক্তির এই অভিযাত্রা এখনো অসম্পূর্ণ, কিন্তু পরিবর্তনের গতিপথ সঠিক।একদিন হয়তো এমন হবে—বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘরে বসেই নিজের ন্যায়বিচারের খবর জানতে পারবে। ডিজিটাল বিচারালয় সেই ভবিষ্যতেরই সূচনা করছে।
টিয়া উপজেলার রহিমা বেগম নিজের জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন কৃষিকাজ আর সংসার সামলিয়ে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে একটি মামলা চলছে। প্রতিবার শুনানির তারিখ জানার জন্য শহরে যেতে হয়। আদালতের বারান্দায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। কখনো শুনানি হতো, কখনো হতো না। কখনো তারিখ পিছিয়ে যেত।
একদিন স্থানীয় তথ্যসেবা কেন্দ্রে গেলে সেখানে থাকা তরুণ তাকে বলল, এখন মোবাইল বা কম্পিউটারে মামলা সংক্রান্ত তথ্য দেখা যায়। তিনি রহিমাকে ‘আমার আদালত’ অ্যাপের কথা জানালেন।
ওই তরুণ বলল, ‘সমস্যা নেই। এখানে কম্পিউটারে দেখাতে পারবো। মামলার নম্বর বা জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর থাকলেই হবে।’
কয়েক মিনিটের মধ্যেই রহিমা তার মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ, বিচারকের নাম, মামলার অবস্থা জানতে পারলেন ওই তরুণের মাধ্যমে।
খুলনার আইনজীবী সোহেল রানাকে আগে একেকটা মামলার আপডেট জানতে আলাদা করে খোঁজ নিতে হতো। এখন ‘আমার আদালত’ অ্যাপে লগইন করলেই সব মামলার তালিকা, শুনানির তারিখ, আদালতের নাম, বিচারকের পরিচয় সব একসাথে দেখতে পান। সময় এবং কাগজের ঝামেলা দুটোই কমেছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসাব নিয়ে সমস্যায় পড়েন কুড়িগ্রামের গৃহবধূ হাফিজা বেগম। ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেবাকেন্দ্রের অপারেটরের কাছ থেকে শুনে ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ ব্যবহার করলেন। পরিবারের সদস্যদের কার ভাগে কত জমি আসবে—এই হিসাব মোবাইলে দেখে ফেললেন। আদালতে না গিয়ে নিজেই পরিস্থিতি সামাল দিলেন।
আগে বিচারব্যবস্থা মানেই ছিল—দালালদের দৌরাত্ম, দিনভর অপেক্ষা। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ বা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আদালতে বারবার হাজিরা দেওয়া ছিল কষ্টকর। এখন এসব সমস্যা দূর করতে চালু হয়েছে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ প্রকল্প।
এর আওতায় চলছে:
মামলার নথি ডিজিটালি সংরক্ষণ,
ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে শুনানি গ্রহণ
কাগজবিহীন বিচারিক কার্যক্রম।
২০২৫ সালের মধ্যে দেশের সব জেলা আদালতেও এই কার্যক্রম বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ ইতিমধ্যেই পুরোপুরি কাগজবিহীন কার্যক্রম শুরু করেছে।
‘আমার আদালত’ অ্যাপের মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীরা এখন সে সেবা পান:
জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে নিজের মামলার তথ্য দেখতে পারেন,
শুনানির তারিখ জানতে পারেন
বিচারকের নাম ও কোর্টের ঠিকানা পেতে পারেন
পুরনো আদেশের সারাংশ পড়তে পারেন
নোটিফিকেশন পাওয়ার মাধ্যমে শুনানি মিস করার আশঙ্কা কমাতে পারেন।
এর ফলে দালাল নির্ভরতা কমেছে এবং মামলার অগ্রগতির খবর নিজেরাই জেনে নিতে পারছেন। তবে সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি। গ্রামে বয়স্ক ব্যাক্তিদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার কম। তা ছাড়া ইন্টারনেট এখনো গ্রামাঞ্চালে সহজলভ্য নয়।
