নেত্রকোণায় নাশকতার মামলায় সাংবাদিকদের জড়ানোয় ক্ষোভ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১০: ২১
সাংবাদিক জিয়াউর রহমান

নেত্রকোণায় নাশকতার বিভিন্ন মামলায় সাংবাদিকদের জড়াচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সোমবার (২৬ মে) জেলার কেন্দুয়া থানায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি নাশকতা মামলাতেও জিয়াউর রহমান নামের এক সাংবাদিককে ঘটনায় জড়িয়ে আসামি করা হয়।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে জেলায় অন্তত ৯ জন পেশাদার সাংবাদিককে রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা হয়। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

সোমবার দায়ের করা মামলাটির বাদী কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা শ্রমিক দলের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সবুজ মিয়া। মামলার এজাহারে দেখা যায়, এতে কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আসাদুল হক ভূঁয়াকে প্রধান আসামি করে ১৯৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৩০০ জনকে। মামলায় ৭২ নম্বর আসামি করা হয় জিয়াউর রহমানকে।

পৌর শহরের কুণ্ডলী এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ইত্তেফাক পত্রিকায় কেন্দুয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি দেশ টিভি এবং প্রতিদিনের বাংলাদেশ প্রত্রিকায় নেত্রকোণা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দুয়া রির্পোটার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার জিয়াউর রহমান ওরফে রহমান জীবন ‘চর্চা সাহিত্য আড্ডা’ নামের একটি সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত আসামিরা পৌরসভার চিরাংমোড়, খেলার মাঠের পাশে সিএনজি স্টেশন, সাউদপাড়া মোড়, বাদে আঠারোবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভয়-ভীতি দেখানোসহ রাস্তা বন্ধ করে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার কিছুটা দেরিতে হলেও তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহারে ৭২ নম্বর আসামি জিয়াউর রহমানের বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে বাদীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয় মামলা করতে হবে। তাই আমি মামলাটির বাদী হয়েছি। এজাহারে উল্লেখ করা আসামি অনেককেই আমি চিনি না। সাংবাদিক জিয়াউর রহমানকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এটা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি বাদী হয়েছি। তিনি আরও জানান, ‘মামলা নিয়ে অভিযোগ থাকলে দলীয়ভাবে সমাধান করা হবে।’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম হিলালী জানান, জিয়াউর রহমানকে সাংবাদিক হিসেবে মামলা দেওয়া হয়নি। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদে রয়েছেন। তবে কোন পদে রয়েছেন তা জেনে বলতে হবে বলে জানান ওই নেতা। এরপর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে অপু উকিল, আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে জিয়াউরের ছবি পাঠান তিনি।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, আমরা জানতে পায় মফস্বল এলাকার সাংবাদিক সব ধরনের রিপোর্ট করতে হয়। একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে হয়। এ সময় অনেকের সাথে ছবি থাকতেই পারে। তাই বলে এভাবে হয়রানি করা ঠিক কি ?

জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এজাহারে যে সময় ও ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কোনো ছবিও তোলেননি। এ বিষয়ে কোনো সংবাদও তাঁর মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়নি। তাঁকে অহেতুক এসব তকমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। গত সরকারের আমলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ করাসহ উপজেলার বলাইশিমুল খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরিতে বাধাঁ দেয়ায় তাঁকে বিএনপি ঘরানা সাংবাদিক হিসেবে হয়রানি করা হতো।’

কেন্দুয়া রিপোটার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন পেশাদার সাংবাদিক। সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁকে এভাবে আসামি করায় স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এটা তাঁর জন্য এটা অত্যন্ত অসম্মানের।’

অধিকারকর্মী আবুল কালাম আল আজাদ জানান, ‘একজন পেশাদার সংবাদকর্মীকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা উদ্বেগের। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা, মত প্রকাশ ও মানবাধিকার পরিপন্থি কাজ। এই হয়রানিমূলক মামলা থেকে জিয়াউর রহমানের নাম অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৭ আগস্ট থেকে ২৬ মে পর্যন্ত জেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৫৮টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় ছয় হাজারের মতো আসামি করা হয়। সোমবারের মামলায় প্রধান আসামি আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ অনেকেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার অনেকই আত্মগোপনে গেছেন।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

ad
ad

মাঠের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে বিএনপি নেতা কুদ্দুসের এ কেমন আচরণ!

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছত্রছায়ায় নিজের বড় ভাইকে হয়রানি করতে পাঁচটি মিথ্যা মামলা করেন আব্দুল কুদ্দুস।

১৬ ঘণ্টা আগে

শ্রমিকদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রামের সংঘর্ষে আহত ২০, যান চলাচল ব্যাহত

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় মহাসড়‌কের দুই দিকেই ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। খবর পে‌য়ে নান্দাইল ম‌ডেল থানা থে‌কে পু‌লিশ ও গৌরীপু‌র সেনাক‌্যাম্প থে‌কে সেনাবা‌হিনীর সদস‌্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

১৭ ঘণ্টা আগে

বিএনপি-গণঅধিকার পরিষদ মুখোমুখি, গলাচিপা-দশমিনায় ১৪৪ ধারা

গলাচিপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহামুদুল হাসান এবং দশমিনারে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরতিজা হাসান শুক্রবার (১৩ জুন) সকাল ৮টা থেকে তিন দিনের জন্য নিজ নিজ উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে মাইকিং করেছেন।

১৯ ঘণ্টা আগে

তরুণীকে উত্ত্যক্ত, সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৫

স্থানীয়রা জানান, শার্শা উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামের রকিবুল তার বান্ধবীকে নিয়ে গদখালীতে বেড়াতে যান। এ সময় টাওরা গ্রামের মোড়ে পাঁচ তরুণ রকিবুল ও তার বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করে। সে সময় একজন পথচারী সেনাসদস্যদের সাহায্য চাইলে দ্রুত তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাঁচজনকে আটক করে।

১ দিন আগে