অরুণাভ বিশ্বাস
আমেরিকা শব্দটি আমাদের সবার পরিচিত। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বই বা সাধারণ আলাপে আমরা প্রায়ই বলে থাকি—“মার্কিন প্রেসিডেন্ট”, “মার্কিন সেনাবাহিনী”, “মার্কিন অর্থনীতি”। অথচ দেশের নাম তো “আমেরিকা” নয়, বরং “ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা” বা বাংলায় “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র”। তাহলে প্রশ্ন আসে—এই "মার্কিন" শব্দটি কোথা থেকে এলো? কেন আমরা "আমেরিকান" বা "আমেরিকা" না বলে "মার্কিন" বলি? এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ভাষাগত বিবর্তন ও কিছু ভৌগোলিক বাস্তবতা, যা আমাদের জানা প্রয়োজন।
প্রথমেই বলা দরকার, ইংরেজিতে দেশটির নাম "ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা"। এই নামের মধ্যে “আমেরিকা” শব্দটি মূলত একটি মহাদেশের নাম। আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা দুই মহাদেশকে মিলিয়ে। কাজেই “আমেরিকা” শুধু একটি দেশের নাম নয়, একটি মহাদেশের নাম। কিন্তু যখন “ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা” বলা হয়, তখন সেটা বোঝায় নির্দিষ্টভাবে একটি রাষ্ট্রকে—যেটি আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের একটি।
এই দেশটির নাগরিকদের বলা হয় “আমেরিকান”। কিন্তু বাংলা ভাষায় আমরা তাদের বলি “মার্কিন”। এই রূপান্তরের পেছনে রয়েছে ভাষান্তরের প্রয়োজনীয়তা, বাংলার ব্যাকরণিক ধারা, এবং কিছুটা কাব্যিক সৌন্দর্যবোধ।
"মার্কিন" শব্দটি এসেছে মূলত আরবি-ফারসি ধাঁচের একটি অনুবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে। বাংলা ভাষায় অনেক বিদেশি দেশ ও জাতিসত্তার নাম এই ধরনের ধাঁচে গঠিত হয়েছে। যেমন “চীন” থেকে “চীনা”, “রোম” থেকে “রোমান”, “গ্রিস” থেকে “গ্রিক”, আবার “ইংল্যান্ড” থেকে “ইংরেজ”। একইভাবে “আমেরিকা” থেকে “আমেরিকান” নামটির একটি গ্রহণযোগ্য বাংলা রূপ দরকার ছিল।
প্রয়াত ভাষাতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ ড. গোলাম মুরশিদ লিখেছিলেন, “বাংলা ভাষায় ‘আমেরিকান’ শব্দটি বসালে তা ভাষার স্বাভাবিক গতির সঙ্গে মানানসই হতো না। তাই পণ্ডিতদের মধ্যে কেউ কেউ ‘মার্কিন’ রূপটি তৈরি করেন, যা শব্দতত্ত্ব এবং ধ্বনিগত দিক থেকে অনেক বেশি প্রাকৃতিক এবং গ্রহণযোগ্য মনে হয়।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের রূপান্তর বাংলায় নতুন নয়, বহু ভাষায় জাতীয়তাবোধ বা পরিচয় প্রকাশে অনুরূপ শব্দ তৈরি হয়েছে।”
তবে "মার্কিন" শব্দটি আদতে কোথা থেকে এসেছে? অধিকাংশ ভাষাবিদ মনে করেন, এটি মূলত ফারসি প্রভাবে গঠিত একটি শব্দ। মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামলে বিদেশি জাতি বা স্থানকে ফারসি-আরবি ধাঁচে বদলে ফেলার প্রবণতা ছিল। যেমন “ইংল্যান্ড” থেকে “ইংলিস”, “ফ্রান্স” থেকে “ফরাস” কিংবা “চীন” থেকে “চীনা”। সেই ধারা অনুসারে “আমেরিকা” থেকে “আমেরিকান” শব্দটিকে রূপান্তর করে বানানো হয় “মার্কিন”।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক ড. রেবেকা স্মিথ বলেন, “যখন কোনো ভাষা অন্য ভাষার শব্দ গ্রহণ করে, তখন সেই শব্দটিকে নিজের ভাষার ব্যাকরণিক ও ধ্বনিগত কাঠামোর সঙ্গে মানানসই করে নেয়। বাংলায় ‘মার্কিন’ এমনই একটি উদাহরণ। এটি ফারসি-আরবি গঠন অনুসরণে ‘আমেরিকান’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে আত্মীকৃত হয়েছে।”