‘ই-কজলিস্ট’ (causelist.judiciary.org.bd) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রতিদিনের কোর্টের কার্যতালিকা অনলাইনে প্রকাশিত হয়। আগে মামলা কোন তারিখে শুনানি হবে-তা জানার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোর্টে বসে থাকতে হতো। এখন অনলাইনে কোর্টের নাম, বিচারকের নাম, শুনানির সময় জান যায়। আইনজীবীরাও তাদের মক্কেলদের নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারছেন, আদালতে ভিড়ও কমছে। তবে তথ্যের সঠিকতা ও দ্রুত আপডেট করা এখনো আদালতগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’ ব্যবহারে এখন সহজেই জানা যায়, কার কতটুকু সম্পত্তি প্রাপ্য। এতে ভাই-বোন, সন্তান-স্বামীর মধ্যে বিভ্রান্তি কমেছে। কোর্টে মামলা করার আগে সঠিক হিসাব করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে।
এছাড়াও বিচারব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে:
ই-ফাইলিং (অনলাইনে মামলা নথিভুক্তকরণ),
ই-সার্টিফায়েড কপি (অনলাইনে রায়ের কপি সংগ্রহ),
বেইল কনফার্মেশন সফটওয়্যার,
জুডিশিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড।
এসব সেবার ফলে বিচারব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও নাগরিকবান্ধব হচ্ছে। সরকার ইতিমধ্যে দেশের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে। বিচারক, আইনজীবী, আদালতকর্মীদের জন্য ডিজিটাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য শক্ত নীতিমালাও তৈরি হয়েছে।
‘আমার আদালত’, ‘ই-কজলিস্ট’, ‘উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’—এগুলো কেবল টেকনিক্যাল সেবা নয়। এসব উদ্যোগ নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সহজ করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এটি বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনছে।
প্রযুক্তির এই অভিযাত্রা এখনো অসম্পূর্ণ, কিন্তু পরিবর্তনের গতিপথ সঠিক।একদিন হয়তো এমন হবে—বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘরে বসেই নিজের ন্যায়বিচারের খবর জানতে পারবে। ডিজিটাল বিচারালয় সেই ভবিষ্যতেরই সূচনা করছে।
এই যুদ্ধের পটভূমি বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে তার আগের দশকগুলোতে। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালের আশপাশে পারস্য সাম্রাজ্য তখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। বর্তমান ইরান, ইরাক, তুরস্ক, আফগানিস্তান, মিশরসহ এক বিশাল এলাকা জুড়ে পারস্যের শাসন বিস্তৃত ছিল।
১৭ ঘণ্টা আগেপিরিয়ড মানেই নারীর শরীরে নানা ধরনের হরমোনের ওঠানামা। ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে। পেটব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, হজমের সমস্যা—এই সবই পিরিয়ডের সময় অনেক নারীর নিত্যসঙ্গী।
১৮ ঘণ্টা আগেলাভজনক হওয়া সত্ত্বেও বেনাপোল-খুলনা-মোংলা (যশোর হয়ে) রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বেতনা কমিউটার ট্রেন বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, বর্তমান আয়ের তুলনায় বেশি অর্থ পেলে নীতিমালা অনুযায়ী লিজ দেওয়া যেতে পারে। যদিও এই উদ্যোগ ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
১ দিন আগেআগে অনেকেই এমন করতেন—ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে যাওয়া কোনো ভিডিও বা ক্লিপ নিয়ে সেটি নিজের চ্যানেলে দিয়ে দিতেন, যাতে প্রচুর ভিউ হয় এবং সহজেই অর্থ আয় করা যায়। ইউটিউব এবার এটিকে বলছে ‘ইনঅথেন্টিকেটেড কন্টেন্ট’ বা ‘অসত্য কনটেন্ট’। এর মানে, যা নিজের নয় এবং তাতে নতুন কিছু যোগ করা হয়নি—সেই কনটেন্ট আর মানিটাইজ হবে না
২ দিন আগে