'জুলাই কেন মানি মেকিং মেশিন হবে'

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৩৬

‘জুলাই কেন মানি মেকিং মেশিন হবে? দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই হয়েছে’ এমন মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা। রোববার (২৭ জুলাই) মধ্যরাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছা তাঁর নেই, অন্যকে অসম্মান বা কষ্ট দেওয়ার ইচ্ছাও নেই।

প্রায় দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিটের ভিডিওতে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। উমামা বলেন, ‘আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই গিয়েছি। ছাত্র ফেডারেশনের সময়কার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘৩০–৪০ জন নিয়ে মিছিল করেছি, তখন বলতাম ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’। কিন্তু কখনো ভাবিনি এই স্লোগান দিতে দিতে শিশুসহ মানুষ রাস্তায় জীবন দেবে। জুলাই–আগস্টে সাধারণ মানুষের সঙ্গে লড়েছি, সেই স্বপ্নেই এক বছর বেঁচে ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আর পারছিলাম না। দেশকে আরও বড় কিছু দেওয়ার চিন্তা থেকে ফেডারেশন থেকে সরে গিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করি। তখন আমি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমাকে ডাকত না। কারণ হতে পারে, আমি প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দিতে বলেছিলাম।’

জুলাই আন্দোলনে সমন্বয়কদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৫২, ৬২ বা ১৫৮ জন সমন্বয়ক যে হয়েছে, সেগুলো সেভাবে ফাংশন করছিল না। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছিল। তবে সমন্বয়ক টার্মটা সে সময় দরকার ছিল, যাতে সবাইকে কানেক্ট করা যায় না। আমার কাছে মনে হয়েছে, সমন্বয়কদের চেয়ে অন্যদের সহযোগিতা বেশি পেয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে অনেক র‍্যালি করেছি, গণভবনে গেছি। এরপর অনেক কাহিনি চলেছে। পরদিন দেখি, সমন্বয়ক পরিচয়ে একেকজন একেক জায়গায় দখল করেছে। সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও দখল করছে। আওয়ামী লীগের রক্ষী বাহিনী জায়গায়, জায়গায় গিয়ে দখল করে। আমার মনে হচ্ছে যে এখন কি রক্ষী বাহিনীর মতো সমন্বয়ক বাহিনী তৈরি হচ্ছে নাকি। আস্তে আস্তে সব জায়গায় দখল করে ফেলবে।’

আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সমন্বয়কদের অনেকের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে উমামা বলেন, ‘সমন্বয়ক বাহিনী হয়তো সেভাবে অস্ত্র দিয়ে হয়নি। কিন্তু তখন সবার সঙ্গে আলাপ করে আমার মনে হয়েছে, এখন আসলে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের আসলে দরকার কি? এটা তো শুধু ছাত্রদের। এখন দরকার, সবাইকে একোমোডেট করা যায়, সেটা ভাবা উচিত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, তাদের আর কীই-বা করার আছে। এটা আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।’

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে যাওয়ার কারণে অনেকগুলো ডিমেরিট আমরা ভোগ করছি’—মন্তব্য করে উমামা বলেন, ‘ওইগুলো বলার কারণেই আমি প্রচুর শত্রু বানায়ে ফেলছি। এত মানুষ আমাকে খারাপ ভাবা শুরু করে যে আমি রীতিমতো তবদা খেয়ে যাই। পরে জেলায় জেলায় গিয়ে দেখেছি, অনেক ভালো ভালো ছেলে কিছু করতে চায়। ওরা দেশটাকে পুনর্গঠন করবে।’

উমামা আরও বলেন, ‘জুলাই অনেক বড় অভিজ্ঞতা। মানুষ অবিশ্বাস্য লড়াই করেছে। আমার মাথায় আসেইনি যে এটা দিয়ে টাকাপয়সা ইনকাম করা যায়! আমি মুখপাত্র হওয়ার পর আবিষ্কার করছি, এটা দিয়ে অনেকে অনেক কিছু করছে। টেন্ডার-তদবির বাণিজ্য করছে, ডিসি নিয়োগ করছে। এগুলো অহরহ করেছে। এর আগে এটা নিয়ে ধারণা ছিল না। জুলাই আন্দোলনকে কেন মানি মেকিং মেশিন করব। আনফরচুনেটলি সেটা হয়েছে।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক এই নেত্রী আরও বলেন, ‘অনেকে বলেন যে আমি কত হাজার কোটি টাকা কামাইছি? তাদের আমি বলতে পারি, আমার একটি ভালো জীবন আছে। ভালো পরিবারের সদস্য। এত খারাপ অবস্থা আসে নাই। আমার স্কলারশিপের জন্যও প্রয়োজন নাই। আমার পরিবারের সাপোর্ট আছে। তারা চায়, আমি দেশের জন্য কিছু করি।’

