নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে সবগুলোই বাতিলযোগ্য: উমামা

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে ইসলামি দলগুলোর প্রতিবাদের সমালোচনা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, (নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের) প্রস্তাবনা ঠিক মনে না হলে মত-দ্বিমতের সুযোগ রয়েছে। সেটা না করে পুরো কমিশন বাতিলের কথা তোলা হচ্ছে কোন উদ্দেশ্যে? এই কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে বাকি সব সংস্কার কমিশনের রিপোর্টও বাতিলযোগ্য।
শনিবার (৩ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে এদিন সকালে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশের প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ ডেকেছিল হেফাজতে ইসলাম।
সমাবেশ থেকে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে আলেম-ওলামার পরামর্শে ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারীসমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। নারীর সামাজিক উন্নয়নে পশ্চিমা মূল্যবোধ নয়, বরং আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকেই বাস্তবমুখী সংস্কারের দিকে যেতে হবে।
সমাবেশে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহসহ হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, জুলাইয়ের পর মেয়েদের সাইডে বসায় দিয়ে এখন রাজনৈতিক পাড়ায় নারী অধিকার নিয়ে সালিশ বসছে দেখছি। হায়রে নাটক! সরকার তো একটা ঐকমত্য কমিশন বানাল সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে আলাপ করার জন্য। সবগুলো সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট ঘেঁটে দেখলেই অনেক অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবনা চোখে পড়বে।
উমামা লিখেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে (প্রয়োরিটি বেসিসে) সংস্কার প্রস্তাবনার পক্ষে/বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারবে। এর মধ্যে নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে সর্বস্তরের নারীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রস্তাবনা ঠিক মনে না হলে মত-দ্বিমতের সুযোগ রয়েছে।
দ্বিমত না করে গোটা প্রতিবেদন ও কমিশনই বাতিলের দাবিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন উমামা। এর মাধ্যমে নারীবিদ্বেষকেই উসকে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন তিনি।
উমামা লিখেছেন, নারীরা কোনো ব্যবহারের বস্তু না যে আপনার গদি সিকিউর করে রান্নাঘরে ফিরে যাবে। অভ্যুত্থানের পর দেশের ৫০ শতাংশ জনগণের অধিকারের প্রশ্ন যাদের কাছে উটকো ঝামেলা লাগে, তারা আসলে কোন ধরনের রাজনীতি করতে চায় তারাই জানে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু জনসম্মুখে সভা-সমাবেশ করে যেসব বক্তৃতা ঝাড়া হচ্ছে, তাতে আপনাদের বিরোধের পরিবর্তে নারীবিদ্বেষটাই বেশি প্রকাশ পায়। স্পষ্ট করেই বলতে চাই, নারীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি মেইনস্ট্রিম হবে না। জুলাই অভ্যুত্থানে তা পরিষ্কারভাবেই বোঝা গেছে। স্টেজে গলাবাজি করে, চোখ রাঙানি দিয়ে নারীদের প্রান্তিক করা সম্ভব না।