অরুণাভ বিশ্বাস
িশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও আলোচিত সংঘাতগুলোর একটি হলো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট। এই সংকটের মূল শিকড় খুঁজতে গেলে যেতে হয় ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় এবং তারও আগে ব্রিটিশ শাসনের যুগে। ইতিহাসের এক বিশেষ মোড় ঘুরিয়ে, বিদেশি পরাশক্তির জটিল রাজনীতি ও সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার জালে গুটিয়ে ফেলে একটি জাতিকে তাদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করা হয়। সেই দেশটির নাম ফিলিস্তিন, আর সেখানেই গড়ে ওঠে আজকের ইসরায়েল রাষ্ট্র। এ ইতিহাস শুধু ভূমি দখলের নয়, বরং এটি মানবতার, অন্যায়ের এবং এক জাতির দুর্ভোগের দীর্ঘ গাথা।
সবকিছু শুরু হয় উনিশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপে ‘জায়নবাদ’ নামক একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনার মধ্য দিয়ে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইহুদি জনগণের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করা। অস্ট্রিয়ান সাংবাদিক থিওডর হার্জল ১৮৯৬ সালে Der Judenstaat নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি বলেন, “ইহুদি জাতির জন্য একমাত্র মুক্তির পথ হলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।” এই ধারণা থেকেই গড়ে ওঠে জায়নিস্ট কংগ্রেস, যারা শুরুতে পূর্ব ইউরোপ বা আফ্রিকার কোনো অংশে ইহুদি রাষ্ট্র গড়ার কথা ভাবলেও, পরে ফিলিস্তিনকেই চূড়ান্ত গন্তব্য হিসেবে বেছে নেয়—কারণ এটি ছিল ‘বাইবেলের ভূমি’।
তখন ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা অটোমানদের পরাজিত করে এই অঞ্চল দখল করে নেয় এবং ১৯১৭ সালে “বেলফোর ঘোষণা” দেয়। ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর এই ঘোষণায় বলেন, “ব্রিটিশ সরকার ইহুদি জনগণের জন্য ফিলিস্তিনে একটি জাতীয় আবাসভূমি গঠনের পক্ষে।” অথচ তখন ফিলিস্তিনে প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ ছিল আরব মুসলমান ও খ্রিস্টান, আর মাত্র ১০ শতাংশ ইহুদি। অর্থাৎ যে ভূমিতে একটি জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে বাস করছে, সেখানে বাইরের জনগণকে এনে রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়।
এই ঘোষণা পরবর্তীতে দুঃসহ পরিণতি ডেকে আনে। ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিল ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনের অধীন। এই সময় জায়নিস্টরা ইউরোপ থেকে লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে ফিলিস্তিনে এনে বসতি স্থাপন করায়। অনেক ক্ষেত্রে জমি কিনে, আবার অনেক ক্ষেত্রে জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে তারা বসতি গড়ে তোলে। ফলে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়, ঘটে দাঙ্গা ও বিদ্রোহ।
১৯৩৬-৩৯ সালের আরব বিদ্রোহ ব্রিটিশদের শাসনের বিরুদ্ধে এক বড় প্রতিরোধ ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ ও জায়নিস্ট মিলিতভাবে এই বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করে। এ সময় ইহুদি গোপন সামরিক বাহিনী “হাগানা” এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী “ইরগুন” ও “স্টার্ন গ্যাং” গড়ে ওঠে, যারা পরে ফিলিস্তিনের আরবদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়। মার্কিন ইতিহাসবিদ ইলান পাপে তাঁর বই "The Ethnic Cleansing of Palestine"–এ লিখেছেন, “ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জায়নিস্টরা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে আরবদের নির্মূল করার নীতি গ্রহণ করেছিল।” তাঁর মতে, এটি ছিল একটি জাতিগত শুদ্ধি অভিযান।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যার নাম “UN Partition Plan for Palestine।” এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়—একটি ইহুদিদের জন্য, অন্যটি আরবদের জন্য। অথচ ইহুদিরা তখনও ভূখণ্ডের এক-তৃতীয়াংশেরও কমে বসবাস করছিল, কিন্তু তাদের ৫৫% জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনিরা স্বাভাবিকভাবেই এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। আর জায়নিস্টরা তা মেনে নেয়।
পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ১৪ মে, ইহুদিরা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এর ঠিক পরদিন আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যাকে বলা হয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইসরায়েল সামরিক দিক থেকে এগিয়ে ছিল, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়। যুদ্ধের সময় জায়নিস্ট বাহিনী প্রায় ৫০০টি ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করে দেয় এবং ৭ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করে—এ ঘটনাকে বলা হয় “নাকবা” বা বিপর্যয়।
এই ব্যাপারে ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ বেনি মোরিস বলেন, “যুদ্ধের সময় আরবদের বিতাড়ন ছিল ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত এবং কখনো কখনো ভয়ঙ্কর সহিংসতায় পূর্ণ। এটি জায়নিস্ট রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়।” তিনি তাঁর গবেষণায় প্রমাণ দিয়েছেন যে ফিলিস্তিনি নারী-শিশুরাও এই সহিংসতার শিকার হয়েছিল। অথচ পশ্চিমা বিশ্ব তখন এই ঘটনাগুলো উপেক্ষা করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে ব্যস্ত ছিল।
ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর যে ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে যায়, তারা এখনও বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া ও গাজা অঞ্চলে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদের অধিকাংশই আজও নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি। ফিলিস্তিনিরা আজও জাতিসংঘের ১৯৪ নম্বর রেজুলুশনের অধীনে স্বদেশে ফেরার অধিকার দাবি করলেও ইসরায়েল তা অস্বীকার করে আসছে।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। পশ্চিমা বিশ্বের অনেকে ইহুদি জনগণের ওপর হিটলারের চালানো গণহত্যার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই দায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কতটা ন্যায্য—এই প্রশ্ন এখনও জ্বলন্ত। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ আভা এল্ডার বলছেন, “ইউরোপের অপরাধবোধ ফিলিস্তিনিদের ভূমি হারানোর কারণ হতে পারে না। এই ইতিহাস এক ধরনের নব্য-সাম্রাজ্যবাদেরই রূপ।”
আজকের ফিলিস্তিন সংকটের মূল শিকড় তাই এই ১৯৪৮ সালের ঘটনায়। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি কোনো শূন্য জায়গায়; সেটি গড়ে উঠেছে অন্য একটি জীবিত জাতিকে তাড়িয়ে দিয়ে, তাদের জমি দখল করে, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। সেই দুঃখ, সেই অভিমান এখনও বহন করছে ফিলিস্তিনিরা। শতাব্দীর পর শতাব্দী যে ভূখণ্ডে তারা বাস করেছে, সেখানে তারা আজ পরবাসী। আর ইসরায়েল সেখানে নিজের অস্তিত্বকে বৈধ করার জন্য একের পর এক উপনিবেশ গড়ছে।
এই ইতিহাস শুধু এক দেশের জন্মের কাহিনি নয়; এটি একটি জাতির দুঃখের ইতিহাস, যা এখনও প্রতিদিন গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে রক্তাক্ত হয়ে উঠছে। যেভাবে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো—তা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে কেবল ভূখণ্ডের মানচিত্র নয়, বরং ইতিহাসের গভীরতাও। কারণ, ইতিহাস ভুলে গেলে আজকের অন্যায়কে ন্যায্য বলে ভুল করে ফেলতে পারি। আর ইতিহাস স্মরণেই নিহিত আছে ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা।
িশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও আলোচিত সংঘাতগুলোর একটি হলো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট। এই সংকটের মূল শিকড় খুঁজতে গেলে যেতে হয় ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় এবং তারও আগে ব্রিটিশ শাসনের যুগে। ইতিহাসের এক বিশেষ মোড় ঘুরিয়ে, বিদেশি পরাশক্তির জটিল রাজনীতি ও সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনার জালে গুটিয়ে ফেলে একটি জাতিকে তাদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করা হয়। সেই দেশটির নাম ফিলিস্তিন, আর সেখানেই গড়ে ওঠে আজকের ইসরায়েল রাষ্ট্র। এ ইতিহাস শুধু ভূমি দখলের নয়, বরং এটি মানবতার, অন্যায়ের এবং এক জাতির দুর্ভোগের দীর্ঘ গাথা।
সবকিছু শুরু হয় উনিশ শতকের শেষ দিকে ইউরোপে ‘জায়নবাদ’ নামক একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনার মধ্য দিয়ে। এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইহুদি জনগণের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করা। অস্ট্রিয়ান সাংবাদিক থিওডর হার্জল ১৮৯৬ সালে Der Judenstaat নামে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি বলেন, “ইহুদি জাতির জন্য একমাত্র মুক্তির পথ হলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।” এই ধারণা থেকেই গড়ে ওঠে জায়নিস্ট কংগ্রেস, যারা শুরুতে পূর্ব ইউরোপ বা আফ্রিকার কোনো অংশে ইহুদি রাষ্ট্র গড়ার কথা ভাবলেও, পরে ফিলিস্তিনকেই চূড়ান্ত গন্তব্য হিসেবে বেছে নেয়—কারণ এটি ছিল ‘বাইবেলের ভূমি’।
তখন ফিলিস্তিন ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা অটোমানদের পরাজিত করে এই অঞ্চল দখল করে নেয় এবং ১৯১৭ সালে “বেলফোর ঘোষণা” দেয়। ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার বেলফোর এই ঘোষণায় বলেন, “ব্রিটিশ সরকার ইহুদি জনগণের জন্য ফিলিস্তিনে একটি জাতীয় আবাসভূমি গঠনের পক্ষে।” অথচ তখন ফিলিস্তিনে প্রায় ৯০ শতাংশ জনগণ ছিল আরব মুসলমান ও খ্রিস্টান, আর মাত্র ১০ শতাংশ ইহুদি। অর্থাৎ যে ভূমিতে একটি জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে বাস করছে, সেখানে বাইরের জনগণকে এনে রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়।
এই ঘোষণা পরবর্তীতে দুঃসহ পরিণতি ডেকে আনে। ১৯২০ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিল ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনের অধীন। এই সময় জায়নিস্টরা ইউরোপ থেকে লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে ফিলিস্তিনে এনে বসতি স্থাপন করায়। অনেক ক্ষেত্রে জমি কিনে, আবার অনেক ক্ষেত্রে জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে তারা বসতি গড়ে তোলে। ফলে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়, ঘটে দাঙ্গা ও বিদ্রোহ।
১৯৩৬-৩৯ সালের আরব বিদ্রোহ ব্রিটিশদের শাসনের বিরুদ্ধে এক বড় প্রতিরোধ ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ ও জায়নিস্ট মিলিতভাবে এই বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করে। এ সময় ইহুদি গোপন সামরিক বাহিনী “হাগানা” এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী “ইরগুন” ও “স্টার্ন গ্যাং” গড়ে ওঠে, যারা পরে ফিলিস্তিনের আরবদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায়। মার্কিন ইতিহাসবিদ ইলান পাপে তাঁর বই "The Ethnic Cleansing of Palestine"–এ লিখেছেন, “ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জায়নিস্টরা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং পরিকল্পিতভাবে আরবদের নির্মূল করার নীতি গ্রহণ করেছিল।” তাঁর মতে, এটি ছিল একটি জাতিগত শুদ্ধি অভিযান।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যার নাম “UN Partition Plan for Palestine।” এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়—একটি ইহুদিদের জন্য, অন্যটি আরবদের জন্য। অথচ ইহুদিরা তখনও ভূখণ্ডের এক-তৃতীয়াংশেরও কমে বসবাস করছিল, কিন্তু তাদের ৫৫% জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনিরা স্বাভাবিকভাবেই এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে। আর জায়নিস্টরা তা মেনে নেয়।
পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ১৪ মে, ইহুদিরা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এর ঠিক পরদিন আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, যাকে বলা হয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইসরায়েল সামরিক দিক থেকে এগিয়ে ছিল, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়। যুদ্ধের সময় জায়নিস্ট বাহিনী প্রায় ৫০০টি ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করে দেয় এবং ৭ লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করে—এ ঘটনাকে বলা হয় “নাকবা” বা বিপর্যয়।
এই ব্যাপারে ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ বেনি মোরিস বলেন, “যুদ্ধের সময় আরবদের বিতাড়ন ছিল ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত এবং কখনো কখনো ভয়ঙ্কর সহিংসতায় পূর্ণ। এটি জায়নিস্ট রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়।” তিনি তাঁর গবেষণায় প্রমাণ দিয়েছেন যে ফিলিস্তিনি নারী-শিশুরাও এই সহিংসতার শিকার হয়েছিল। অথচ পশ্চিমা বিশ্ব তখন এই ঘটনাগুলো উপেক্ষা করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে ব্যস্ত ছিল।
ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার পর যে ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে যায়, তারা এখনও বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া ও গাজা অঞ্চলে উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদের অধিকাংশই আজও নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি। ফিলিস্তিনিরা আজও জাতিসংঘের ১৯৪ নম্বর রেজুলুশনের অধীনে স্বদেশে ফেরার অধিকার দাবি করলেও ইসরায়েল তা অস্বীকার করে আসছে।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। পশ্চিমা বিশ্বের অনেকে ইহুদি জনগণের ওপর হিটলারের চালানো গণহত্যার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই দায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কতটা ন্যায্য—এই প্রশ্ন এখনও জ্বলন্ত। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ আভা এল্ডার বলছেন, “ইউরোপের অপরাধবোধ ফিলিস্তিনিদের ভূমি হারানোর কারণ হতে পারে না। এই ইতিহাস এক ধরনের নব্য-সাম্রাজ্যবাদেরই রূপ।”
আজকের ফিলিস্তিন সংকটের মূল শিকড় তাই এই ১৯৪৮ সালের ঘটনায়। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি কোনো শূন্য জায়গায়; সেটি গড়ে উঠেছে অন্য একটি জীবিত জাতিকে তাড়িয়ে দিয়ে, তাদের জমি দখল করে, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। সেই দুঃখ, সেই অভিমান এখনও বহন করছে ফিলিস্তিনিরা। শতাব্দীর পর শতাব্দী যে ভূখণ্ডে তারা বাস করেছে, সেখানে তারা আজ পরবাসী। আর ইসরায়েল সেখানে নিজের অস্তিত্বকে বৈধ করার জন্য একের পর এক উপনিবেশ গড়ছে।
এই ইতিহাস শুধু এক দেশের জন্মের কাহিনি নয়; এটি একটি জাতির দুঃখের ইতিহাস, যা এখনও প্রতিদিন গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে রক্তাক্ত হয়ে উঠছে। যেভাবে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো—তা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে কেবল ভূখণ্ডের মানচিত্র নয়, বরং ইতিহাসের গভীরতাও। কারণ, ইতিহাস ভুলে গেলে আজকের অন্যায়কে ন্যায্য বলে ভুল করে ফেলতে পারি। আর ইতিহাস স্মরণেই নিহিত আছে ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় আরও অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। শুক্রবার (২৭ জুন) আল জাজিরার লাইভে এ তথ্য জানানো হয়।
২১ ঘণ্টা আগেশাহ আধুনিকতা ও উন্নয়নের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি চান ইরান যেন একটি পশ্চিমা ধাঁচের উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এ উদ্দেশ্যে তিনি চালু করেন "হোয়াইট রেভল্যুশন" নামে এক সিরিজ সংস্কার কর্মসূচি।
১ দিন আগেইরানের মতো একটি মহান দেশ ও জাতির জন্য, আত্মসমর্পণের কথা বলাই অপমান জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইরানী জাতি সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল। ইরানীরা বিশিষ্ট চরিত্র প্রদর্শন করে দেখিয়েছে যে, প্রয়োজনে, এই জাতির পক্ষ থেকে একক কণ্ঠস্বর শ
২ দিন আগে