বিবিসি বাংলা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ বিএনপিকে ‘ক্ষুব্ধ’ করেছে। পাশাপাশি দলটি মনে করছে, ‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করার সুযোগ তৈরির জন্য’ই এপ্রিল মাসে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক ইউনূস। সে ভাষণে তিনি ‘শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেছেন এবং একটি ‘বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন’— এমন অভিযোগ তুলেছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নির্বাচনের যে সময় প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন সেটি ‘বাস্তবতার নিরিখে’ই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
‘গণতন্ত্রে উত্তরণ বিলম্বিত হলে সংকট ঘনীভূত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টামণ্ডলী নিরপেক্ষ চরিত্র হারিয়েছেন। এপ্রিল কোনোভাবেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য যথাযথ সময় নয়,’— বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তবে জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। আবার কিছু দল মনে করছে, নির্বাচনের অন্তত একটা সময় যে সরকার জানিয়েছে, এটিই তাদের কাছে বড় স্বস্তির বিষয়।
বিশ্লেষকরা কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিএনপি ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যের বিপরীতে ‘জামায়াতের পরামর্শ’ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি চাপের মুখে কিছু মেনে নেবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের জন্য এপ্রিলকে বেছে নেওয়ার মধ্যে একটা জিদের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। ওরা চাইলে কেন, তাই দেবো না— মনে হয়ে এই ইগো থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলোর মতকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেকজন শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, নির্বাচন কেন ডিসেম্বরের মধ্যে করা যাবে না কিংবা এপ্রিলে হলে জাতির কী কী সুবিধা হবে— এটি প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ দেবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।
এ ছাড়া রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি তৈরিতে নিয়োজিত, এটা তাদেরই শিল্পকর্ম।
চট্টগ্রাম বন্দরকে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড’ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস এই হৃদপিণ্ডকে বড় ও মজবুত করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ।’
যদিও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করিডর ও বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরপরই বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসে। ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন লন্ডনে থাকা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। পুরো বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ ছাড়াও বন্দর ও করিডোর ইস্যুতে দেওয়া বক্তব্যে ক্ষোভের বর্হিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
পরে রাতেই সংবাদমাধ্যমে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বন্দর, করিডোর ইত্যাদি এমন সব বিষয়ে অবতারণা করেছেন যা তারই ভাষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি ম্যান্ডেটের মধ্যে পড়ে না। ভাষণে তিনি শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছেন বলে সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, ডিসেম্বরের মধ্যে কেন নির্বাচন করা যাবে না-— তার কোনো কারণ প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে তুলে ধরেননি। স্থায়ী কমিটির বক্তব্যে বলা হয়েছে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট, অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনি প্রচার ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
স্থায়ী কমিটির সভা রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে দলের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে।
এসবের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের আচরণে মনে হয় বিএনপিই তাদের প্রতিপক্ষ। অথচ আমরা সহযোগিতা দিয়ে আসছি। তারা বিএনপির প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। অথচ নতুন সৃষ্ট দল এবং অন্য আরেকটি দলের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ডিসেম্বরের কথা বলেছিল। কিন্তু এখন যা হয়েছে তাতে সংকট তৈরি হবে। আমরা এখনো বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়।
তবে সরকার যদি তার অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে বিএনপি কী করবে— এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি দলটির সিনিয়র নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা শুধু বলেছেন, বিএনপি দ্রুততম সময়েই তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বল এখন সরকারের কোর্টে, দেখা যাক তারা কী করে।
বিএনপিসহ ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করলেও জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান বরাবরই ভিন্ন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এপ্রিলে নির্বাচনের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছিল। আবার এনসিপি নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলে আসছিল। অর্থাৎ সেনাপ্রধানের পরামর্শ কিংবা বিএনপিসহ অধিকাংশ দলগুলোর দাবিকে উপেক্ষা করে সরকার জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পরামর্শকেই নির্বাচনের জন্য গ্রহণ করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
