top ad image
top ad image
home iconarrow iconখবরাখবর

রমজানের ৪০ ফজিলত

রমজানের ৪০ ফজিলত
প্রতীকী ছবি

১. আল্লাহর রহমতের বারিধারা উপভোগ করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “সর্বদা ভালো কাজ করো এবং আল্লাহর রহমতের ‘বারিধারা’ লাভের চেষ্টা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এ বিশেষ রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন।” (তাবারানি ৭১৯)

আল্লাহ সারা বছরই আমাদের ওপর তার রহমত, ভালোবাসা ও নেয়ামত বর্ষণ করেন। তবে বছরের কিছু বিশেষ সময়ে তিনি আমাদের প্রতি আরও অধিক দানশীল হন। রমজান মাস হলো এমনই একটি মৌসুম, যেখানে আমরা আল্লাহর ভালোবাসা ও করুণার ফলাফল প্রত্যক্ষ করি।

২. রমজান মোবারক: জান্নাত ও জাহান্নামের দরজা

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ‘তোমাদের কাছে রমজান মাস এসেছে, এটি একটি বরকতময় মাস। এ মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অবাধ্য শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতই বঞ্চিত!’ (নাসায়ি ২১০৬)

ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘এ হাদিসটি রমজানের আগমন উপলক্ষে একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানানোর ভিত্তি। মুমিনকে কেন শুভেচ্ছা জানানো হবে না, যখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে? গুনাহগারকে কেন শুভেচ্ছা জানানো হবে না, যখন জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়েছে? বুদ্ধিমানকে কেন শুভেচ্ছা জানানো হবে না, যখন শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়েছে?’

৩. ‘হে কল্যাণকামী, অগ্রসর হও! হে অকল্যাণকামী, থামো!’

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, জান্নাতের সমস্ত দরজা খুলে দেওয়া হয়। একজন আহ্বানকারী ঘোষণা করেন, ‘হে কল্যাণের অনুসন্ধানী, এগিয়ে আসো! হে অকল্যাণের অনুসন্ধানী, থামো!’ আর প্রতি রাতে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে অনেককে মুক্তি দেন।” (তিরমিজি ৬৮২)

ইবনুল জাওজী (রহ.) বলেন, “নিশ্চয়ই যদি কবরবাসীদেরকে বলা হতো ‘কোনো আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো’, তাহলে তারা রমজানের একটি দিনই কামনা করত।”

রমজান সংক্ষিপ্ত, তাই আমাদের অলসতায় একে আরও সংক্ষিপ্ত কোরো না। বরং একে সুন্দরভাবে কাজে লাগাও।

৪. রমজান থেকে রমজান পর্যন্ত ক্ষমা প্রাপ্তি

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা থেকে অন্য জুমা, এবং এক রমজান থেকে অন্য রমজান— মাঝের সময়ের গুনাহগুলোর জন্য কাফফারা স্বরূপ, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।’ (মুসলিম ২৩৩গ)

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যার জুমা গুনাহমুক্ত হয়, তার সপ্তাহ গুনাহমুক্ত হয়। যার রমজান গুনাহমুক্ত হয়, তার বছর গুনাহমুক্ত হয়। যার হজ গুনাহমুক্ত হয়, তার জীবন গুনাহমুক্ত হয়।’

৫. এটিই কুরআনের মাস

আল্লাহ বলেন,

‎*شَهْرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلْقُرْءَانُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَـٰتٍ مِّنَ ٱلْهُدَىٰ وَٱلْفُرْقَانِ*

অর্থ: ‘রমজান মাস হলো সেই মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে—মানবজাতির জন্য হেদায়েত, সত্যের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী...” (সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৫)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘ইব্রাহীম (আ.)-এর সহিফা রমজানের প্রথম রাতে নাজিল করা হয়েছিল। তাওরাত নাজিল করা হয়েছিল রমজানের ছয় দিন অতিবাহিত হওয়ার পর। ইনজিল নাজিল করা হয়েছিল রমজানের তেরো দিন অতিবাহিত হওয়ার পর। আর কুরআন নাজিল করা হয়েছিল রমজানের চব্বিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর।’ (আহমাদ ১৬৯৮৪)

Tarabeeh Salat Photo 01-03-2025 (2)

