top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

তিন দিনে রাজনৈতিক শক্তি দেখানোর ৫ সমাবেশ

তিন দিনে রাজনৈতিক শক্তি দেখানোর ৫ সমাবেশ
ছুটির তিন দিনে পাঁচটি দল বড় সমাবেশ ডেকেছে রাজধানীতে

পরপর তিন দিন সরকারি ছুটির মধ্যে পাঁচটি বড় রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশ আয়োজনকে শক্তি প্রদর্শনের মহড়া হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

মাঠে সরব বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি এবং অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ও নতুন রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের জনসমর্থন দেখানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে এসব সমাবেশের মাধ্যমে।

এসব কর্মসূচিতে বাধা, আক্রমণ বা পালটা আক্রমনের সম্ভাবনা কম। তবে বিপুল জনসমাগমের চেষ্টা থাকায় ছুটির দিন হলেও পরপর এই তিন দিন ঢাকা শহরে কিছু এলাকায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ মে) থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনের সরকারি ছুটি। এই তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় পাঁচটি দল ও বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করে রাজধানীতে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ভোট চায়, সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়। ফলে মে দিবসের অনুষ্ঠান হলেও সেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের সমাবেশ ঘটিয়ে নিজেদের জনসমর্থনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে সরকারের ওপর পরোক্ষভাবে চাপ তৈরি তাদের রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। ফলে এখানে অনুষ্ঠানের উপলক্ষ্য নয়, নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে নিজেদের অবস্থান দেখানোটাই মুখ্য বিষয়।’

জাতীয় নির্বাচনের পরিবর্তনে এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন চায় উল্লেখ করে অধ্যাপক দিলারা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে এনসিপির অবস্থান কিছুটা ভিন্ন। তারা গণপরিষদ নির্বাচন চায়। কিন্তু বক্তব্য-বিবৃতি বা কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি নিজেদের মতাদর্শ স্পষ্ট করতে পারেনি বলে মনে করেন অনেকেই। তাদের জনসম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে তারাও বড় সমাবেশ ঘটিয়ে সবার সামনে নিজেদের জনসমর্থন দেখানোর কৌশল নিতে পারে।’

মে দিবসে ৩টি বড় সমাবেশ

মে দিবসে তিনটি বড় সমাবেশ করবে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির শ্রমিক সংগঠনগুলো। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পৃথক পৃথক কর্মসূচি তো রয়েছেই।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ঢাকার নয়াপল্টনে শ্রমিক সমাবেশ করবে বিএনপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক দল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঢাকা মহানগরের বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সমাবেশে অংশ নেবেন।

এর আগে সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার পল্টন মোড়ে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ হবে। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

মে দিবস উপলক্ষে বিকেল ৩টায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে (কাকরাইল) জাতীয় শ্রমিক পার্টির উদ্যোগে আলোচনা ও বর্ণাঢ্য রালির আয়োজন করা হয়েছে। রালির শুরুতে অনুষ্ঠেয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এনসিপির সমাবেশ

শুক্রবার (২ মে) বিকেল ৩টায় আওয়ামী লীগের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে সমাবেশ করবে। গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের এই দলের কর্মসূচি থেকে গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার, এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা এবং নিবন্ধন বাতিল করার দাবি জানানো হবে।

২১ এপ্রিল থেকে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিক্ষোভ, সমাবেশ ও মশাল মিছিলের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে এনসিপি। কর্মসূচি পালন করেছে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলাতেও।

এনসিপির ওই সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুন, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালে মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের ঘটনাসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করা হবে।

শক্তি দেখাবে হেফাজত

শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ ঘিরে নানা জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। প্রায় এক মাস ধরে সংগঠনটি প্রস্তুতি নিচ্ছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই মহাসমাবেশ উপলক্ষ্যে ঢাকা অচল হতে পারে।

হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, মহাসমাবেশে তাদের মুখ্য দাবি হবে মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। সংগঠনটির হিসাবে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০ মামলা রয়েছে। এক যুগ আগে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান রাজনীতিতে আলোচিত ঘটনা।

মহাসমাবেশ থেকে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইবে দলটি।

এ ছাড়া নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিও থাকবে হেফাজতের।

তিন দিনের টানা কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা রয়েছে। জনসমাগম দেখিয়ে সবাই নিজের শক্তি প্রমাণ করতে চাইবে। আছে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনও বাড়তি প্রস্তুতি নিচ্ছে।

r1 ad
top ad image