‘আগামীটা হোক দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ২০: ৩৫
মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ সই হয়ে গেলেই অন্তর্বর্তী সরকার আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনি আগের মতোই এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত সময়সীমার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন যে আগামী জাতীয় নির্বাচনটি যেন দেশে ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন। এ সময় তিনি জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয়ও জানান।

সংস্কার প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এরই মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করেছে। ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও শুরু হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই ইতিবাচকভাবে সংস্কারকাজে সাড়া দিয়েছে, তাদের মতামত তুলে ধরছে।

তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দল কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, কোনটিতে দ্বিমত হয়েছে— সেসব তারা জানাচ্ছে। এটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত সুখকর বিষয় যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে মত দিচ্ছে।

সংস্কারের সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়নের কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার কাজ এখন চলমান। কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং এর একটি তালিকা তৈরি করা। যেসব দল এতে একমত হয়েছে তাদের সই নেওয়া। এই তালিকাটিই হবে জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দায়িত্ব, জাতির সামনে পুরো প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা এবং প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি— এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এ জন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশা করছি।

জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধগুলো নিয়ে জাতিসংঘের তদন্তানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনের কথাও ভাষণে তুলে ধরেন অধ্যাাপক ইউনূস। বলেন, পতিত স্বৈরাচারের নিপীড়নের বর্ণনা উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তারা।

তিনি বলেন, এ রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে। বিগত সরকার, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী গোষ্ঠী ও সংগঠন একত্রিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকার কারণে আমাদের জুলাই-কন্যারা নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এমনকি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন পড়ে সবার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। কী ভয়াবহতা! কীভাবে একজন প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার পর লাশ লুকিয়ে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে! ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার জন্য তিনি পৃথিবীর সব নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেছেন— এটাই জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণ পড়ুন এখানে—

গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের প্রত্যয় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের এই প্রতিবেদনকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিবেদনে যে সুপারিশ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার সে সুপারিশগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আপনাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, যারা গণহত্যায় জড়িত ছিল, যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, যারা এরই মধ্যে হত্যাকারী হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃত, তাদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই।

ad
ad

ঘরের রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

আমীর খসরুর প্রশ্ন— নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে এত ভয় কেন

অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার লক্ষ্মণ প্রকাশ হতে শুরু করেছে অভিযোগ করে আমীর খসরু বলেন, দেশের জনগণ সাংঘর্ষিক রাজনীতি বা মবোক্রেসি চায় না। রোডম্যাপ দিতে এত ভয় কেন? নির্বাচনে এত ভয় কেন? যাদের নির্বাচনে ভয়, তাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা শেখ হাসিনার পথে চলছে।

১০ ঘণ্টা আগে

নানামুখী আন্দোলনে চাপে অন্তর্বর্তী সরকার: রয়টার্স

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নানামুখী আন্দোলনের চাপে স্বাভাবিক কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে।এরই মধ্যে সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা একটি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারীদের বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে আন্দোলন শুরু করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্র

১৩ ঘণ্টা আগে

জামায়াত নেতা আজহারের আপিলের রায় আজ

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ রায় দেবেন আজ।

১৫ ঘণ্টা আগে

চট্টগ্রামে এনসিপির আজকের পথসভার সময়সূচি

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ধারাবাহিক পথসভা করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুর আড়াইটা থেকে শুরু হয়ে রাত ৭টা পর্যন্ত মোট ৬টি স্থানে এই পথসভাগুলো অনুষ্ঠিত হবে।

১৬ ঘণ্টা আগে