তবে এই শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় ঠিক কবে থেকে, তার কোনও নির্ভরযোগ্য নথি নেই। তবে অনুমান করা হয়, বিংশ শতকের গোড়ার দিকে যখন বাংলা ভাষায় বিদেশি রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার আলোচনা বাড়ে, তখন থেকেই “মার্কিন” শব্দটির প্রচলন শুরু হয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে সংবাদপত্র, বইপত্র ও প্রবন্ধে এই শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতে থাকে।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান এক ভাষণ বক্তৃতায় বলেছিলেন, “মার্কিন শব্দটি এখন এমনভাবে বাংলায় গৃহীত হয়েছে যে, এটি ছাড়া ‘ইউনাইটেড স্টেটস’-এর বিকল্প প্রকাশ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদপত্র থেকে পাঠ্যবই, গল্প থেকে গবেষণায়—সর্বত্র এই শব্দটি নির্ভরযোগ্য অনুবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।”
বাংলা সাহিত্যেও এই শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। হুমায়ুন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক কিংবা সেলিনা হোসেনের লেখায় “মার্কিন রাষ্ট্রদূত”, “মার্কিন বোমারু বিমান”, “মার্কিন চলচ্চিত্র” ইত্যাদি বাক্যাংশ খুব স্বাভাবিকভাবে গৃহীত হয়েছে।
আবার অনেকেই প্রশ্ন করেন, আমরা তো “ব্রিটিশ”, “রুশ”, “জার্মান” বলি—তাহলে “আমেরিকান” না বলে “মার্কিন” বলার যৌক্তিকতা কী? এর জবাবে ভাষাবিদরা বলেন, “ব্রিটিশ” বা “জার্মান” হলো ইংরেজি শব্দ, যা বাংলায় প্রায় অপরিবর্তিতভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু “আমেরিকান” শব্দটি ধ্বনিগতভাবে বাংলায় একটু বেমানান মনে হয় অনেকের কাছে। “মার্কিন” শব্দটি সেখানেই একধরনের ধ্বনিগত ভারসাম্য এনে দেয়।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়েছে এবং যেগুলোর সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ রয়েছে, সেগুলোই টিকে থাকে। “মার্কিন” শব্দটি তেমনি একটি শব্দ যা এখন কেবল অনুবাদ নয়, বরং বাংলাভাষার নিজস্ব রূপে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া "মার্কিন" শব্দটির মধ্যে একধরনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের চিহ্নও রয়েছে। বিশেষ করে যেসব লেখায় আমেরিকার সমালোচনা করা হয়, যেমন সাম্রাজ্যবাদ বা বৈশ্বিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য—সেখানে “মার্কিন” শব্দটি একটি আলাদা তাৎপর্য বহন করে। কবি আল মাহমুদের লেখায় যেমন “মার্কিন বুলেট” বা “মার্কিন জাল” জাতীয় শব্দবন্ধ দেখা যায়, যা নিছক অনুবাদের চেয়েও বড় কিছু।
আধুনিক অনুবাদক ও সাংবাদিকরাও এই শব্দটিকে ধরে রেখেছেন। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্র যেমন প্রথম আলো, দৈনিক কালের কণ্ঠ, বা বিবিসি বাংলা নিয়মিতভাবেই “মার্কিন” শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে “আমেরিকান” শব্দটিকে বেশি চেনেন এবং ব্যবহারও করেন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া, ইংরেজিমাধ্যম শিক্ষা ও পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে “আমেরিকান” শব্দটি একটু আধুনিক ও গ্ল্যামারাস বলে মনে হতে পারে। তবু “মার্কিন” শব্দটি বাংলা ভাষার মাটি ও শিকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত—যার সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।