উমামা বলেন, “সমন্বয়ক টার্মটা আন্দোলনের সময় কিছুটা দরকার ছিল—যেমন, আমি যদি বিপদে পড়ি তাহলে যেন কাউকে ফোন করে কানেক্ট করতে পারি। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সমন্বয়ক লিস্টে থাকা বেশিরভাগ মানুষকেই আমি রিচ করতে পারিনি।”

তিনি জানান, আন্দোলনের সময় ৫২, ৬২ ও পরে ১৫৮ জন সমন্বয়কের একটি তালিকা তৈরি হলেও তারা অনেকেই দায়িত্ব পালন করেননি। বরং সাধারণ মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নেমেছে, কানেক্টেড থেকেছে এবং আন্দোলনের গতি বজায় রেখেছে।

উমামা ফাতেমা বলেন, “জুলাই-আগস্টের সময় মনে আছে, যেভাবে অভ্যুত্থান হচ্ছিল—সেটা এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল যে বোঝা যাচ্ছিল না কে কোন দিক থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পেরেছে, কানেক্ট করেছে। অথচ যাদের আমরা সমন্বয়ক ভাবছিলাম, তাদের অনেকেই সেই ভূমিকা রাখতে পারেনি।”

৫ আগস্টের পরদিন থেকে সমন্বয়ক পরিচয়ে নানা ধরনের দখল ও অনিয়মের অভিযোগও তুলে ধরেন উমামা। তিনি বলেন, “সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দখল করছে, কেউ কেউ আবার চাঁদাবাজিতেও জড়িয়েছে।”

আন্দোলনের ভেতরে একটি ‘সমন্বয়ক বাহিনী’ গড়ে উঠছে কিনা, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা উপন্যাসের উদাহরণ টেনে উমামা বলেন, “সেখানে আওয়ামী লীগের রক্ষীবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় দখল নিতে থাকে। এখন মনে হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই সমন্বয়ক বাহিনী গড়ে উঠছে।”

তিনি লাইভে স্পষ্ট করেন, “গতকাল পর্যন্ত কেউই সমন্বয়ক পরিচয় নিতে চাইছিল না, আর আজ দেখি সবাই সমন্বয়ক। এটা প্রশ্ন তো তুলেই।”

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

প্রাথমিকের সব প্রধান শিক্ষকের জন্য বড় সুখবর

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষকরা জাতি গঠনের মূল কারিগর। তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সম্প্রতি ১২৪/২০২২ নম্বর সিভিল রিভিউ পিটিশনে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বিদ্যমান ১১তম থেকে দশম গ্রেড বেতন স্কেলে উন্

২ ঘণ্টা আগে

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সময় ভবনে ছিল ৫৯০ শিক্ষার্থী : অধ্যক্ষ

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমাদের কাজ ছিল ইমিডিয়েট ছাত্রদের খোঁজ নেওয়া। যারা হারিয়ে গেছে অভিভাবকের কাছে পৌঁছেছে কি না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে ওইসময় নাড়াচাড়া করার কোনো অবকাশ ছিল না। আর ওই সময়ে এটা আমাদের প্রাইরোরিটি ছিল না।’

২ ঘণ্টা আগে

গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত হবেন না—তাসকিন

সবাইকে সত্যের সঙ্গে থাকার কথা জানিয়ে তাসকিন লিখেছেন, ‘এটা আমার, আমার পরিবার ও আমার বন্ধুর জন্য সম্মানজনক না। যা ঘটেছে সেজন্য, বন্ধু ও আমার মধ্যে কথা হয়েছে। এটা যে পর্যায়ে গেছে কোনভাবে এমনটা হওয়ার কথা নয়। শুধু একটা কথাই বলতে চাই—বিষয়টা অন্য, বাস্তবতা ভিন্ন (মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত)। আ

৩ ঘণ্টা আগে

জুলাই গণহত্যার বিচার একদিনও বিলম্বিত হওয়া উচিত নয় : ড. সলিমুল্লাহ খান

নতুন স্বৈরাচার তৈরি হলে জুলাই পরাজিত হবে বলে মন্তব্য তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। আপনারা যেটাকে ‘জুলাই সনদ’ বলছেন, সেটি আমরা রক্ত দিয়ে লিখেছি। এখন সেটার স্বীকৃতি আদায় করে নিতে হবে। যদি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হয়, যদি স্বৈরাচার আবার ফিরে আসে অথবা নতুন কোনো স্বৈর

৩ ঘণ্টা আগে