বছর পার হলেও প্রকাশ করা হয়নি উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের হিসাব

বিবিসি বাংলা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহের মাথায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শিগগিরই তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নিজেদের আয় ও সম্পদের বিবরণী জনগণের সামনে প্রকাশ করবেন।

এরপর কেটে গেছে প্রায় এক বছর। এর মধ্যে সরকার আয়-ব্যয়ের এ হিসাব প্রকাশ সংক্রান্ত নীতিমালাও করেছে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের কারও সম্পদের আয়-ব্যয়ের হিসাব বা সম্পদের বিবরণী আর প্রকাশ করা হয়নি।

অর্থনীতিবিদসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথাগত রাজনৈতিক নেতাদের বাইরের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সরকারের সামনে নিজেদের আয়-ব্যয়-সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সংস্কৃতি চালুর সুযোগ ছিল। কিন্তু সে সুযোগ শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে লাগেনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ঘটনাটা অনেকটা শেখ হাসিনার মতো হলো। কারণ উনিও উনার নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, উনার পুরো মন্ত্রিপরিষদের তথ্য দেবেন বিত্ত-বৈভব ও আয়ের ব্যাপারে। সে প্রতিশ্রুতি আর উনি রক্ষা করেননি।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে কত টাকা পাচার করা হয়েছে এবং এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার নেতৃত্বে ছিলেন।

প্রথিতযশা এই অর্থনীতিবিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে দলটির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে, সেটার বিপরীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নজির স্থাপন করার সুযোগ ছিল অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সামনে। অনেক প্রত্যাশা ছিল, বর্তমান সরকার নতুন নজির স্থাপন করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটাও হয়নি।

এর আগে গত বছরের ২৫ আগস্ট সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। আমাদের সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সব সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে।

তার ওই ভাষণের পর উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশে সরকার আলাদা করে একটি নীতিমালাও তৈরি করে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের এক বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, উপদেষ্টাদের কারও আয় ও সম্পদের হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি।

এর মধ্যেই উপদেষ্টা, তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একের পর এক অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে। যদিও উপদেষ্টারা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।

দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যদি (সম্পদের তথ্য) প্রকাশ করা না হয়, তাহলে প্রশ্নটা থেকে যায়— কেন লুকানো হচ্ছে? কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? তাহলে কি লুকানোর কিছু আছে?

অন্যদিকে অধ্যাপক ইউনূস ক্ষমতায় বসার পর তার হাতে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেটি নিয়ে নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠতে দেখা যাচ্ছে।

দুর্নীতি-চাঁদাবাজির যত অভিযোগ

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে যেভাবে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে সেটির অবসান ঘটবে বলেই প্রত্যাশা করেছিলেন অনেকে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও তার প্রথম ভাষণে সেই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন।

কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর এক বছর না পেরোতেই অধ্যাপক ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে। সবশেষ গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার জড়িত থাকার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। জানে আলম অপু নামে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত যে নেতা অভিযোগটি তুলেছেন তার সঙ্গে দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।

উপদেষ্টা আসিফ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর ওর সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি, কথাও হয়নি এবং রিয়াদ নামে আরেকজনের কথা যে বলা হচ্ছে, তাকে আমি চিনি না এবং ওরও আমাকে চেনার কথা না। কারণ আমাদের কখনো দেখা হয়নি। এ ঘটনায় আমার নাম জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এর কয়েক দিন আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে রীতিমতো তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন সরকারের সাবেক সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। তিনি বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করছেন।

আব্দুস সাত্তার বলেন, আমাদের (সরকারি কর্মকর্তাদের) না হয় চরিত্র খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু যারা আন্দোলন করে আজকে চেয়ারে বসেছেন, অন্তত আটজন উপদেষ্টার আমি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বুঝায় দিতে পারব যে তারা (উপদেষ্টারা) সীমাহীন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

তিনি আরও বলেন, তাদের (উপদেষ্টাদের) সঙ্গে কন্টাক্ট (যোগাযোগ) ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো রকম নিয়োগ হবে না, কোনো বদলি হবে না। আমার কাছে প্রমাণ আছে, প্রমাণ ছাড়া কথা বলি না।

