শিশুতোষ গল্প

বিপদে বন্ধু সবাই

সরকার আবদুল মান্নান
বিপদে বন্ধু সবাই

দুটি ইঁদুরছানা আর একটি বিড়াল। বাসাটিতে এই তিনজন বাস করে।

ইঁদুরছানা দুটির অনেক দুঃখ। সব সময় তাদের লুকিয়ে থাকতে হয়। খোলা জায়গায় আসতে পারে না তারা। সোফায় বসতে পারে না। খাটে আরাম করে ঘুমোতে পারে না। কী সুন্দর বারান্দা। সকালে রোদ এসে পড়ে এখানে। ইঁদুরছানাদের খুব ইচ্ছে বারান্দায় এসে খেলতে। রোদ পোহাতে। কিন্তু তার জো নেই।

কতগুলো ঘর বাসাটায়। একটা। দুটা। তিনটা। চারটা। সবগুলো ঘরের মেঝে খোলামেলা। সুন্দর। ইঁদুরছানা দুটির খুব ইচ্ছে হয় ঘরগুলোতে ঘুরে বেড়াতে।

ছোট্ট মেয়ে পুতুল। পরীর মতো সুন্দর। বাসার সবাই পুতুলকে অনেক আদর করে। ইঁদুরছানা দুটির খুব ইচ্ছে হয় পুতুল সোনার সঙ্গে খেলতে। কিন্তু কিছুই করতে পারে না তারা।

অথচ দেখ, ওই বিড়ালটার কত সুখ! সব করতে পারে ও। সোফায় শুয়ে ঘুমায়। আবার চোখ খুলে পিট পিট করে এদিক-সেদিক তাকায়। আড়মোড়া ভাঙে। শরীর চাটে। চুলকায়। আরাম করে লেজ নাড়ে। আর সুখের ডাক ডাকে-- মিউ মিউ। ইচ্ছা হলো তো খাটে গিয়ে উঠল। লম্ফ-ঝম্ফ দিল কিছুক্ষণ। তারপর আবার ঘুম। কত যে ঘুমাতে পারে ওরা!

চারটা ঘরের রাজা যেন ওই বিড়ালটা। সবগুলো ঘরে রাজার মতো ঘুরে বেড়ায় । আর পুতুলের সঙ্গে খেলে। কতরকম খেলা যে শিখেছে বিড়ালটা। পুতুলও পারে। বিড়ালটার সঙ্গে খেলতে ওর কোনো ক্লান্তি নেই।

ঘরের লোকগুলো বিড়ালটাকে খুব ভালোবাসে। এই হিংসুটে প্রাণীটাকে কেন যে মানুষ এত পছন্দ করে, ইঁদুরছানা দুটি কিছুতেই তা বুঝতে পারে না। মাথায় খেলে না ওদের।

ইঁদুরছানা দুটির খুবই আক্ষেপ। এমন হিংস্র আর হিংসুটে প্রাণী হয় আর! সারাক্ষণ লেগে থাকে ওদের পিছনে। চি চি করে ওরা যদি খাদ্যের জন্য আড়াল থেকে একটু বেরিয়ে আসে, অমনি আক্রমণ করবে ওই পাজি বিড়ালটা। তখন প্রাণপণ দৌঁড়োতে হয় ওদের। খুঁজে নিতে হয় নিরাপদ আশ্রয়। পিলারের কাছে মিশে থাকতে হয়। বুক সেল্ফ-এর নিচে, সোফাসেটের নিচে আড়ালে-আবডালে লুকাতে হয়।

কতবার ইঁদুরছানা দুটি বন্ধুত্ব করতে চেয়েছে বিড়ালটির সঙ্গে। আড়াল থেকে চি চি শব্দ করেছে। বলেছে, ‘বিড়াল মামা, বিড়াল মামা আপনি অনেক সুন্দর। আর দৌঁড়াতেও পারেন চিতার মতো।’

কথা শেষ করতেও দেয়নি বিড়ালটি। চিৎকার করে উঠল। বলল, ‘কে রে? নচ্ছার কোথাকার! দেখাচ্ছি মজা এখনই।’

বুঝ, কিসের মধ্যে কী! আমরা কোথায় বন্ধুত্ব করার জন্য তাকে প্রসংশা করলাম আর সে করল গালাগাল। শুধু গালাগালই নয়-- আক্রমণ করল আমাদের। এটা কোনো মানুষের কাজ? বিড়ালটা কোনো দিন মানুষ হবে না দেখছি।

