আরপিও সংশোধন

জোটের প্রার্থী হলেও ভোট দলীয় প্রতীকে, সমান ভোটে পুনর্নির্বাবচন

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৫০
ভোটের ব্যালট বাক্স। ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধনীতে কোনো আসনে একক প্রার্থী হলে তাকে ‘না’ ভোটের বিপক্ষে লড়াই করে জেতার বিধান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগে এক দলের প্রার্থীর অন্য দলের হয়ে নির্বাচন করার সুযোগ ছিল। আরপিও সংশোধনীতে সেই বিধান বাতিল করে জোটের প্রার্থী হলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া কোনো আসনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থী দুজন থাকলে আগে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হতো। সে বিধান পালটে এখন সমান ভোট পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে পুননির্বাচনের বিধান রাখা হচ্ছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নেয় ইসি। ইসির নবম কমিশন সভায় এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সোমবার (১১ আগস্ট) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভার মুলতবি বৈঠকে নতুন সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরপিও সংশোধনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়ার বিধানও বাতিল করা হয়েছে।

ইসির কমিশন সভার পর সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, নির্বাচনে অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে বিজয়ী প্রার্থীর প্রার্থিতাও ইসি বাতিল করতে পারবে।

নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে অপতথ্য বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো রোধে এর বিরুদ্ধে কমিশনের ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে।

বৈঠকে আরপিওতে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে সেগুলো ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে ইসি। সেখানে অনুমোদন পেলে সংশোধিত আরপিও চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া নতুন করে ঐকমত্য কমিশনের কোনো সুপারিশ থাকলে সেগুলোও যুক্ত করা হবে।

আরপিওতে যেসব সংশোধনী

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দলই জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে অংশ নিয়ে থাকে। আগে এমন জোটের ক্ষেত্রে যেকোনো দলের প্রার্থী জোটের অন্য কোনো শরিক দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করতে পারতেন। এমন সুযোগ তুলে দিয়ে জোটবদ্ধ হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বাধ্যবাধকতা রেখে আরপিও সংশোধনীর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দল এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, সেটি তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত। এ ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনের একটি প্রস্তাবনা ছিল, জোটবদ্ধ হলেও প্রার্থীকে নিজের দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন কমিশন সেই প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে।

আরপিও সংশোধনীতে আরও বিধান রাখা হচ্ছে, কোনো প্রার্থী নির্বাচনি হলফনামায় ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে তিনি বিজয়ী হলেও তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে ইসি।

আরপিওতে আরেকটি পরিবর্তন আসছে ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের অবস্থান নিয়ে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের ভোট গণনার সময় সাংবাদিকরা গণনা কক্ষে থাকতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই কক্ষে অবস্থান করতে হবে তাদের।

এদিকে ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম ‘না’ ভোট চালু হয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার সে বিধান বাতিল করে। এবার আরপিও সংশোধনীতে ফের ‘না’ ভোটকে ফিরিয়ে আনছে ইসি। তবে এবার আগের মতো সব আসনে নয়, যেসব আসনে একক প্রার্থী থাকবেন কেবল সেসব আসনেই থাকবে ‘না’ ভোট।

মূলত কোনো আসনে একক বৈধ প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ঠেকাতেই এ বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এ রকম ক্ষেত্রে ওই প্রার্থীকে নির্বাচিত হতে হলে ‘না’ ভোটের বিপক্ষে জয় পেতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, যদি কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকে, তাকে বিনা ভোটে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে না। একজন প্রার্থী হলেও তাকে নির্বাচনে যেতে হবে। তার বিপক্ষ ‘না’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে ওই প্রার্থীর ভোটের চেয়ে ‘না’ ভোট বেশি হলে তিনি নির্বাচিত হতে পারবেন না।

বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পরই ইভিএম ব্যবহার না করার কথা জানিয়েছিল। আরপিও সংশোধনীতেও সেটি যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে সানাউল্লাহ বলেন, ইভিএম ব্যবহার হবে না। তাই যাবতীয় বিধান বিলোপ করা হয়েছে আরপিও সংস্কারের প্রস্তাবে।

এর আগে নির্বাচনে আরেকটি ‘বিতর্কিত’ বিধান ছিল দুজন প্রার্থী সমান সর্বোচ্চ ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ। আরপিও সংশোধনীতে আর সেই বিধান থাকছে না। এখন এমন ক্ষেত্রে ওই দুজন প্রার্থীকে ফের ভোটারদের মুখোমুখি হতে হবে।

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আগে বিধান ছিল, সর্বোচ্চ ভোটের সংখ্যা দুজন প্রার্থীর মধ্যে সমান হয়ে গেলে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী প্রার্থী নির্বাচন করা হতো। কমিশন সেটা থেকে সরে এসেছে। এ ক্ষেত্রে পুনর্নির্বাচন হবে। সেখানে বিজয়ী প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবেন।

এ ছাড়া নির্বাচনে অনিয়মের ক্ষেত্রে কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনে কোনো আসনের ভোটে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ইসি পুরো আসনের ভোটই বাতিল করতে পারবে। আগে কেবল অভিযোগ ওঠা কেন্দ্রগুলোর ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

মোহাম্মদপুরের ছিনতাই চক্রের প্রধান ‘ভাগনে বিল্লাল’ গ্রেপ্তার

বিল্লালের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানায় সাতটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ বিভিন্ন অপরাধের ছয়টি মামলা রয়েছে।

১ ঘণ্টা আগে

এখনও কি ফোনে আড়ি পাতছে সরকার?

২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে আড়িপাতার সরঞ্জাম কেনার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল, যা থেকে বোঝা যায় ভিন্নমত দমনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতেই এসব নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।

২ ঘণ্টা আগে

জুলাইয়ে সড়কে ঝরেছে ৫৩ শিশুসহ ৪১৮ প্রাণ

দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, সকালে ২৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ, দুপুরে ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, বিকালে ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, সন্ধ্যায় ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ এবং রাতে ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

২ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনছে ইউক্রেন

ট্রাম্পের সঙ্গে সোমবারের এ বৈঠককে এখন পর্যন্ত ‘সেরা বৈঠক’ মন্তব্য করে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শুধু সমন্বয়ই করবে না, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশীদারও হবে- স্পষ্ট এমন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি বড় একটি অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।’

২ ঘণ্টা আগে