এ বি এম সাত্তারের এই বক্তব্যের সময় সামনে দর্শক সারিতে বসে থাকা সরকারের বর্তমান কর্মকর্তারা ‘ঠিক, ঠিক’ ধ্বনি তুলে তাকে সমর্থন জানান।

উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এমন অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বর্ণনা করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে সরকার। অভিযোগকারীর কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও সরকারকে নিজ উদ্যোগে অভিযোগ তদন্তে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

এর আগেও একাধিক উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। সেগুলোর কয়েকটির বিষয়ে তদন্তও চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব ঘটনার পর উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদের হিসাব প্রকাশের দাবি উঠতে দেখা গেলেও বাস্তবে সেটি ঘটতে দেখা যায়নি।

অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা আমাদের জন্য একই সঙ্গে হতাশা ও ক্ষোভেরও বিষয়।

‘দায় এড়ানোর সুযোগ তৈরি হলো’

প্রধান উপদেষ্টার প্রথম ভাষণের মাসখানেক পর গত বছরের পহেলা অক্টোবরে উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণীর বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে সরকার। ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা এবং সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা, ২০২৪’ শীর্ষক ওই নীতিমালায় দু'টি ধারা রয়েছে।

প্রথম ধারায় বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা ও সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখের পরের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে।

এক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের স্ত্রী বা স্বামীর আলাদা আয় বা সম্পদ থাকলে, সেগুলোর বিবরণীও প্রধান উপদেষ্টার কাছে একইসঙ্গে জমা দিতে বলা হয়েছে। তথ্যগুলো হাতে পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা নিজ বিবেচনায় উপযুক্ত পদ্ধতিতে সেসব তথ্য প্রকাশ করবেন বলে নীতিমালার দ্বিতীয় ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নীতিমালাটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা পরবর্তী সরকারের জন্য নজির স্থাপন করে যাবেন বলে ধারণা করেছিলেন অনেকে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকারের সামনে খুব বড় একটা সুযোগ ছিল পরবর্তী সরকারের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার, পরবর্তী সরকারের জন্য স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার একটা চাপ তৈরি হতো। কিন্তু সেই সুযোগটা হাতছাড়া হতে চলেছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যাশা এবং সরকারের দিক থেকেও যে অঙ্গীকার ছিল, সেটা কোনো ক্ষেত্রেই আমরা পাচ্ছি না।

জবাবদিহিতার নজির স্থাপনের যে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার সেটি পূরণ করতে না পারায় বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ কঠিন হলো বলে মনে করছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, তাদের কিছু মৌলিক ভিত্তি তৈরি করে দেওয়ার কথা ছিল। কিছু কিছু ভালো চর্চা, যেটা ভবিষ্যতে অনুসরণ করা হবে। সেই জিনিসটা প্রাপ্তি থেকে দেশবাসী বঞ্চিত হলো। এটা পরবর্তী সরকারগুলোকে দায় এড়ানোর এক ধরনের সুযোগ তৈরি করে দেবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই পারে নাই, আমাদের ওপরে চাপ দিচ্ছেন কেন— এমন প্রশ্ন উঠে যাবে।

গ্রামীণের সুযোগ-সুবিধা ঘিরে প্রশ্ন

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় থাকাকালে তার হাতে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেটা নিয়েও নানা সমালোচনা ও প্রশ্ন উঠতে দেখা যাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার দুই মাসের মাথায় গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটিতে সরকারের যে ২৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব ছিল, সেটিও কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

এর বাইরে, গ্রামীণের নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন, জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স প্রদান এবং গ্রামীণ টেলিকমকে যে ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ (কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট) রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আগে যে রকম মন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন তাদের ব্যাপারে কোনো বিষয় উঠলে খুব দ্রুত গতিতে সমস্ত কাজ সম্পন্ন হয়ে যেত, এখন যদি আমরা প্রধান উপদেষ্টার বেলাতেও একই জিনিস দেখি, তাহলে পরিবর্তনের কী নমুনা এখানে হাজির হলো?