ভোর রাত। পুতুলের মা-বাবা ঘুম থেকে উঠেছে। পুতুল ঘুমোচ্ছে। এই সময় শুরু হলো ভূমিকম্প। থালা-বাসন ও হান্ডি-পাতিল পড়তে লাগল এ-বাসা ও-বাসা থেকে। কাচের জানালা ভাঙার শব্দ হচ্ছিল দূরে। পুতুলের মা-বাবা কী করবে বুঝতে পারছিল না। ইঁদুরছানা দুটি ডাকতে লাগল বিড়ালকে। ‘বিড়াল মামা, বিড়াল মামা। দেখ ভূমিকম্প হচ্ছে। সিগগির এখানে চলে এসো। পিলারের নিচে।'

পুচকে ইঁদুরছানার কথা শুনে বিড়ালের গা জ্বলে। ভীষণ বিরক্ত হয় সে। ‘এত বড় সাহস! আমাকে বলিস তোদের কাছে যেতে। তোরা থাকিস নোংড়া চিপা-চাপায়। পিলারের নিচে। বুক সেল্ফের নিচে। ওখানে কোনো ভদ্রলোক যায়? যেতে...।’

বিড়াল মামা কথা শেষ করতে পারল না। দুম্ করে তার গায়ে পড়ল একটা সুটক্যাচ। অল্পের জন্য চাপা পড়েনি সে।

ইঁদুরছানাদের খুব মায়া হলো ওর প্রতি। অনুনয় করে বলল, 'বিড়াল মামা, এই বিপদের সময় মান-সম্মানের কথা ভেবো না। জান বাঁচাও আগে। বিপদ কেটে গেলে যা করার করো। এখন চলে এসো আমাদের কাছে। পিলারের নিচে। এই জায়গাটা নিরাপদ। চলে এসো মামা।' আরো একটা কী পড়তে যাচ্ছিল বিড়ালের মাথায়। কোনো রকমে নিজেকে বাঁচিয়ে বিড়াল আশ্রয় নিল ইঁদুরছানাদের পাশে। শক্ত পিলারের নিচে।

কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো পুতুলের মা-বাবাও আশ্রয় নিয়েছে সেখানে। পুতুল বিড়ালের গায়ে হাত বুলিয়ে দিল। ইঁদুর ছানা দুটিকেও হাতে নিয়ে আদর করল। মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। চিকন লেজ ধরে আদর করে টেনে দিল। বিড়ালটাও ফোস ফোস গোজ গোজ করল না। বিস্ময়ের সঙ্গে ওদের দেখতে লাগল। এখন পুতুলের দুই হাতে দুটি ইঁদুর ছানা। আর কোলের কাছে বিড়াল। কিছুক্ষণের মধ্যে নিশ্চয়ই কেটে যাবে বিপদ।

ad
ad

ফিচার থেকে আরও পড়ুন

নিম্নচাপ কেন হয়, এর বৈজ্ঞানিক কারণ কী

আবহাওয়াবিদদের ভাষায় নিম্নচাপ হলো একটি এমন আবহাওয়াগত পরিস্থিতি যেখানে বাতাসের চাপ চারপাশের তুলনায় কম হয়ে যায়। সাধারণত পৃথিবীর যেকোনো স্থানে বাতাস সবসময় উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয়।

১ দিন আগে

ব্যাটল অব হ্যাস্টিংসের ইতিহাস

ইংল্যান্ডের সিংহাসন তখন ছিল এক জটিল রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কেন্দ্র। ইংরেজ রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর ১০৬৬ সালের জানুয়ারিতে উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল—কে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হবেন? রাজ্যের প্রধান অভিজাতেরা হ্যারল্ড গডউইনসনকে রাজা ঘোষণা করলেন।

২ দিন আগে

খালি পেটে লেবু খাওয়া ক্ষতিকর!

সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনেকেই অভ্যাস বশে এক গ্লাস লেবু পানি খান। বিজ্ঞাপন আর স্বাস্থ্যবিষয়ক ম্যাগাজিনে এমন ধারণা ছড়িয়ে গেছে যে খালি পেটে লেবু খেলে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যায়, ওজন কমে, আবার হজমশক্তিও নাকি বাড়ে। কিন্তু আসলেই কি খালি পেটে লেবু খাওয়া এতটা উপকারী? বিজ্ঞানীরা বলছেন, লেবুর কিছু ভালো দিক

২ দিন আগে

কেন ভাদ্র মাসে তাল পাকে?

২ দিন আগে