সব মিলিয়ে বলা যায়, “মার্কিন” শব্দটি নিছক এক অনুবাদ নয়, এটি একটি ভাষাগত বিবর্তনের ফল, একটি সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা। এটি বাংলা ভাষার নিজস্ব চিন্তা, নিজস্ব রূপ ও নিজস্ব সত্তার প্রতিফলন। সময়ের হাত ধরে এই শব্দ যেমন জন্ম নিয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতেও হয়তো বদলাবে না, বরং আরও শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে।
আমাদের ভাষা যেমন এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে, তেমনি ঐতিহ্যকেও ধরে রাখতে হবে। “মার্কিন” শব্দটি সেই ঐতিহ্যেরই এক নিদর্শন—যা শুধু অর্থ বহন করে না, বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভাবনারও এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমেরিকা শব্দটি আমাদের সবার পরিচিত। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, বই বা সাধারণ আলাপে আমরা প্রায়ই বলে থাকি—“মার্কিন প্রেসিডেন্ট”, “মার্কিন সেনাবাহিনী”, “মার্কিন অর্থনীতি”। অথচ দেশের নাম তো “আমেরিকা” নয়, বরং “ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা” বা বাংলায় “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র”। তাহলে প্রশ্ন আসে—এই "মার্কিন" শব্দটি কোথা থেকে এলো? কেন আমরা "আমেরিকান" বা "আমেরিকা" না বলে "মার্কিন" বলি? এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস, ভাষাগত বিবর্তন ও কিছু ভৌগোলিক বাস্তবতা, যা আমাদের জানা প্রয়োজন।
প্রথমেই বলা দরকার, ইংরেজিতে দেশটির নাম "ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা"। এই নামের মধ্যে “আমেরিকা” শব্দটি মূলত একটি মহাদেশের নাম। আমেরিকা বলতে বোঝানো হয় উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা দুই মহাদেশকে মিলিয়ে। কাজেই “আমেরিকা” শুধু একটি দেশের নাম নয়, একটি মহাদেশের নাম। কিন্তু যখন “ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা” বলা হয়, তখন সেটা বোঝায় নির্দিষ্টভাবে একটি রাষ্ট্রকে—যেটি আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের একটি।
এই দেশটির নাগরিকদের বলা হয় “আমেরিকান”। কিন্তু বাংলা ভাষায় আমরা তাদের বলি “মার্কিন”। এই রূপান্তরের পেছনে রয়েছে ভাষান্তরের প্রয়োজনীয়তা, বাংলার ব্যাকরণিক ধারা, এবং কিছুটা কাব্যিক সৌন্দর্যবোধ।
"মার্কিন" শব্দটি এসেছে মূলত আরবি-ফারসি ধাঁচের একটি অনুবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে। বাংলা ভাষায় অনেক বিদেশি দেশ ও জাতিসত্তার নাম এই ধরনের ধাঁচে গঠিত হয়েছে। যেমন “চীন” থেকে “চীনা”, “রোম” থেকে “রোমান”, “গ্রিস” থেকে “গ্রিক”, আবার “ইংল্যান্ড” থেকে “ইংরেজ”। একইভাবে “আমেরিকা” থেকে “আমেরিকান” নামটির একটি গ্রহণযোগ্য বাংলা রূপ দরকার ছিল।
প্রয়াত ভাষাতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ ড. গোলাম মুরশিদ লিখেছিলেন, “বাংলা ভাষায় ‘আমেরিকান’ শব্দটি বসালে তা ভাষার স্বাভাবিক গতির সঙ্গে মানানসই হতো না। তাই পণ্ডিতদের মধ্যে কেউ কেউ ‘মার্কিন’ রূপটি তৈরি করেন, যা শব্দতত্ত্ব এবং ধ্বনিগত দিক থেকে অনেক বেশি প্রাকৃতিক এবং গ্রহণযোগ্য মনে হয়।” তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের রূপান্তর বাংলায় নতুন নয়, বহু ভাষায় জাতীয়তাবোধ বা পরিচয় প্রকাশে অনুরূপ শব্দ তৈরি হয়েছে।”
