রমজানের প্রথম ১০ দিন: রহমত ও ইবাদতের গুরুত্ব\n
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে সিয়াম পালনকারী সর্বাধিক আল্লাহকে স্মরণ করে, তার সিয়ামই সর্বোত্তম।’ (আহমাদ ১৫৫৫৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (বুখারি ১৯৫৭)
আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী ﷺ তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তা না থাকলে শুকনো খেজুর, তাও না থাকলে পানি দিয়ে।’ (আহমাদ ১২৬৭৬)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, “নবী ﷺ ইফতারের পর বলতেন—
*ذَهَبَ الظَّمَأُ ، وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ*। অর্থাৎ ‘পিপাসা দূর হয়েছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ প্রতিদান নির্ধারিত হয়েছে।’” (আবু দাউদ ২৩৫৭)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করায়, তার জন্য ওই সিয়াম পালনকারীর সমান সওয়াব রয়েছে।” (তিরমিজি ৮০৭)
অনেক মসজিদেই তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম পড়া হয়। মসজিদে মসজিদে তাই তারাবির নামাজে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। ছবি: ফোকাস বাংলা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না— সিয়াম পালনকারী, যতক্ষণ না সে ইফতার করে; ন্যায়পরায়ণ শাসক; এবং মজলুম।’ (তিরমিজি ৩৫৯৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।’ (ইবনে মাজাহ ১৮২৫)
ইবনে আবি মুলাইকা (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) ইফতারের সময় বলতেন,
*اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي*
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার সর্বব্যাপী রহমতের ওসিলায় আমাকে ক্ষমা করুন।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সেহরি খাও, নিশ্চয়ই এতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি ১৯২৩)
ইবনে হাজার (রহ.) সেহরির বরকতের ১০টি কারণ উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে— সুন্নত পালন, আহলে কিতাব থেকে পৃথকীকরণ, ইবাদতের শক্তি অর্জন ইত্যাদি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য সেহরিতে খেজুর কতই না উত্তম!’ (আবু দাউদ ২৩৪৫)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সেহরিতে বরকত রয়েছে। তাই এক ঢোক পানি দিয়েও হলেও সেহরি ত্যাগ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।’ (আহমাদ ১১০৮৬)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ সিয়াম পালন করে, সে যেন অশ্লীল ভাষা ও মূর্খতাপূর্ণ আচরণ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম ১১৫১)
জাবির (রা.) বলেন, ‘তোমার সিয়ামের দিন যেন অন্য দিনের মতো না হয়।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ ছাড়ে না, আল্লাহ তার খাদ্য-পানীয় ত্যাগের কোনো প্রয়োজন দেখেন না।’ (বুখারি ১৯০৩)
ইয়াহইয়া ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘কেউ হালাল থেকে সিয়াম রাখে, কিন্তু হারাম দিয়ে ইফতার করে— যেমন, তার ভাইয়ের গোশত (গিবত)।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘অনেক সিয়াম পালনকারী ক্ষুধা ছাড়া আর কিছু অর্জন করে না। অনেক রাত জাগরণকারী ক্লান্তি ছাড়া আর কিছু পায় না।’ (ইবনে মাজাহ ১৬৯০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সবরের মাস (রমজান) ও প্রতি মাসের তিন দিন সিয়াম হৃদয়ের কঠোরতা (ওয়াহার) দূর করে।’ (আহমাদ ৭৫৭৭) ‘ওয়াহার’ বলতে হিংসা, ক্রোধ, কপটতা ইত্যাদি বোঝায়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের সিয়াম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ২০১৪)
রোজাদারদের জন্য বেশির ভাগ মসজিদেই থাকে ইফতারের আয়োজন, যেখানে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইফতারের ফাইল ছবি
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সিয়াম হলো সবরের অর্ধেক।’ (বুখারি ২০১৪)
আল্লাহ বলেন, *إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّـٰبِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ*