সেদিকেই ইঙ্গিত করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি বলছে, সরকার বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সভার বক্তব্যে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সঙ্গতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে।
প্রসঙ্গত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়টি শুরুতেই আলোচনায় এনেছিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন যেন আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করতে ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন’, তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল নির্বাচনের সময় নিয়ে প্রথম কোনো বক্তব্য, যা তখন আলোড়ন তুলেছিল। বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করেন, সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যের পর থেকেই নির্বাচনের সময়সীমা সংক্রান্ত রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি হওয়া শুরু হয়।
এক পর্যায়ে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু এরপর বিএনপিও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তাদের দাবির পক্ষে আরও শক্ত অবস্থান নিতে শুরু করে।
এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের ক্রমাগত বক্তব্যের পর গত ২৮ মে দলীয় এক সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে ওইদিন টোকিওতে থাকা প্রধান উপদেষ্টা সেখানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, শুধু একটি দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে এবং তার এ বক্তব্য বিএনপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এরপর বিএনপিসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়ে জানায় যে তারাও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাইছে।
এর আগে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার সমর্থকদের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কাছে অবস্থানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ’ নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। যদিও তিনি বা তার অফিস থেকে এমন কোনো বক্তব্য আসেনি।
কিন্তু এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের যে বৈঠক হয়েছে তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও দুজন উপদেষ্টাকে সরানোর দাবি করে বিএনপি। কিন্তু এসব দাবিকে সরকার কার্যত বিবেচনায় নেয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর জামায়াতের আমির এক বিবৃতিতে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, তার এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।
এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ, ঘোষণাপত্র ও সংস্কারের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা কয়েক দফা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেদের মতো করে এবং সেটি মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি বলেই মনে করেন তারা।
মধ্য মার্চ পর্যন্ত রোজা, এপ্রিলে উচ্চ তাপমাত্রা, বজ্রপাত-ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের রেকর্ডের পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ‘একটি উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনে এপ্রিল মাসকে যথাযথ নয় বলেই রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা বলছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন, সবার মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হলে এ নিয়ে বিতর্ক হতো না এবং ভাষণে কিছু বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন সেটি সঠিক ছিল না।
তিনি বলেন, নির্বাচন এপ্রিলের মতো প্রতিকূল সময়ে কেন করতে হবে সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। জানুয়ারির মধ্যে না হলে সেটি পরবর্তী ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে, এমন ভয়ও আছে অনেকের। আর সেটি হলে নির্বাচন আদৌ হয় কি না সেই শঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
‘তার সব মিলিয়ে আবারও একটি অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা ও অচলাবস্থার দিকেই দেশ যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠবে এখন,‘— বলেন ঢাবি শিক্ষক মজিবুর রহমান।
আরেকজন বিশ্লেষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, যেসব দলের সাথে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইল, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে উপেক্ষা করেই তার সিদ্ধান্ত নিলেন।
‘অথচ তিনিই আবার তার ভাষণে আশা প্রকাশ করেছেন, সবচেয়ে বেশি দল, প্রার্থী ও ভোটার নির্বাচন অংশ নেবে। এটা কীভাবে হয়? সরকারের শুরু থেকেই তিনি জামায়াতের অব্যাহত সমর্থন পাচ্ছেন এবং তিনি শুনলেনও জামায়াতের পরামর্শই। স্বাভাবিকভাবে কেউ চাইলে তো দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারেন,’— বলেন সাইফুল আলম চৌধুরী।
দীর্ঘদিন মাঠে থাকা নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার যেসব উদ্বেগের কথা আসছে, তারও কোনো ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যে দেননি বলে মন্তব্য তার।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ বিএনপিকে ‘ক্ষুব্ধ’ করেছে। পাশাপাশি দলটি মনে করছে, ‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করার সুযোগ তৈরির জন্য’ই এপ্রিল মাসে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) ঈদুল আজহার আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন অধ্যাপক ইউনূস। সে ভাষণে তিনি ‘শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেছেন এবং একটি ‘বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন’— এমন অভিযোগ তুলেছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নির্বাচনের যে সময় প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন সেটি ‘বাস্তবতার নিরিখে’ই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
