বিবিসি বাংলা
তৈরি পোশাকসহ কিছু বাংলাদেশি পণ্য স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করে যে বিধিনিষেধ ভারত সরকার আরোপ করেছে, তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কেমন হবে তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই একে বাংলাদেশের বিষয়ে ‘ভারতের একটি কড়া বার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। দুই দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে কেউ কেউ এটিকে দেখছেন ‘পালটাপালটি পদক্ষেপ’ হিসেবেও।
ভারত এর আগে গত মাসের শুরুতে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর বাংলাদেশও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সূতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল। এবার ভারত আরও কিছু পণ্য বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থলবন্দর ব্যবহারে বিধিনিষেধ প্রয়োগের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে তাতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরও জটিল ও বাধাগ্রস্ত হবে। এতে ভারতীয় আমদানিকারকরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তারা কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, বিষয়টি নিতান্তই অর্থনৈতিক নয়, বরং এতে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন ঘটেছে। ফলে এ সংকটের সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) শনিবার আরোপ করা বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, কোনো স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরনের পোশাক পণ্য ভারতে ঢুকতে পারবে না।
এ ছাড়া এ আদেশে ফল, ফলের-স্বাদযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস; বেকারি, চিপস, স্ল্যাকস ও কনফেকশনারিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার; তুলা ও সুতার ঝুট; পিভিসিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য; এবং কাঠের তৈরি আসবাবপত্র আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের চেংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী দিয়ে ভারতের আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও পাথর আমদানি বহাল রেখেছে ভারত। সেই সঙ্গে দেশটির ওপর দিয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিও অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে তারা। আর তৈরি পোশাক এখন থেকে কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।
এর আগে গত মাসেই বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি। পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব সামগ্রী।
আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য।
অন্যদিকে গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে, যা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছিল। এ ছাড়া সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতেও বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। এই রাজ্যগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছিলেন।
এখন ভারতের নতুন বিধিনিষেধে এর দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। কারণ তৈরি পোশাক স্থলবন্দরের পরিবর্তে সমুদ্রবন্দর দিয়ে পাঠাতে হলে খরচ ও সময় দুটি বেশি লাগবে।
ভারতের এ সিদ্ধান্তে উভয় দেশের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ। তিনি বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠালে আমাদের খরচ ও সময় কম লাগে। সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠালে ব্যয় বাড়বে, আবার সময়ও অনেক বেশি লাগবে। কিন্তু এতে যে শুধু আমাদের ক্ষতি হবে তা নয়, ভারতীয় আমদানিকারকদেরও তো খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ থেকে এখন প্রায় ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয় ভারতে, যা প্রতিবছরই বাড়ছিল। ফয়সাল সামাদ বলছেন, এর বড় অংশই স্থলবন্দর ব্যবহার করে রফতানি হচ্ছিল। ফলে দুপক্ষই লাভবান হচ্ছিল।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অবশ্য রোবববার ঢাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, নতুন বিধিনিষেধের বিষয়ে ভারত এখনো বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
উপদেষ্টার দাবি, ভারতই বাংলাদেশে বেশি রপ্তানি করে বলে স্থলবন্দরকেন্দ্রিক বিধিনিষেধে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলেও তিনি আশাবাদ জানান। তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় তারা কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা পরিষ্কার নয়।
অন্যদিকে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভারতের সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। ভারতে তাদের রপ্তানির পরিমাণ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
প্রতিষ্ঠানটি ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বেশি পণ্য রপ্তানি করে। তাদের পণ্যের মধ্যে খাদ্য, কনফেকশনারি ও প্লাস্টিক সামগ্রীর বড় বাজার হলো ভারতের ওই এলাকা।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল মনে করেন, ভারতের বিধিনিষেধ কার্যকর হলে বা বহাল থাকলে তাতে তাদের পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, যে সাতটি বন্দর আমরা ব্যবহার করি রপ্তানির জন্য, তার পাঁচটিই এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে। উত্তরপূর্ব ভারত আমাদের বড় বাজার। এই বিধিনিষেধ সেখানে বড় প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলছেন, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বেশি নয়, এটি সত্য। আবার বাংলাদেশের মোট রপ্তানির অনুপাতে সেটি আবার একেবারে কমও নয়।
