জান্নাতুল বাকেয়া কেকা
অখণ্ড ভারতবর্ষে দু শ বছরের গোলামির জিঞ্জির পরাতে আরব সাগরের তীরে ভিড়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লাল ফৌজের ব্রিটিশ বেনিয়ারা। বণিকেরা বিকিকিনির অজুহাতে প্রবেশ করে পুরো ভারতবর্ষে সাম্রাজ্যবাদের নখরে গিলে নিয়েছিল রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনৈতিক কাঠামো। বিশ্বের দেশে দেশে ঔপনিবেশিক প্রভুদের তৎপরতা ছড়িয়েছিল এই বাণিজ্যিক প্রভু বণিকদের হাত ধরেই।
হালের সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশবাদের নয়া কৌশলে দাবার ছকের নতুন গুটি জর্জ সোরেসের ‘ডিপ স্টেট’! এ কালের কাবলিওয়ালারা আক্রান্ত নিজ দেশীয় দোসরদের মাধ্যমেই সেই সাম্রাজবাদের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে দেশে দেশে। আর ডিপ স্টেটের প্রভুরা দেশীয় দোসরদের ব্যবহারের পর কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়ে। তবে ততদিনে সাড়ে সর্বনাশ যা হওয়ার, তার ষোল কলা পূর্ণ হবে আক্রান্ত দেশে, আম জনতার ভাগ্যে নেমে আসবে পরাধীনতা।
ব্যবসা ভূমির স্বত্ব আর মালিকানা হারিয়ে নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত হবে জনমানুষের ভাগ্য। যদিও একটি অংশের মানুষের মগজ ধোলাইয়ে ব্যবহৃত মরফিনের ঘোর কেটে গেলে নিজের পশ্চাৎদেশ নিজেরাই থাপড়াবেন। এর আগেই যদি মোহ কেটে সচেতন হোন, তবেই না মুক্তির দেখা মিলবে। তাই বলি কী, দেশ মানে মানবের মা, মাটি আর জন্ম ও মৃত্যুর ঠিকনা।
আমার গভীর বিশ্বাস, মানুষ হিসেবে সব ভালো কেউ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হতে পারে না। হওয়া উচিত নয়। জীবনের গভীর জলতরঙ্গের নিরবে-নিভৃতে বইছে জগৎ-সংসারের সবার সম্মিলিত কল্যাণ। সুখ-আনন্দ আর বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার— খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা এবং হালের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা। তবে সেই চিন্তার স্বাধীনতা যেন সমাজ ও রাষ্ট্রের আর কোনো জনগোষ্ঠীর মত ও মতাদর্শে ন্যূনতম আঘাত না করে।
জীবনের গভীর এমন সব মর্মার্থ ভুলে পুরো জগৎ সংসার কেন একলা ভোগ বিলাসের জীবনে মেতেছে? সেখান থেকেই শুরু হয়েছে দেশে-দেশে,রাষ্ট্রে-সমাজে অস্থিরতা। এই ভোগী-বিলাসী একক ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনের রাশ টেনে ধরা উচিত।
ব্যক্তি-গোষ্ঠীর দখলে থাকা মৌলিক নীতির সূচকগুলো জনমানুষের সবার জন্য নিশ্চিত করা গেলই রাষ্ট্র-সমাজে এবং দেশে দেশে অস্থিরতা কমবে। তবে ব্যক্তির ভোগ-লিপ্সায় রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঁধে আজ যে যুদ্ধের জোয়াল চেপে বসেছে, সেই জগদ্দল পাথরে চাপা মানবিকতাকে উদ্ধার করার দায় ব্যক্তি-গোষ্ঠীরই।
এ ধারায় একজন নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং, চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতৃত্বের প্রয়োজন। অদ্ভুত হলেও সত্য, গত অর্ধ শতকে তাদের মতো মানবতাকামী জনমানুষের মুক্তির জননায়ক পুরো বিশ্বেই খুব বেশি আসেননি। বলা চলে, দেশে দেশে উদার ও জীবনের গভীর অর্থের ভাব পড়তে পারা জনমানুষের কণ্ঠস্বর, মানবিক মননের চিন্তাশীল নেতার জন্ম হয়নি।
চলতি শতাব্দীতে বিশ্বের দেশে দেশে জন্ম হয়েছে ধনিক শ্রেণির মেধাবী একেকজন আইকন— বিল গেটস, জ্যাক মা, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ। তারা সবাই মেধা, উদ্ভাবন, সৃজনশীলতায় অনন্য। কিন্তু তারা সবাই-ই বণিক।
এদের কল্যাণে বিশ্বে প্রযুক্তির সুপার সব পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লক চেইন, ইন্টারনেট অব থিংক (আইওটি), ডেটা সায়েন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিআরের (ভার্চুয়াল রিয়ালিটি) মতো প্রযুক্তির অভাবনীয় প্রসার ঘটেছে, যা মানুষের জীবন-জীবিকা ও চিন্তার প্যার্টান বদলে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের জয়ে গতি পেয়েছে প্রগতি। তবে মানুষের আবেগ, আনন্দ ও জীবনবোধে এতটাই ধাক্কা লেগেছে যে মানুষ তার সহজাত বুদ্ধিবৃত্তিক মানবিক সত্ত্বা প্রায় হারাতে বসেছে! তা না হলে যে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মানুষের অমরত্বের পেছনে গবেষণায় অর্থ জোগাচ্ছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক, সেই তিনি কেন জীবন্ত মানুষের কদর বুঝতে চান না?