‘গণতন্ত্রে উত্তরণ বিলম্বিত হলে সংকট ঘনীভূত হবে। প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টামণ্ডলী নিরপেক্ষ চরিত্র হারিয়েছেন। এপ্রিল কোনোভাবেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য যথাযথ সময় নয়,’— বলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তবে জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। আবার কিছু দল মনে করছে, নির্বাচনের অন্তত একটা সময় যে সরকার জানিয়েছে, এটিই তাদের কাছে বড় স্বস্তির বিষয়।
বিশ্লেষকরা কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিএনপি ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যের বিপরীতে ‘জামায়াতের পরামর্শ’ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি চাপের মুখে কিছু মেনে নেবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের জন্য এপ্রিলকে বেছে নেওয়ার মধ্যে একটা জিদের বহির্প্রকাশ ঘটেছে। ওরা চাইলে কেন, তাই দেবো না— মনে হয়ে এই ইগো থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলোর মতকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেকজন শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, নির্বাচন কেন ডিসেম্বরের মধ্যে করা যাবে না কিংবা এপ্রিলে হলে জাতির কী কী সুবিধা হবে— এটি প্রধান উপদেষ্টা পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো একটি দিনে হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ দেবে। এই সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচন উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য যা যা করা দরকার, সরকার তাই করছে।
এ ছাড়া রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যারা অসত্য কল্পকাহিনী বানিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ক্রমাগত বিভ্রান্ত করে অশান্তি তৈরিতে নিয়োজিত, এটা তাদেরই শিল্পকর্ম।
চট্টগ্রাম বন্দরকে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড’ উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস এই হৃদপিণ্ডকে বড় ও মজবুত করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা, সবচেয়ে অভিজ্ঞ।’
যদিও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করিডর ও বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরপরই বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক বসে। ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন লন্ডনে থাকা দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। পুরো বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ ছাড়াও বন্দর ও করিডোর ইস্যুতে দেওয়া বক্তব্যে ক্ষোভের বর্হিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
পরে রাতেই সংবাদমাধ্যমে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বন্দর, করিডোর ইত্যাদি এমন সব বিষয়ে অবতারণা করেছেন যা তারই ভাষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনটি ম্যান্ডেটের মধ্যে পড়ে না। ভাষণে তিনি শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছেন বলে সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, ডিসেম্বরের মধ্যে কেন নির্বাচন করা যাবে না-— তার কোনো কারণ প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে তুলে ধরেননি। স্থায়ী কমিটির বক্তব্যে বলা হয়েছে, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট, অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনি প্রচার ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
স্থায়ী কমিটির সভা রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা এবং আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে দলের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে।
এসবের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের আচরণে মনে হয় বিএনপিই তাদের প্রতিপক্ষ। অথচ আমরা সহযোগিতা দিয়ে আসছি। তারা বিএনপির প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। অথচ নতুন সৃষ্ট দল এবং অন্য আরেকটি দলের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ডিসেম্বরের কথা বলেছিল। কিন্তু এখন যা হয়েছে তাতে সংকট তৈরি হবে। আমরা এখনো বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়।
তবে সরকার যদি তার অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে বিএনপি কী করবে— এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি হননি দলটির সিনিয়র নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নেতা শুধু বলেছেন, বিএনপি দ্রুততম সময়েই তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বল এখন সরকারের কোর্টে, দেখা যাক তারা কী করে।
বিএনপিসহ ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করলেও জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান বরাবরই ভিন্ন। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এপ্রিলে নির্বাচনের পক্ষে মত দেওয়া হয়েছিল। আবার এনসিপি নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলে আসছিল। অর্থাৎ সেনাপ্রধানের পরামর্শ কিংবা বিএনপিসহ অধিকাংশ দলগুলোর দাবিকে উপেক্ষা করে সরকার জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পরামর্শকেই নির্বাচনের জন্য গ্রহণ করেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
সেদিকেই ইঙ্গিত করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি বলছে, সরকার বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সভার বক্তব্যে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সঙ্গতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে।
