top ad image
top ad image
home iconarrow iconমাঠের রাজনীতি

ধর্ষণের শিকার শহিদকন্যার আত্মহত্যা, শায়িত বাবার কবরের পাশে

ধর্ষণের শিকার শহিদকন্যার আত্মহত্যা, শায়িত বাবার কবরের পাশে
বাবার কবরের পাশেই কবর, সেখানে শায়িত করা হয়েছে মেয়েটিকে। ছবি: সংগৃহীত

বাবার কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জসিম উদ্দিনের কলেজপড়ুয়া মেয়েকে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬ নম্বর রোডের ভাড়া বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে টুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে বাবা শহিদ জসিমের কবরের পাশে তাকে শায়িত করা হয়।

শনিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ৬ নম্বর রোডের ভাড়া বাসা থেকে মেয়েটির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মা ও ছোট দুই ভাইবোনের সঙ্গে মেয়েটি সেখানে থাকতেন। রাতে তার মা আরেক বোনকে নিয়ে কাছেই একটি মাদরাসায় গেলে বাসা ফাঁকা হয়ে যায়। ওই সময় মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন।

মেয়েটির মৃত্যুর খবরে দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারের সদস্যরা জানান, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থেকে চরম মানসিক অস্থিরতা, অপমানবোধ ও সামাজিক চাপের কারণে মেয়েটি চরম হতাশায় ভুগছিলেন। তাদের ধারণা, মানসিক যন্ত্রণাই শেষ পর্যন্ত তাকে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

এ দিন মেয়েটির মৃত্যুর খবরে সকাল থেকেই তার বাড়িতে জড়ো হতে থাকে লোকজন। নাতনির জন্য তখন ছেলে জসিমের কবরের পাশে আরেক কবর খুঁড়ছিলেন দাদা আবদুস সোবাহান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আন্দোলনে ছেলেকে হারালাম। ভেবেছিলাম, নাতনি তো আছে। শনিবার সকালেও তার সঙ্গে কথা হলো। রাতে সেও চলে গেল।

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেয়েটির মরদেহবাহী গাড়ি দুমকির বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। রাত ৮টার দিকে বাড়ির পাশের মাঠে তার জানাজা হয়। জানাজায় ঢাকা ও জেলার বিএনপি ও এনসিপি নেতাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশে শায়িত করা হয় লামিয়াকে।

Janaja-Of-Daughter-Of-July-Martyr-27-04-2025

রোববার রাতে পটুয়াখালীর দুমকিতে নিজ বাড়ির পাশের মাঠে মেয়েটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: রাজনীতি ডটকম

মেয়েটির আত্মহত্যার খবরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে রোববার সন্ধ্যায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিনিধি দলও পটুয়াখালীর দুমকিতে শহিদ জসিমের বাড়িতে যায়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন ও সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবে জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে বুলেট বরণ করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন শহিদ জসিম। সেই শোক কাটতে না কাটতেই তার পরিবারে আরেকটি শোকাবহ ঘটনা ঘটে গেল। মেয়েটির ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হলে আজ হয়তো তাকে জীবন দিতে হতো না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ হাসানও মেয়েটির পরিবারের পাশে দাঁড়ান।

এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, এসব নরপিশাচদের মৃত্যুদণ্ড আমরা দেখতে চাই। এদের মৃত্যুদণ্ড প্রকাশ্যে না হলেও ভিডিও ধারণ করে তার জনসমক্ষে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

Ruhul-Kabir-Rijvi-At-Patuakhali-Dumki-To-Attend-Funeral-Of-The-Daughter-Of-July-Martyr-27-04-2025

মেয়েটির জানায় অংশ নিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: রাজনীতি ডটকম

এর আগে গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে বাবার কবর জেয়ারত করে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন শহিদ জসিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে। ঘটনা চেপে রাখতে এ ঘটনার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাকে।

পরে ২০ মার্চ দুপুরের দিকে দুমকী থানায় মামলা করেন ওই কলেজছাত্রী। ওই দিনই মামলার আসামি সিফাত মুন্সিকে (২০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশ পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার একটি গ্রাম থেকে সাকিব (১৯) নামে আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

পটুয়াখালী দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন জানান,, গ্রেপ্তার দুই আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তারা স্বীকার করেছেন। ডিএনএ টেস্টের জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে দুই আসামি পটুয়াখালী কারাগারে আটক রয়েছেন।

r1 ad
top ad image