কেন আজ বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস মারণাস্ত্র? সেসব দেশের অর্থনীতিতে জিডিপি বা মূল আয়ের জোগান কেন আসে মারণাস্ত্র বেচে? দ্বিচারী মানুষ— একদিকে অমরত্বের সন্ধানে সিন্ধু সেচে মুক্তো খোঁজার পালে হন্যে হয়ে বিনিয়োগ করছে, ঠিক ৯০ ডিগ্রি বিপরীতে এই সৃষ্টির সেরা জীবই মানবকে মারার জন্য প্রযুক্তির সর্বশেষ উত্তরণে গড়ছে মানব ধ্বংসের লীলা, লাস্যের সেই ঘাতক পারমাণবিক মারণাস্ত্র। এটা কি ভাবা যায়!
গত এক শতাব্দীতে এর বিপরীতে কোনো মানবিক জীবন ও জগৎ-সংসারের মায়াবী প্রেমের বুনিয়াদি ঘোরে কোনো নেতা, চিন্তাশীল প্রযুক্তিবিদ কিংবা রাষ্ট্রনায়কের জন্ম হলো না। বরং নিছক ব্যবসায়িক চিন্তাধর বিশ্ব ধনভাণ্ডারের রথি-মহারথিরা হচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক। আর এ কারণে হামলে, জোর করে লুটে নেওয়ার নয়া কৌশলে উপনিবেশিক প্রভুদের তৎপরতা আজ বিশ্বময়।
তারা মূলত তিনটি পদ্ধতিতে অস্ত্রের বাজার বিকোতে তাদের তাবৎ রাষ্ট্রীয় নীতির গুটি সাজিয়ে রাজা-উজির আর ঘোড়ার চাল দিচ্ছে। প্রথমত, যারা একদিকে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে নিজেদের মূল অর্থ-কড়ি উৎপাদনের মারণাস্ত্রের বিকিকিনি বাজার নিশ্চিত করছে। দ্বিতীয়ত, এর জন্য পররাষ্ট্রনীতিতে খু্ব অভিজাত প্রক্রিয়ায় বিশ্বের দেশগুলোকে অস্ত্র কিনতে উদ্বুদ্ধ করছে। তৃতীয়ত, খুব জঘন্য এক প্রক্রিয়ায় ডিপ স্টেটের তত্ত্ব দিয়ে দেশে দেশে সরকার উৎখাতের নয়া তরিকা নিয়ে ঘুরছে।
সাম্রাজ্যবাদের এ কালের কাবুলিওয়ালারা মেতেছে ঘৃণ্য এক নীতি-নৈতিকতাহীন স্বাধীন সব দেশের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের খুবলে খাওয়া নীতিতে। অপেক্ষাকৃত সীমিত সম্পদ আর বিপুল জনগণের ‘যত মত তত পথে’র জনগোষ্ঠীর দেশগুলোতে উসকে দিচ্ছে আবেগের আস্ফালন। গণতন্ত্রের তরিকা বাতলে মানবিকতার নয়া নখরের থাবা দেখিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোতে বিভাজনের নোংরা খেলায় মেতেছে।
এ কালের কাবলিওয়ালা দেশের অভ্যন্তরে থাকা ‘সোসাইটি কাক’দের জড়ো করতে ডেকে ডেকে ভাত ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে জনমানুষের আবেগ ক্যাচ করে মুনাফেকি কৌশলে সেই উড়ে এসে জুড়ে বসা কাকেরা শৃঙ্খলার গণ্ডি ভেদ করে অরাজকতা আর নৈরাজ্যের ত্রাস ছড়াচ্ছে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাঠামো নয়ছয় করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং দেশের মানুষের মধ্যেও বিভাজন ও দ্বিমতের ব্যবধান গড়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে।