রমজান মাসের অন্যতম অনুষঙ্গ তারাবি নামাজ। প্রথম রোজার আগের রাতে এশার নামাজের পর থেকে শুরু, চাঁদ রাতের আগের রাতে শেষ। শনিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রথম তারাবির চিত্র। ছবি: ফোকাস বাংলা

৬. সিয়ামের প্রকৃত উদ্দেশ্য উপলব্ধি করুন

‎يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ**

অর্থ: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৩)

তাকওয়া হলো আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে তার নিষেধাবলি পরিহার ও আদেশাবলি পালন। সিয়ামের মাধ্যমে আমরা স্বেচ্ছায় হালাল বস্তু (খাদ্য, পানীয় ইত্যাদি) থেকে বিরত থাকি। এটি আমাদের নফসকে ‘না’ বলতে শেখায় এবং তাকওয়া বৃদ্ধি করে।

৭. জেনে রাখুন, আল্লাহ সহজ চান

‎أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ**

অর্থ: “(সিয়াম পালন করো) গণনাকৃত কয়েক দিনের জন্য...” (সুরা আল-বাকারা, ২:১৮৪)

রমজানের সিয়াম মাত্র ২৯/৩০ দিনের জন্য ফরজ। আল্লাহ তার রহমতে এটিকে সহজ করেছেন। হাফসা বিনতে সীরীন (রহ.) বলেন, ‘সিয়ামরত ব্যক্তি ইবাদতের অবস্থায় থাকে, এমনকি ঘুমানোর সময়ও— যতক্ষণ না সে কারও গিবত করে।’

৮. সিয়াম: একটি অনন্য প্রতিদান

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেকি ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু সিয়াম এর ব্যতিক্রম। এটি একান্তই আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।’ (মুসলিম ১১৫১)

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘সিয়াম গোপন ইবাদত, তাই এটি শুধু আল্লাহর জন্যই।’

৯. রাইয়ান: জান্নাতের একটি দরজা

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “জান্নাতে ‘রাইয়ান’ নামক একটি দরজা রয়েছে। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে শুধুমাত্র সিয়াম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে।” (বুখারি ১৮৯৬)

১০. সিয়াম হলো জাহান্নাম থেকে ঢাল

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সিয়াম জাহান্নাম থেকে ঢালস্বরূপ।’ (তিরমিজি ৭৬৪)

১১. কার সিয়াম সর্বোত্তম?

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে সিয়াম পালনকারী সর্বাধিক আল্লাহকে স্মরণ করে, তার সিয়ামই সর্বোত্তম।’ (আহমাদ ১৫৫৫৩)

১২. ইফতার দ্রুত করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (বুখারি ১৯৫৭)

১৩. খেজুর দিয়ে ইফতার করুন

আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী ﷺ তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তা না থাকলে শুকনো খেজুর, তাও না থাকলে পানি দিয়ে।’ (আহমাদ ১২৬৭৬)

১৪. ইফতারের পরের দোয়া

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, “নবী ﷺ ইফতারের পর বলতেন— 

‎*ذَهَبَ الظَّمَأُ ، وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ*। অর্থাৎ ‘পিপাসা দূর হয়েছে, শিরাগুলো সিক্ত হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ প্রতিদান নির্ধারিত হয়েছে।’” (আবু দাউদ ২৩৫৭)

১৫. একজন সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করান

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করায়, তার জন্য ওই সিয়াম পালনকারীর সমান সওয়াব রয়েছে।” (তিরমিজি ৮০৭)

Tarabeeh Salat Photo 01-03-2025 (1)

অনেক মসজিদেই তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম পড়া হয়। মসজিদে মসজিদে তাই তারাবির নামাজে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। ছবি: ফোকাস বাংলা

১৬. দোয়া কবুলের সুযোগ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না— সিয়াম পালনকারী, যতক্ষণ না সে ইফতার করে; ন্যায়পরায়ণ শাসক; এবং মজলুম।’ (তিরমিজি ৩৫৯৮)

১৭. ইফতারের আগে দোয়া করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময়ের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না।’ (ইবনে মাজাহ ১৮২৫)

ইবনে আবি মুলাইকা (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) ইফতারের সময় বলতেন,

‎*اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍ أَنْ تَغْفِرَ لِي*

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার সর্বব্যাপী রহমতের ওসিলায় আমাকে ক্ষমা করুন।’