প্রসঙ্গত ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়টি শুরুতেই আলোচনায় এনেছিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন যেন আগামী ১৮ মাসের মধ্যে হতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন করতে ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন’, তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।
মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল নির্বাচনের সময় নিয়ে প্রথম কোনো বক্তব্য, যা তখন আলোড়ন তুলেছিল। বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করেন, সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যের পর থেকেই নির্বাচনের সময়সীমা সংক্রান্ত রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি হওয়া শুরু হয়।
এক পর্যায়ে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। কিন্তু এরপর বিএনপিও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তাদের দাবির পক্ষে আরও শক্ত অবস্থান নিতে শুরু করে।
এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের ক্রমাগত বক্তব্যের পর গত ২৮ মে দলীয় এক সমাবেশে ভার্চুয়াল বক্তৃতায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে ওইদিন টোকিওতে থাকা প্রধান উপদেষ্টা সেখানে এক অনুষ্ঠানে বলেন, শুধু একটি দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে এবং তার এ বক্তব্য বিএনপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এরপর বিএনপিসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়ে জানায় যে তারাও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাইছে।
এর আগে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার সমর্থকদের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের কাছে অবস্থানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ’ নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায়। যদিও তিনি বা তার অফিস থেকে এমন কোনো বক্তব্য আসেনি।
কিন্তু এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের যে বৈঠক হয়েছে তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও দুজন উপদেষ্টাকে সরানোর দাবি করে বিএনপি। কিন্তু এসব দাবিকে সরকার কার্যত বিবেচনায় নেয়নি বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর জামায়াতের আমির এক বিবৃতিতে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, তার এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।
এনসিপি বলেছে, জুলাই সনদ, ঘোষণাপত্র ও সংস্কারের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলে ঘোষিত সময়ে নির্বাচনের বিষয়ে তাদের আপত্তি নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা কয়েক দফা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেদের মতো করে এবং সেটি মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি বলেই মনে করেন তারা।
মধ্য মার্চ পর্যন্ত রোজা, এপ্রিলে উচ্চ তাপমাত্রা, বজ্রপাত-ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের রেকর্ডের পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে ‘একটি উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনে এপ্রিল মাসকে যথাযথ নয় বলেই রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরা বলছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন, সবার মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হলে এ নিয়ে বিতর্ক হতো না এবং ভাষণে কিছু বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যে ভাষা প্রয়োগ করেছেন সেটি সঠিক ছিল না।
তিনি বলেন, নির্বাচন এপ্রিলের মতো প্রতিকূল সময়ে কেন করতে হবে সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। জানুয়ারির মধ্যে না হলে সেটি পরবর্তী ডিসেম্বর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে, এমন ভয়ও আছে অনেকের। আর সেটি হলে নির্বাচন আদৌ হয় কি না সেই শঙ্কাও দেখা দিতে পারে।
‘তার সব মিলিয়ে আবারও একটি অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা ও অচলাবস্থার দিকেই দেশ যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠবে এখন,‘— বলেন ঢাবি শিক্ষক মজিবুর রহমান।
আরেকজন বিশ্লেষক সাইফুল আলম চৌধুরী বলছেন, যেসব দলের সাথে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইল, কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা সেই সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে উপেক্ষা করেই তার সিদ্ধান্ত নিলেন।
‘অথচ তিনিই আবার তার ভাষণে আশা প্রকাশ করেছেন, সবচেয়ে বেশি দল, প্রার্থী ও ভোটার নির্বাচন অংশ নেবে। এটা কীভাবে হয়? সরকারের শুরু থেকেই তিনি জামায়াতের অব্যাহত সমর্থন পাচ্ছেন এবং তিনি শুনলেনও জামায়াতের পরামর্শই। স্বাভাবিকভাবে কেউ চাইলে তো দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারেন,’— বলেন সাইফুল আলম চৌধুরী।
দীর্ঘদিন মাঠে থাকা নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার যেসব উদ্বেগের কথা আসছে, তারও কোনো ব্যাখ্যা প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যে দেননি বলে মন্তব্য তার।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, পশু নয়, কোরবানি হোক অহংকার, হিংসা ও অবিচারের।
৮ ঘণ্টা আগেপবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। শনিবার (৭ জুন) দুপুরে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
১০ ঘণ্টা আগেদেশকে গণতান্ত্রিক ধারা থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। আজ শনিবার জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
১০ ঘণ্টা আগেমির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের ঘোষিত সময়ে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। রোজা, আবহাওয়া, পাবলিক পরীক্ষার কারণে এপ্রিল মাস নির্বাচনের জন্য অনুপযুক্ত। চিন্তা ভাবনা করে এ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি।
১১ ঘণ্টা আগে