ঘৃণিত এ কাজে ডিপ স্টেটের তল্পিবাহক জর্জ সোরোস, নিজ ভূখণ্ডে বসে নিজ দেশের মানুষে-মানুষে, ধর্ম বিশ্বাস, দলমত আর রাজনৈতিক আর্দশের পার্থক্যের স্বাভাবিক দ্বন্দ্বের দৈত্য রূপ দিচ্ছেন। এতে মানুষে মানুষে বিভাজন ও মতপার্থক্য যত বাড়বে ততই দেশে দেশে ‘ছায়া সরকারে’র নগ্ন ছোবল সহজ হবে, সহজ হবে একেকটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নাক গলানো।
স্থানীয় ব্যবসা আর ব্যবসায়ীদের ধরাশায়ী করে ভিনদেশি বেনিয়ারা হাতিয়ে নেবে আরেক দেশের ব্যবসা, বন্দর, শিল্প খাতের নানা জোগানদাতা অর্থকরী সহায় ও সম্পদ। তাই তো ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ শোনা যায়।
সম্প্রতি বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল তেমনই এক আর্তনাদ করে বলেন, ১৯৭১ সালে যেভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে সেভাবে এখন দেশের ব্যবসায়ীদের মেরে ফেলা হচ্ছে। শিল্পে গ্যাস নেই, একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু উপদেষ্টারা মনে হয় উটপাখির মতো বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে আছেন, কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে, মানুষ রাস্তায় নামবে। অথচ সাধারণ মানুষ এখনো বিভক্ত রাজনৈতিক আদর্শিক নানান মতাদর্শে। একদল ভাবছে, এর আগে কোনোদিন ক্ষমতার এত কাছাকাছি যাওয়া হয়নি। সুতারং এবার সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করার নয়। আরেক দল ভাবছে, তারা ১৭ বছর ধরে বঞ্চিত। সুতরাং তাদেরই ক্ষমতায় যাওয়া উচিত।
মাঝখানে জর্জ সোরেসের পুতুলরা ছায়ার সহযাত্রী হয়ে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ব্যবসা, ভূরাজনৈতিক কৌশলের সবটাই দখলে নিয়ে নিলে ওই দেশটির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আগের সেই সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশের মতো জাহাজে চড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেভাবে অবিভক্ত ভারতে তাদের দুই শ বছরের সাম্রাজ্যবাদী নখর বসিয়েছিল, জর্জ সোরোসের ছায়া সরকার সেই কৌশলেরই নয়া রূপ।
দুঃখ ও বেদনাভারের পাথরে জগদ্দল আরেক পাথর এই, জর্জ সোরোসরা কখনোই ভুল করে না। তারা তাদের নয়া নকশায় মূল সৈনিক হিসেবে দাবার ঘুঁটিতে এ দেশেরই নানা বুদ্ধিবৃত্তিক মুখোশের আড়ালে যাদের একাধিক মুখ, তাদেরই দায়িত্ব দিয়েছে। মীর জাফরের বংশধর হয়ে আজকের নয়া প্রজন্মের অনেকেই, অনেক গুণী বোদ্ধা, আপাত ব্যক্তিত্ববান, ক্ষুরধার মেধাবী এবং সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক আমলা বিচারপতি, লেখক-সাংবাদিকরা জর্জ সোরোসের বাম হাত হয়ে শক্তি জোগাচ্ছে বর্হিশক্তিকে; যারা সাময়িক কোনো লাভে ডিপ স্টেটের ঘৃণিত ভারবাহী লোহা বইছে!