‘ফলে ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে। কারণ আমাদের বাজার ও পণ্য বৈচিত্র্য কম। ভারতে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার অধিকাংশই উন্নত দেশে রপ্তানি সম্ভব হবে না। আবার সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে রপ্তানিকারকদের,’— বলেন ড. মনিরুল।
এ ছাড়া একটি রপ্তানি বাজার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হলে তা থেকে উত্তরণের কোনো পূর্বপরিকল্পনাও বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দেখা যায় না। এ কারণেই ভারতের রপ্তাতানি যেটুকু আছে সেটুকু বাধাগ্রস্ত হলে উত্তরণ বা বিকল্প কী হবে তা কারও জানা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন আছে বিগত সরকারকে কেন্দ্র করে, এটিকে (নতুন বিধিনিষেধ) তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। তবে সম্প্রতি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পরেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাকে বিস্মিত করেছে।
দেবপ্রিয় বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ এমনি এমনি হয় না। এটা (সম্পর্ক) যে ক্রমবর্ধমানভাবে জটিল ও অনুপযোগী হয়ে উঠছে, চিন্তার বিষয়। এ থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক প্রচেষ্টা লাগবে। অভিন্ন স্বার্থ ও পারস্পারিক শ্রদ্ধার নিরিখে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে নতুন ভিতের ওপর নবায়ন হবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কালে সীমান্তকেন্দ্রিক বাণিজ্য যে চাপের মুখে পড়েছে, সেটা এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
তৈরি পোশাকসহ কিছু বাংলাদেশি পণ্য স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করে যে বিধিনিষেধ ভারত সরকার আরোপ করেছে, তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব কেমন হবে তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই একে বাংলাদেশের বিষয়ে ‘ভারতের একটি কড়া বার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। দুই দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে কেউ কেউ এটিকে দেখছেন ‘পালটাপালটি পদক্ষেপ’ হিসেবেও।
ভারত এর আগে গত মাসের শুরুতে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর বাংলাদেশও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সূতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছিল। এবার ভারত আরও কিছু পণ্য বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করল।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থলবন্দর ব্যবহারে বিধিনিষেধ প্রয়োগের এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে তাতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি আরও জটিল ও বাধাগ্রস্ত হবে। এতে ভারতীয় আমদানিকারকরাও ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তারা কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, বিষয়টি নিতান্তই অর্থনৈতিক নয়, বরং এতে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন ঘটেছে। ফলে এ সংকটের সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) শনিবার আরোপ করা বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, কোনো স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোনো ধরনের পোশাক পণ্য ভারতে ঢুকতে পারবে না।
এ ছাড়া এ আদেশে ফল, ফলের-স্বাদযুক্ত পানীয় ও কার্বোনেটেড ড্রিংকস; বেকারি, চিপস, স্ল্যাকস ও কনফেকশনারিতে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবার; তুলা ও সুতার ঝুট; পিভিসিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য; এবং কাঠের তৈরি আসবাবপত্র আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম ও পশ্চিমবঙ্গের চেংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী দিয়ে ভারতের আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও পাথর আমদানি বহাল রেখেছে ভারত। সেই সঙ্গে দেশটির ওপর দিয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানিও অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে তারা। আর তৈরি পোশাক এখন থেকে কেবল কলকাতা ও মুম্বাইয়ের নভসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে।
এর আগে গত মাসেই বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি। পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন কোম্পানির প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব সামগ্রী।
আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য।
অন্যদিকে গত বছর বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারতের বন্দর ব্যবহার করে, যা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার আওতায় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি বাড়ছিল। এ ছাড়া সেভেন সিস্টার্স হিসেবে পরিচিত উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতেও বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। এই রাজ্যগুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কোম্পানি নতুন নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করছিলেন।