তবে "মার্কিন" শব্দটি আদতে কোথা থেকে এসেছে? অধিকাংশ ভাষাবিদ মনে করেন, এটি মূলত ফারসি প্রভাবে গঠিত একটি শব্দ। মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামলে বিদেশি জাতি বা স্থানকে ফারসি-আরবি ধাঁচে বদলে ফেলার প্রবণতা ছিল। যেমন “ইংল্যান্ড” থেকে “ইংলিস”, “ফ্রান্স” থেকে “ফরাস” কিংবা “চীন” থেকে “চীনা”। সেই ধারা অনুসারে “আমেরিকা” থেকে “আমেরিকান” শব্দটিকে রূপান্তর করে বানানো হয় “মার্কিন”।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক ড. রেবেকা স্মিথ বলেন, “যখন কোনো ভাষা অন্য ভাষার শব্দ গ্রহণ করে, তখন সেই শব্দটিকে নিজের ভাষার ব্যাকরণিক ও ধ্বনিগত কাঠামোর সঙ্গে মানানসই করে নেয়। বাংলায় ‘মার্কিন’ এমনই একটি উদাহরণ। এটি ফারসি-আরবি গঠন অনুসরণে ‘আমেরিকান’-এর প্রতিশব্দ হিসেবে আত্মীকৃত হয়েছে।”
তবে এই শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় ঠিক কবে থেকে, তার কোনও নির্ভরযোগ্য নথি নেই। তবে অনুমান করা হয়, বিংশ শতকের গোড়ার দিকে যখন বাংলা ভাষায় বিদেশি রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থার আলোচনা বাড়ে, তখন থেকেই “মার্কিন” শব্দটির প্রচলন শুরু হয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে সংবাদপত্র, বইপত্র ও প্রবন্ধে এই শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হতে থাকে।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান এক ভাষণ বক্তৃতায় বলেছিলেন, “মার্কিন শব্দটি এখন এমনভাবে বাংলায় গৃহীত হয়েছে যে, এটি ছাড়া ‘ইউনাইটেড স্টেটস’-এর বিকল্প প্রকাশ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদপত্র থেকে পাঠ্যবই, গল্প থেকে গবেষণায়—সর্বত্র এই শব্দটি নির্ভরযোগ্য অনুবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।”
বাংলা সাহিত্যেও এই শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। হুমায়ুন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক কিংবা সেলিনা হোসেনের লেখায় “মার্কিন রাষ্ট্রদূত”, “মার্কিন বোমারু বিমান”, “মার্কিন চলচ্চিত্র” ইত্যাদি বাক্যাংশ খুব স্বাভাবিকভাবে গৃহীত হয়েছে।
আবার অনেকেই প্রশ্ন করেন, আমরা তো “ব্রিটিশ”, “রুশ”, “জার্মান” বলি—তাহলে “আমেরিকান” না বলে “মার্কিন” বলার যৌক্তিকতা কী? এর জবাবে ভাষাবিদরা বলেন, “ব্রিটিশ” বা “জার্মান” হলো ইংরেজি শব্দ, যা বাংলায় প্রায় অপরিবর্তিতভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু “আমেরিকান” শব্দটি ধ্বনিগতভাবে বাংলায় একটু বেমানান মনে হয় অনেকের কাছে। “মার্কিন” শব্দটি সেখানেই একধরনের ধ্বনিগত ভারসাম্য এনে দেয়।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যেসব শব্দ বাংলা ভাষায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়েছে এবং যেগুলোর সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ রয়েছে, সেগুলোই টিকে থাকে। “মার্কিন” শব্দটি তেমনি একটি শব্দ যা এখন কেবল অনুবাদ নয়, বরং বাংলাভাষার নিজস্ব রূপে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া "মার্কিন" শব্দটির মধ্যে একধরনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের চিহ্নও রয়েছে। বিশেষ করে যেসব লেখায় আমেরিকার সমালোচনা করা হয়, যেমন সাম্রাজ্যবাদ বা বৈশ্বিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য—সেখানে “মার্কিন” শব্দটি একটি আলাদা তাৎপর্য বহন করে। কবি আল মাহমুদের লেখায় যেমন “মার্কিন বুলেট” বা “মার্কিন জাল” জাতীয় শব্দবন্ধ দেখা যায়, যা নিছক অনুবাদের চেয়েও বড় কিছু।