আজ হয়তো তারা অর্থবিত্ত, উন্নত দেশের অভিবসানের প্রত্যাশায় কিংবা নিছক মগজ ধোলায়ের শিকার হয়ে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়ছে। তবে হাতের ময়লা অর্থ একদিন ফুরিয়ে আসবে। মগজ ধোলাইয়ে ব্যবহৃত মস্তিষ্কের মরফিনের ডোজের নেশাও টুটে আসবে। তখন কিন্তু বিশাল শূন্যতা, অপরাধবোধের আগ্রাসী থাবার নিজের অন্তঃপুরের দশা হবে আত্মহননের। কেননা এ কালের ডিপ স্টেটের কাবুলিওয়ালা সে কালের কাবুলিওয়ালা নয়, যারা মিমুর মত এক ছোট্টো শিশুর মাথায় মানবিকতার ফেরিওয়ালা।
এ কালের কাবুলিওয়ালা ডিপ স্টেটের মাফিয়ারা দেশীয় দোসরদের ব্যবহার শেষে ছুড়ে দেবে ডাস্টবিনে। মরফিনের নেশাটা যদি খানিক টুটেও আসে, তবে তো কেল্লাফতে। তখন আর বনের বাঘের প্রয়োজন হবে না, ‘মনের বাঘ’ই খেয়ে ফেলবে।
এমন নজির এরই মধ্যে বিশ্বের নানা দেশে মিলেছে। ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিশর, লিবিয়া, ইরাক, ইরান— সব দেশেই এমন নজির ভুরি ভুরি! তাই সময় থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝুন। দেশ ও দেশের মানুষের ধ্বংসের কারণ না হয়ে ফিরে চলুন মাটি ও মানবিক জগৎ সংসারে!
লেখক: গবেষক ও লেখক
অখণ্ড ভারতবর্ষে দু শ বছরের গোলামির জিঞ্জির পরাতে আরব সাগরের তীরে ভিড়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লাল ফৌজের ব্রিটিশ বেনিয়ারা। বণিকেরা বিকিকিনির অজুহাতে প্রবেশ করে পুরো ভারতবর্ষে সাম্রাজ্যবাদের নখরে গিলে নিয়েছিল রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনৈতিক কাঠামো। বিশ্বের দেশে দেশে ঔপনিবেশিক প্রভুদের তৎপরতা ছড়িয়েছিল এই বাণিজ্যিক প্রভু বণিকদের হাত ধরেই।
হালের সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশবাদের নয়া কৌশলে দাবার ছকের নতুন গুটি জর্জ সোরেসের ‘ডিপ স্টেট’! এ কালের কাবলিওয়ালারা আক্রান্ত নিজ দেশীয় দোসরদের মাধ্যমেই সেই সাম্রাজবাদের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে দেশে দেশে। আর ডিপ স্টেটের প্রভুরা দেশীয় দোসরদের ব্যবহারের পর কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়ে। তবে ততদিনে সাড়ে সর্বনাশ যা হওয়ার, তার ষোল কলা পূর্ণ হবে আক্রান্ত দেশে, আম জনতার ভাগ্যে নেমে আসবে পরাধীনতা।
ব্যবসা ভূমির স্বত্ব আর মালিকানা হারিয়ে নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত হবে জনমানুষের ভাগ্য। যদিও একটি অংশের মানুষের মগজ ধোলাইয়ে ব্যবহৃত মরফিনের ঘোর কেটে গেলে নিজের পশ্চাৎদেশ নিজেরাই থাপড়াবেন। এর আগেই যদি মোহ কেটে সচেতন হোন, তবেই না মুক্তির দেখা মিলবে। তাই বলি কী, দেশ মানে মানবের মা, মাটি আর জন্ম ও মৃত্যুর ঠিকনা।
আমার গভীর বিশ্বাস, মানুষ হিসেবে সব ভালো কেউ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হতে পারে না। হওয়া উচিত নয়। জীবনের গভীর জলতরঙ্গের নিরবে-নিভৃতে বইছে জগৎ-সংসারের সবার সম্মিলিত কল্যাণ। সুখ-আনন্দ আর বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার— খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা এবং হালের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা। তবে সেই চিন্তার স্বাধীনতা যেন সমাজ ও রাষ্ট্রের আর কোনো জনগোষ্ঠীর মত ও মতাদর্শে ন্যূনতম আঘাত না করে।