এখন ভারতের নতুন বিধিনিষেধে এর দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। কারণ তৈরি পোশাক স্থলবন্দরের পরিবর্তে সমুদ্রবন্দর দিয়ে পাঠাতে হলে খরচ ও সময় দুটি বেশি লাগবে।
ভারতের এ সিদ্ধান্তে উভয় দেশের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করছেন তৈরি পোশাক খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ। তিনি বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠালে আমাদের খরচ ও সময় কম লাগে। সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠালে ব্যয় বাড়বে, আবার সময়ও অনেক বেশি লাগবে। কিন্তু এতে যে শুধু আমাদের ক্ষতি হবে তা নয়, ভারতীয় আমদানিকারকদেরও তো খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ থেকে এখন প্রায় ৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয় ভারতে, যা প্রতিবছরই বাড়ছিল। ফয়সাল সামাদ বলছেন, এর বড় অংশই স্থলবন্দর ব্যবহার করে রফতানি হচ্ছিল। ফলে দুপক্ষই লাভবান হচ্ছিল।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অবশ্য রোবববার ঢাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, নতুন বিধিনিষেধের বিষয়ে ভারত এখনো বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
উপদেষ্টার দাবি, ভারতই বাংলাদেশে বেশি রপ্তানি করে বলে স্থলবন্দরকেন্দ্রিক বিধিনিষেধে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলেও তিনি আশাবাদ জানান। তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় তারা কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা পরিষ্কার নয়।
অন্যদিকে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভারতের সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। ভারতে তাদের রপ্তানির পরিমাণ বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
প্রতিষ্ঠানটি ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বেশি পণ্য রপ্তানি করে। তাদের পণ্যের মধ্যে খাদ্য, কনফেকশনারি ও প্লাস্টিক সামগ্রীর বড় বাজার হলো ভারতের ওই এলাকা।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল মনে করেন, ভারতের বিধিনিষেধ কার্যকর হলে বা বহাল থাকলে তাতে তাদের পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, যে সাতটি বন্দর আমরা ব্যবহার করি রপ্তানির জন্য, তার পাঁচটিই এই বিধিনিষেধের আওতায় পড়েছে। উত্তরপূর্ব ভারত আমাদের বড় বাজার। এই বিধিনিষেধ সেখানে বড় প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলছেন, ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ বেশি নয়, এটি সত্য। আবার বাংলাদেশের মোট রপ্তানির অনুপাতে সেটি আবার একেবারে কমও নয়।
‘ফলে ভারতের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে। কারণ আমাদের বাজার ও পণ্য বৈচিত্র্য কম। ভারতে যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার অধিকাংশই উন্নত দেশে রপ্তানি সম্ভব হবে না। আবার সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে রপ্তানিকারকদের,’— বলেন ড. মনিরুল।
এ ছাড়া একটি রপ্তানি বাজার নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হলে তা থেকে উত্তরণের কোনো পূর্বপরিকল্পনাও বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দেখা যায় না। এ কারণেই ভারতের রপ্তাতানি যেটুকু আছে সেটুকু বাধাগ্রস্ত হলে উত্তরণ বা বিকল্প কী হবে তা কারও জানা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে টানাপোড়েন আছে বিগত সরকারকে কেন্দ্র করে, এটিকে (নতুন বিধিনিষেধ) তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। তবে সম্প্রতি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পরেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাকে বিস্মিত করেছে।
দেবপ্রিয় বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ এমনি এমনি হয় না। এটা (সম্পর্ক) যে ক্রমবর্ধমানভাবে জটিল ও অনুপযোগী হয়ে উঠছে, চিন্তার বিষয়। এ থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক প্রচেষ্টা লাগবে। অভিন্ন স্বার্থ ও পারস্পারিক শ্রদ্ধার নিরিখে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে নতুন ভিতের ওপর নবায়ন হবে সেই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
এই অর্থনীতিবিদের মতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কালে সীমান্তকেন্দ্রিক বাণিজ্য যে চাপের মুখে পড়েছে, সেটা এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
২১ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ৭১৮ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ভরি দুই হাজার ৩৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৬ দিন আগেঅর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঈদে টানা ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটিতে দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না বা স্থবির হবে না। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
৭ দিন আগেসবার চেষ্টায় আর্থিক খাতকে একটা পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে। মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হয়েছে। মানুষকে আরো কিভাবে স্বস্তি দেওয়া যায় সে চেষ্টা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় বাজেটের আকার প্রথমবারের মতো কমানো হয়েছে।’
৮ দিন আগেতিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে কমে ৯ শতাংশের কিছু বেশি হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।’
৮ দিন আগে