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সুরা আজ-জুমার, ৩৯:১০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে কিয়াম করে সালাম ফেরানো পর্যন্ত থাকে, তার জন্য পুরো রাতের কিয়াম লেখা হয়।’ (নাসায়ি ১৬০৫)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে ভালোবাসেন ও তাদের প্রতি হাসেন... [তাদের মধ্যে] এমন ব্যক্তি যার সুন্দর স্ত্রী ও আরামদায়ক বিছানা রয়েছে, তবুও সে রাতে সালাতের জন্য ওঠে।’ (হাকিম)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ২০১৪)
আবু সুলাইমান আদ-দারানী (রহ.) বলেন, ‘কিয়ামুল লাইলের মধুরতা অনুভব না করলে আমি দুনিয়াকে ভালোবাসতাম না।’
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, আর রমজানে তিনি প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও অধিক দান করতেন।’ (বুখারি ৩২২০)
ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘রমজানে কুরআন অধ্যয়ন, তিলাওয়াত ও রাতে এর চর্চা করা সুন্নত।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘রমজানে উমরা পালন আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।’ (আবু দাউদ ১৯৯০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রমজানের প্রতিদিন-রাত বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।’ (আহমাদ ৭৪৫০)
দোয়া: *اللهم أَعْتِقْ رِقَابَنَا مِنَ النَّارِ*
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।’
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ রমজানের শেষ ১০ দিনে ইবাদতে আরও মশগুল হতেন এবং স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকতেন।’ (বুখারি ২০২৪)
রাসূলুল্লাহ ﷺ রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ২০২৫)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গেরমজানের সিয়াম ও কিয়াম পালন করে, সে সিদ্দিকীন ও শাহিদদের দলভুক্ত।’ (ইবনে হিব্বান ৩৪৩৮)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সিয়াম ও কুরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।’ (আহমাদ ৬৬২৬)
ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘রমজানে একজন মুমিন সিয়াম, কিয়াম, দান ও উত্তম কথার সমন্বয় ঘটায়।’
রমজানে সব ধর্মপ্রাণ মুসল্লিই চেষ্টা করেন বাড়তি ইবাদত করতে। অনেকেই রমজানে কোরআন খতমও দিয়ে থাকেন। প্রতীকী ছবি
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খুঁজে নাও।’ (বুখারি ২০১৭)
আবু বাকরা (রা.) বলেন, ‘আমি লাইলাতুল কদর শুধু ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে খুঁজি।’ (আহমাদ ২০৪০৪)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে পৃথিবীতে ফেরেশতাদের সংখ্যা মাটির কণার চেয়েও বেশি।” (ইবনে খুজাইমাহ ২১৯৪)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়।’ (বুখারি ২০১৪)
আল্লাহ বলেন, *إِنَّآ أَنْزَلْنَـٰهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ...*
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমরা এটি (কুরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি...’ (সুরা আল-কদর, ৯৭:১-৫)
ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, ‘ফেরেশতারা এ রাতে রহমত ও বরকত নিয়ে অবতরণ করেন।’
আয়িশা (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে রাসূল! যদি আমি কদরের রাত জানতে পারি, তখন কী দোয়া করব?” তিনি বললেন, *اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ*
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল (আফুউন), ক্ষমা করতে ভালোবাসো। তাই আমাকে ক্ষমা করো।’ (তিরমিজি ৩৫১৩)
‘আফুউন’ হলো সেই সত্তা যিনি সব গুনাহ সম্পূর্ণরূপে মুছে দেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘ধুলোয় নাক ঘষা হোক তার, যে রমজান পেয়েও ক্ষমা লাভ করতে পারলো না!’ (তিরমিজি ৩৫৪৫)
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘কে ক্ষমা পেল? তাকে মোবারকবাদ! আর কে বঞ্চিত হলো? আল্লাহ তার অবস্থা সংশোধন করুন।’
ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘ইস্তিগফার হলো সব নেক আমলের সমাপ্তি। রমজানের সমাপ্তিও ইস্তিগফারের মাধ্যমে হওয়া উচিত।’
(ইংরেজি নিবন্ধ থেকে অনুবাদ)
অনুবাদক: কোম্পানি সচিব, সিটি ব্যাংক পিএলসি