জীবনের গভীর এমন সব মর্মার্থ ভুলে পুরো জগৎ সংসার কেন একলা ভোগ বিলাসের জীবনে মেতেছে? সেখান থেকেই শুরু হয়েছে দেশে-দেশে,রাষ্ট্রে-সমাজে অস্থিরতা। এই ভোগী-বিলাসী একক ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনের রাশ টেনে ধরা উচিত।
ব্যক্তি-গোষ্ঠীর দখলে থাকা মৌলিক নীতির সূচকগুলো জনমানুষের সবার জন্য নিশ্চিত করা গেলই রাষ্ট্র-সমাজে এবং দেশে দেশে অস্থিরতা কমবে। তবে ব্যক্তির ভোগ-লিপ্সায় রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঁধে আজ যে যুদ্ধের জোয়াল চেপে বসেছে, সেই জগদ্দল পাথরে চাপা মানবিকতাকে উদ্ধার করার দায় ব্যক্তি-গোষ্ঠীরই।
এ ধারায় একজন নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং, চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতৃত্বের প্রয়োজন। অদ্ভুত হলেও সত্য, গত অর্ধ শতকে তাদের মতো মানবতাকামী জনমানুষের মুক্তির জননায়ক পুরো বিশ্বেই খুব বেশি আসেননি। বলা চলে, দেশে দেশে উদার ও জীবনের গভীর অর্থের ভাব পড়তে পারা জনমানুষের কণ্ঠস্বর, মানবিক মননের চিন্তাশীল নেতার জন্ম হয়নি।
চলতি শতাব্দীতে বিশ্বের দেশে দেশে জন্ম হয়েছে ধনিক শ্রেণির মেধাবী একেকজন আইকন— বিল গেটস, জ্যাক মা, স্টিভ জবস, মার্ক জাকারবার্গ। তারা সবাই মেধা, উদ্ভাবন, সৃজনশীলতায় অনন্য। কিন্তু তারা সবাই-ই বণিক।
এদের কল্যাণে বিশ্বে প্রযুক্তির সুপার সব পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয়েছে। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লক চেইন, ইন্টারনেট অব থিংক (আইওটি), ডেটা সায়েন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিআরের (ভার্চুয়াল রিয়ালিটি) মতো প্রযুক্তির অভাবনীয় প্রসার ঘটেছে, যা মানুষের জীবন-জীবিকা ও চিন্তার প্যার্টান বদলে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের জয়ে গতি পেয়েছে প্রগতি। তবে মানুষের আবেগ, আনন্দ ও জীবনবোধে এতটাই ধাক্কা লেগেছে যে মানুষ তার সহজাত বুদ্ধিবৃত্তিক মানবিক সত্ত্বা প্রায় হারাতে বসেছে! তা না হলে যে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মানুষের অমরত্বের পেছনে গবেষণায় অর্থ জোগাচ্ছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক, সেই তিনি কেন জীবন্ত মানুষের কদর বুঝতে চান না?
কেন আজ বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর আয়ের অন্যতম উৎস মারণাস্ত্র? সেসব দেশের অর্থনীতিতে জিডিপি বা মূল আয়ের জোগান কেন আসে মারণাস্ত্র বেচে? দ্বিচারী মানুষ— একদিকে অমরত্বের সন্ধানে সিন্ধু সেচে মুক্তো খোঁজার পালে হন্যে হয়ে বিনিয়োগ করছে, ঠিক ৯০ ডিগ্রি বিপরীতে এই সৃষ্টির সেরা জীবই মানবকে মারার জন্য প্রযুক্তির সর্বশেষ উত্তরণে গড়ছে মানব ধ্বংসের লীলা, লাস্যের সেই ঘাতক পারমাণবিক মারণাস্ত্র। এটা কি ভাবা যায়!