১৮. সেহরির বরকত উপভোগ করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সেহরি খাও, নিশ্চয়ই এতে বরকত রয়েছে।’ (বুখারি ১৯২৩)

ইবনে হাজার (রহ.) সেহরির বরকতের ১০টি কারণ উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে— সুন্নত পালন, আহলে কিতাব থেকে পৃথকীকরণ, ইবাদতের শক্তি অর্জন ইত্যাদি।

১৯. সেহরিতে খেজুর খান

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য সেহরিতে খেজুর কতই না উত্তম!’ (আবু দাউদ ২৩৪৫)

২০. আল্লাহর রহমত চান?

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সেহরিতে বরকত রয়েছে। তাই এক ঢোক পানি দিয়েও হলেও সেহরি ত্যাগ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।’ (আহমাদ ১১০৮৬)

২১. অশ্লীল কথা থেকে সিয়ামকে পবিত্র রাখুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ সিয়াম পালন করে, সে যেন অশ্লীল ভাষা ও মূর্খতাপূর্ণ আচরণ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম ১১৫১)

জাবির (রা.) বলেন, ‘তোমার সিয়ামের দিন যেন অন্য দিনের মতো না হয়।’

২২. তোমার সিয়ামকে রক্ষা করো

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ ছাড়ে না, আল্লাহ তার খাদ্য-পানীয় ত্যাগের কোনো প্রয়োজন দেখেন না।’ (বুখারি ১৯০৩)

ইয়াহইয়া ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘কেউ হালাল থেকে সিয়াম রাখে, কিন্তু হারাম দিয়ে ইফতার করে— যেমন, তার ভাইয়ের গোশত (গিবত)।’

২৩. সিয়াম ও কিয়ামের হিফাজত করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘অনেক সিয়াম পালনকারী ক্ষুধা ছাড়া আর কিছু অর্জন করে না। অনেক রাত জাগরণকারী ক্লান্তি ছাড়া আর কিছু পায় না।’ (ইবনে মাজাহ ১৬৯০)

২৪. সিয়াম দ্বারা হৃদয় পরিশুদ্ধ করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সবরের মাস (রমজান) ও প্রতি মাসের তিন দিন সিয়াম হৃদয়ের কঠোরতা (ওয়াহার) দূর করে।’ (আহমাদ ৭৫৭৭) ‘ওয়াহার’ বলতে হিংসা, ক্রোধ, কপটতা ইত্যাদি বোঝায়।

২৫. ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে রমজান পালন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের সিয়াম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ২০১৪)

Iftar-At-Baitul-Mokarram-File-Photo-02-03-2025

রোজাদারদের জন্য বেশির ভাগ মসজিদেই থাকে ইফতারের আয়োজন, যেখানে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইফতারের ফাইল ছবি

২৬. সিয়াম: সবরের অর্ধেক

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সিয়াম হলো সবরের অর্ধেক।’ (বুখারি ২০১৪)

আল্লাহ বলেন, *إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّـٰبِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ*

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সুরা আজ-জুমার, ৩৯:১০)

২৭. ইমামের সঙ্গে কিয়ামের সওয়াব

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে কিয়াম করে সালাম ফেরানো পর্যন্ত থাকে, তার জন্য পুরো রাতের কিয়াম লেখা হয়।’ (নাসায়ি ১৬০৫)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে ভালোবাসেন ও তাদের প্রতি হাসেন... [তাদের মধ্যে] এমন ব্যক্তি যার সুন্দর স্ত্রী ও আরামদায়ক বিছানা রয়েছে, তবুও সে রাতে সালাতের জন্য ওঠে।’ (হাকিম)

২৮. ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে কিয়াম

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়াম করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি ২০১৪)

আবু সুলাইমান আদ-দারানী (রহ.) বলেন, ‘কিয়ামুল লাইলের মধুরতা অনুভব না করলে আমি দুনিয়াকে ভালোবাসতাম না।’

২৯. রমজানে নবীর মতো দানশীল হোন

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, আর রমজানে তিনি প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও অধিক দান করতেন।’ (বুখারি ৩২২০)

ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘রমজানে কুরআন অধ্যয়ন, তিলাওয়াত ও রাতে এর চর্চা করা সুন্নত।’

৩০. রমজানে উমরা = নবীর সঙ্গে হজ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘রমজানে উমরা পালন আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।’ (আবু দাউদ ১৯৯০)

৩১. আজ রাতে মুক্তি পাবেন তো?

