উত্ত্যক্তের শিকার কিশোরী, চিরকুট লিখে আত্মহত্যা

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার শৌলা গ্রামে নিজ ঘরে আড়া থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার গলায় ওড়না প্যাচানো ছিল।
এ সময় মরদেহের পাশে একটি চিরকূট পাওয়া গেছে। তাতে এক কিশোরের হাতে উত্ত্যক্তের শিকার হওয়ার কথা লিখেছে ওই কিশোরী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই কিশোরের উত্ত্যক্তের শিকার হওয়ার কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাতে খবর পেয়ে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
তার মরদেহের পাশে যে চিরকূট ছিল তাতে লেখা — ‘আমি আমার নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। ওই ছেলের জন্য আর ওর পরিবারের জন্য, আমার জীবন থেকে মনে হয় সব সুখ-শান্তি চলে...।’
স্বজনরা জানান, ওই কিশোরী বাউফলের পূর্বকালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ত। চিরকূটে যার কথা লেখা আছে সেও একই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী বলে ধারণা স্বজনদের। কারণ স্কুলে যাতায়াতের পথে এই কিশোর এর আগেও উত্ত্যক্ত করেছে বলে ওই কিশোরী অভিযোগ করেছিল।
স্বজনরা আরও বলছেন, উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ এর আগে ওই কিশোরের পরিবারকেও জানানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও জানানো হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই কিশোর আরেক সহপাঠীর সঙ্গে তোলা ওই ছাত্রীর ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে পোস্ট করে। ফেসবুকে ওই পোস্ট দেখার পরই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
নিহত কিশোরীর মা কুলসুম বলেন, আমার মেয়ে অত্যন্ত ভদ্র। পথেঘাটে উত্ত্যক্তের শিকার হতো। ওই ছেলে অনেক বাজে বাজে কথা বলত। ছেলেটির পরিবারের কাছে বিচার চেয়েছি। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শুক্রবার আমার মেয়ের সঙ্গে তার এক সহপাঠীর তোলা স্বাভাবিক ছবিতে বাজে মন্তব্য লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় আমার মেয়ে লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মেয়েটির বাবা নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা আমার মেয়েকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
পূর্বকালাইয়া হাসান সিদ্দিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই ছাত্রী খুব ভালো ও নম্র-ভদ্র ছিল। উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি আমাকেও জানানো হয়েছি। আমিও ছেলেটির পরিবারকে ডেকে জানিয়েছিলাম, সতর্ক হতে বলেছিলাম। এর মধ্যেই এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটে যাবে, এটি অনাকাঙ্ক্ষিত, অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে জানতে ছেলেটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছেলেটিসহ তার পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি শুরুতে পুলিশকে জানানো হয়নি। বিকেল সাড় ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ঘটনা ঘটলেও রাত ১০টার পর খবর পায় পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।