গত এক শতাব্দীতে এর বিপরীতে কোনো মানবিক জীবন ও জগৎ-সংসারের মায়াবী প্রেমের বুনিয়াদি ঘোরে কোনো নেতা, চিন্তাশীল প্রযুক্তিবিদ কিংবা রাষ্ট্রনায়কের জন্ম হলো না। বরং নিছক ব্যবসায়িক চিন্তাধর বিশ্ব ধনভাণ্ডারের রথি-মহারথিরা হচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক। আর এ কারণে হামলে, জোর করে লুটে নেওয়ার নয়া কৌশলে উপনিবেশিক প্রভুদের তৎপরতা আজ বিশ্বময়।
তারা মূলত তিনটি পদ্ধতিতে অস্ত্রের বাজার বিকোতে তাদের তাবৎ রাষ্ট্রীয় নীতির গুটি সাজিয়ে রাজা-উজির আর ঘোড়ার চাল দিচ্ছে। প্রথমত, যারা একদিকে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে নিজেদের মূল অর্থ-কড়ি উৎপাদনের মারণাস্ত্রের বিকিকিনি বাজার নিশ্চিত করছে। দ্বিতীয়ত, এর জন্য পররাষ্ট্রনীতিতে খু্ব অভিজাত প্রক্রিয়ায় বিশ্বের দেশগুলোকে অস্ত্র কিনতে উদ্বুদ্ধ করছে। তৃতীয়ত, খুব জঘন্য এক প্রক্রিয়ায় ডিপ স্টেটের তত্ত্ব দিয়ে দেশে দেশে সরকার উৎখাতের নয়া তরিকা নিয়ে ঘুরছে।
সাম্রাজ্যবাদের এ কালের কাবুলিওয়ালারা মেতেছে ঘৃণ্য এক নীতি-নৈতিকতাহীন স্বাধীন সব দেশের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের খুবলে খাওয়া নীতিতে। অপেক্ষাকৃত সীমিত সম্পদ আর বিপুল জনগণের ‘যত মত তত পথে’র জনগোষ্ঠীর দেশগুলোতে উসকে দিচ্ছে আবেগের আস্ফালন। গণতন্ত্রের তরিকা বাতলে মানবিকতার নয়া নখরের থাবা দেখিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোতে বিভাজনের নোংরা খেলায় মেতেছে।
এ কালের কাবলিওয়ালা দেশের অভ্যন্তরে থাকা ‘সোসাইটি কাক’দের জড়ো করতে ডেকে ডেকে ভাত ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে জনমানুষের আবেগ ক্যাচ করে মুনাফেকি কৌশলে সেই উড়ে এসে জুড়ে বসা কাকেরা শৃঙ্খলার গণ্ডি ভেদ করে অরাজকতা আর নৈরাজ্যের ত্রাস ছড়াচ্ছে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের কাঠামো নয়ছয় করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং দেশের মানুষের মধ্যেও বিভাজন ও দ্বিমতের ব্যবধান গড়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে।
ঘৃণিত এ কাজে ডিপ স্টেটের তল্পিবাহক জর্জ সোরোস, নিজ ভূখণ্ডে বসে নিজ দেশের মানুষে-মানুষে, ধর্ম বিশ্বাস, দলমত আর রাজনৈতিক আর্দশের পার্থক্যের স্বাভাবিক দ্বন্দ্বের দৈত্য রূপ দিচ্ছেন। এতে মানুষে মানুষে বিভাজন ও মতপার্থক্য যত বাড়বে ততই দেশে দেশে ‘ছায়া সরকারে’র নগ্ন ছোবল সহজ হবে, সহজ হবে একেকটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে নাক গলানো।
স্থানীয় ব্যবসা আর ব্যবসায়ীদের ধরাশায়ী করে ভিনদেশি বেনিয়ারা হাতিয়ে নেবে আরেক দেশের ব্যবসা, বন্দর, শিল্প খাতের নানা জোগানদাতা অর্থকরী সহায় ও সম্পদ। তাই তো ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ শোনা যায়।
সম্প্রতি বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল তেমনই এক আর্তনাদ করে বলেন, ১৯৭১ সালে যেভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছে সেভাবে এখন দেশের ব্যবসায়ীদের মেরে ফেলা হচ্ছে। শিল্পে গ্যাস নেই, একের পর এক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু উপদেষ্টারা মনে হয় উটপাখির মতো বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে আছেন, কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে, মানুষ রাস্তায় নামবে। অথচ সাধারণ মানুষ এখনো বিভক্ত রাজনৈতিক আদর্শিক নানান মতাদর্শে। একদল ভাবছে, এর আগে কোনোদিন ক্ষমতার এত কাছাকাছি যাওয়া হয়নি। সুতারং এবার সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করার নয়। আরেক দল ভাবছে, তারা ১৭ বছর ধরে বঞ্চিত। সুতরাং তাদেরই ক্ষমতায় যাওয়া উচিত।
মাঝখানে জর্জ সোরেসের পুতুলরা ছায়ার সহযাত্রী হয়ে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের ব্যবসা, ভূরাজনৈতিক কৌশলের সবটাই দখলে নিয়ে নিলে ওই দেশটির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আগের সেই সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশের মতো জাহাজে চড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যেভাবে অবিভক্ত ভারতে তাদের দুই শ বছরের সাম্রাজ্যবাদী নখর বসিয়েছিল, জর্জ সোরোসের ছায়া সরকার সেই কৌশলেরই নয়া রূপ।
দুঃখ ও বেদনাভারের পাথরে জগদ্দল আরেক পাথর এই, জর্জ সোরোসরা কখনোই ভুল করে না। তারা তাদের নয়া নকশায় মূল সৈনিক হিসেবে দাবার ঘুঁটিতে এ দেশেরই নানা বুদ্ধিবৃত্তিক মুখোশের আড়ালে যাদের একাধিক মুখ, তাদেরই দায়িত্ব দিয়েছে। মীর জাফরের বংশধর হয়ে আজকের নয়া প্রজন্মের অনেকেই, অনেক গুণী বোদ্ধা, আপাত ব্যক্তিত্ববান, ক্ষুরধার মেধাবী এবং সাংস্কৃতিক-সাহিত্যিক আমলা বিচারপতি, লেখক-সাংবাদিকরা জর্জ সোরোসের বাম হাত হয়ে শক্তি জোগাচ্ছে বর্হিশক্তিকে; যারা সাময়িক কোনো লাভে ডিপ স্টেটের ঘৃণিত ভারবাহী লোহা বইছে!
