ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনা সম্পর্কে কতটা জানা যাচ্ছে

বিবিসি বাংলা
গাজায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে

ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যা গাজায় তাদের যুদ্ধের তীব্রতা বাড়িয়েছে।

ফিলিস্তিনের এই শহরটি গাজা উপত্যকার উত্তরে এবং সেখানে লাখ লাখ মানুষ বাস করে।

ইসরায়েলের ভেতরেই এই পরিকল্পনা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। সামরিক কর্মকর্তা, জিম্মিদের পরিবার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকেও সমালোচনা আসছে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে বলেছেন, ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা করছে এবং শেষ পর্যন্ত এটি আরব শক্তিদের হাতে তুলে দেয়া হবে।

পরিকল্পনাটি অনুমোদিত হওয়ার আগে দেশটির সামরিক নেতৃত্ব ও বিরোধী দলও সতর্কতা উচ্চারণ করে বলছিল, গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মধ্যে এই পদক্ষেপ ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতেও ফেলবে।

পরিকল্পনার সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে

এই পরিকল্পনা বা 'যুদ্ধ অবসানের পাঁচ নীতি'তে আছে:

১. হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ

২. জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা

৩. গাজা উপত্যকার বেসামরিকীকরণ

৪. গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ

৫. হামাস বা ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে বাদ দিয়ে বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা

আইডিএফ বলেছে, যুদ্ধ এলাকার বাইরে বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক বাহিনী প্রস্তুত হবে।

তবে এই মানবিক সহায়তাও নতুন কিছু কি-না, কিংবা এগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা অন্য কোনো ব্যবস্থায় দেয়া হবে কি-না এর কিছুই পরিষ্কার নয়।

কেন শুধু গাজা শহর নেয়া হবে?

মন্ত্রিসভা বৈঠকের আগে নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি চান গাজার পুরোটাই ইসরায়েল নিয়ন্ত্রণে নিক।

তবে নতুন যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে শুধু গাজা শহরকেই রাখা হয়েছে।

ইসরায়েল বলেছে, তারা এখন গাজার ৭৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘের হিসেবে গাজার ৮৬ শতাংশ ভূখণ্ডই হয়তো সামরিক জোন কিংবা লোকজনকে সরে যাওয়ার আদেশের আওতায়।

শহরের নিয়ন্ত্রণটাই হয়তো গাজা উপত্যকা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রথম ধাপ হবে, বলছেন বিবিসি মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো বাচেগা।

আবার এই ধারণাও আছে যে, গাজা উপত্যকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার হুমকি আসলে হামাসের ওপর আলোচনায় ছাড়া দেয়ার জন্য চাপ তৈরির একটি কৌশল।

নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে বলেছেন, ইসরায়েল এটি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় না। তাদের লক্ষ্য হলো 'আরব শক্তিগুলো' হাতে ছেড়ে দেয়া।

কখন গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল?

নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কার্যক্রম কখন শুরু হবে, তা ইসরায়েল এখনো বলেনি। তবে দেশটির সংবাদ মাধ্যমে যেসব খবর এসেছে তাতে বলা হচ্ছে শহরের অধিবাসীদের আগে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন হবে বলে সামরিক বাহিনী এখনি গাজা শহরে যাবেনা।

দেশটি বলছে, হামাসকে পরাজিত করতে বা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এর বিকল্প কোনো পরিকল্পনা কাজে আসবে না বলেই তাদের বিশ্বাস।

যদিও বিকল্প পরিকল্পনা বলতে কি বোঝানো হয়েছে বা কারা এটি দিয়েছে সেটি পরিষ্কার করা হয়নি।

ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, দেশটির সেনাপ্রধানের কাছ থেকে আরেকটি সীমিত প্রস্তাব এসেছে।

বিবিসি চীফ ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্ট বলেছেন, নেতানিয়াহু আরব শক্তির কথা বললেও সেটি কারা তা ইচ্ছাকৃত অস্পষ্ট রেখেছেন।

তিনি হয়তো জর্ডান বা মিশরের কথা বলতে পারেন। তারা ইতোমধ্যেই বলেছে যে তারা ইসরায়েলের সাথে কাজ করতে চায়। তবে ইসরায়েলি দখলে সমর্থন যোগাতে তারা গাজায় যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

গাজার নিয়ন্ত্রণ-উত্তর সরকার নিয়েও কোনো সময়সীমা দেয়া হয়নি। ইসরায়েলের এ পরিকল্পনা সম্পর্কে হামাসের দিক থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।

কেমন প্রতিক্রিয়া আসছে

বিশ্ব নেতা ও জিম্মিদের পরিবারের দিক থেকে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে।

ইসরায়েলের সামরিক নেতৃত্বও বলছে যে, গাজায় তাদের কাজ শেষ, কারণ হামাস এখন আর সুসংগঠিত সামরিক শক্তি হিসেবে কোনো হুমকি নয় বলেই তারা মনে করে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ইসরায়েলের এই চিন্তাকে ভুল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি কেবল আরও রক্তপাত বয়ে আনবে।

গাজায় সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণকে 'যুদ্ধাপরাধের ঘোষণা' হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্যালেস্টানিয়ান ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা বারঘৌতি।

ওদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন 'ফিলিস্তিনিদের নিজের ভূমি থেকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করাই হলো' ইসরায়েলের লক্ষ্য।

ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিনা ভালটোনেন দ্রুত যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

অস্ট্রেলিয়াও সংযত হওয়ার আহবান জানিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি উং বলেছেন গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়া কেবল গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যয়কর করে তুলবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক বলেছেন, গাজা যুদ্ধের এখনি অবসান হওয়া উচিত। তার মতে, আরও উত্তেজনা বৃদ্ধি কেবল আরও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া, আরও হত্যা, আরও দুর্ভোগ ও ধ্বংস আর নিষ্ঠুর অপরাধ বাড়াবে।

জিম্মিদের পরিবারের যেই ফোরাম তারা বলেছে, 'এই সিদ্ধান্ত জিম্মি ও আমাদের সৈন্যদের বড় বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে'।

এদিকে কিছু সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে যেখানে বলা হচ্ছে আমেরিকা নেতানিয়াহুকে গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দিকে এগিয়ে যেতে সবুজ সংকেত দিয়েছে।

তবে সম্প্রতি এনবিসি নিউজ ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের খবর দিয়েছে। ট্রাম্প অবশ্য একে 'ফেইক নিউজ' বলেছেন।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ট্রাম্প এবার বসছেন জেলেনস্কির সঙ্গে, থাকছেন ইউরোপীয় মিত্ররাও

ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারসহ আরও কয়েকজন নেতা ওয়াশিংটনে জেলেনস্কির সঙ্গে যোগ দেবেন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আয়োজিত এই বৈঠকে।

২০ ঘণ্টা আগে

যুদ্ধ থামাতে ক্রিমিয়া ও ন্যাটো ছাড়তে হবে ইউক্রেনকে: ট্রাম্প

পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চাইলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে পারেন, অথবা লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন।

২১ ঘণ্টা আগে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৪৭ জন নিহত, অনাহারে আরও ৭ জনের মৃত্যু

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে ।

১ দিন আগে

গাজাবাসীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরজা বন্ধ

প্যালেস্টাইন চিলড্রেন্স রিলিফ ফান্ড বলছে, বিদেশে চিকিৎসা প্রকল্পের আওতায় তারা ২০২৪ সালে গাজা থেকে ১৬৯ জন শিশুকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে নিয়েছে পরিচর্যার জন্য।

১ দিন আগে