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রমজানের প্রতিদিন-রাত বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।’ (আহমাদ ৭৪৫০)

দোয়া: *اللهم أَعْتِقْ رِقَابَنَا مِنَ النَّارِ*

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।’

৩২. শেষ ১০ দিনে নবীর মতো ইবাদত

আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ রমজানের শেষ ১০ দিনে ইবাদতে আরও মশগুল হতেন এবং স্ত্রীদের থেকে দূরে থাকতেন।’ (বুখারি ২০২৪)

৩৩. রমজানে ইতিকাফ করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ করতেন। (বুখারি ২০২৫)

৩৪. সিদ্দিকীন ও শাহিদদের দলভুক্ত হোন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গেরমজানের সিয়াম ও কিয়াম পালন করে, সে সিদ্দিকীন ও শাহিদদের দলভুক্ত।’ (ইবনে হিব্বান ৩৪৩৮)

৩৫. সিয়াম ও কিয়ামের সুপারিশ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘সিয়াম ও কুরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য সুপারিশ করবে।’ (আহমাদ ৬৬২৬)

ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘রমজানে একজন মুমিন সিয়াম, কিয়াম, দান ও উত্তম কথার সমন্বয় ঘটায়।’

Quran-Tilwat-Symbolic-Photo-02-03-2025

রমজানে সব ধর্মপ্রাণ মুসল্লিই চেষ্টা করেন বাড়তি ইবাদত করতে। অনেকেই রমজানে কোরআন খতমও দিয়ে থাকেন। প্রতীকী ছবি

৩৬. লাইলাতুল কদর তালাশ করুন

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খুঁজে নাও।’ (বুখারি ২০১৭)

আবু বাকরা (রা.) বলেন, ‘আমি লাইলাতুল কদর শুধু ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে খুঁজি।’ (আহমাদ ২০৪০৪)

৩৭. ফেরেশতাদের সান্নিধ্যে

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে পৃথিবীতে ফেরেশতাদের সংখ্যা মাটির কণার চেয়েও বেশি।” (ইবনে খুজাইমাহ ২১৯৪)

৩৮. লাইলাতুল কদরে কিয়াম

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে কিয়াম করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়।’ (বুখারি ২০১৪)

আল্লাহ বলেন, ‎*إِنَّآ أَنْزَلْنَـٰهُ فِيْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ...*

অর্থ: ‘নিশ্চয়ই আমরা এটি (কুরআন) কদরের রাতে নাজিল করেছি...’ (সুরা আল-কদর, ৯৭:১-৫)

ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, ‘ফেরেশতারা এ রাতে রহমত ও বরকত নিয়ে অবতরণ করেন।’

৩৯. লাইলাতুল কদরের দোয়া

আয়িশা (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে রাসূল! যদি আমি কদরের রাত জানতে পারি, তখন কী দোয়া করব?” তিনি বললেন, ‎*اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ*

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল (আফুউন), ক্ষমা করতে ভালোবাসো। তাই আমাকে ক্ষমা করো।’ (তিরমিজি ৩৫১৩)

‘আফুউন’ হলো সেই সত্তা যিনি সব গুনাহ সম্পূর্ণরূপে মুছে দেন।

৪০. ক্ষমা না পেয়ে রমজান শেষ করো না

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘ধুলোয় নাক ঘষা হোক তার, যে রমজান পেয়েও ক্ষমা লাভ করতে পারলো না!’ (তিরমিজি ৩৫৪৫)

ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘কে ক্ষমা পেল? তাকে মোবারকবাদ! আর কে বঞ্চিত হলো? আল্লাহ তার অবস্থা সংশোধন করুন।’

ইবনে রজব (রহ.) বলেন, ‘ইস্তিগফার হলো সব নেক আমলের সমাপ্তি। রমজানের সমাপ্তিও ইস্তিগফারের মাধ্যমে হওয়া উচিত।’

(ইংরেজি নিবন্ধ থেকে অনুবাদ)

অনুবাদক: কোম্পানি সচিব, সিটি ব্যাংক পিএলসি

r1 ad
top ad image