আজ হয়তো তারা অর্থবিত্ত, উন্নত দেশের অভিবসানের প্রত্যাশায় কিংবা নিছক মগজ ধোলায়ের শিকার হয়ে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়ছে। তবে হাতের ময়লা অর্থ একদিন ফুরিয়ে আসবে। মগজ ধোলাইয়ে ব্যবহৃত মস্তিষ্কের মরফিনের ডোজের নেশাও টুটে আসবে। তখন কিন্তু বিশাল শূন্যতা, অপরাধবোধের আগ্রাসী থাবার নিজের অন্তঃপুরের দশা হবে আত্মহননের। কেননা এ কালের ডিপ স্টেটের কাবুলিওয়ালা সে কালের কাবুলিওয়ালা নয়, যারা মিমুর মত এক ছোট্টো শিশুর মাথায় মানবিকতার ফেরিওয়ালা।
এ কালের কাবুলিওয়ালা ডিপ স্টেটের মাফিয়ারা দেশীয় দোসরদের ব্যবহার শেষে ছুড়ে দেবে ডাস্টবিনে। মরফিনের নেশাটা যদি খানিক টুটেও আসে, তবে তো কেল্লাফতে। তখন আর বনের বাঘের প্রয়োজন হবে না, ‘মনের বাঘ’ই খেয়ে ফেলবে।
এমন নজির এরই মধ্যে বিশ্বের নানা দেশে মিলেছে। ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিশর, লিবিয়া, ইরাক, ইরান— সব দেশেই এমন নজির ভুরি ভুরি! তাই সময় থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝুন। দেশ ও দেশের মানুষের ধ্বংসের কারণ না হয়ে ফিরে চলুন মাটি ও মানবিক জগৎ সংসারে!
লেখক: গবেষক ও লেখক
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে যাচ্ছে প্রসিকিউশন টিম। জুলাই – অগাস্টের আন্দোলনের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় এখন আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
৯ দিন আগেআরও একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। বিতর্কের সূত্রপাত ভারতের ওই রাজ্যের একটা সারকারি বাস থেকে মণিপুরের নাম ‘ঢেকে’ দিতে বলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে। মণিপুরের উখরুলে শিরুই লিলি (এক বিরল প্রজাতির ফুল) উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল সম্প্রতি। ওই অনুষ্ঠানের জন্য সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
১০ দিন আগেবাংলাদেশের বিজনেস গেট হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। একে নিয়ন্ত্রণ করে এক পয়সা করে কমিশন নিলেও কোটি টাকা হয়। অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ও আশিক চৌধুরী এটা নিয়ে কয়েক দিন ব্যাপক কাজ করেছেন। এখন বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ছুটে যাচ্ছে দেখে একটি মহল নেতিবাচতক প্রচারণা শুরু করেছে। তারা বলার চেষ্টা করছে
১০ দিন আগেজুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভেজাল ও নকল ওষুধের কারবারিরা। শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল, সবখানেই ছড়িয়ে পড়ছে নকল ও ভেজাল ওষুধ, যা নিয়ে রোগী ও চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে।
১১ দিন আগে