আধুনিক অনুবাদক ও সাংবাদিকরাও এই শব্দটিকে ধরে রেখেছেন। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্র যেমন প্রথম আলো, দৈনিক কালের কণ্ঠ, বা বিবিসি বাংলা নিয়মিতভাবেই “মার্কিন” শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে “আমেরিকান” শব্দটিকে বেশি চেনেন এবং ব্যবহারও করেন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া, ইংরেজিমাধ্যম শিক্ষা ও পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে “আমেরিকান” শব্দটি একটু আধুনিক ও গ্ল্যামারাস বলে মনে হতে পারে। তবু “মার্কিন” শব্দটি বাংলা ভাষার মাটি ও শিকড়ের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত—যার সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই।
সব মিলিয়ে বলা যায়, “মার্কিন” শব্দটি নিছক এক অনুবাদ নয়, এটি একটি ভাষাগত বিবর্তনের ফল, একটি সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা। এটি বাংলা ভাষার নিজস্ব চিন্তা, নিজস্ব রূপ ও নিজস্ব সত্তার প্রতিফলন। সময়ের হাত ধরে এই শব্দ যেমন জন্ম নিয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতেও হয়তো বদলাবে না, বরং আরও শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে।
আমাদের ভাষা যেমন এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে, তেমনি ঐতিহ্যকেও ধরে রাখতে হবে। “মার্কিন” শব্দটি সেই ঐতিহ্যেরই এক নিদর্শন—যা শুধু অর্থ বহন করে না, বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভাবনারও এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওটস খেলে ওজন কমে—এই ধারণাটিও নিরর্থক নয়। কানাডার টরন্টো ইউনিভার্সিটির পুষ্টিবিদ ড. ডেভিড জেনকিন্স জানান, “ওটস খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে কম খাওয়া হয়, আর এই কারণে ধীরে ধীরে ওজন কমে আসে।” তাঁর মতে, যারা নিয়মিত সকালে ওটস খান, তাঁদের মধ্যে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
৭ ঘণ্টা আগেআজকের বিজ্ঞানীরা চাইছেন বিলুপ্ত কিছু প্রাণীকে আবার ফিরিয়ে আনতে। এভাবে আগের মতো তাদের তৈরি করে তোলা যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে বলে “ডি-এক্সটিংশন”। মানে, যেসব প্রাণী অনেক বছর আগে হারিয়ে গেছে, তাদের আবার বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা। অনেকেই চায় ডায়ার উলফ বা ম্যামথ ফিরে আসুক। কেউ কেউ জায়ান
১ দিন আগেএই যুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছিলেন গাইয়াস অক্টাভিয়াস—পরবর্তীতে যিনি ‘অগাস্টাস’ নামে পরিচিত হন—তার বাহিনী এবং মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা ও রোমের অন্যতম শক্তিশালী সেনানায়ক মার্ক অ্যান্টনির যৌথ বাহিনী। যুদ্ধটি মূলত সামুদ্রিক যুদ্ধ হলেও এর প্রভাব রাজনীতি, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা ও সাম্রাজ্যের ক্ষমতার বণ্টন পর্যন্ত ব
১ দিন আগেতালমিছরি সাধারণত খাঁটি তাল বা খেজুরের রস থেকে তৈরি হয়, যেটি পরিশোধন ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শুকিয়ে ছোট দানার মতো স্ফটিক রূপে তৈরি হয়। এতে কোনো কৃত্রিম রং বা প্রিজারভেটিভ থাকে না, যা একে সাধারণ চিনি থেকে আলাদা করে দেয়।
১ দিন আগে