গণসংহতি আন্দোলনের নিবন্ধনে বাধা নেই: আইনজীবী\n
পুরনো ধারার রাজনীতির বিলোপ ও নতুন বন্দোবস্তের যে রাজনীতির কথা জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের মুখে রয়েছে, জোনায়েদ সাকি ও তার দল গণসংহতি আন্দোলন বহু আগে থেকেই সে কথা বলে আসছেন। জনসম্পৃক্ত রাজনীতিকেই সবসময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন সাকি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘সামনে জোট কী হবে, সে প্রশ্নের চেয়ে এই মুহূর্তে আমরা সংস্কার ও নির্বাচন কীভাবে হবে তার ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। নির্বাচনের জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রোডম্যাপ কীভাবে হবে, তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। জোট নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা শুরু হয়নি।’
‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে’র সঙ্গে মিললেই জোট হতে পারে জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জোট নিয়ে ভাবা হচ্ছে, কিন্তু বলার মতো কোনো অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। আন্দোলনে হোক আর নির্বাচনের জন্য হোক, ঐক্যের ক্ষেত্রে আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, সংবাধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিকায়নের মধ্যে ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্য কার সঙ্গে কতটা মিলছে, তার ওপর ভিত্তি করেই আমরা ঐক্যের পরিকল্পনা করব।’
সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বক্তব্যের অনেকটাই মিল দেখা যাচ্ছে। এসব ইস্যুতে আবার বিএনপির সঙ্গে মতাদর্শগত বড় পার্থক্য রয়েছে গণসংহতি আন্দোলনের। সে ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে না হয়ে এনসিপির সঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের জোট হতে পারে কি না— এমন প্রশ্নও রাখা হয় রাজনীতি ডটকমের পক্ষ থেকে।
জবাবে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সংস্কার-রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। সেই অবস্থানের সঙ্গে যাদের মিলবে, তাদের সঙ্গেই ঐক্য হতে পারে। সেই প্রক্রিয়াটি এখনো শুরু হয়নি। তবে ভোট-জোটের মধ্যেই আমরা সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। আমাদের রাজনৈতিক উত্তরণের জন্য সবার মধ্যে একটা ঐক্য প্রয়োজন। কারণ ফ্যাসিবাদের পতন-পরবর্তী এই সময়ে আমরা সবাই মিলে যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক উত্তরণ না ঘটাতে পারি, তাহলে এক ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে। সে কারণেই আমরা জোটের রাজনীতির চেয়ে ঐক্যের রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ার সে উদ্যোগ শুরু হয়েছে বুধবার। প্রথম দিনেই জুলাই অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে আলোচনা করেছে তারা।
এদিকে সংস্কার প্রশ্নে গণসংহতি আন্দোলন ও এনসিপির অবস্থানের মিল রয়েছে অনেকটাই। সেখানে গণসংহতির পুরনো মিত্র বিএনপির সঙ্গে এনসিপির অবস্থানের মধ্যে ব্যবধান ব্যাপক। বিএনপি-এনসিপি বৈরী অবস্থানের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যুক্ত করতে পারে বলে মনে করছে রাজনীতি সচেতন মহল।
এর মধ্যে ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে শরিক জোট ও মিত্রদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গত ২২ এপ্রিল যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে বিএনপি। সেই বৈঠকে অন্যদের সঙ্গে জোনায়েদ সাকিও উপস্থিত ছিলেন।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম দল গণসংহতি আন্দোলন ও জোনায়েদ সাকির নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে একে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু)। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘যার যার দলীয় অবস্থান থাকবে, এটাই স্বভাবিক। ভিন্নমত থাকাটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আন্দোলনের শরিক বলে সবাই সব বিষয়ে একমত হবে এটা আমরা মনে করি না। সেটা তো বাকশালি পন্থা। আমরা বিশ্বাস করি, মতপার্থক্য নিয়েও রাজনৈতিক দলগুলো বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্য গড়ে তুলতে পারে।’
অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ধারার দলগুলোকে নিয়ে নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সিপিবি-বাসদসহ বাম ঘরানার কয়েকটি দল। সেখানে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও নাগরিক ঐক্যের মতো দলগুলোর সঙ্গেও প্রাথমিক পর্যায়ের কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সংবিধান সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে সিপিবি-বাসদসহ বাম দলগুলোর মতবিরোধ রয়েছে। তাই গণসংহতি আন্দোলনকে নতুন এই জোটে দেখার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এ প্রসঙ্গে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা কম। কারণ তাদের নিজস্ব যে রাজনীতি, তা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট না। সংবিধান পুনর্লিখন, চার মূলনীতি পরিবর্তন, দেশের নাম পরিবর্তন— এসব বিষয়ে আমরা একমত না। এগুলো প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল হিসেবে আমরা দেখি।’
নাম উল্লেখ না করেও গণসংহতি আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যে গ্রুপের কথা আপনি বলছেন সে গ্রুপের কেউ কেউ দেখি তারা এসবের সমর্থক। তবে এই গ্রুপের কোনো কোনো দলের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে।’