এ অবস্থায় কোন প্রক্রিয়ায় সুবিধাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেটির পরিষ্কার ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সিপিডির ড. দেবপ্রিয় বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও তখন প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত।

একই কথা বলেছেন টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালকও। তিনি বলেন, কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় গ্রামীণের প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, সেটি পরিষ্কার ব্যাখ্যার দাবি রাখে। তাহলে স্বার্থের দ্বন্দ্বের যে বিষয়টা, সেটা পরিষ্কার হবে। তা না হলে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাবে এবং যেকোনো সময় এটা আবার চ্যালেঞ্জডও হতে পারে।

ভাবমূর্তির সংকটে সরকার

উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এসব ঘটনায় সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে। এখন যদি আস্থার সূচক দেখা যায়, তাহলে প্রথমদিকে সরকারের প্রতি মানুষের যে আস্থা ছিল, প্রত্যাশা ছিল, সেটি কীভাবে নেমেছে বোঝা যাবে।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সেগুলো খতিয়ে না দেখে যেভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, আগের সরকারের মতো এই সরকারেরও একটা অস্বীকারের প্রবণতা আছে, অস্বীকারের সংস্কৃতি আছে। তারা প্রশ্ন তোলা পছন্দ করে না। সমালোচনা করলে ট্যাগিং করতে চায়, যেটা হাসিনা সরকারের সময়ে দেখা যেত।

সরকারের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট বাড়তে থাকলে সেটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচনকেও প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমান সরকারের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি নেই সেই অর্থে। তারা কোনো দলের থেকে আসেননি। সেজন্য তাদের নৈতিক ভিত্তিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমি এটাকে সাধারণ সুশাসনের দৃষ্টি থেকে দেখছি না, আমি এটা দেখছি একটা ভালো নির্বাচনের পূর্বশর্ত অনেকখানি দুর্বল করে ফেলছেন এ রকম একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে।

সরকার কী বলছে?

আয় ও সম্পদের বিবরণী জমা দিয়েছেন কি না— এটা জানার জন্য বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। তাদের মধ্যে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, সরকারি বেতনের বাইরে তার অন্য কোনো আয় বা সম্পদ নেই।

আসিফ মাহমুদ বলেন, উপদেষ্টা হওয়ার আগে আমি ছাত্র থাকার কারণে কোনো আয় ছিল না। সেই বিষয়টা উল্লেখ করে লিখিতভাবে আমি ক্যাবিনেট ডিভিশনে তখন জমা দিয়েছি।

চলতি বছরের আয় ও সম্পদের হিসাবও আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সর্বশেষ তারিখের পরের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা। তিনি আরও জানান, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। সে ক্ষেত্রে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তিনি উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগও করতে পারেন।

আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মতো অন্য উপদেষ্টারাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গত বছরের আয় ও সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তাহলে সেসব তথ্য এতদিনেও কেন জনগণের সামনে প্রকাশ করা হলো না?— জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাপ্ত সুবিধার বিষয়ে এর আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব দাবি করেছেন, সেগুলোর ক্ষেত্রে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করেননি।

যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় থাকাটাই প্রভাব বিস্তার করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, শেখ হাসিনার আমলে সেটার বহু দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি। এখন প্রধান উপদেষ্টার ক্ষেত্রেও যে সেরকম কিছু ঘটেনি, সেটার নিশ্চয়তা কী?

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

৮৫ নির্বাচন কর্মকর্তাকে পুনর্বহাল করে প্রজ্ঞাপন জারি

এর আগে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ৮৫ জন কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়ার অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয়।

১৩ ঘণ্টা আগে

সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত

আবহাওয়া অফিস জানায়, উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও দক্ষিণ ওড়িষ্যার উপকূলের অদূরে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ-দক্ষিণ ওড়িষ্যার উপকূল এলাকায় অবস্থান করছে

১৪ ঘণ্টা আগে

হীড বাংলাদেশে ২ জনের নিয়োগ, বেতন প্রায় ৪৮ হাজার টাকা

১৪ ঘণ্টা আগে

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩৮০

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭০ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৬৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৭৪ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোর

১৪ ঘণ্টা আগে